নারায়ণগঞ্জ মার্কেটে আগুনঃ২শতাধিক দোকান পুড়ে ছাই

    0
    233

    আমারসিলেট24ডটকম,১৮জুনঃ নারায়ণগঞ্জ শহরের ২নং রেল গেট সংলগ্ন দেওভোগ হোসিয়ারী মার্কেটে লাগা ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে গেছে প্রায় ২শতাধিক দোকান ঘর। আজ বুধবার ভোরে ৪টার দিকে এ অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে।ফায়ার সার্ভিসের ৮টি ইউটিন প্রায় ৩ ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে সকাল সাড়ে ৮টারদিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়েছে। আগুন নিভাতে গিয়ে ৫জন আহত হয়েছেন।ফলে আগুন ব্যাপক ক্ষতিহয়েছে। তবে এতে কোন হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।কাপড়ের মার্কেটে অগ্নিকাণ্ডেপ্রায় শতকোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা কারা হচ্ছে।বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত হতে পারে বলে  ধারনা করা হচ্ছে।

    ফায়ারসার্ভিস, পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বুধবার দিবাগত ভোর ৪টার দিকে দেওভোগের এ৩ মার্কেটের একটি কারখানা থেকে আগুনের সূত্রপাত ঘটে। দোকানগুলোতে কাপড়থাকায়  মুহূর্তের মধ্যে আগুন আশপাশের দোকানে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়েনারায়ণগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের হাজীগঞ্জ ও মন্ডলপাড়া স্টেশনের ৭টি ইউনিট আগুননিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে। তবে টিনসেট ঘর ও কাপড়ের কারণে দমকল বাহিনীকেআগুন নিভাতে বেশ বেগ পেতে হয়। টিনসেডের এ তিন মার্কেটে প্রায় ৩শতাধিক দোকানঘর রয়েছে। এসব ঘরে মূলত পাইকারিভাবে তৈরি পোশাক বিশেষ করে হোসিয়ারী পণ্য,বাচ্চাদের কাপড়, বড়দের গেঞ্জি বিক্রি করা হতো। এছাড়া অনেক ঘর ছিল পোশাকতৈরির কারখানা। আসন্ন রোজা ও ঈদ উপলক্ষে বেশিরভাগ দোকান ঘর ও গোডাউন ছিলতৈরি পোশাকে ঠাসা। অনেক দোকানে পোশাক তৈরির জন্য প্রচুর কাপড়ও মজুদ ছিল।অবশেষে আজ সকাল সাড়ে ৮টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয় ফায়ারসার্ভিস।

