বঙ্গবন্ধু নিজের প্রাণের চেয়েও বেশি ভালোবাসতেন এদেশের মানুষকে

0
164

আমার সিলেট ডেস্ক রিপোর্ট: ৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সেদিনকার এই কালরাতে বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যাকাণ্ডের এই দিনে আগস্ট আর শ্রাবণ মিলেমিশে একাকার হয়েছিল বঙ্গবন্ধুর পরিবারের নারী শিশু সহ সকলের রক্ত আর আকাশের বাঁধভাঙ্গা অশ্রু প্লাবনে।

ওই দিনের সেই নির্মমতার কাছে পৃথিবীর সবচেয়ে নিকৃষ্ট খুনিও হার মানাবে।
পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট সুবেহ সাদিকের সময় যখন ধানমন্ডি বত্রিশ নম্বরে নিজ বাসভবনে সপরিবারে বঙ্গবন্ধুর দেহ বুলেটের বৃষ্টিতে ঘাতকরা ঝাঁঝরা করে দিয়েছিল, তখন যে বৃষ্টি ঝরছিল, তা যেন ছিল প্রকৃতিরই অশ্রুপাত। ভেজা বাতাস কেঁদেছে সমগ্র বাংলায়। ঘাতকদের উদ্যত অস্ত্রের সামনে ভীতসন্ত্রস্ত বাংলাদেশ বিহ্বল হয়ে পড়েছিল শোকে আর অভাবিত ঘটনার আকস্মিকতায়। কাল থেকে কালান্তরে জ্বলবে এ শোকের আগুন। তাই ১৫ আগস্ট শোকার্ত বাণী পাঠের দিন, স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৮তম শাহাদাত বার্ষিকী,আজ জাতীয় শোক দিবস।
‘যতকাল রবে পদ্মা যমুনা, গৌরী মেঘনা বহমান/ ততকাল রবে কীর্তি তোমার শেখ মুজিবুর রহমান।/ দিকে দিকে আজ অশ্রুগঙ্গা/ রক্তগঙ্গা বহমান/ নাই নাই ভয় হবে হবে জয়/ জয় শেখ মুজিবুর রহমান।’ শোকের দিবসে আজ সারাদেশের পথে-প্রান্তরে লাখো-কোটি কৃতজ্ঞ বাঙালির কণ্ঠে ধ্বনিত হবে প্রখ্যাত কবি অন্নদাশঙ্কর রায়ের ‘জয় মুজিবুর রহমান’ নামক কবিতায় জাতির পিতার প্রতি শ্রদ্ধা জানানো এই পঙ্তিমালা।
সেদিন আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নশ্বর দেহ তাঁর বাসগৃহে, বত্রিশ নম্বরের সেই বাড়িতে, ক্ষতবিক্ষত হয়েছিল ঘাতকের গুলিতে। কিন্তু তাঁর অবিনশ্বর চেতনা ও আদর্শ ছিল বাঙালি জাতির জন্য মৃত্যুঞ্জয়ী। বঙ্গবন্ধুকে দৈহিকভাবে হত্যা করা হলেও তাঁর আদর্শের মৃত্যু নেই যতদিন এ রাষ্ট্র থাকবে, ততদিন অমর তিনি।
সমগ্র জাতিকে বঙ্গবন্ধু বাঙালি জাতীয়তাবাদের প্রেরণায় প্রস্তুত করেছিলেন ঔপনিবেশিক শাসক-শোষক পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়তে। তিনি বাংলার আকাশে এ জাতির চেতনায় অবিস্মরণীয় একটি নাম। বঙ্গবন্ধু কেবল একজন ব্যক্তি নন, এক মহান আদর্শের নাম। যে আদর্শে উজ্জীবিত হয়েছিল গোটা দেশ। বাঙালি জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র আর ধর্মনিরপেক্ষ দর্শনে দেশের সংবিধানও প্রণয়ন করেছিলেন স্বাধীনতার স্থপতি, হাজার বছরের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব। শোষক আর শোষিতে বিভক্ত সেদিনের বিশ্ব বাস্তবতায় বঙ্গবন্ধু ছিলেন শোষিতের পক্ষে।
