তৃণমূলে তথ্যসেবা কেন্দ্র ও ইউনিয়ন পরিষদ

    0
    212

    আমারসিলেট24ডটকম,১৮মে,নির্মল ভট্টাচার্যঃ ২০২১ সালে বাংলাদেশ তার জন্মের পঞ্চাশতম বার্ষিকী উদযাপন করবে। এ সময়ে বাংলাদেশ একটি সমৃদ্ধশালী রাষ্টে পরিণত হবে, এ প্রত্যাশা ও লক্ষ নিয়ে সরকারের প্রতিটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ জোরকদমে কাজ করে যাচ্ছে। আমরা, এ ভূ-খন্ডের নাগরিকরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি, অসংখ্য প্রাণ আর আত্ম ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত এ দেশটিকে গণতান্ত্রিক, প্রযুক্তিনির্ভর-আধুনিক সমৃদ্ধ দেশ হিসাবে দেখার।

    এ প্রত্যাশা পুরণের একটি অপরিহার্য অঙ্গ হচ্ছে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির বহুল ব্যবহার নিশ্চিত করা অর্থাৎ ‘ডিজিটাল’ বাংলাদেশ গড়ে তোলা। প্রায় এক দশক ধরে এ কার্যক্রম চলছে, সরকারী-বেস- রকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিবর্গ তাদের আন্তরিক প্রয়াস অব্যাহত রেখেছেন। এপর্যন্ত অর্জিত সাফল্যও একেবারে কম নয়। সরকারের প্রতিটি বিভাগ ও মন্ত্রণালয়, ব্যাংক-বীমা, অফিস-আদালত, প্রায় প্রতিটি  স্তরের স্থানীয় সরকার ইতিমধ্যেই ডিজিটাল যুগে প্রবেশ করেছে।

    সরকারের সর্বশেষ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় (২০১১-২০১৬) কার্যকর স্থানীয় সরকার ব্যবস্থাকে উন্নয়নের ক্ষেত্রে বিশেষ অগ্রাধিকার হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। দরিদ্র, নারী ও সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর উপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করে এবং জনসেবা প্রদানের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও দায়িত্বশীলতা বৃদ্ধির  মাধ্যমে জনগনের জীবনযাত্রায় ইতিবাচক প্রভাব ফেলার লক্ষে এসডিসি‘র সহযোগিতায় সিটিজেনস ভয়েস ফর ইমপ্র“ভড লোকাল সার্ভিসেস (সিভিআইপিএস) প্রকলাপ গ্রহন করা হয়েছে। এ ছাড়াও তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিকে মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়ার জন্য কাজ করে যাচ্ছে।

    জনগনের তথ্য অধিকার নিশ্চিত করা, সরকারী, স্বায়ত্ত্বশাসিত ও সংবিধিবদ্ধ সংস্থা, সরকারী বা বিদেশী অর্থায়নে সৃষ্ঠ বা পরিচালিত সংস্থার সচ্ছতা ও জব্বদিহিতা কৃদ্ধি, দূর্নীতি হ্রাস এবং সুশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে গণপ্রাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার ‘তথ্য অধিকার আইন-২০০৯’ প্রণয়ন ও গ্রহন করেছেন।

    জনগণের তথ্য অধিকার নিশ্চিত করা- এটই এ আইনের সার কথা। আইনের সবচেয়ে বড় সুবিধাভোগী সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠী। উপরের কর্তারা, এমনকি উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও সচরাচর জনসাধারনের ধার ঘেষেননা। কারণ,তারা নির্বাচিত নন, ভোটের জন্য আম পাবলিকের কাছে তাদের যেতে হয়না।দেশের মালিকের কাছে সংবিধান স্বীকৃত জবাবদিহিতার কথা তারা ভুলেও ভাবেননা। তারা সব জানেন এবং জানার অধিকার তাদের আছে- আইন থাকুক বা না থাকুক। একবার ‘চাকুরী’ নামক সোনারিণটা বাগাতে পারলে হারাবার ভয়  তেমন একটা নেই। আমাদের দেশে গণতকিন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিকতা এখনও শৈশব অবস্থায় রয়েছে।

    তথ্য অধিকার সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করার মূল ভূমিকা পালন করতে পারে স্থানীয় সরকার, বিশেষত ইউনিয়ন পরিষদ। পরিষদের চেয়ারম্যান ও পারিষদবর্গ  মানুষের কাছের লোক। তারা প্রতিনিয়তই জবাব দিহিতার সম্মুখীন হন, প্রতি পাঁচবছর অন্তর তাদের পরীক্ষায় অবতীর্ণ হতে হয়। জনকল্যাণে তাদের কাজ, জবাবদিহিতা এবং কার্যক্রমে জনগণকে স¤পৃক্ত করার উপর তাদের উত্তীর্ণ হওয়ার বিষয়টি বহু- লাংশে নির্ভরশীল।অপ্রিয় হলেও সত্য, ইউনিয়ন পরিষদকে নতুন নতুন দায়িত্ব দেয়া হচ্ছে, কিন্তু তার জন্য প্রয়োজনীয় জনবল ও অর্থসংস্থানের বিষয়টি উপেক্ষিত।

