ত্রাণ নিয়ে লাউয়াছড়া খাসিয়া পুঞ্জির বাড়ি বাড়ি র‌্যাব-৯

    0
    260

    “দিনে রাস্তায় টহল,রাতে গহীন বন-জঙ্গল,পাহাড়ি এবড়ো-থেবড়ো পিচ্ছিল পথ পেরিয়ে র‌্যাব-৯’র টিম ত্রাণ নিয়ে লাউয়াছড়া খাসিয়া পুঞ্জির মত অরণ্যে ছুটছে প্রতিদিন” 

    জহিরুল ইসলাম. নিজস্ব প্রতিবেদকঃ  মৌলভীবাজারের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের গহীন বন-জঙ্গল, পাহাড়ি ¯্রােতধারা আর এবড়ো – থেবড়ো পিচ্ছিল পথ পেরিয়ে র‌্যাব-৯’ টিম শ্রীমঙ্গলের এ যাত্রা। উদ্দেশ্য নয় কোন অপরাধী পাকড়াও এর, এ ছিলো চলমান করোনা পরিস্থিতিতে রাত্রিকালীন মানুষের বাড়িতে ত্রাণ পৌঁছিয়ে দেওয়ার অনেকগুলো রাতের মধ্যে একটি।

    রাত সাড়ে ৯ টায় ক্যাম্প থেকে যাত্রা শুরু করে খাবারসামগ্রী নিয়ে পাহাড়ের গভীর জঙ্গলে ঢুকছে র‍্যাব-৯ সিপাহীরা।

    দমকা হাওয়া আর আকাশে তীব্র গর্জন সাথে ঘন ঘন তীব্র শব্দে বজ্রপাত , প্রকৃতির বিরুপ এই রুপের মধ্যে নৃতাত্বিক জনজাতিগোস্টিদের আবাসস্থল লাউয়াছড়া খাসিয়া পুঞ্জিতে খাদ্যসংকটে পড়া দশটি অসহায় পরিবারের নিকট ত্রাণসামগ্রী পৌঁছে দেওয়ার প্রয়াস।
    র‌্যাব -৯, শ্রীমঙ্গল’র ক্যাম্প অধিনায়ক আনোয়ার হোসেন শামীম ও তাঁর পার্ষদবৃন্দ আর পথ দেখিয়ে নেওয়া তারুন্য নির্ভর শ্রীমঙ্গল উপজেলা প্রেসক্লাবের গণমাধ্যমকর্মী মিলে জয় করে নিলেন বন্ধুর পথ।

    শুক্রবার রাত সাড়ে ৯ টার দিকে ক্যাম্প থেকে যাত্রা শুরু করে মধ্যরাত পর্যন্ত এ তমশাছন্ন বন্ধুর পথ পাড়ি দিতে হয়েছে যাওয়া-আসার পথে দু’বার। লক্ষ জীবনযাত্রার মানের দিক দিয়ে পিছিয়ে থাকা এসব জনগোস্টির খাদ্যসংকট জনিত কারনে সাময়িক অসুবিধা থাকার অবস্থা থেকে ঘটানো। সুত্র মারফত খবর পেয়ে নিশ্চিত হয়ে, আনোয়ার হোসেন শামীম সিদ্ধান্ত নেন, যে করেই হোক তাদের হাতে খাবার তুলে দিতে হবে।

    খাবার সামগ্রীর প্যাকেট নিয়ে এবড়ো-থেবড়ো পিচ্ছিল পথ পেরিয়ে র‌্যাব-৯’র টিম।

    তবে খাদ্যসামগ্রী দেওয়ার সময় তিনি তাদের বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর তরফ হতে আপনাদের জন্য এ উপহার সামগ্রীগুলো তুলে দিতে আপনাদের মাঝে আমরা এসেছি’।মুহুর্তেই চোখে -মুখে হাসির ঝিলিক ফুটে উঠে সহজ – সরল মুখগুলোতে। র‌্যাব অধিনায়ক আনোয়ার হোসেন শামীম আরো বলে উঠেন, আপনাদের এই হাসিমাখা মুখগুলো আমাদের এই বন্ধুর পথের যাত্রাকষ্টকে একেবারে ভুলিয়ে দিয়েছে। আপনাদের মুখের হাসিই আমাদের মানুষের তরে কাজ করার সঞ্জিবনী শক্তি। এবার আমরা সন্তুষ্টি নিয়ে ফিরতে পারবো, ভবিষ্যতেও আপনাদের যেকোন প্রয়োজনে আমরা আজকের মতোই চড়াই উৎরাই পেরিয়ে অবশ্যই আসবো।’

