দুইবার পরীক্ষা দিতে পারি নাইঃবন্দী থাকতে হইছেঃরাষ্ট্রপতি

    0
    233

    আমার সিলেট টুয়েন্টিফোর ডটকম,০৪মার্চঃ  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন হতেই হবে বলে মন্তব্য করেছেন রাষ্ট্রপতি আলহাজ্জ মোঃ আবদুল হামিদ।

    ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫০তম সমাবর্তন উপলক্ষে শনিবার দুপুরে এ কথা বলেন তিনি।

    শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বলেন, “সত্যিকারভাবে যারা ছাত্র, তারা যাতে ছাত্র নেতৃত্বে থাকে। ৪৫, ৫০ বছর বয়সের একটা ব্যক্তি যদি এখানে ছাত্র সংগঠনের নেতৃত্ব দেয়, এই ইউনিভার্সিটির ২০, ২২, ২৩ বছরের ছেলেমেয়েরা যারা আছে, তাদের সঙ্গে তাদের অ্যাডজাস্টমেন্টটা কী করে হতে পারে। এটা তো আমি বুঝি না।”

    তিনি বলেন, “ঢাকা ইউনিভার্সিটি যে ডাকসু নির্বাচন, ইজ এ মাস্ট (হতেই হবে)। এই ডাকসু নির্বাচন করা দরকার। ডাকসু নির্বাচন যদি না হয়, তাহলে, মানে ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব এ দেশের জন্য একটা শূন্যতা সৃষ্টি হবে।”

    রাষ্ট্রপতি বলেন, “মনের কথা সব কিছু লেখা বড় কঠিন। আগে আমরা প্রেমপত্র লিখতাম। বিভিন্ন বই পত্র ঘেঁটে বিভিন্ন কোটেশন নিয়ে আমরা প্রেমপত্র লিখতাম। এখন তো প্রেমপত্রও উঠে গেছে। কারণ এখন সব মেসেজ। মেসেজ পাঠাই দিলেই সব কিছুই শেষ। প্রেমপত্র লেখাও একটি সাহিত্য। একটা আর্ট ছিল, শেষ হয়ে গেছে।”

    সময়মত বিয়ের প্রসঙ্গে রাষ্ট্রপতি বলেন, “কেউ কেউ বলতে পারেন, ২৫ বছরে বিয়া না করলেও চলে। যেমন দুই বৎসর আগে আমাদের রেলমন্ত্রী বিয়ে করেছেন ৬৫ বছর বয়সে। এখন কেউ যদি এক্সাম্পল দেয় যে আমাদের রেলমন্ত্রী তো ৬৫ বছরে তো বিয়ে করসে। করসে, এটাও ঠিক, তবে এটা রেয়ার কেইস।”

    নিজের ছাত্রজীবনে রাজনৈতিক কারণে কারাবরণ করা এবং এ কারণে পড়ালেখায় পিছিয়ে পড়ার ইতিহাস বর্ণনা করেন রাষ্ট্রপতি। তিনি বলেন, “আমার অবশ্য ইতিহাস সবই অন্যরকম। ৬১ সালে ম্যাট্রিক পাস কইরা, ৬৫ সালে বিএ পাস করার কথা ছিল। সেই বিএ পাস করলাম ৬৮ সালে, না ৬৯ সালে। অর্থাৎ চার বছরের জায়গায় আট বছরই লাইগা গেল। ছাত্র খারাপ ছিলাম ঠিকই , শুধু ছাত্র খারাপ ছিলাম এটা বললে হবে না। দুইবার পরীক্ষা দিতে পারি নাই। জেলে বন্দী থাকতে হইয়াছে।”

    আব্দুল হামিদ বলেন, “এইডারও একটা কাহিনি আছে। যখন নাকি বিএ পাস করতামই পারি না, তখন আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব একই কথা যে বিএ পাস কবে হইব, কী ব্যাপার-স্যাপার। উত্তর দিতে দিতে আর ভালো লাগে না। তখন একটা চিন্তা কইরা ফাললাম। তখন আইয়ুব খান, মোনায়েম খাঁর বিরুদ্ধে আন্দোলন করতাসি। আন্দোলন তুঙ্গে। পরে এক জনসভার মধ্যে…কিশোরগঞ্জে, বিরাট জনসভা, কিশোরগঞ্জ স্টেডিয়ামে। সেখানে ৭০-৮০ হাজার মানুষের মাঝে ঘোষণা করলাম, যতদিন পর্যন্ত আইয়ুব খান, মোনায়েম খাঁ কে উৎখাত করতে পারব না, ততদিন আমি বিএ পাস করব না। সবাই করতালি দিল। যাক একটা সার্টিফিকেট পাইয়া গেলাম। এরপরে বিএ পাস কবে হইব, এইতা নিয়া আর কোন কথা বলে নাই।”

    রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ এ সময় শিক্ষার্থীদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস সমুন্নত রেখে নিজ নিজ জায়গা থেকে অবদান রাখার তাগিদ দেন।

    সমাবর্তন বক্তা অধ্যাপক ড. অমিত চাকমাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে ডক্টর অব সায়েন্স ডিগ্রি প্রদান করা হয়।

    বক্তব্য দেয়ার আগে রাষ্ট্রপতি বিভিন্ন অনুষদের ডিনদের সুপারিশে ৬১ জনকে পিএইচডি, ৪৩ জনকে এমফিল ও ১৭ হাজার ৮৭৫ জনকে গ্র্যাজুয়েট হিসেবে স্বীকৃতি দেন। এরপর ৯৪টি স্বর্ণপদকের জন্য মনোনীত ৮০ জনকে পদক দেন।

    পদক দেয়ার পর বক্তব্য দেন ভিসি অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, সমাবর্তন বক্তা অধ্যাপক অমিত চাকমা। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপউপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. নাসরিন আহমাদ।

    এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপউপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামান, ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এনামউজ্জামানসহ বিভিন্ন অনুষদের ডিন।

    অনুষ্ঠানে সমাবর্তন বক্তা বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কানাডার ওয়েস্টার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট এবং উপাচার্য অধ্যাপক অমিত চাকমাকে সম্মানসূচক ডক্টরেট অব সায়েন্স ডিগ্রি প্রদান করা হয়।

    এর আগে বেলা ১১টা ২৫ মিনিটে বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হল প্রাঙ্গণ থেকে সমাবর্তনের শোভাযাত্রা শুরু হয়। বেলা সাড়ে ১১টায় কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে শুরু হয় সমাবর্তনের মূল আনুষ্ঠানিকতা। সমাবর্তন উপলক্ষে শিক্ষার্থীরা সকাল থেকে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনায় অনুষ্ঠানস্থলে আসতে থাকেন। সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের দেয়া কালো গাউন আর সমাবর্তন ক্যাপ পরে এসেছেন। জীবনের স্মরণীয় মুহূর্ত  গুলোকে ফ্রেমবন্দি করছেন তারা।