প্রধানমন্ত্রীর দিন শুরুঃফজরের নামাজ-কোরআন তেলাওয়াতে

    0
    244

    আমারসিলেট টুয়েন্টিফোর ডটকম,মার্চবাংলাদেশের ৩ বারের প্রধানমন্ত্রী  বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা  সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য সুত্রে জানা গেছে তিনি  ভোরের দিকে ঘুম থেকে ওঠেন। প্রায় প্রতিদিন রাতেই তাহাজ্জতের নামাজ ও আদায় করে থাকেন। ফজরের নামাজ নিয়মিত আদায় করেন। পবিত্র কোরআন শরিফ তিলাওয়াত করা তার অভ্যাসে পরিনত হয়ে গেছে। পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত,ফজরের নামজ আদায় করে বাসভবনে হাঁটাহাঁটি করেন কিছুটা সময়। এর পর তিনি গণভবনের পূর্বদিকের জানালা খুলে বসে থাকেন কিছু সময়। গণভবনের ওই দিকটায় রয়েছে লনের পাশে পুকুর। পুকুরের শেষ প্রান্তে সীমানা-প্রাচীরের পরেই চন্দ্রিমা উদ্যানের লেকের পাড়ে বিস্তৃত সবুজ এলাকা।

    বাবা-মা ভাইয়ের সাথে শেখ হাসিনা
    বাবা-মা ভাইয়ের সাথে শেখ হাসিনা

    গত তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের প্রধানতম রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন। ১৯৭৫ সালে মর্মান্তিক আর মর্মন্তুদ হত্যাকাণ্ডের শিকার হন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরিবারের বেশির ভাগ সদস্য। সেখান থেকে এক মাত্র শেখ রেহানা এবং শেখ হাসিনা দেশের বাহিরে ছিলেন। এরপর একপর্যায়ে দেশের আওয়ামী লীগের সকল স্তরের নেতাকর্মীর দাবির মুখেই রাজনীতিতে আসেন  বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

    প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত কর্মকর্তাদের সুত্রে ও তথ্যে জানা যায়, আগের মেয়াদে দায়িত্ব পালনকালে সম্পাদন হওয়া অনেক কাজের অভিজ্ঞতা ও ঘাটতির বিষয় স্মৃতি থেকে অবতারণা করেন প্রধানমন্ত্রী। সংশ্লিষ্ট বিষয়ে তার পর্যবেক্ষণও তুলে ধরেন। কখনও কখনও কোন কাজের ব্যয়ের খতিয়ান তিনি উল্লেখ করেন নিজের স্মৃতি থেকেই।

    সাধারণদের সাথে শেখ হাসিনা
    সাধারণদের সাথে শেখ হাসিনা

    প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এ চলার পথ কোন সময় নির্বিঘ্ন ছিল না। সব সময়ই দেশের জঙ্গিদের নানা হুমকি আর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়েছে তাকে যা আজ পর্যন্ত চলমান।বিএনপি সরকারের আমলে একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলার মতো দুঃখজনক ঘটনাও  তার জীবনে ঘটেছে। কাজ আর দায়িত্বের ভিড়ে একজন মানুষ হিসেবেও অসম্ভব সচেতন আর সজাগ দৃষ্টি  রয়েছে তার। সামাজিক বা পারিবারিক কোন দায়িত্বই  সহজেই চোখ এড়ায় না তার।

    প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও বাসভবনে দায়িত্ব পালন করা ব্যক্তিগত কর্মকর্তাদের ভাষ্যানুযায়ি জানা যায়- প্রধানমন্ত্রী নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করে যাচ্জায়-দেশের সরকার ও দলের জন্য। খোঁজখবর রাখেন সব ক্ষেত্রের। নিজের কাজটুকু নিজের মতো করেন সব সময়। না দেখে, না পড়ে কোন বাণী বা ভাষণ কখনো চূড়ান্ত করেন না প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কোন ফাইলে স্বাক্ষর দেয়ার আগে দেখে নেন এর খুঁটিনাটি। একজন রাজনীতিবিদ ও রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে তার প্রতিটি দিনই কর্মব্যস্ত এবং নির্ধারিত রুটিন অনুযায়ী চলে। সরকারি ছুটির দিনগুলোতেও থাকেন সমান  কর্ম ব্যস্ত।

    সুত্রে জানা জায়,প্রতিদিন সকালে নাশতা খাওয়ার আগেই প্রধানমন্ত্রী সব কয়টি খবরের কাগজ পড়েন। এরপর পত্রিকার ক্লিপিংয়ের ওপর চোখ বুলান। খবরের কাগজ থেকে প্রয়োজনীয় নোট সংগ্রহ করেন। কোথাও কোন অসঙ্গতি চোখে পড়লে তা কর্মকর্তাদের জানিয়ে দেন। সমস্যা হলে সমাধানের নির্দেশনাও তাতক্ষনিক দিয়ে থাকেন।

    পরে নাশতা সেরে প্রস্তুতি নেন অফিস বা নির্ধারিত কর্মসূচিতে অংশ নেয়ার। অফিসে গেলে নির্ধারিত সময়ে তিনি সেখানে পৌঁছে যান। আর কর্মসূচি থাকলে তাও সাধারণত সকাল ৯টা থেকে সাড়ে ১০টার মধ্যেই শুরু হয়ে থাকে। ঢাকার বাইরে কোন কর্মসূচি থাকলে আরও আগেই বাসা থেকে বের হতে হয়। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অফিস করলে সাধারণত দিনভরই নানা কাজে তিনি ব্যস্ত থাকেন। সেখানে নির্ধারিত সরকারি কর্মসূচি, গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সাক্ষাৎ দেয়া ও ফাইলপত্রে সই করেন তিনি। এর ফাঁকে গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কর্মকর্তাদেরও নির্দেশনা দেন কার্যালয়ে বসেই। সংসদ অধিবেশন থাকলে তাতে নিয়মিত অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী।