    পত্রিকান্তরে প্রকাশ,তৃণমূলের দোরগোড়ায় তথ্য ও সেবা পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে ন্যাশনাল পোর্টাল ফ্রেমও- য়ার্কের আওতায় ইউনিয়ন পরিষদ থেকে মন্ত্রণালয় পর্যন্ত সরকারী দপ্তরসমূহের ওয়েব পোর্টাল (তথ্য- বাতায়ন) এর দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের নজরদারি ও প্রয়োজনীয় লোকবলের অভাবে তথ্য সংযোজন ও হালনাগাদের কাজ দারুণভাবে বিঘিœত হচ্ছে। প্রয়োজনীয় লোকবল না থাকা, ওয়েব পোর্টাল ব্যবস্থাপনা কমিটি ও ইনোভেশন টিমের তদারকীর অভাবে সুনামগঞ্জ জেলার বিভিন্ন উপজেলার ওয়েব পোর্টালগুলো পরিপুর্ণবাবে তথ্যসমৃদ্ধ করা যাচ্ছেনা। খোঁজ নিয়ে জানা গেল, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে ওয়েব –- পোর্টালগুলোতে তথ্য হালনাগাদ করার জন্য কোন লোক নেই । ইউনিয়ন  পর্যায়ের তথ্য হালনাগাদ করার কাজটি তথ্য ও সেবা কেন্দ্রের উদ্যোক্তারাই করছেন। এ সকল উদ্যোক্তাদের জন্য কিছু সম্মানী ভাতার ব্যবস্থা আছে বলে শুনা যায় , তবে এ পর্যন্ত কোন উদ্যোক্তাই সম্মানী ভাতা পাননি। ইউনিয়ন-

    ভিত্তিক ওয়েব পোর্টালে কাজ করার জন্য উদ্যোক্তাদের ব্যয় নির্বাহ করতে না পারায় উদ্যোক্তারা ওয়েব পোর্টালে কাজ করতে চাননা।

    অনেক অসুবিধা, অপ্রাপ্তি থাকা সত্ত্বেও এখনও ইউনিয়ন পর্যায়ে স্বেচ্ছাসেবী-উদ্যোক্তার দেখা মেলে। তারা এ প্রতিষ্ঠানটিকে নিজের মনে করেন এবং এর উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে সচেষ্ঠ হন। এখানে কয়েকটি ইউনিয়নের নাম উল্লেখ না করলে হয়তোবা কার্পন্য হবে।যেমন, বিশ্বাম্ভর উপজেলার পলাশ ইউনিয়ন, দঃ সুনামগঞ্জের পাথারিয়া, সদর উপজেলার লক্ষণশ্রী ও কোর্বাননগর, এবং প্রত্যন্ত উপজেলার কয়েকটি ইউ- নিয়নেও উদ্যেক্তারা নিজেরা শ্রম দিয়ে যতটা পারছেন, তথ্য ও সেবাকেন্দ্রকে সচল রাখার চেষ্ঠা করছেন।

    কেন্দ্র থেকে তৃণমূল মানুষকে তথ্য সচেতন করার কাজটি দূরহ এবং অকল্পনীয় বটে। আমাদের দেশে কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত বা পরিকল্পনা সময়মতো এবং যথাযথ বাস্তবায়ন হয়না- এর কারণ, স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোকে ঠুটু জগন্নাথ বানিয়ে রাখা হয়েছে। কেন্দ্রমুখী প্রবণতা হ্রাস করে স্থানীয় সরকারগুলোকে ক্ষমতায়িত করতে পারলে জাতীয় উন্নয়নে তৃণমূল জনগনের অংশগ্রহন বাড়বে, সারাদেশে সুষম উন্নয়ন নিশ্চিত হবে। প্রয়োজন ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ এবং এর জন্য রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত একান্ত অপরিহার্য।

    বাংলাদেশকে ডিজিটালাইজড করার জন্য কেবল প্রতিষ্ঠানসমূহে আইসিটি মেটেরিয়েলস সরবরাহ যথেণ্ঠ নয়। প্রতিটি স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানে,  বিশেষত ইউনিয়ন পরিষদে তথ্যপ্রযুক্তি ও যোগাযোগ বিষয়ক স্টিয়ারিং কমিটি করে এর সদস্যদের জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে, স্থানীয় শিক্ষিত বেকার যুবকদের মধ্যে প্রতি ইউনিয়নে অন্তত তিন জনকে আইসিটি প্রশিক্ষণ দিয়ে ইউনিয়ন তথ্য ও সেবাকেন্দ্রে কর্মসংন্থান করতে হবে। তারা একাধারে জনসচেতনতার কাজটিও করবে। এজন্য ইউনিয়ন পরিষদকে বাড়তি অর্থ বরাদ্দ দিতে হবে।

    আমাদের দেশে এখনও মান্ধাতা যুগের চিন্তা-ভাবনা , কুসংস্কার গোঁড়ামী বিদ্যমান। উৎপাদন সম্পর্ক বা উৎপাদিকা শক্তির কোনটাই  এথেকে মুক্ত নয়। কাজেই ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্য আইন প্রণয়ন সহ  মানুষের মধ্যে বিজ্ঞান মনষ্কতা সৃষ্টির কাজটিও জরুরী। যে কোন কাজে গ্রহণযোগ্যতা এবং সকলের অংশগ্রহন থাকলে, তবেই তা সকলের জন্য কল্যাণকর হয়- ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার কাজে এবিষয়টিকে সর্বোচ্চ বিবেচনায় নিয়ে অগ্রসর হতে হবে।