বঙ্গবন্ধুই ছিলেন একমাত্র বাংলাদেশী যিনি আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্ব

    0
    256

    আমারসিলেট24ডটকম,জানুয়ারী,তফিদুর রহমান তৌফিকঃ বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও মুক্তিযুদ্ধের সময় প্রবাসী সরকারের বিশেষ দূত অধ্যাপক রেহমান সোবহান বলেছেন, একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় বঙ্গবন্ধুই ছিলেন একমাত্র বাংলাদেশী যিনি আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্বে পরিণত হয়েছিলেন। সেসময় বঙ্গবন্ধুই বিশ্বজুড়ে আমাদের পরিচয় (আইডেন্টিটি) হয়ে উঠেছিল।

    তখন কোন আনুষ্ঠানিক ঘোষণার প্রয়োজন হয়নি। আজ যখন একাত্তরের স্বাধীনতার ঘোষণা নিয়ে নানা বিতর্ক হয়, আমার কাছে তা অযৌক্তিক মনে হয়। দেশের ৪৩ জন পেশাদার কূটনীতিকের অভিজ্ঞতার আলোকে ‘সার্ভিং দ্য নেশন:রিফ্লেকশন অফ বাংলাদেশ ডিপলোমেটস’ শীর্ষক প্রামান্য গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে শনিবার বর্ষীয়ান এই বিশিষ্টজন এসব কথা বলেন।

    বাংলাদেশ এন্টারপ্রাইজ ইন্সটিটিউটের (বিইআই) উদ্যোগে রাজধানীর এক রেস্তোরাঁয় গ্রন্থটির মোড়ক উন্মোচন করা হয়। বইটিতে একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় কলকাতায় প্রথম মিশন চালুর মাধ্যমে বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন থেকে শুরু করে সম সাময়িক কূটনীতি নিয়ে ৪৩ জন রাষ্ট্রদূত তাদের অভিজ্ঞতা স্মৃতিকথা হিসেবে তুলে ধরেছেন।এদের মধ্যে ১১ জনই সাবেক পররাষ্ট্র সচিব ছিলেন।

    গত সাড়ে চার দশকে বাংলাদেশের কূটনীতির পথচলা ও উত্থান পতনের নানা ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে প্রামান্য গ্রন্থটি প্রকাশ করেছে বেসরকারি সংগঠন বিইআই। বিইআই সভাপতি ও সাবেক কূটনীতিক ফারুক সোবহানের সঞ্চালনায় এই মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন দেশের বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও মুক্তিযুদ্ধের সময় প্রবাসী সরকারের বিশেষ দূত অধ্যাপক রেহমান সোবহান, সাবেক দুই পররাষ্ট্র সচিব ফারুক আহমদ চৌধুরী ও মোহাম্মদ মহসীন এবং ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম।

    অন্যদের মধ্যে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও সাবেক পররাষ্ট্র সচিব সি এম শফি সামি,   হুমায়ুন কবীর, সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল আহসান, মোহাম্মদ জমির উদ্দিন, ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার পঙ্কজ শরণসহ দেশি- বিদেশি কূটনীতিকরা উপস্থিত ছিলেন।
    প্রসঙ্গত, বিইআই-এর ব্যবস্থাপনায় একাডেমিক প্রেস এন্ড পাবলিশার্স লাইব্রেরি (এপিপিএল) প্রকাশিত ইংরেজি ভাষার এই গ্রন্থটির মূল্য ছয়শত টাকা।বক্তারা কূটনীতিকদের অভিজ্ঞতা সমৃদ্ধ বইটিকে একটি প্রামান্য দলিল হিসেবে উল্লেখ করেন এবং প্রকাশের জন্য বিইআই’র উদ্যোগের প্রশংসা করেন।

    তারা বলেন, একাত্তরের মার্চে মহান মুক্তিযুদ্ধ শুরুর পর বিভিন্ন দেশে কর্মরত কূটনীতিকরা পাকিস্তানের পক্ষ ত্যাগ করে বাংলাদেশের প্রতি আনুগত্য ঘোষণা করেন। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গঠনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন তারা। তাদের অনবদ্য ভূমিকার কারণে সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশ দ্রুত বিশ্ব সম্প্রদায়ের স্বীকৃতি পায়।

