পুলিশের ভাব-মর্যাদা নষ্টকারী নেয়ামতের খুঁটির জোর কোথায়?

    0
    240

    “অবিলম্বে ওহাবী-সালাফী চিন্তাধারার এই ‘গজব উল্লাহ’র অপসারণ ও গ্রেফতার চাই”

    আমার সিলেট টুয়েন্টি ফোর ডটকম,১৮মে,আবছার তৈয়বীঃ‘পুলিশ’ বাংলাদেশের প্রধান অসামরিক আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা। সংস্থাটি বাংলাদেশ সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত। চুরি-ডাকাতি রোধ, ছিনতাই প্রতিরোধ, দাঙ্গা-হাঙ্গামা ইত্যাদি সমাজ বিরোধী কর্মকাণ্ড প্রতিরোধসহ দেশের আইন-শৃঙ্খলা বিরোধী সকল কর্মকাণ্ড প্রতিহত ও প্রতিরোধ করা এবং অপরাধীকে আইনের কাঠগড়ায় নিয়ে দাঁড় করানোর প্রধান আইনি সংস্থার নাম ‘পুলিশ’। এ হিসেবে প্রতিটি সভ্য দেশেই ‘পুলিশ জনগণের বন্ধু’।

    প্রতাপশালী সন্ত্রাসী, আত্মম্ভরী খুনি, সমাজের দাগী অপরাধী ইত্যাদির হাতে আইনের হাতকড়া ও সর্বপ্রকার অপরাধীর কোমরে আইনের দড়ি বেঁধে তাকে আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড় করানোই পুলিশের প্রধান কর্তব্য। পক্ষান্তরে- সমাজের অসহায়, নিরীহ ও মজলুম জনমানুষের পাশে দাঁড়ানোই পুলিশের প্রধানতম দায়িত্ব। এককথায় বলতে গেলে ‘দুষ্টের দমন ও শিষ্টের লালন’ করার জন্যই পুলিশের সৃষ্টি, অবস্থান ও বিকাশ। কিন্তু বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে আমরা বারেবারে এর ব্যত্যয় ঘটতে দেখি। কেন এ ব্যত্যয়?

    পুলিশের এ ব্যত্যয়টি নিয়ে আমি মাস ছ’য়েক আগে একটি লেখা লিখেছি। সেই লেখায় সবিস্তারে পুলিশের সফলতা ও ব্যর্থতা নির্মোহচিত্তে তুলে ধরেছি। সেই লেখা পড়ে বেশ কিছু পুলিশ অফিসারও আমাকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। সরকারি দলের অনেক নেতা-কর্মীরাও ধন্যবাদ দিয়েছেন। আর আমার প্রিয়ভাজন সাংবাদিক ও লেখক বন্ধুরা আমায় খানিক ভয়ও দেখিয়েছেন। বলেছেন, “ব্রাদার! তোমার পীঠ চুলকায় বুঝি? সুখে থাকতে তোমারে ভুতে কিলায় কীয়ের লাই? তুমি বেশ ভালো করেই জানো- ‘আসমানের যতো তারা, পুলিশের ততো ধারা’। কোন সময় কোন ধারায় তোমাকে ফাঁসিয়ে দেবে- তার কোন ‘আত্তা-পাত্তা’ আছে”? কথা ঠিক। তাদেরকে সবিনয়ে বলেছি- পুলিশ আমাদের মানে জনগণের বন্ধু।

    আমার কোন বন্ধু যদি বিপথে যায়, আমার প্রথম কর্তব্য হলো- তাকে সুপথটি দেখিয়ে দেয়া। দেশের একজন গর্বিত নাগরিক হিসেবে এটি আমার প্রথম ও প্রধান দায়িত্ব। টোটাল পুলিশ প্রশাসনের প্রতি আমার কোন অভিযোগ নেই, রাগ নেই, ক্ষোভ নেই। কিন্তু কিছু কিছু পুলিশ সদস্যের প্রতি অন্য দশজনের মতো আমারও অভিযোগ আছে। শুধু আমার বা আপনার নয়, খোদ পুলিশের বিরুদ্ধে পুলিশেরই অভিযোগ আছে, এমনকি সরকারেরও অভিযোগ আছে। আমাদের মনে রাখতে হবে যে, ‘পুলিশ’ কোন ভিনগ্রহের মানুষ নয়। এদেশের জল-বায়ুতে বেড়ে ওঠা মানুষ। পুলিশ কোন ফেরেশতাও নয়। তাদের কেউ কেউ অপরাধে জড়িত হওয়া মোটেও বিচিত্র কিছু নয়। তাছাড়া যেহেতু পুলিশও মানুষ, সেহেতু তারাও ভুল-ত্রুটির উর্ধে নয়। তাদের ভুল-ত্রুটিগুলি ধরিয়ে দেয়া আমি আমার নাগরিক কর্তব্য বলে মনে করি।

