প্রিয় নবীর আগমনে খুশি হওয়ার নাম ঈদে মিলাদুন্নবি ﷺ

    0
    561

    পৃথিবীতে প্রিয় নবীর আগমনকে উপলক্ষ্য করে আনন্দ বা খুশি হয়ে যে আনুষ্ঠানিকতা পালন করা হয় এর নাম সংক্ষেপে আরবিতে ঈদে মিলাদুন্নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম বলা হয়।মিলাদ নিয়ে মুসলিম সমাজের কিছু অংশে নানা ধরনের বিভ্রান্তি রয়েছে কেহ কেহ এ বিভ্রান্তি প্রচার করার জন্য অর্থ,মেধা,শ্রম এমন কি প্রভাব,শক্তি পর্যন্ত ব্যবহার করে থাকে,পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবি বিরোধীরা ঈদে মিলাদুন্নবি পালন করাকে না জায়েজ মনে করে আর এর বিরুদ্ধে ” বিভ্রান্তি প্রচার করার জন্য অর্থ,মেধা,শ্রম,প্রভাব,শক্তি ব্যবহার করাকে জায়েজ মনে করে !

    সম্প্রতি আমরা দুটি বিষয় লক্ষ্য করেছি, একটি কওমি নেতা আল্লামা আহমদ শফি যিনি ৫ম/৮ম/এসএসসি/এইচএসসি/বিএ,সম্মান ব্যাতিরেখেই সরাসরি মাস্টার্স এর স্বীকৃতিতে হাজারো কওমি আলেমদের উপস্থিতিতে রাজধানিতে “শোকরিয়া মাহফিল” করেছেন। আমি শোকরিয়া মাহফিলের পক্ষে এবং এ কাজের জন্য তিনি প্রশংসার দাবীদার। আল্লামা শফি সাহেবের এমন বোধোদয় দেখে আমি অত্যান্ত খুশী কিন্তু আমার খুশীটা তখন ম্লান হয়ে যায় যখন ভাবি তিনি কর্তৃক ঈদে মিলাদুন্নবির বিরোধিতার কথা,কটাক্ষ ভাষায় ফতুয়া প্রদানের কথা।একই ব্যাক্তি যিনি তার ধর্মের ধারক ও বাহক নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লামার প্থিবীতে আগমন উপলক্ষে শোকরিয়া পালন করার অনুষ্ঠানকে অস্বীকার করছে অথচ দুনিয়ার সামান্য স্বীকৃতি কওমি সনদের স্বীকৃতিতে “শোকরিয়া মাহফিল” আদায় করছে।

    এখন এমন প্রশ্ন জাগাটা কি অস্বাভাবিক যে দেশের প্রধানমন্ত্রী প্রদেয় ঘোষণায় খুশী উদযাপন করাকে জায়েজ করলেন অথচ মহান আল্লাহ যিনি আমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন পবিত্র কোরানুল করীমের সুরা আম্বিয়ার ১০৭ ও সুরা ইউনুসের ৫৮ নং আয়াতে যথাক্রমে-” এবং আমি (আল্লাহ) আপনাকে (মুহাম্মদ (দঃ)) সকল সৃষ্টি জগতের কল্যাণ (রহমত) হিসেবে প্রেরণ করেছি। অপর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেন-“হে প্রিয় রাসুল আপনি বলুন- অনুগ্রহ ও কল্যাণ (রহমত) প্রাপ্তিতে তাদের অর্থাৎ মু’মিনদের খুশী উদযাপন করা উচিত এবং এটা হবে অর্জিত সকল কর্মফল থেকে উত্তম।”

    অপরদিকে গত কয়েকদিন পুর্বে দেশের স্কুল মাদ্রাসার বিভিন্ন বেসরকারী শিক্ষক সমিতি কর্তৃক আনন্দ মিছিলে উত্তাল ছিল বাংলাদেশের বিভিন্ন শহর।ওই আনন্দ মিছিলের কারণ বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক ৫% মহার্ঘভাতাসহ নানা সুবিধার ঘোষণা প্রদান।এই মিছিলে বাংলাদেশের বিভিন্ন মাদ্রাসার শত শত শিক্ষকদের দেখা গেছে,যা আপনারা সংবাদ মাধ্যমসহ টিভির পর্দায় দেখেছেন,এখানেও এমন অনেক আলেমদের দেখেছি যারা ঈদে মিলাদুন্নবি পালন করতে ঘোর বিরোধী কিন্তু বেতন ভাতা বৃদ্ধিতে আনন্দ মিছিলকে জায়েজ মনে করছে! এখানেও আমি একমত এবং আনন্দ মিছিলের পক্ষে।