     অপরদিকে ঘটনার বিবরণে জানা যায়, প্রত্যক্ষদর্শী হোসিয়ারী শ্রমিক জামাল মিয়া  বলেন, ভোর চারটায় সোহরাওয়ার্দীমার্কেট থেকে আগুনের সূত্রপাত। আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। এসময় অনেক কারখানায়ইকাজ চলছিলো। মার্কেটগুলিতে নিচে শোরুম ও কাঠ-টিনের দোতলায় কারখানা ছিলো।দু’একটি দোকান টিনের তিনতলা ছিলো। আগুনে প্রতিটি কারখানারই মজুদ করা মাল, মেশিন সম্পূর্ণ পুড়ে গেছে।
    খবর পেয়ে নারায়ণগঞ্জের মন্ডলপাড়া ও হাজিগঞ্জ এবং ঢাকার ডেমরার ফায়ারবিগ্রেড এসে আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে। সকাল সাড়ে ছয়টায় আগুন নিয়ন্ত্রণেআসে।
    সদর থানায় এস আই আব্দুর রাজ্জাক জানান, ভোর চারটায় দুই নম্বর রেলগেট এলাকায়মার্কেটে আগুন লাগে। আমরা থানাকে সাথে সাথে অবহিত করি। থানা থেকে ফায়ারসার্ভিসকে খবর দেওয়া হয়। ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা এসে আগুন নেভানোর কাজ শুরুকরে।আগুনের লেলিহান শিখা দুই তিন কিলোমিটার দূর থেকেও দেখা যায়। শুরুতেআগুনের তাপ এতটাই বেশি ছিলো যে ফায়ার সার্ভিসকর্মীরা কাছাকাছি গিয়ে আগুনেপানি দিতে পারছিল না। পরে তারা ধীরে ধীরে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
    আগুনে বিপুল পরিমাণ নগদ টাকাও পুড়ে গেছে বলে ক্ষতিগ্রস্তরা দাবি করেন।আগুনে পুড়ে যাওয়া প্রতিষ্ঠান দীন ইসলাম ট্রেডার্সের মালিক দীন ইসলাম জানান, তার দোকানে তিরিশ লাখ টাকার মেয়েদের ফ্রক ষ্টক করা ছিলো। এছাড়া ছিলো কেনাকাপড়, লেস, সুতা ও মেশিনসহ অন্যান্য মালামাল। আগুন তার পঁয়ত্রিশ লাখ টাকারক্ষতি হয়েছে বলে তিনি দাবী করেন। তিনি জানান, এছাড়া তার দোকানের ক্যাশে নগদদুই লাখ টাকা ছিলো, তা-ও পুড়ে গেছে।
    পরিবারের সবাইকে জড়িয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে কাঁদছিলেন আলী ফ্যাশন্সের মালিকমোহাম্মদ আলী। তিনি জানান, পাঁচবছর জাপানে কাজ করে এসে তিনি এখানে হোসিয়ারীব্যবসায় যুক্ত হন। সোহরাওয়ার্দী মার্কেটের এক, দুই ও তিন তলার তিনটিদোকানে তার আড়াই কোটি টাকার মাল মজুদ করা ছিলো। এর সব-ই পুড়ে গেছে। তিনিজানান, প্রাইম ব্যাংকে তার দশ লাখ টাকা ঋণ রয়েছে ।
    আগুনে ক্ষতিগ্রস্থদের যাদের ব্যাংক বা বিভিন্ন এনজিও’র ঋণ আছে তাদের ঋণেরসুদ মওকুফ করার দাবী জানালেন ক্ষতিগ্রস্তরা। দোয়েল হোসিয়ারীর অন্যতম মালিকআসমা বেগম জানান, আশা সমিতির কাছ থেকে ঋণ নিয়ে আমরা ব্যবসা করছি। এখন আসলটাকা শোধ করাই কঠিন হবে।
    দেওভোগ পোশাক প্রস্তুতকারক মালিক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মনির হোসেনখান খোকন জানান, সমিতির রেজিষ্টারের তথ্য অনুযায়ী সোহরাওয়ার্দি মার্কেটে১৪৪টি দোকান রয়েছে। সবগুলি দোকান বিপুল পরিমাণ মালপত্র, মেশিন ও কাঁচামালসহপুড়ে গেছে। পাশের অন্য দু’টি মার্কেটের ছয়টি দোকান পুড়েছে। ঈদকে সামনেরেখে ছোট দোকানগুলিতে পঁচিশ থেকে ত্রিশ লাখ টাকার মাল বড় দোকানগুলিতে দুইআড়াই কোটি টাকার মালামাল ষ্টক করা ছিলো। আগুনে কমপক্ষে একশ কোটি টাকারক্ষতি হয়েছে বলে তিনি দাবী করেন।
    নারায়ণগঞ্জ ফায়ার বিগ্রেড ও সিভিল ডিফেন্সের উপ-পরিচালক এ বি এমমমতাজউদ্দিন আহমেদ জানান, ভোর চারটা বিশ মিনিটে খবর পাওয়ার সাথে সাথেইনারায়ণগঞ্জের মন্ডলপাড়া ফায়ার ব্রিগেডের একটি ইউনিট ঘটনাস্থলে আসে। এরপরনারায়ণগঞ্জের হাজীগঞ্জ ও ঢাকার ডেমরা থেকে মোট আটটি ইউনিট এসে আগুন নেভানোশুরু করে। সকাল সাড়ে ছয়টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়। তবে পানির অভাবেআগুন নেভাতে বেশ বেগ পেতে হয়। বেশ দূর থেকে খালের পানি পাইপ দিয়ে আনতে হয়।পানির ময়লা আটকে একটি মেশিন নষ্ট হয়ে যায়। তিনি জানান, আগুনে কেউ হতাহতহয়নি। ঠিক কিভাবে আগুন লেগেছে এবং কত টাকার ক্ষতি হয়েছে তা এ মূহূর্তে বলাযাচ্ছে না। তবে মশার কয়েল, ইস্ত্রি অথবা সিগারেটের ধোঁয়া থেকে আগুন লেগেছেবলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। আগুনে দেড় থেকে দু’শ দোকান পুড়ে গেছেবলে প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে।বাসস।