    আর এই কর্তব্যের খাতিরে বিপদের আশঙ্কা মনে নিয়েও আমি লিখতে বাধ্য হই। আমি পুলিশের সাহস ও সফলতায় ধন্যবাদ জানাতে কোনদিন কার্পণ্য করিনি। আমাদের মহান স্বাধীনতাযুদ্ধে পাকি হানাদারের ট্যাংকের বিরুদ্ধে নিজেদের বুক পেতে দিয়ে অসীম সাহসে যাঁরা সর্বপ্রথম সশস্ত্রভাবে রুখে দাঁড়ান- তারা বাংলা মায়ের গর্বিত পুলিশ সদস্য। তাঁদের কাছে এই জাতি চিরদিনই ঋণী থাকবে। সুতরাং পুলিশ আমাদের গর্বের ধন। আমাদের এই ‘গর্বের ধন’ কোন কারণে নষ্ট হয়ে যেতে দেখলে দেশপ্রেমিক নাগরিকের মনে কষ্ট অনুভূত হওয়ারই কথা। কিন্তু এতো ট্রেনিংপ্রাপ্ত, এতো সুশৃঙ্খল একটি বাহিনী নষ্ট হয়ে যাবে কেন? আমাদের জানতে হবে- বাংলাদেশের পুলিশকে নষ্ট করে কারা? পয়লা নম্বরে যার নাম বলতে হয়, তার নাম- ‘নষ্ট রাজনীতি’ ও ‘পঁচা রাজনীতিক’।

    দ্বিতীয় নম্বরে অবৈধ টাকা এবং তৃতীয় নম্বরে নষ্টা নারী। যদি এই তিনটি ‘আপদ’ থেকে পুলিশকে দূরে রাখা যায়- তো বিশ্বাস করুন, পুলিশের চেয়ে ভালো মানুষ পৃথিবীতে আর দ্বিতীয়টি কেউ হবে না। কারণ, আইনের ধারাগুলো পুলিশের মুখস্থ নয়, একেবারে ঠোঁটস্থ থাকে। সাথে থাকে ‘কঠোর ট্রেনিং’। কিন্তু নষ্ট রাজনীতি, কালো টাকা আর নষ্টা নারীর লোভে পড়লে আইনকে ‘গাইন’ করতে কতক্ষণ? স্রেফ রাইফেল বা পিস্তলের একটি গুলি, স্রেফ একটি রাবার বুলেট বা স্রেফ একটি ডাণ্ডার বারি। ব্যস, এতো দিনের শেখা আইন নিমিষেই ‘গাইন’ হয়ে যেতে বাধ্য। আমাদের দেশে এরকম কতো আইন যে প্রতিনিয়ত ‘গাইন’ হচ্ছে- তা সবিস্তারে উদাহরণ ও প্রমাণসহ লিখতে গেলে আমাকে আলাদা একটি বই লিখতে হবে।

    পুলিশের সবচেয়ে বড় রক্ষাকবচ তার পোশাক। কিন্তু আমরা দেখেছি- নষ্ট রাজনীতি ও পঁচা রাজনীতিকের পাল্লায় পড়ে এই পোশাকের বেইজ্জতি হতে। আমরা দেখেছি- পুলিশের সর্বাধিনায়ক খোদ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যাদেরকে ‘খাঁটি মুসলমান’ বলেছেন- তাদের ‘খাঁটি লাঠি’র আঘাতে অসহায় পুলিশকে রক্তাক্ত হতে। আমরা দেখেছি- খাঁটি মুসলমানদের ‘খাঁটি লাথি’ খেয়ে পুলিশকে মাটিতে পড়ে যেতে। আমরা দেখেছি- খাঁটি মুসলমানের ‘খাঁটি বোমা’র আঘাতে পুলিশের মাথার খুলি উড়ে যেতে। আমরা দেখেছি- খাঁটি মুসলমানের ‘খাঁটি পেট্রোলবোমা’য় পুলিশকে দগ্ধ হয়ে রাজপথে ও হাসপাতালে কাতরাতে। আমরা দেখেছি- খাঁটি মুসলমানদের ‘খাঁটি মারের’ ভয়ে অসহায় পুলিশকে কড়জোড়ে ক্ষমা চাইতে।