    আফসোস হয় যখন তারা বলে “এটা তো দুনিয়াবি কাজ এখানে জায়েজ না জায়েজের কিছু আসে যাইনা।লক্ষ্য করুন মাদ্রাসা শিক্ষা কি দুনিয়াবি কাজ ? যদি দুনিয়াবি কাজ হয় তাহলে শত শত বৎসর ধরে মানুষকে ধর্মিয় শিক্ষা এহকাল ও পরকালের ছওয়াবের কাজ বলে ধোঁকা দিচ্ছেন কেন? আশা করি আমরা সবাই এই সংক্ষিপ্ত আলোচনা থেকে বুঝতে পেরেছি যে মুলত প্রিয় নবীর মিলাদ মাহফিলকে যারা অস্বীকার করে বিরোধিতা করছে তারা স্ববিরোধী,অজ্ঞ অথবা রাসুলের আগমন বিদ্বেষী, মু’মিন মাত্রই জানেন,যেমনটি শয়তান করেছিলেন প্রিয় নবীর আগমনে অর্থাৎ একমাত্র শয়তান প্রিয় নবীর আগমনে খুব বেজার হয়েছিলেন মর্মে বিভিন্ন দলীল থেকে পাওয়া যায়।প্রবাদ আছে “যে ঘুমায় তার ঘুম ডাকতেই ভাঙ্গে আর জেগে জেগে ঘুমান থাকে সজাগ করা অসম্ভব।” আমাদের উচিৎ শয়তানের সাথে মিলে যায় বা শয়তানের অনুস্মরণ হয় এমন কাজ থেকে আল্লাহর কাছে পানাহ চাওয়া এবং জেগে জেগে না ঘুমানো।

    কিছু বিষয় লক্ষণীয়,সাধারন মানুষের জন্মের মিলাদ আর প্রিয় নবীর জন্মের মিলাদ এক নয় স্মরণ রাখা প্রয়োজন যে “তিনি রাসুল মানে প্রেরিত” সৃষ্টির সর্ব শ্রেষ্ঠ একমাত্র পরিপূর্ণ সৃষ্টি।
    মিলাদ শব্দের শাব্দিক অর্থ প্রসঙ্গে ফরহাঙ্গে জাদীদ এর ৭৯৪ পৃ: রয়েছে – মিলাদ আ:না: সএীং ; জন্ম।জন্ম দিন এবং মুজামুল ওয়াছিত এর ২য় খন্ডের ১০৫৬ নং পৃ: রয়েছে – মিলাদ; জন্ম সময় ইত্যাদি।

    মিলাদ শব্দের পারিভাষিক অর্থ হল পিতা মাতা মিলনের মাধ্যমে পিতা হতে শুক্রানু এবং মাতা হতে ডিম্বানু বাচ্চাদানিতে ১ম চল্লিশ দিন শুক্র হিসেবে, ২য় চল্লিশ দিন জমাট রক্তপিন্ড, ৩ য় চল্লিশ দিন মাংস পিন্ড রুপে থাকার পর মোট ১২০ দিন পর ফেরেশতা কর্তৃক রুহ দেয়া হয় অতপর নাভীর নার এর মাধ্যমে পেটের বাচ্চা মার শরির হতে খাদ্য গ্রহন ধীরে ধীরে শরীরের গঠন পূর্ন হয়ে মাতার লজ্জাস্থান দিয়ে বের হয়ে পৃথিবীতে আসে। কিন্তু আমাদের প্রিয় নবি যেহেতু সর্ব প্রথম নূরের অতুলনীয় সৃষ্টি সেহেতু উপরোক্ত অর্থে তার শানে মিলাদ বা জন্মকে সাধারন ভাবে ব্যবহার করা উচিৎ হবে না।

    বরং তাঁর শানে মিলাদ শরিফের মর্ম হল-সর্বপ্রথম নূরের সৃষ্টি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লামকে দুনিয়ায় মানবীয় আকৃতিতে প্রেরণের উদ্দেশ্যে প্রথমে আদম (আ) এর পৃষ্ঠে রাখা হয়। অত:পর তাঁর থেকে পর্যায়ক্রমে ঐ নূরে মুহাম্মদী সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম খাজা আবদুল্লাহর মাঝে আসে। খাজা আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে ঐ নুরে মুহাম্মদী সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম মা আমিনার (রা) গর্বে আসেন।যতদিন নূরে মুহাম্মদী সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম গর্ভে ছিলেন মা আমিনা অন্যান্য মহিলাদের মত অস্বস্তিবোধ ও পেটভারী অনুভব করেননি। কারন নূরের ওজন ও নিরানন্দ নেই।

