নবীগঞ্জ জমে উঠেছে উপজেলা নির্বাচন মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন প্রার্থীরা

0
107

নূরুজ্জামান ফারুকী, নবীগঞ্জ থেকে: দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রেশ কাটতে না কাটতেই উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রার্থী নিয়ে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়েছে নবীগঞ্জ উপজেলা-জুড়ে। ইতিমধ্যেই আওয়ামী লীগের অনেক নেতাই নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার বিষয়ে জানান দিচ্ছেন। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা না হলেও মাঠ পর্যায়ে গণসংযোগে নেমে পড়েছেন নবীগঞ্জের সম্ভাব্য প্রার্থীরা। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে অনেকেই আগাম শুভেচ্ছা ও যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছেন। তাদের সমর্থকরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার প্রচারণা করতেও দেখা যাচ্ছে। ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগের হয়ে নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করতে পারেন এমন সম্ভাব্য অনেক প্রার্থীর নাম বেশ জোরেশোরে উচ্চারিত হচ্ছে। এবারে উপজেলা পর্যায়ে কোন দলের কারা হবেন প্রার্থী, সেই হিসাব-নিকাশ নিয়ে রাজনৈতিক মহলে নানা আলোচনার ঝড় বইছে। বিএনপি নির্বাচনে না আসার ব্যাপারে ঘোষণা দেয়ায় মাঠে নেই বিএনপির কোন প্রার্থী। তবে দলীয় সিদ্ধান্তের বাহিরে গিয়ে প্রার্থী হওয়ারও গুঞ্জন রয়েছে। এদিকে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন আগামী মে মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে শুরু করতে চায় নির্বাচন কমিশন, গণমাধ্যমে এমন তথ্য জানিয়েছেন ইসি। এসএসসি পরীক্ষা ও রোজার বিষয়টি চিন্তা করে এই সময় নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি। ইসি সূত্রমতে ঈদের পর অনুষ্ঠিত হতে পারে নবীগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন। ১৩টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভা নিয়ে গঠিত নবীগঞ্জ উপজেলা।
এই উপজেলায় মোট ভোটারের সংখ্যা ২ লাখ ৭৭ হাজার ৮০০ জন। ২০১৯ সালে নবীগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক মো. ফজলুল হক চৌধুরী সেলিম স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে ৪৭ হাজার ২৩০ ভোট পেয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ওই নির্বাচনে তৎকালীন উপজেলা চেয়ারম্যান ও আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী আলমগীর চৌধুরী নৌকা প্রতীকে ভোট পেয়েছিলেন ২৬ হাজার ১১৩।
তবে বিভিন্ন সূত্র বলছে, এবারের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রতীক না দেয়ার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এবারও নবীগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট প্রার্থী হিসেবে মাঠে আছেন বর্তমান উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফজলুল হক চৌধুরী সেলিম, জেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নুর উদ্দিন চৌধুরী বুলবুল, সাবেক এমপি এড. আব্দুল মোছাব্বির’র পুত্র ও জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট সুলতান মাহমুদ, উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সভাপতি ইউপি চেয়ারম্যান ইমদাদুর রহমান মুকুল। এছাড়া উপজেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক মুজিবুর রহমান শেফু, যুবদল নেতা শেখ মোস্তফা কামাল নির্বাচনী মাঠে রয়েছেন। এ পর্যন্ত এই উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে ৬ জন প্রার্থী হওয়ার খবরই পাওয়া যাচ্ছে সবদিকে। এর বাহিরে অন্য কেউ প্রার্থী হতে চাইলেও তা গণমাধ্যমকর্মী ও জনসাধারণের অজানা। অন্যদিকে কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নির্বাচনে না যাওয়ার ঘোষণা দেয়ায় বিএনপির কোনো সম্ভাব্য প্রার্থী বা নেতাকর্মীকে নির্বাচনী কার্যক্রমে দেখা যায়নি। বিএনপি’র তৃণমমূল নেতা-কর্মীদের মধ্যেও উপজেলা নির্বাচন নিয়ে কোনো ধরনের আগ্রহ প্রকাশ করতে দেখা যায়নি।