    আমরা দেখেছি- ক্ষমতাসীন দলের হোমরা-চোমড়ার চপেটাঘাতে পুলিশ অফিসারের মুখ দিয়ে গলগল করে রক্ত বেরুতে। আবার আমরা দেখেছি- পুলিশ কর্তৃক স্বাধীনতা বিরোধী জামাত-শিবিরকে ফুল দিয়ে বরণ করে নিতে। আমরা দেখেছি- নিরপরাধ, নিরীহ মানুষকে মামলায় ফাঁসিয়ে নানারকম হয়রানি করতে। আমরা দেখেছি- নিরস্ত্র মানুষের বুকে পিস্তল ঠেকিয়ে গুলি করতে। আমরা দেখেছি- খুব কাছ থেকে গুলি করে মানুষ মেরে ‘ক্রসফায়ার’ নামক নাটক সাজাতে। আমরা দেখেছি- ড্রাগ, ইয়াবা ও নেশাদ্রব্যের ব্যবসা করতে। আমরা দেখেছি- বেগম মাতিয়া চৌধুরীর মতো বরেণ্য ও বর্ষীয়ান রাজনীতিককে চোর-চাট্টার মতো রাস্তায় ফেলে বেধড়ক পেটাতে। আমরা দেখেছি- কোহিনুর মিয়ার মতো পুলিশ অফিসারের বুটের আঘাতে রাস্তায় নারীর গর্ভপাত হতে। আমরা দেখেছি- পুলিশের লাঠির আঘাতে খোদ সাবেক স্বরাষ্টমন্ত্রীদের মাথা ফেটে ‘লাল ঝোল’ বেরুতে। আমরা পুলিশকে দেখেছি- অবৈধভাবে দশট্রাক অস্ত্র খালাস করতে। আমরা পুলিশকে দেখেছি- আওয়ামী লীগের জনসভায় ভয়াবহ গ্রেনেড হামলার পর আলামত নষ্ট করতে এবং ‘জজমিয়া’ নাটক সাজাতে!

    ভাবুন তো- আইনের রক্ষাকারী হয়েও কেন পুলিশ এই বেআইনি কাজগুলো করে? ঠিক ধরেছেন- যতো নষ্টের মূল- ওই ‘নষ্ট রাজনীতি’। এক্ষেত্রে আমি পুলিশের কোন দোষ দেখি না। আমি দোষ দেখি- যারা পুলিশকে অন্যায়ভাবে ব্যবহার করছে- তাদের। এই অন্যায়ের মাত্রা এতো বেশি হয়ে গেছে যে, অনেককেই বলতে শুনি- ‘তুমি পুলিশ না মানুষ’! এই কথাটি কতো লজ্জার- তা আমি আমাদের পুলিশ ভাইদের কী করে বুঝাই? বর্তমানে এই কথাটি পটিয়া থানার মহাপ্রতাপশালী ওসি ‘নেয়ামত উল্লাহ’র জুলুম ও ত্রাস নিয়ে এই আবার ওঠেছে। চট্টগ্রামের পটিয়ার সুন্নী জনতার জন্য তিনি হয়ে ওঠেছেন- এক ‘মূর্তিমান দানব’। সুন্নী জনতা যার নাম বদলিয়ে নতুন নাম রেখেছে- ‘গজব উল্লাহ’। তিনি তার ক্ষমতার অপব্যবহার করে প্রতিনিয়ত আইনকে ‘গাইন’ করছেন! নিরপরাধ, নিরীহ, শান্তিপ্রিয়, অসম্প্রদায়িক ও মহান স্বাধীনতার স্বপক্ষের সুন্নী জনতার ওপর এই ‘নেয়ামত’ এখন কেয়ামতের রূপ ধারণ করেছেন।

    তিনি তার চৌহদ্দী ফেলে কর্ণফুলি থানার সীমানায় গিয়ে সুন্নীজনতার মিছিলে গুলি বর্ষন করেছেন! আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, বঙ্গবন্ধু কন্যা, জননেত্রী শেখ হাসিনার কাছে সবিনয়ে জানতে চাই- এই নেয়ামত উল্লাহর খুঁটির জোরটি কোথায়? কোন অধিকার বলে তিনি দিনের পর দিন নিরপরাধ সুন্নী জনতার ওপর জুলুম-নির্যাতন করছেন? তার সাথে স্বাধীনতা বিরোধী বা তথাকথিত খাঁটি মুসলমানদের কোন যোগ-সাজস নেই তো? ইতিমধ্যে বেরিয়েছে- তিনি ওহাবী-সালাফী চিন্তাধারার লোক। আমরা অবিলম্বে তার ব্যাপারে ‘বিচার বিভাগীয় তদন্ত চাই’। তার বিরুদ্ধে পুলিশের আভ্যন্তরীণ দাপ্তরিক তদন্ত চাই। পুলিশ প্রশাসন থেকে তার অপসারণ চাই এবং তার গ্রেফতার ও বিচার চাই। সর্বোপরি ‘নেয়ামতের কেয়ামত’ অচিরেই বন্ধ করা চাই। নইলে এই এক ‘নেয়ামত উল্লাহ’ নিজে ‘গজব উল্লাহ’ হয়ে পুরো পুলিশ প্রশাসনের সুনাম ধুলোয় মিশিয়ে দেবেন এবং সরকারের জন্য আল্লাহর গজব ডেকে আনবেন।(আবছার তৈয়বী,ইসলামী লেখক ও গবেষক)

    সুত্রঃhttps://web.facebook.com/AbsarTaiyobi?hc_ref=NEWSFEED