দেশের সেনাবাহিনীর প্রতি রুহুল কবির রিজভীর উপদেশ !

    0
    216

    আমারসিলেট24ডটকম,১৭জানুয়ারীঃ বাংলাদেশের সেনাবাহিনী এবং সব আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কাছে প্রশ্ন রেখেছে ২০ দলীয় জোট। প্রশ্ন রেখে বলা হয়, ‘তারা কী ৫ শতাংশ ভোটের অবৈধ সরকারের নির্দেশ শুনবে, নাকি ৯৫ শতাংশ মানুষের পক্ষে থাকবে? এদেশে অত্যাচারীরা কোনোদিনই টিকতে পারেনি।’

    ‘যৌথবাহিনীর পাশাপাশি এখন সেনাবাহিনীও মাঠে নামবে।’ গত বৃহস্পতিবার রাজবাড়ীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এমন বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে এমন প্রশ্ন রাখে বিএনপি জোট। শনিবার দুপুরে সংবাদ মাধ্যমে পাঠানো বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এ মন্তব্য করা হয়।

    বিবৃতিতে সেনাবাহিনী এবং আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে উদ্দেশ করে বলা হয়, তারা যেন ক্ষমতাসীন উচ্চপর্যায়ের ব্যক্তিদের প্রতিশোধবাসনার যন্ত্রে পরিণত না হন, কারণ এদেশের সমগ্র জনগোষ্ঠী তাদের বেতন নিশ্চিত করে।

    বিবৃতিতে বলা হয়, ‘২০০৯ সালে ক্ষমতাসীন হবার পর থেকে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ক্রমাগতভাবে মানুষের অধিকারগুলো সংকুচিত করেছে। বিশেষভাবে গণতন্ত্রে যে বিরোধী দলের বিশেষ একটি জায়গা আছে সেটিকে তারা কখনই বিশ্বাস করেনি। গণতন্ত্রে স্বীকৃত বিরোধী দলের সকল কর্মকাণ্ডকে বানচাল করতে তারা দমননীতি অবলম্বন করেছে। তাদের দমননীতি অমানবিক, মধ্যযুগীয় এবং নাজি ফ্যাসিষ্টদের সমতুল্য। শুধুমাত্র কথা বলা, সভা, সমাবেশের অধিকারগুলোই তারা হরণ করেনি বরং নাজিদের কায়দায় বিরোধী দলের নেতৃবৃন্দকে অবরুদ্ধ, কারারুদ্ধ, মিথ্যা মামলাতেই জড়ানো হয়নি, অনেককে পৃথিবী থেকে বিদায় করে দেয়া হয়েছে।’

    বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, সমাজের নানাস্তরের মানুষসহ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের গুম, গুপ্তহত্যা ও ক্রসফায়ারের নির্মম শিকার হতে হয়েছে। ফলে এই পৈশাচিক দুঃশাসনকে মোকাবেলা করার জন্য ২০ দলীয় জোট গঠন হওয়ার পর থেকে ঐক্যবদ্ধভাবে মানুষের হারানো অধিকার পুনর্রুদ্ধারের আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। ২০ দলীয় জোটের অসংখ্য নেতাকর্মীদের হত্যা করে ৫ জানুয়ারির একতরফা নির্বাচনের পর আওয়ামী মহাজোট সরকার অবৈধ একদলীয় রাষ্ট্র ব্যবস্থা কায়েম করে আরো বেশি নির্দয় ও নিপীড়কের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে।

    মানুষের ভোটাধিকার পুনর্রুদ্ধার, বাক, ব্যক্তি ও সমাবেশের অধিকার আদায়, সর্বত্র নিরাপত্তাহীনতা থেকে দেশের মানুষের উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা দূরীভুত করতে গণমানুষের অবরোধ কর্মসূচির ওপর সরকারের বিভিন্ন বাহিনীর কাপুরোষোচিত বর্বর হামলার নিদর্শনগুলো দেখলে মনে হয় সরকার মানসিক বিকারগ্রস্ত হয়ে পড়েছে।

