না’গঞ্জের ডিসিকে হাই-কোর্টে শো’কজ:এডিসির কর্মের খেসারত!

    0
    275

    আমারসিলেট টুয়েন্টিফোর ডটকম,১০সেপ্টেম্বর: বিষেরবাঁশী সম্পাদক সুভাষ সাহার লিজ অবৈধভাবে বাতিল করায় নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসকসহ ১১ কর্মকর্তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছেন হাই কোর্ট।  বিচারপতি মোঃ ইমদাদুল হক ও মুহাম্মদ খুরশিদ আলম সরকারের দ্বৈত বে  ৩ সপ্তাহের মধ্যে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসকের ওই সিদ্ধান্ত কেন অবৈধ হবে না তা জানতে চেয়েছেন।

    দীর্ঘ ২১ বছর ধরে যৌথভাবে লিজপ্রাপ্ত (পরিত্যক্ত সম্পত্তি) দোকান ঘরে দুই ভাই ব্যবসা পরিচালনা করে আসলেও চলতি বছরের গত ২৫ জুন ঠুনকো অজুহাতে আকস্মিকভাবে অবৈধ প্রক্রিয়ায় বড় ভাই সুভাষ সাহার বৈধ লিজ বাতিল করে তা ছোট ভাই শংকর চন্দ্র সাহাকে লিজ দেয় নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক। জেলা প্রশাসনের এই আদেশকে চ্যালেঞ্জ করে গত ১৭ আগষ্ট উচ্চ আদালতে রিট করেন সুভাষ সাহা। এর প্রেক্ষিতে আদালত উক্ত আদেশ দেন।

    সুভাষ সাহা আবেদনে উল্লেখ করেন, চলতি বছরের গত ২৫ জুন কোন রকম শুনানি বা আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে গোপনে জেলা প্রশাসক (স্মারক নং- ০৫.৪১.৬৭০০.৩০৪.০২.৮৬-৩৪৫ (সং) তারিখঃ ২৫.০৬.২০১৫ ইং) তাঁর বরাদ্দ বাতিল করেন। কিন্তু লিজ বাতিলে কারণ হিসেবে যে অভিযোগটি উত্থাপন করা হয়েছে তা ২০১৩ সালেই মিমাংসিত।

    প্রসঙ্গত ২০১৩ সালে ‘এক টুকরো সাদা কাগজে অঙ্গীকারনামায় সরকারী মালিকানাধীন ভূমিতে অনুপ্রবেশ এবং ভবন নির্মাণের কাজে সহযোগিতার’ কথিত অভিযোগ এনে সুভাষ সাহাকে একটি কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়েছিল। পরবর্তীতে তিনি ওই নোটিশের জবাবও যথারীতি দাখিল করেন।

    প্রসঙ্গত লিজের শর্ত বলা আছে-‘দোকান ঘরের কোন প্রকৃতি পরিবর্তন করিতে পারিবেন না। দোকান ঘরটি কাহারও নিকট সাবলেট দেওয়া যাইবে না।’

    এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ্য, লিজ বাতিলের কারণ হিসেবে সুভাষ সাহার একটি অঙ্গীকারনামাকে লিজের শর্তভঙ্গের কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে তা কোনক্রমেই লিজের শর্ত ভঙ্গ বলে গণ্য হতে পারে না বলে সুভাষ সাহা জানান।

    এ প্রসঙ্গে তিনি এই প্রতিবেদককে জানান, প্রতিবেশীকে (মন্টু সাহা ও আবুল হাসেম) মানবিক কারণে শুধুমাত্র সহযোগিতার উদ্দেশ্যে একটি  অঙ্গীকারপত্র দেয়া হয়।

    ওই অঙ্গীকারপত্রে লেখা রয়েছে-‘১০নং বি দাস রোডস্থ আমাদের বরাদ্দপ্রাপ্ত দোকান ঘরের প্রতিবেশী মন্টু সাহা ও আলহাজ্ব হাসেম সাহেবের অনুরোধক্রমে শর্ত সাপেক্ষে আমাদের দোকান ঘরের চালা ব্যবহার করে মন্টু সাহার মালিকানাধীন বিল্ডিং এর নির্মাণ কাজ অব্যাহত রাখতে আমি সর্বাত্বক সহযোগিতার আশ্বাস দিচ্ছি। শর্ত থাকে যে, আমাদের দখলী দোকানের ঘরের চালা ও ওয়ালসহ যে কোন অংশ ক্ষতিগ্রস্থ হলে তার পূন:স্থাপন/মেরামত করে দিতে মন্টু সাহাগং বাধ্য থাকবে। এছাড়া এ পত্রে অনুল্লেখিত অন্যান্য শর্ত বা অঙ্গীকারও যথারীতি পূরণ করতেও বাধ্য থাকবে মন্টু সাহাগং।(স্বাক্ষর   সুভাষ সাহা, ১০ বি দাস রোডস্থ দক্ষিণের অংশ, নারায়ণগঞ্জ।’)