    লাউয়াছড়া খাসিয়া পুঞ্জির মন্ত্রী ফিলা পতমী’র উপস্থিতিতে অসহায় পরিবারগুলোর মাঝে সামাজিক দুরত্ব মেনে ত্রাণ তুলে দেন র‌্যাব-৯’র অধিনায়ক ও চৌকস কর্মকর্তা এএসপি মো. আনোয়ার হোসেন শামীম, এসময় তিনি ক্ষুদ্র নৃগোষ্টির মানুষকে করোনা প্রতিরোধে সরকারী নির্দেশনা ও সামাজিক দুরত্ব মেনে চলার আহবান জানান।

    কয়েক কিলোমিটার পথ পেড়িয়ে জঙ্গল বেঁয়ে চলছে ওরা।

    ফিরে আসার পথে অন্ধকারাছন্ন এ গহীন জঙ্গলের মধ্যে বিভিন্ন পশু-পাখির ডাক শরীরে শিহরণ জাগিয়ে তোলে। মনের মধ্যেও ঘোরপাক খেতে থাকে পথিমধ্যে যদি পড়ে থাকে সরীসৃপ বা মুখোমুখি হতে হয় কোন জন্তুর সাথে। তবে এ যাত্রায় এমনটা হয়নি। এরপর মধ্যরাতে ফিরে  শ্রীমঙ্গলে বাউলদের অসহায়ত্বের খবর পেয়ে ছুটে যান আর দুস্থ বাউল শিল্পীদের ১৮ টি পরিবারের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করেন এই র‌্যাব কর্মকতা।

    Md. Anwar Hossan তার ফেইজবুক আইডিতে যা লিখেন ।

    “রাত ৯ টার দিকে এক সোর্সের মাধ্যমে সংবাদ পাই, জরুরিভিত্তিতে লাউয়াছড়া পুঞ্জির বেশকিছু খাসিয়া পরিবারের কাছে খাদ্যসহায়তা পৌঁছে দেওয়া প্রয়োজন। পুঞ্জিটির অবস্থান লাউয়াছড়া বনের মধ্যদিয়ে ৩/৪ কিলোমিটার হাঁটাপথ পার হয়ে। গমনপথে পড়বে একাধিক সাঁকোবিহীন খাল আর টিপটিপ বৃষ্টিতে বিপজ্জনক পিচ্ছিল হয়ে ওঠা ভাঙা এবড়োখেবড়ো পাহাড়ি পথ। অন্ধকার রাতে অপরিচিত ব্যক্তির জন্য এ পথকে সাক্ষাৎ মৃত্যুফাঁদ বললেও অত্যুক্তি করা হবে না। কিন্তু দুর্গম যোগাযোগ এবং প্রতিকূল আবহাওয়ার ভয়ে থেমে যাবার পাত্র তো ইনশাআল্লাহ আমার টিম শ্রীমঙ্গল নয়! তাৎক্ষণিক কিছু চাল-ডালের বস্তা প্রস্তুত করে আমরা ওই গভীর রাতেই খাসিয়া পাহাড়ের উদ্দেশে যাত্রা আরম্ভ করি।
    সরি, টিম শ্রীমঙ্গলের র‍্যাব সদস্যরা। আছাড় খেয়ে যে শরীরের দু-চার জায়গার ছাল উঠিয়েছো, সেটার ক্ষতিপূরণ তো আর দিতে পারবো না।আমার উচিত আজই কাদা পানিতে নষ্ট হয়ে যাওয়া তোমাদের বুট জোড়ার ক্ষতিপূরণটা অন্ততঃ দিয়ে দেওয়া। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী এভাবেই দুর্গত মানুষের দুয়ারে দুয়ারে পৌঁছে যাবে শ্রীমঙ্গল র‍্যাব ক্যাম্প পরিবার। ভাল থাকুন খাসিয়া নৃগোষ্ঠী। ভাল থাকুক বাংলাদেশ।”