তাহিরপুর সীমান্তে বিজিবি ক্যাম্পের নামে সোর্সদের বাণিজ্য!

    0
    199

    আমারসিলেট টুয়েন্টিফোর ডটকম,১৮ফেব্রুয়ারী,সুনামগঞ্জ প্রতিনিধিঃ সুনামগঞ্জের তাহিরপুর সীমান্ত দিয়ে কোটিকোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে ভারত থেকে পাচাঁর করা হচ্ছে চুনাপাথর,মরা পাথর,নুরিপাথর,কয়লা ও মরণনেশা হেরুইন, ইয়াবা,মদ, গাঁজা,আফিমসহ ঘোড়া,কাঠ,কমলা,নাসির উদ্দিন বিড়ি ও অস্ত্র। অভিযোগ উঠেছে,পাচাঁরকৃত অবৈধ মালামালের মধ্যে প্রতিফুট চুনাপাথর থেকে ২টাকা,নুড়ি ও মরাপাথর ১টাকা,প্রতি বস্তা কয়লা ৮০টাকা,প্রতিঘোড়া ৩হাজার টাকা,প্রতি কাঠ ৭০টাকাসহ মাদকদ্রব্য ও অন্যান্য মালামাল থেকে সাপ্তাহিক ও মাসিক হারে ১০হাজার থেকে ৫০হাজার টাকা পর্যন্ত বিজিবি ক্যাম্পের নামে সোর্সরা চাঁদা উত্তোলন করছে বলে স্থানিয় বিভিন্ন সুত্রের অভিযোগ।

    এ কারণে পুলিশ অভিযান চালিয়ে চিহ্নিত চোরাচালানী ও মাদক ব্যবসায়ীদের গ্রেফতার করলেও বিজিবি কাউকে গ্রেফতার করছেনা।

    বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়,চানপুর বিজিবি ক্যাম্পের সামনের নয়াছড়া দিয়ে বিজিবি সদস্যদের সামনেই চোরাচালানীরা ৯টি ট্রলি দিয়ে ভারত থেকে চুনাপাথর পাঁচার করছে। পরবর্তীতে এসব পাথর পার্শ্ববর্তী লাউড়গড় যাদুকাটা নদী তীরে অবস্থিত ছিলাবাজারে নিয়ে মজুদ করছে।

    অন্যদিকে টেকেরঘাট ও বালিয়াঘাট সীমান্তের লাকমা ছড়ার পূর্বদিক দিয়ে ১০টি ট্রলি দিয়ে অবাধে মরা পাথর ও চুনাপাথর পাচাঁর করে চোরাচালানীরা বালিয়াঘাট বিজিবির সামনের পাটলাই নদীতে নৌকা বোঝাই করে পার্শ্ববর্তী মন্দিআতা,আনোয়ারপুর ও ফাজিলপুরে নিয়ে মজুদ করছে।

    এ ছাড়া একই ভাবে বড়ছড়া,বুরুঙ্গাছড়া ও রজনীলাইন এলাকা দিয়ে চোরাচালানী চুনাপাথর পাঁচার করাসহ লাউড়গড় দিয়ে ওপেন চোরাচালান হচ্ছে।

    এ ব্যাপারে বড়ছড়া ও চাঁরাগাঁও শুল্কষ্টেশনের ব্যবসায়ীরাসহ স্থানীয়রা জানায়,গত ১১ই জানুয়ারী বিকাল ৩টায় বিজিবি নেতৃত্বে চোরাচালানীরা টেকেরঘাট বিজিবি ক্যাম্প সংলগ্ন চুনাপাথর খনি প্রকল্পে টিলা কেটে অবৈধভাবে চুনাপাথর উত্তোলনের সময় মাটি চাপা পড়ে লাল জাহান বেগম(৪৫) নামের মহিলা শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। একারণে কোন মামলা হয়নি। অন্যদিকে ভোর সাড়ে ৪টায় লাউড়গড় ক্যাম্প সংলগ্ন যাদুকাটা নদী দিয়ে কয়লা ও ঘোড়া পাচাঁর করার সময় সোহাগ মিয়া ও আনোয়ার হোসেন নামের দুই চোরাচালানীকে ধরে নিয়ে যায় বিএসএফ।