    সাপ্তাহিক বিষেরবাঁশী ও বিষেরবাঁশী ডটকম’র সম্পাদক সুভাষ সাহা বলেন-‘নৈতিক দায়িত্ববোধ থেকে প্রতিবেশী মন্টু সাহাগংকে সহযোগিতার আশ্বাস হিসেবে অনাপত্তিপত্র দিয়েছি। আর এই অনাপত্তিপত্র দেয়া হয়েছে ছয় তলা বিশিষ্ট অবকাঠামো নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হওয়ার অনেক পর। এক্ষেত্রে ভূমি দখলের সঙ্গে আলোচ্য অনাপত্তিপত্র বা কথিত অঙ্গীকারনামার কোন সম্পর্ক না থাকলেও জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা লিজের শর্তভঙ্গের ‘উপকরণ’ কোথায় খুঁজে পেলেন বোধগম্য নয়!

    ২০১৩ সালে দাখিল করা কারণ দর্শানোর ওই জবাবটি আমলে নিয়ে বিষয়টি ওই পর্যন্তই স্থগিত রাখেন তৎকালীন জেলা প্রশাসক মনোজ কান্তি বাড়ল। নতুন জেলা প্রশাসক আনিছুর রহমান মিঞা যোগ দেয়ার প্রায় ২ বছর পর মিমাংসিত বিষয়টি আবারও সামনে আনা হয়।

    জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫ সালে জুনে আরেকটি পিটিশনের প্রেক্ষিতে নতুন করে তদন্তের আদেশ দেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব)। সরেজমিন তদন্তের পর এসি (ল্যান্ড) বরাবর প্রতিবেদন জমা দেন নিয়োগপ্রাপ্ত তদন্ত কর্মকর্তা। নতুন এ তদন্ত প্রতিবেদনটিকে আলোর মুখ না দেখিয়ে অত্যন্ত সুকৌশলে ২০১৩ সালের একতরফা গোপন প্রতিবেদনটি সামনে এনে সুভাষ সাহার লিজটি বাতিল করার ফলে দীর্ঘ ২১বছরের একটি প্রতিষ্ঠিত ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রাতারাতি বন্ধ করে দেয়ার ঘটনায় সুভাষ সাহার অপূরণীয় আর্থিক ক্ষতি হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

    অভিযোগ রয়েছে, শঙ্কর সাহা অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) সিদ্দিকুর রহমানকে ম্যানেজ করেন। ওই কর্মকর্তা জেলা প্রশাসক মো: আনিছুর রহমান মিঞাকে ভুল বুঝিয়ে আবারও একই অভিযোগ এনে এবং অভিযুক্তকে কোন রকম সুযোগ না দিয়েই বরাদ্দ বাতিল করান। নিজের নামে দোকান ঘরটি বরাদ্দ নিতে শঙ্কর সাহাকে জেলা বারের একজন আইনজীবী নেতা তাকে সহযোগিতা করেন বলে জনশ্রুতি রয়েছে।

    উল্লেখ্য শহরের ১০ বি দাস সড়কের দক্ষিণ কক্ষটি জেলা প্রশাসন ১৯৮৪ সালে ‘পরিত্যক্ত সম্পত্তি ব্যবস্থাপনা বোর্ড’  রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি উদ্ধারে সহযোগিতার পুরস্কার হিসেবে সুভাষ সাহা ও শঙ্কর সাহার পিতা সুরেন্দ্র সাহাকে বরাদ্দ দেন। পরবর্তীতে সুরেন্দ্র সাহার মৃত্যুর পরে ওই সম্পত্তি ১৯৯৪ সালে সুরেন্দ্র সাহার দুই পুত্র সুভাষ সাহা ও শঙ্কর সাহাকে বরাদ্দ দেয়া হয়।