    এছাড়াও বইটিতে উঠে এসেছে বহির্বিশ্বে এই দেশটির টিকে থাকার সংগ্রাম, দারিদ্র আর প্রাকৃতিক দুর্যোগ পীড়িত দেশ হিসাবে নেতিবাচক প্রচার এবং রাজনৈতিক ভাবে অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে কূটনীতিকদের কিভাবে জবাব দিতে হয়েছে।
    অধ্যাপক রেহমান সোবহান তার বক্তব্যে প্রবাসী সরকারের দূত হিসাবে নয়াদিল্লীতে গিয়ে ভারত সরকারের সঙ্গে আলোচনা, ওয়াশিংটনে বাংলাদেশের প্রতিনিধি হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস ও সিনেটের সঙ্গে লবিং করা এবং প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে বিভিন্ন দেশে সফরের নানা স্মৃতি চারণকরে বলেন, পাকিস্তানের কাছথেকে পৃথক হওয়ার মধ্য দিয়ে আমার কূটনৈতিক জীবন অপ্রত্যাশিত ভাবে শুরু হয়েছিল।

    গত ৪৩ বছরে দেশের কূটনীতিতে অনেক কিছুই ঘটেছে। কিন্তু কখনোই তা এমন পরিসরে সামনে আসেনি। এই ৪৩ জন কূটনীতিকের অভিজ্ঞতার আলোকে আমাদের কূটনীতির পুর্ন মূল্যায়নেরও একটি সুযোগ তৈরী হলো।তিনি আরো বলেন, আজ যখন একাত্তরের স্বাধীনতার ঘোষণা নিয়ে নানা বিতর্ক হয়, আমার কাছে তা অযৌক্তিক মনে হয়। কারণ একাত্তরে বঙ্গবন্ধুই ছিলেন একমাত্র বাংলাদেশী যিনি আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্বে পরিণত হয়েছিলেন।

    ওইসময় বঙ্গবন্ধুই বিশ্বজুড়ে আমাদের পরিচয় (আইডেন্টিটি)হয়ে উঠেছিল। তখন তো আমাদের কোন আনুষ্ঠানিক ঘোষণার প্রয়োজন হয়নি।মোহাম্মদ মোহসীন বলেন, এইবইটি হচ্ছে বাংলাদেশের কূটনীতির সম সাময়িক ইতিহাস। একইসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের সময় সক্রিয়ভূমিকা ও স্বাধীনতার পর দেশ পুনর্গঠনে কূটনীতিকদের অবদানের প্রামান্য দলিলও।

    ফারুক চৌধুরী বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালন কালে অভিজ্ঞতা বইটিতে তুলে ধরেছেন ৪৩ জন কূটনীতিক। এটি শুধু দেশের জন্য দায়িত্ব পালনের কথাই নয়, বরং এই অভিজ্ঞতা নবীন ও উদীয়মান কূটনীতিকদের জ্ঞানকে সমৃদ্ধ করবে ও সামনে এগিয়ে যাওয়ার পথ দেখাবে। এই বইটি আমাদের চিন্তার খোরাক যোগাবে,জাতীয় স্বার্থরক্ষা করে কিভাবে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ ও সহযোগিতার সম্পর্ক এগিয়ে নেবে।

    বইটির শিরোনাম খুব সাধারণ হয়েছে এমন মন্তব্য করে মাহফুজ আনামবলেন, বইটির শিরোনামের প্রথমঅংশ পড়ে বোঝার উপায় নেইযে এতোজন প্রাজ্ঞ কূটনীতিকের লেখা নিয়ে বইটি সম্পাদিত হয়েছে। এছাড়া কিছু অভিজ্ঞতা একেবারেই ব্যক্তিগত দৃষ্টিকোন থেকে ছিল।তবে নি:সন্দেহে এটি একটি ব্যতিক্রম প্রকাশনা ও একদল মেধাবী সরকারি কর্মকর্তার যৌথ ফসল।

    একাত্তরের উত্তাল দিন গুলোতে কিভাবে তরুন মুক্তি যোদ্ধারা কূটনীতিকহয়ে উঠেছিলেন; বিদেশের মাটিতে প্রথম বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন ফারুক সোবহান বলেন, সাবেক কূটনীতিকদের চোখে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি কিভাবে আজকের ম্যাচিউড অবস্থানে এসেছে তা বইটিতে উঠে এসেছে।