নদীতে বাঁধ দেওয়া মানে নদীকে হত্যা করা:জৈন্তাপুরে সুলতানা কামাল

0
149

জৈন্তাপুর (সিলেট) প্রতিনিধি: বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) এর সভাপতি, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল বলেন-, নদী একটি জীবন্ত সত্ত্বা। প্রবাহমান হিদাইরখাল নদীতে বাঁধ দেওয়া মানে নদীকে হত্যা করা। যারা এই অপকর্মের সাথে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে নদী হত্যার অভিযোগে বিচার হওয়া উচিত। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিরোধী কাজ হচ্ছে পরিবেশ প্রকৃতি ধ্বংস করা।

আজ শুক্রবার (৯ জুন) বিকেলে গোয়াইনঘাট উপজেলার হিদাইরখাল নদীর উপর অবৈধ ভাবে নির্মিত বাঁধ অপসারণ ও পরিবেশ বিধ্বংসী সকল কর্মকাণ্ড বন্ধের দাবিতে সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলার দরবস্ত বাজারে গণ-জমায়েতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন। কর্মসূচিতে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার সহস্রাধিক মানুষ অংশগ্রহণ করেন।

সুলতানা কামাল আরও বলেন, একটি প্রাণবন্ত নদীর উৎসমুখে বাঁধ নির্মাণ কেবলমাত্র বেআইনি নয়, এটি একটি অপরাধও। জনগণের করের টাকা দিয়ে নদী হত্যা কিছুতেই বরদাস্ত করা হবেনা। বর্তমান সরকার নদী খেকো ও ধ্বংসকারীদের তালিকা তৈরি করছে । কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া দূরে থাক বরং নানা ভাবে তাদেরকে প্রশ্রয় দেওয়া হয়েছে। নদী খেকোদের প্রতি জিরো টলারেন্স নীতির কথা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলছেন। কিন্তু কিছু দুষ্টু লোকের লোভের কারণে তার প্রতিফলন দেখা যায়না । নদী ও পরিবেশ ধংসের অপকর্মে যারা লিপ্ত তারা যতোই শক্তিশালী হোক না কেনো, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। পরিবেশ ধ্বংসকারীরা বাংলাদেশের শত্রু। জনগণের শক্র, তারা পৃথিবী এবং মানবজাতিরও শত্রু। যেকোনো নির্বাচনে নদী খেকো ও পরিবেশ ধ্বংকারী প্রার্থীদের বয়কট করার আহ্বান জানান তিনি।

তিনি আরও বলেন, পাহাড়-টিলা, নদী-খাল, হাওর-বাওর, বন-বন্যপ্রাণি সবই উন্নয়নের নামে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। এভাবে দেশের পরিবেশ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে উপনিত হয়েছে। তাই অবিলম্বে এসব কাজ বন্ধ করতে হবে। সাধারণ মানুষকে সোচ্চার হতে হবে। নিজেদের প্রয়োজনেই।

প্রধান আলোচকের বক্তব্য বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) এর সাধারণ সম্পাদক ও ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশের সমন্বয়ক শরীফ জামিল বলেন, হিদাইরখাল আবহমানকাল থেকে চলা প্রাকৃতিক ভাবে সৃষ্ট প্রাণবন্ত প্রমত্তা এক নদী । দীর্ঘদিন এ বাঁধ অপসারণের জন্য আন্দোলন করা হলেও এ বাঁধ অপসারণ করা হয়নি। উল্টো বর্তমানে আটলিহাই-নাইন্দা সড়ক প্রকল্পের মাধ্যমে বাঁধটি পাকাকরণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এটি কোনো ভাবেই বরদাস্ত করা হবে না। স্বার্থান্বেষী কিছু মানুষের ব্যক্তিস্বার্থে নির্মিত এ বাঁধ অবিলম্বে অপসারণ সেখানে একটি সেতু নির্মাণের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।

শরীফ জামিল আরও বলেন, যে কোনো প্রাকৃতিক নদীতে বাঁধ দেওয়া বাংলাদেশ পানি আইন-২০১৩ এর ২০(১) ও (২) ধারার স্পষ্ট লঙ্ঘন। বর্তমান সরকার এদেশের নদী, প্রাণ ও প্রকৃতিকে রক্ষার জন্য জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন গঠন করেছেন, প্রণয়ন করা হয়েছে ’ডেল্টা প্ল্যান’। হিদাইরখাল বাঁধ বর্তমান সরকারের এসব আন্তরিক প্রয়াসের সম্পূর্ণ উল্টো যা স্থানীয় কিছু মানুষ ব্যক্তিস্বার্থে করেছে। এছাড়া এটি উন্মুক্ত জলাধার আইন ও পরিবেশ আইনের দৃষ্টিতেও অবৈধ।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা), ওয়াটার কিপার্স বাংলাদেশ ও সারী নদী বাঁচাও আন্দোলন আয়োজিত গণ-জমায়েতে সভাপতিত্ব করেন দরবস্ত ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বাহারুল আলম বাহার।

সারী নদী বাঁচাও আন্দোলনের সভাপতি আবদুল হাই আল হাদীর সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন জৈন্তাপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. কামাল আহমদ, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) হবিগঞ্জ শাখার সাধারণ সম্পাদক ও খোয়াই রিভার ওয়াটার কিপার্স তোফাজ্জল সোহেল, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সিলেটের কোষাধ্যক্ষ, সিলেট জেলা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ছামির মাহমুদ ও বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) এর কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ফাদার যোসেফ গোমেজ, পূর্ব জাফলং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা লুৎফুর রহমান লেবু, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. ফয়জুল্লাহ। গণজমায়েতের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সারী নদী বাঁচাও আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক মো. মাহবুবুল আলম।
অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জৈন্তাপুর প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ফয়েজ আহমদ, আলতাফ হোসেন বিলাল, সেলিম আহমদ, বিশিষ্ট মুরব্বি আব্দুল হক, আবাদুস শুক্কুর, হোসেন আহমদ প্রমুখ।