শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি: সারাদেশের চা শ্রমিকদের মজুরী বৃদ্ধির দাবীতে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে মতবিনিময় সভা করেছে বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়ন। সোমবার ১ আগস্ট ২০২২ ইং তারিখ বিকেল সাড়ে ৩টায় শহরের মৌলভীবাজার সড়কের বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে (লেবার হাউস) এ সভাটি করা হয়।
বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মাখন লাল কর্মকারের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন চা শ্রমিক ইউনিয়নের সহসভাপতি পংকজ কন্দ, সাধারণ সম্পাদক (ভারপ্রাপ্ত) নিপেন পাল, অর্থ সম্পাদক পরেশ কালিন্দি, বালিশিরা ভ্যালীর সভাপতি বিজয় হাজরা, জুড়ি ভ্যালীর সভাপতি শ্রীমতি বাউরি প্রমুখ।
এসময় চা শ্রমিক ইউনিয়নের ৭টি ভ্যালীর (বালিশিরা ভ্যালী, লস্করপুর ভ্যালী, সিলেট ভ্যালী, চট্রগ্রাম ভ্যালী, মনু-ধলই ভ্যালী, লংলাভ্যালী ও জুড়িভ্যালী) সভাপতি, সম্পাদকসহ অন্যান্য নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে চা শ্রমিক নেতারা বলেন, বর্তমান দ্রব্য মূল্যেও উর্ধগতির বাজারে আমাদের শ্রমিকরা ১২০ টাকা মজুরি দিয়ে খুব কষ্টে দিন যাপন করছেন। প্রতিটি পরিবারে ও অনেক খরচ। একটি জিনিস কিনলে অন্যটি কিনতে পারছেননা তারা। আমরা বারবার বাগান মালিকদের সাথে বৈঠক করছি। কিন্তু তারা বারবার তাল বাহানা করে মজুরি বৃদ্ধি করছেন না। এতে করে শ্রমিকরা ভিতরে ভিতরে ক্ষোভে ফোঁসে উঠছেন। আমাদের চা শ্রমিক ইউনিয়ন ও বাগান মালিকদের দ্বিপাক্ষিক চুক্তি অনুযায়ী মজুরী বৃদ্ধি করার কথা থাকলেও মালিকরা চুক্তি ভঙ্গ করছেন। এমতাবস্থায় আমরা আগামীকাল (মঙ্গলবার) বাংলাদেশ চা সংসদের সাথে বসবো। চা শ্রমিকদের ৩০০ টাকা মজুরী করার দাবী পেশ করবো। যদি ৭ কার্যদিবসের মধ্যে কোন আশানুরুপ কাজ না হয়,আমরা সারা দেশের চা শ্রমিকদের নিয়ে চা বাগানে কর্মবিরতি সহ বৃহৎ আন্দোলনের ডাক দিবো। চা বাগানের সব কারখানা বন্ধ করে দিবো।
চা শ্রমিক ইউনিয়নের নির্বাচন প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে, চা শ্রমিক নেতারা বলেন, আমাদের চা শ্রমিক ইউনিয়নের বর্তমান কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ার অনেক আগ থেকেই আমরা সরকারের শ্রমকল্যান অধিদপ্তরের কাছে চিঠি পাঠিয়েছি। যেন মেয়াদ শেষ হওয়ার সাথে সাথে তারা নির্বাচনের ব্যবস্থা করে দেয়। কিন্তু আমাদের মেয়াদ শেষ হয়ে অনেক দিন চলে গেছে। আমরা বারবার তাদের কাছে নির্বাচনের জন্য যাচ্ছি। শ্রম অধিদপ্তর আমাদের বলেছে নির্বাচনের জন্য যে ফান্ড প্রয়োজন সেটা তাদের এই মুহুত্বে না থাকায় নির্বাচন দিতে পারছেন না। এখন আমরা নিজেরা যদি নির্বাচনের আয়োজন করি তাহলে সেটা বির্তকিত হওয়ার সম্ভবনা থাকে বিধায় আমরা তাদের সাথে বারবার যোগাযোগ করছি। আমরা নির্বাচনটির জন্য বিভিন্ন এমপি ও মন্ত্রীর কাছেও গিয়েছি। যেন তারা উদ্যোগ নিয়ে আমাদের একটি সুষ্ঠ নির্বাচন উপহার দেন।
শ্রীমঙ্গলস্থ বিভাগীয় শ্রম দপ্তরের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ নাহিদুল ইসলাম বলেন, চা শ্রমিকদের মজুরী বৃদ্ধিও বিষয়টি মুলত মালিক পক্ষের সাথে দ্বিপাক্ষিক চুক্তি মোতাবেক হয়ে থাকে। সেখানে আমরা প্রভাব বিস্তার করতে পারি না। কিন্তু তারা যদি আমাদের কাছে বিচার প্রার্থী হয়, সেক্ষেত্রে আমরা দুই পক্ষকে নিয়ে আলোচনা করে মিমাংসা করতে পারি।
নির্বাচনের বিষয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশের ট্রেড ইউনিয়ন গুলোর নির্বাচন সাধারণত তারা নিজেরাই করে থাকে। সরকার তাদের নির্বাচন করে দিতে বাধ্য নন। কিন্তু চা শ্রমিক ইউনিয়ন যেহেত একটি বড় প্রতিষ্ঠান। বাংলাদেশের কয়েকটি জেলা নিয়ে লাখো শ্রমিক সম্পৃক্ত সেক্ষেত্রে সরকার এখানে নির্বাচনের ব্যবস্থা অতীতে করে দিয়েছে। এবছর আমাদের কাছে তারা নির্বাচনের জন্য এসেছিলো। আমরা অর্থমন্ত্রনালয়ে এই খরচের জন্য চিঠি দিয়েছি। কিন্তু সেখান থেকে অর্থ না পাওয়ায় আমাদের আসলে করনীয় কিছুই নেই।