    ২০ দলীয় জোট নেতা ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে ১৪ দিন ধরে নিজ কার্যালয়ের ভেতর অবরুদ্ধ রেখে কার্যালয়ের চারিদিকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ ইট, বালু, কাঠের ট্রাক দিয়ে ব্যারিকেড করে রাখা, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবসহ ২০ দলীয় জোটের কেন্দ্রীয় নেতাদের এবং দেশব্যাপী শত সহস্ত্র নেতাকর্মীকে কারাগারে আটক রাখা, হাজার হাজার নেতাকর্মীর নামে মিথ্যা মামলা দায়ের, প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা, এজেন্টদের দিয়ে যানবাহনে আগুন লাগিয়ে পরিকল্পিত নাশকতা করে বিরোধী দলের ওপর দায় চাপানো, প্রকাশ্যে বুকে গুলি করার নির্দেশ ইত্যাদি ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি এখন এদেশে বিরাজমান। আর এই নিষ্ঠুর কর্মযজ্ঞে নামানো হয়েছে দলীয় চেতনায় উজ্জীবিত বেশকিছু আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কর্মকর্তাদের। আর এর সাথে জুড়ে দেয়া হয়েছে বেসামাল দলীয় ক্যাডারদের। যেমন চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জে যৌথবাহিনী আওয়ামী প্রতিহিংসার চেতনা নিয়ে ছাত্রদলের এক নেতাকে হত্যা ও বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের বাড়িতে আগুন দিয়ে ছারখার করে দিয়েছে।

    একই সাথে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে ৩ জানুয়ারি থেকে অবরুদ্ধ করার পর থেকে সারাদেশে চালানো হচ্ছে হিংস্র তাণ্ডব, রক্ত ঝরানো হচ্ছে বিভিন্ন জনপদে। এছাড়া দেশের প্রখ্যাত কূটনীতিক, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সাবেক প্রতিমন্ত্রী রিয়াজ রহমানও এই দুঃশাসনের ছোবল থেকে রেহাই পাননি। ক্ষমতাসীনদের মদদপুষ্ট দুস্কৃতকারীরা তাকে হত্যার উদ্দেশে গুলি চালিয়ে মারাত্মকভাবে আহত করে বলেও বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়।

    ২০ দলীয় জোটের বিবৃতিতে আরো বলা হয়, এই অবৈধ সরকারের অগ্রহণযোগ্য ও নিষ্ঠুর দুর্ব্যবহারের কবলে গোটা জাতি আজ অপমানিত। গত পরশু বিজিবি মহাপরিচালক এবং গতকাল মহাপুলিশ পরিদর্শকের বক্তব্য জাতিকে স্তম্ভিত ও হতবাক করেছে। ঔদ্ধতপূর্ণ এবং এখতিয়ার বহির্ভুত এই বক্তব্য জনমনে আতঙ্ক ও উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিজিবির হাতে মারণাস্ত্র জনগণের টাকায় কেনা। এটি কোনো দল বা ব্যক্তির প্রাইভেট বাহিনী নয়। পুলিশের আইজি বিএনপি চেয়ারপারসন সম্পর্কে যেভাবে বক্তব্য রেখেছেন তাতে মনে হয় একজন ছাত্রলীগের নেতা পুলিশের পোশাক পরে বক্তব্য রাখছে। পুলিশের আইজির বক্তব্য নজীরবিহীন ও চরম ধৃষ্টতাপূর্ণ। তাদের মনে রাখা উচিৎ কোনো অপকর্মই কখনো চিরদিনের জন্য মাটিচাপা থাকে না। জনগণ সব ঔদ্ধত্য, অহঙ্কার এবং নিষ্ঠুর অনাচরের বিচার করবেই।

    ২০ দলীয় জোট বিজিবির মহাপরিচালক এবং পুলিশের মহাপরিদর্শকের এখতিয়ার বহির্ভুত বক্তব্যের তীব্র নিন্দা, ধিক্কার ও প্রতিবাদ জানাচ্ছে।

    বিবৃতিতে ২০ দলীয় জোট বেগম খালেদা জিয়াকে অবরুদ্ধ অবস্থা থেকে মুক্তি এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবসহ ২০ দলীয় জোটের সকল পর্যায়ের আটককৃত নেতাকর্মীদের নিঃশর্ত মুক্তি ও তাদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের জোর দাবি জানায়। সেই সঙ্গে সরকারকে পদত্যাগ করে সবার অংশগ্রহণে একটি গ্রহণযোগ্য স্বচ্ছ নির্বাচন দেয়ার দাবিও জানানো হয় ওই  বিবৃতিতে।

    সেই সঙ্গে ২০ দলের  বিজয় অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত চলমান অবরোধ কর্মসূচি অব্যাহত রাখার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করা হয় তার বিবৃতিতে।