তোমাদের মাঝে কি একজন মুসলমানও নেই? কারবালার শেষ ভাষণ

    0
    532

    আমারসিলেট24ডটকম,০৪নভেম্বরঃ কারবালার প্রান্তরে একে-একে যখন সবাই শাহাদাত বরণ করেন, হজরত ইমাম হোসাইন রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু কেবল তখন একা দাঁড়িয়ে ছিলেন। ঐ সময়টাতে তাঁর শেষ কয়েকটি কথার কিছু অংশ নিম্নে উদ্ধৃত হল।

    “হজরত ইমাম হোসাইন রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, “কেন আমাকে হত্যা করতে চাও ? আমি কি কোন পাপ অথবা অপরাধ করেছি ?” এজিদের সৈন্য বাহিনী বোবার মত দাঁড়িয়ে রইলো। পুনরায় ইমাম হোসাইন রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু  বললেন, “আমাকে হত্যা করলে আল্লাহর কাছে কি জবাব দেবে ? কি জবাব দেবে বিচার দিবসে মহানবী সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহে ওয়া সাল্লামের কাছে ?” এজিদের সৈন্য বাহিনী পাথরের মত দাঁড়িয়ে আছে।

    আবার হজরত ইমাম হোসাইন রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বললেন, “আমাদের সাহায্য করার মত কি তোমাদের মাঝে একজনও নাই ?”  তারপরের আহ্বানটি সাংঘাতিক মারাত্বক। ঐতিহাসিকদের মতে এটাই ইমাম হোসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহু’র শেষ আহ্ববান। আর তা হচ্ছে, আলাম্ তাস্মাও ? আলাইসা ফিকুম্ মুসলিমু ?”  অর্থাৎ আমার কথা কি শুনতে পাও না ? তোমাদের মাঝে কি একজন মুসলমানও নেই ?’

    মুসলিম লেবাসধারী এই অপদার্থের দল ইমাম পাকের খুতবার কোন জবাব দিতে পারলো না। সমস্ত কারবালা নিরব-নিস্তব্ধ হয়ে গেল। এবার যারা ইমাম পাককে চিঠি লিখে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল,তাদের কয়েকজনের নাম ধরে তিনি জিজ্ঞেস করতে লাগলেন,

    “হে শাবস ইবনে রাবয়ী ! হে হাযর ইবনে আবযার ! হে কায়েস বিন আশআস ! হে ইয়াযিদ ইবনে হারেস! হে যায়েদ ইবনে হারেস ! হে আমর ইবনে হাজ্জাজ ! তোমরা কি চিঠি লিখে আমাকে আমন্ত্রণ জানাওনি ? তোমরা কি আমাকে কুফায় আসার জন্য বার বার চিঠি লিখে অনুরোধ কর নাই?  তোমরা কি চিঠিপত্র ও দূত পাঠিয়ে বলো নাই যে, আমাদের কোন ইমাম নেই, আপনি আমাদের মাঝে তাশরীফ আনুন এবং আপনার মাধ্যমেই আল্লাহ তায়ালার হয়তো আমাদের সঠিক নির্দেশনা দিবেন। তোমরা এও লিখেছিলে যে, যাদের অধিকার না থাকা সত্ত্বেও ক্ষমতা দাবী করে ও অন্যায় আচরণ করে, তাদের চাইতে ইসলামী শাসন পরিচালনার ক্ষেত্রে আহলে বাইত-ই অধিকযোগ্য (বেশি হকদ্বার) ।

    ইবনে সা’দের সৈন্যবাহিনী এবারও নিরব নিথর! হঠাৎ নির্দিষ্ঠ ব্যক্তিবর্গ (যাদের নাম ধরে ধরে ইমাম পাক উপরের কথা গুলো বললেন) তারা বলে উঠল, না ! না ! আমরা কোন চিঠিপত্র লিখিনি। মিথ্যা, সবই মিথ্যা কথা। আমরা এ সম্পর্কে কিছুই জানি না।

    পুনরায় ইমাম পাক বললেন, ছি: ! ছি : (ধিক)! তোমাদের। বড়ই অনুতাপ ও পরিতাপের বিষয়। এই চেয়ে দেখো তোমাদের চিঠি। এই তোমাদের স্বাক্ষরযুক্ত আবেদনপত্র। আল্লাহর কসম ! এগুলো তোমরাই লিখেছো এবং লোক মারফত আমার নিকট প্রেরণ করেছো ।
    ঐ বেহায়া লম্পট মিথ্যুকের দল বলল, যদি লিখে থাকি তাহলে মন্দ কাজ করেছি। আমরা আমাদের কাজের প্রতি অসন্তুষ্ট।

    মজলুম ইমাম পাক বললেন, এখন আমার আগমণ যদি তোমাদের মন:পূত না হয়, তোমরা যদি আমাকে না চাও, তাহলে আমাকে ফিরে যেতে দাও। আমি যেখান থেকে এসেছি সেখানেই ফিরে যাব । তোমাদের সাথে আমার কোন বিরোধ ও বিদ্বেষ নাই ।

    ইমাম হোসাইন রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর শেষ ভাষণটি মাত্র একটি ছোট্ট বাক্য ছিল। তবে এর ব্যাখ্যা যদি কাঁচ ভাঙ্গার মত টুকরো-টুকরো করে দেখাতে চাই তাহলে সেই বাক্যটি হবে খুবই বেদনা দায়ক। তাই বেশি কিছু না বলে শেষ বাক্যটির সামান্য ব্যাখ্যা দিয়ে শেষ করতে চাই। খাজা গরীব নাওয়াজ রহমাতুল্লাহি আলাইহি যেমন বলেছেন, “ইমাম হোসাইন হক্ব এবং বাতিলের নির্ধারণটা পরিস্কার করে দেখিয়ে গেলেন; সে রকমই অর্থ বহন করছে ইমাম হোসাইন রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু শেষ ভাষণটিতে।

    কারণ এজিদের সৈন্যবাহিনীতে একজনও হিন্দু,বৌদ্ধ,খ্রিস্টান অথবা অন্য কোন ধর্মের কেউই ছিল না। সবাই ছিল মুসলমান। অথচ কি সাংঘাতিক এবং ভয়ংকর ভাষণ, “তোমাদের মাঝে কি একজনও  মুসলমান নেই ?” এজিদের সৈন্যবাহিনীর সবাই মুসলমান ছিল। অথচ ইমাম হোসাইন রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এ কি তাক লাগানো কথা বলেছেন? “তোমাদের মাঝে কি একজনও মুসলমান নেই ? ” একটিও সত্যিকারের আসল মুসলমান ছিল না বলেই ইমাম হোসাইন রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এই আহ্বান জানিয়ে পৃথিবীকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে বুঝিয়ে দিয়ে গেলেন। তিনি বুঝিয়ে দিয়ে গেলেন যে, যারা দাঁড়িয়ে আছে তারা সবাই নকল মুসলমান।সুত্রঃ সংকলনঃমুহাম্মদ রিদওয়ানুল হক,সম্পাদনাঃ মুহাম্মদ মহিউদ্দীন কর্তৃক রওশন দলীল।