    এছাড়াও লালঘাট দিয়ে কয়লা পাচাঁর করার সময় কয়লার গুহায় চাপা পড়ে ১জন,লাকমা দিয়ে ৩জন,চাঁরাগাঁয়ের পাহাড়ি ছড়ায় পড়ে ২জন,লাউড়গড়ের যাদুকাটা নদীতে ডুবে ৭জন,চাঁনপুর দিয়ে চুনাপাথর ও কয়লা পাচাঁরের সময় ২জনের মৃত্যু হয়। বিএসএফের হাতে আটক হয়ে নির্যাতিত হওয়াসহ জেল খেটেছে আরো শতশত নিরীহ কয়লা ও পাথর শ্রমিক।

    এ সবের পরেও বিজিবি চিহ্নিত চোরাচালানীদেরকে গ্রেফতার না করে বরং তাদেরকে সোর্স নিয়োগ করে পুরো সীমান্তকে চোরাচালানের স্বর্গরাজ্যে পরিণত করেছে।

    এ ব্যাপারে শ্রমিক রিপন মিয়া,সবুজ মিয়া,রফিক মিয়াসহ আরো অনেকেই বলেন,বিজিবি ক্যাম্পের সোর্স জিয়াউর রহমান জিয়া,ইদ্রিস আলী,আব্দুল হাকিম ভান্ডারী ও দিলোয়ার হোসেনের কাছে বালিয়াঘাট ক্যাম্পের নামে ১১০টাকা ও টেকেরঘাট ক্যাম্পের নামে ৮০টাকা চাঁদা দিয়ে আমরা ভারতে গিয়ে পাথর ভাঙ্গাসহ কয়লা পাচাঁর করি। টেকেরঘাট ক্যাম্পের সোর্স সোনালী মিয়া,বালিয়াঘাট ক্যাম্পের সোর্স ইদ্রিস আলী বলেন,কোম্পানী কমান্ডার সারের নির্দেশে আমরা সবাই মিলেমিশে সব কাজ করছি,এসব নিয়ে পত্রিকায় লেখলে কি হবে।

    শ্রমিক জুবায়ের মিয়া,কালা মিয়া,মতিন মিয়াসহ আরো অনেকেই বলেন,গত ১৩ই ফেব্রুয়ারী সন্ধ্যা ৭টায় চানপুর বাজারের খলিল টেইলারের দোকানে বসে ক্যাম্পের সোর্স আবু কক্কর,আলমগীর,চোরাচালানী লাল মিয়া,উত্তর বড়দল ইউনিয়ন চেয়ারম্যান জামাল উদ্দিন,বিজিবি সদস্যদের নিয়ে মিটিং করে ভারত থেকে চুনাপাথর পাচাঁরে জন্য অনুমতি নিয়ে দিয়েছে।

    এ ব্যাপারে চাঁনপুর ক্যাম্পের হাবিলদার আব্দুর রশিদ বলেন,চেয়ারম্যান সাহেবকে নিয়ে সিও সারের অনুমতি নিয়ে আমরা পাথর পাছ দিচ্ছি। টেকেরঘাট ক্যাম্পের কমান্ডার ইলিয়াস বলেন,পাথর থেকে ক্যাম্পের নামে চাঁদা উত্তোলনের বিষয়টি আমার জানা নেই।

    বড়ছড়া ও চাঁরাগাঁও শুল্কষ্টেশনের কয়লা ব্যবসায়ী রশিদ মিয়া,জুবায়ের হোসেন,আলী আমজাদ ও নবী হোসেন বলেন,বিজিবি রক্ষক থেকে ভক্ষক হয়েগেছে,যার কারণে কোটিকোটি টাকার রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে সরকার। তাহিরপুর থানার ওসি মোহাম্মদ শহিদুল্লাহ বলেন,সীমান্ত চোরাচালান প্রতিরোধের দায়িত্ব মূলত বিজিবির কিন্তু তাদের দায়িত্বে অবহেলার কারণে এলাকার আইন শৃংঙ্খলা রক্ষার জন্য আমরা চিহ্নিত চোরাচালানী ও মাদক ব্যবসায়ীদের গ্রেফতারের চেষ্টা করছি। এব্যাপারে সুনামগঞ্জ ২৮ব্যাটালিয়নের বিজিবি অধিনায়ক গোলাম মহিউদ্দিন বলেন,বর্তমানে সীমান্ত চোরাচালান বন্ধ,সীমান্ত চোরাচালান প্রতিরোধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।