তবে উপজেলা নির্বাচন নিয়ে হাট-বাজার, চায়ের দোকান, পাড়া-মহল্লায় আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থীদের নামের পাশাপাশি বিএনপি ও তার শরীকদলের সম্ভাব্য প্রার্থীদের নিয়েও আলোচনা করছেন সাধারণ ভোটাররা। দলীয় সিদ্ধান্তের বাহিরে গিয়ে চেয়ারম্যান পদে নবীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক মুজিবুর রহমান চৌধুরী সেফু প্রার্থী হওয়ার গুঞ্জন রয়েছে। যদিও বিষয়টি এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। ইতিমধ্যে গণসংযোগ-মতবিনিময়ে অংশ নিচ্ছেন আওয়ামীলীগের উল্লেখিত সম্ভাব্য প্রার্থীরা। যোগাযোগ রাখছেন তৃণমূল পর্যায়ের কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে। মাঠের রাজনীতির পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুক মুখরিত সম্ভাব্য প্রার্থীদের কর্মী-সমর্থকদের পোস্টে। এছাড়াও ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হতে পারেন এমন বেশ কয়েকজনের নাম শোনা যাচ্ছে।
এদিকে, সম্প্রতি আগারগাঁও নির্বাচন ভবনে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ইসি বলেন, উপজেলা নির্বাচন করার সময় যেটা, সে সময়টা চলে এসেছে। সামনে এসএসসি পরীক্ষা শুরু হয়ে যাচ্ছে। এরপর রোজা। রোজার মধ্যে তো নির্বাচন করা সম্ভব না। ঈদের পরপরই যাতে নির্বাচন হয় সেইভাবে আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি। মে মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে শুরু হয়ে মে মাসের শেষ সপ্তাহের মধ্যে শেষ করতে চাচ্ছেন ইসি। রোজার শেষের দিকে তফসিল হতে পারে জানিয়ে ইসি বলেন, ঈদের কিছুদিন আগে তফসিল হতে পারে। আর নির্বাচনী প্রচারণা এবং নির্বাচন ঈদের পরে হবে।
কত আসনে নির্বাচন হবে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখন সবগুলো উপজেলা পরিষদে নির্বাচন সম্ভব হবে না। প্রায় চার শতাধিক পরিষদে নির্বাচন হবে। ২০১৫ সালে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের আইন সংশোধন করে দলীয় প্রতীকে ভোটের বিষয়টি যুক্ত করা হয়। আর ২০১৭ সালের মার্চে প্রথমবার তিন উপজেলায় দলীয় প্রতীকে ভোট হয়।
তবে ২০১৯ সালে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মতাসীন দল আওয়ামী লীগ চেয়ারম্যান পদ বাদে বাকি দুটি পদ উন্মুক্ত রাখেন। এবারের উপজেলায় নৌকা প্রতীক না দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এদিকে বিএনপি এই উপজেলা নির্বাচনেও অংশগ্রহণ করছে না বলে জানিয়েছেন দলটির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
দলীয় প্রতীক বিহীন নির্বাচন হওয়ায় দলমতের উর্ধ্বে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির ঘরোয়া অনেক রাজনৈতিক নেতা নির্বাচনী মাঠে রয়েছেন। ফলে জমে উঠেছে উপজেলা পরিষদের নির্বাচনী মাঠ। উক্ত নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান পদে একাধিক প্রার্থী মাঠে কাজ করছেন।
এদের মধ্যে উল্লেখ্য যোগ্য হলো বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট গতি গোবিন্দ্র দাশ, সাবেক সাধারণ সম্পাদক সিনিয়র সাংবাদিক সাইফুল জাহান চৌধুরী, লন্ডন প্রবাসী অনর উদ্দিন জাহিদ গংরা মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন।
এরমধ্যে সাইফুল জাহান চৌধুরী তৃণমুল পর্যায়ে সুপরিচিত ও হেভিওয়েট প্রার্থী হিসেবে ইতিমধ্যে নির্বাচনী মাঠ গরম করে রেখেছেন।