    জাতীয় সংসদ অধিবেশন চলাকালে তিনি সংসদে অবস্থান করেন অধিবেশন শেষ হওয়া পর্যন্ত। সংসদ অধিবেশন না থাকলে প্রধানমন্ত্রী সন্ধ্যায় গণভবনে দলীয় নেতাকর্মী ও সরকারি কর্মকর্তাদের সাক্ষাৎ দেন। সাধারণত দলীয় নেতাকর্মী ও ব্যক্তিগতভাবে সাহায্যপ্রার্থীরা গণভবনের পাস সংগ্রহ করে তার সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ পান অতি সহজেই। প্রধানমন্ত্রী ব্যক্তিগতভাবে সাক্ষাৎপ্রার্থীদের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় সাহায্য-সহযোগিতা করে থাকেন। সাধারণত রাত ১১টায় বিশ্রামে যান তিনি। সন্ধ্যার পর টেলিভিশনের সংবাদ গুলো দেখেন নিয়মিত।

    প্রতি সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠক হয় প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে। এ ছাড়া সুযোগ পেলেই তিনি বিভিন্ন মন্ত্রণালয় পরিদর্শনে যান নিয়মিত। মন্ত্রণালয়গুলোর কাজে গতি আনতেই প্রধানমন্ত্রী মন্ত্রণালয় পরিদর্শনের কর্মসূচি হাতে নেন। এ ছাড়া নিজের অধীনে থাকা মন্ত্রণালয়গুলোর সার্বিক কার্যক্রম নিজেই তদারকি করেন। এসব মন্ত্রণালয়ের বৈঠকগুলোতেও নিয়মিত অংশ নেন। সরকারি কাজের ব্যস্ততার মধ্যেই প্রধানমন্ত্রী দলীয় কাজে অংশ নেন নিয়মিত। দলের কার্যনির্বাহী সংসদ, উপদেষ্টা পরিষদ ও পার্লামেন্টারি বোর্ডের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় গণভবনেই। এসব বৈঠকে তিনি নিয়মিত সভাপতিত্ব করেন।

    এ ছাড়া বিভিন্ন দিবস উপলক্ষে দলীয় সভা-সমাবেশেও অংশ নেন। দলের সহযোগী সংগঠন, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, যুব মহিলা লীগ, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগসহ ভ্রাতৃপ্রতীম অন্য সংগঠনের নেতাদের সঙ্গেও নিয়মিত যোগাযোগ রাখেন এবং এসব সংগঠনের কর্মসূচিতেও অংশ নেন নেত্রী।

    এ ছাড়া মহানগর জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ রক্ষা করেন তিনি। সাংগঠনিক বিষয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনাও দেন। এ ছাড়া সুযোগ পেলে সভানেত্রীর ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়েও যান তিনি। বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্টের বিশাল কর্মযজ্ঞও সম্পাদন হয় তার নির্দেশনায়। প্রধানমন্ত্রী নিয়মিত এ ট্রাস্টের সভায় অংশ নেন।

    তৃতীয় মেয়াদে দায়িত্ব পালন করা প্রধানমন্ত্রী মন্ত্রিসভা ও একনেকের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে, গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো নির্মানের বিষয়ে নিজস্ব চিন্তা ও অভিজ্ঞতা তুলে ধরে দিকনির্দেশনা দেন।

    গণভবন সূত্রে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে জানা যায়, সরকারি ও দলীয় কাজের বাইরে একজন মা এবং অভিভাবক হিসেবে পরিবারের সদস্যদের নিয়মিত খোঁজখবর রাখেন তিনি। ছেলেমেয়ে, স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন নিয়মিত। পারিবারিক অনুষ্ঠানে অংশ নেন। এমনকি ঘনিষ্ঠজন ও দলীয় অনেকের পারিবারিক বিষয়েও খোঁজখবর রাখেন তিনি। নিজের পরিবার ছাড়া গণভবনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিষয়েও খোঁজখবর রাখেন। শবেবরাত বা কোন বিশেষ দিনে নিজ হাতে মিষ্টান্ন তৈরি করে তা সবার মধ্যে বিতরণ করেন।

    জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ যে কোন ঘটনার ওপরও তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখেন প্রধানমন্ত্রী। কোথাও বড় কোন ঘটনা ঘটলে ওই ঘটনার কারণ অনুসন্ধান ও ব্যবস্থা নেয়ার জন্য তিনি সরাসরি যোগাযোগ করেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে। কখনও কখনও নিজেই প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেন। নানামুখী দায়িত্ব পালনের মধ্যেও ক্লান্তি বুঝতে দেন না কখনও। রাষ্ট্র ও রাজনীতির মাঠে সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালনে প্রধানমন্ত্রীর ক্লান্তিহীন পথচলায় অনেক সময় বিস্মিত হন তার ব্যক্তিগত কর্মকর্তারাও।

    জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ অনেক ব্যক্তির সঙ্গে পারিবারিক সম্পর্ক থাকায় প্রধানমন্ত্রী তাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করে চলেন। গণভবনে আয়োজিত অনুষ্ঠানাদিতে তিনি তাদের আমন্ত্রণ জানান। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও আওয়ামী লীগের খবর সংগ্রহ করা সাংবাদিকদের সঙ্গে রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর হৃদ্যতাপূর্ণ সম্পর্ক। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে দায়িত্ব পালন করা সাংবাদিকদের সুবিধা-অসুবিধার বিষয়ে তিনি খোঁজখবর রাখেন বলে ওই সুত্র গুলো থেকে জানা যায়।