    নূরে মুহাম্মদী সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম কুদরতি ভাবে মা আমিনার গর্ভে থাকার পর ৫৭০ খ্রি: ১২ রবিউল আউয়াল (মতভেদ রয়েছে) সোমবার অগনিত রহমত ও বরকত নিয়ে নারকাটা, খতনাকৃত ও জান্নাতি পোষাক পরিহিত অবস্থায় অস্বভাবিকভাবে মা আমিনার বাম পাঁজরের হারের নিচ দিয়ে বাহ্যিক মানবীয় নূরাণী শরির মোবারক নিয়ে নূরাণী শুভ জন্মগ্রহন করেন। তাঁর মিলাদ শরিফে কাবা শরিফসহ সকল সৃষ্টি আনন্দিত হয়। তাঁর নূরাণী শরির মোবারক হতে নূর বের হয়। যার রৌশনীতে সিরিয়া রাজপ্রসাদ পর্যন্ত আলোকিত হয়।কাবা শরিফের মূর্তি সিজদায় লুটে পড়ে, অগ্নিপূজকদের অগ্নিকুন্ড নিভে যায়।

    তাই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম এর মিলাদ শরিফকে অন্যান্যদের মিলাদ বা জন্মের সাথে জেনে শুনে তুলনা করা চরম বেয়াদবি হবে।

    এদিকে মিলাদ বা জন্ম শব্দ ব্যবহার মাধ্যমে তাঁর অস্বাভাবিত নূরাণী শুভ জন্মগ্রহণের স্বীকৃতি দেওয়ার সাথে সাথে নিজেকে শিরক থেকেও বাঁচানো হয়। কোনো কোনো ফেত্নাবাজ বলে থাকে যারা মিলাদ পালন করে তারা শিরক করে আমার উত্তর হল উম্মাতে মোহাম্মদির রক্ষক স্বয়ং আল্লাহ তারা জেনে বুঝে শিরক করে না তাই মিলাদ পালন কারিরাও প্রিয় নবীকে সর্বোচ্চ সম্মান প্রদান করে থাকে কিন্তু স্রষ্টা মনে করেন না (আল্লাহ পানাহকারী),যারা এরূপ বলে তারা প্রকাশ্যে মিথ্যাবাদী।মহান আল্লাহর গুণ হল তিনি কাউকে জন্ম দেন না এবং কারো থেকে জন্মগ্রহন করেননি।কিন্তু মুমিনের আকিদা হল রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম নিজেও জন্মগ্রহন করেছেন এবং অপরকে জন্ম দিয়েছেন।

    বিভিন্ন তাফসির থেকে স্পষ্টভাবে জানা যায় আহলে কিতাবীরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম এর নবুওয়্যাত প্রকাশ করার পূর্বে তাঁর আগমনের অপেক্ষায় ছিল ও এমন মহাগুণের অধিকারী একজন নবি আসবেন বলে বিশ্বাস করতো কিন্তু যখন নবুওয়্যাত প্রকাশ করলেন তখন তারা তাঁর বিরোধীতা করতে লাগল। ঠিক সমসাময়িক অবস্থায় প্রিয় নবী যখন মদিনায় হিজরত করেন তখন সেখানকার ছেলেমেয়ে,নারীপুরুষ,আবালবৃদ্ধ খুশীতে আত্মহারা হয়ে নেচে গেয়ে বরণ করে নিলেন দোজাহানের বাদশা নবীগনের সর্দারকে।

    মূলত ইহুদীরা তাদের কিতাবে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম এর বর্ণনা ও গুনাবলি থাকার পরও তাঁকে অস্বীকার করেছে। যা বর্তমানে উম্মাতে মুহাম্মদির মধ্যে দেখা যাচ্ছে। আল্লাহ আমাদের ইহুদীদের চরিত্র থেকে মুক্ত করে প্রকৃত মুসলিম হিসেবে কবুল করুন এবং ছিরাতুল মুস্তাকিমে পরিচালিত করুন আমিন।লেখকঃএম এ ইসলাম আশরাফী।