নুসরাতকে পুড়িয়ে হত্যা মামলায় অর্থদণ্ডসহ ১৬জনের মৃত্যুদণ্ড

    0
    225

    ফেনীর আলোচিত মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে পুড়িয়ে হত্যা ঘটনায় সাবেক অধ্যক্ষ এসএম সিরাজ-উদ-দৌলাসহ ১৬ আসামির সবাইকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে আদালত। আজ (বৃহস্পতিবার) বেলা সোয়া ১১টার দিকে ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামুনুর রশিদ এ রায় ঘোষণা করেন। মৃত্যুদণ্ড ছাড়াও রায়ে প্রত্যেক আসামিকে এক লাখ টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে। এই টাকা নুসরাতের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে দেয়ার নির্দেশ দিয়েছে আদালত।

    রায় ঘোষণার সময় বিচারক মো. মামুনুর রশিদ বলেন, এ ঘটনায় তৎকালীন ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন গাফিলতি করেছেন। ভবিষ্যতে যেন এ ধরনের কর্মকাণ্ড আর না ঘটে সে ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক করে দেন তিনি। আদালতের পর্যবেক্ষণে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) ভূমিকার প্রশংসা করা হয়।

    মৃত্যুদণ্ড পাওয়া আসামিদের তালিকা:

    সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদরাসার সাবেক অধ্যক্ষ এসএম সিরাজ-উদ-দৌলা (৫৭), নুর উদ্দিন (২০), শাহাদাত হোসেন শামীম (২০), কাউন্সিলর ও সোনাগাজী পৌর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাকসুদ আলম ওরফে মোকসুদ কাউন্সিলর (৫০), সাইফুর রহমান মোহাম্মদ জোবায়ের (২১), জাবেদ হোসেন ওরফে সাখাওয়াত হোসেন (১৯), হাফেজ আব্দুল কাদের (২৫), আবছার উদ্দিন (৩৩), কামরুন নাহার মনি (১৯), উম্মে সুলতানা ওরফে পপি (১৯), আব্দুর রহিম শরীফ (২০), ইফতেখার উদ্দিন রানা (২২), ইমরান হোসেন ওরফে মামুন (২২), সোনাগাজী উপজেলা আওয়ামলীগের সভাপতি ও মাদরাসার সাবেক সহসভাপতি রুহুল আমিন (৫৫), মহিউদ্দিন শাকিল (২০) ও মোহাম্মদ শামীম (২০)।

    মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ১৬ আসামি

    রায়ের প্রতিক্রিয়া

    নুসরাত হত্যা মামলার এ রায় বাংলাদেশের ইতিহাসে মাইলফলক হয়ে থাকবে বলে জানিয়েছেন বাদীপক্ষের আইনজীবী শাজাহান সাজু।

    রায় ঘোষণার পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আদালত বলেছেন বাংলাদেশের কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কোনো মেয়ে আর এ ধরনের হত্যার শিকার হবে না। ভবিষ্যতে আর কোনো নারী এ ধরনের ঘটনার শিকার হবে না। সব আসামিকে আইনের ১ ও ৩০ ধারা অনুযায়ী মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে আদালত।

    সব আসামির মৃত্যুদণ্ডের রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন নুসরাতের বাবা এ কে এম মুসা। পাশাপাশি, পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তা দেয়ার দাবি জানিয়েছেন তিনি। এসময় তদন্ত দ্রুত শেষ করায় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানান নুসরাতের বাবা।

    আদালতের রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে নুসরাতের ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান বলেছেন, এই রায়ে আমরা সন্তুষ্ট। তবে, দ্রুত যেন রায় বাস্তবায়ন করা হয়। তিনি আবারও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করবেন।

    তবে, এই রায়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছে আসামি পক্ষের আইনজীবী। এই রায় নিয়ে তারা উচ্চ আদালতে যাবেন বলেও জানান।

    অগ্নিদগ্ধ নুসরাত

    সোনাগাজীর মাদরাসা ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় দায়ের করা মামলার শুনানি শেষে গত ৩০ সেপ্টেম্বর রায়ের জন্য আজকে দিন ঠিক করেন ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক।বিচারকাজ শুরুর ৬১ কার্যদিবসে মামলাটি চূড়ান্ত রায়ের কার্যক্রম শেষ করা হয়। ইতোমধ্যে এই মামলায় ৯২ জন সাক্ষীর মধ্যে ৮৭ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন। রায় ঘোষণার সময় আদালতে আসামিরা উপস্থিত ছিলেন। রায় শুনে আসামিরা কাঠগড়ায় কান্নায় ভেঙে পড়ে। এ সময় তাদের সবাইকে খুব বিমর্ষ দেখা যায়।

    আদালতে সাবেক অধ্যক্ষ এসএম সিরাজ-উদ-দৌলা 

    প্রসঙ্গত, নুসরাত জাহান রাফি সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদরাসার আলিম পরীক্ষার্থী ছিলেন। ওই মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলার বিরুদ্ধে এর আগে ওই ছাত্রীকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ ওঠে। নুসরাতের মা শিরিন আক্তার বাদী হয়ে ২৭ মার্চ সোনাগাজী থানায় মামলা দায়ের করেন। এরপর অধ্যক্ষকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

    মামলা তুলে নিতে বিভিন্নভাবে নুসরাতের পরিবারকে হুমকি দেয়া হয়। পরে ৬ এপ্রিল মাদরাসা কেন্দ্রের সাইক্লোন শেল্টারের ছাদে নিয়ে অধ্যক্ষের সহযোগীরা পরীক্ষা কেন্দ্রের ছাদে ডেকে নিয়ে নুসরাতের শরীরে আগুন ধরিয়ে দেয়। মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলার বিরুদ্ধে করা শ্লীলতাহানির মামলা তুলে না নেয়ায় তার শরীরে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয় বলে মৃত্যুশয্যায় বলে গেছেন নুসরাত। টানা ৫ দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১০ এপ্রিল রাতে তিনি মারা যান। নুসরাত হত্যা ঘটনায় ৮ এপ্রিল নুসরাতের ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান বাদী হয়ে সোনাগাজী থানায় মামলা করেন।

    তবে তৎকালীন ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন এ ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো নুসরাতকে হয়রানি করেন। থানায় নুসরাতের কথা–বার্তা তিনি ভিডিও করেন। পরে সেটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। নুসরাতকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় তৎকালীন ওসির বিরুদ্ধে দায়িত্ব পালনে অবহেলার অভিযোগ ওঠলে প্রথমে তাঁকে বরখাস্ত করা হয়। বর্তমানে তিনি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় কারাগারে আছেন।পার্সটুডে