দক্ষিণ এশিয়ার পাঁচ হাজার বছরের ইতিহাসে এই আমরাই তো একমাত্র জাতি যারা সশস্ত্র সংগ্রাম করে, প্রত্যক্ষ যুদ্ধ করে স্বাধীনতা অর্জন করেছি একটি মানুষের ডাকে, একটি মাত্র রণমন্ত্র কণ্ঠে ধারণ করে। সেই মানুষটি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আর সেই রণমন্ত্র ‘জয় বাংলা’। কার সাধ্য ছিল এ জাতির গতিরোধ করে? বঙ্গবন্ধু আর বাংলাদেশ সমার্থক। বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে হায়েনার দল বাংলাদেশকেই হত্যা করতে চেয়েছিল, মুছে দিতে চেয়েছিল মুক্তিযুদ্ধজাত এই দেশটিকে পৃথিবীর মানচিত্র থেকে। কিন্তু এত সহজেই কি মোছা যায় জাতির জনকের নাম আর জনকের স্বপ্নজাত দেশটিকে?
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু নিজের প্রাণের চেয়েও বেশি ভালোবাসতেন এদেশের মানুষকে। বিশ্বাস করতেন অন্ধভাবে। কারণ এ বাঙালির মুক্তি, স্বাধীনতার জন্য তিনি জীবনের ২৩টি বছর ধরে লড়াই করেছেন, জীবন-যৌবনের অধিকাংশ সময় কাটিয়েছেন কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে। মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছেন বারংবার। কিন্তু বাঙালির মুক্তির প্রশ্নে কোনোদিন আপোস করেননি। সেই বাঙালির হাতেই তাঁকে পুরো পরিবারসহ জীবন দিতে হবে, এটা ছিল বঙ্গবন্ধুর ভাবনারও অতীত। কিন্তু সেটাই হয়েছে। বাঙালি নামক কিছু বিশ্বাসঘাতক-বেইমান-কুলাঙ্গার হায়েনাদের হাতেই তাঁকে শেষ পর্যন্ত জীবন দিতে হয়েছে।
বাংলার মানুষের অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মাত্র ৫৫ বছরের জীবনে (১৯২০-১৯৭৫) স্বদেশের মাটি আর মানুষকে এমন গভীর ভালোবাসার বন্ধনে বেঁধেছিলেন, যে বন্ধন কোনোদিন ছিন্ন হবার নয়। বাঙালির হাজার বছরের ইতিহাসে শ্রেষ্ঠতম সেই পুরুষ তিনি, একটি স্বাধীন জাতিরাষ্ট্র হিসেবে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব। আজীবন ঔপনিবেশিক শোষণ-বঞ্চনার বিরুদ্ধে, দারিদ্র্য নিপীড়িত বঞ্চিত মানুষের মুক্তির সংগ্রামে এমন ভূমিকা রেখেছিলেন, যার তুলনা বিরল। একজন প্রকৃত নেতার যেসব গুণাবলি থাকা প্রয়োজন, তার সব নিয়েই জন্মেছিলেন ক্ষণজন্মা এই মহাপুরুষ। যাঁর রাজনৈতিক জীবন ছিল বর্ণিল, যাঁর কণ্ঠে ছিল জাদু। যিনি রচনা করেছিলেন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের বিজয় ইতিহাস।
রাজনীতির সঙ্গে সামান্যতম সম্পৃক্ততা না থাকা সত্ত্বেও নারী-শিশুরাও সেদিন রেহাই পায়নি ঘৃণ্য কাপুরুষ এই ঘাতকচক্রের হাত থেকে। বিদেশে থাকার জন্য প্রাণে বেঁচে যান কেবল বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা। দিনটি তাই বাঙালির ইতিহাসে সবচেয়ে কলঙ্কিত। জাতীয় শোক দিবসে আজ বাঙালি গভীর শোক ও শ্রদ্ধায় স্মরণ করবে বাংলাদেশ নামক ভূখ-ের স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে। সম্পূর্ণ রাষ্ট্রীয় যথাযোগ্য মর্যাদায় আজ মঙ্গলবার দেশব্যাপী পালিত হচ্ছে বঙ্গবন্ধুর শাহাদাতবার্ষিকী।
বাংলাদেশের স্থপতির নির্মম-নৃশংস হত্যার বিচার পেতে বাঙালি জাতিকে ৩৫টি বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে। প্রতি পদে পদে খুনিদের দোসর ও মদতদানকারী সরকারের ষড়যন্ত্র-চক্রান্তের বেড়াজালে আটকে থেকেছে ইতিহাসের নিষ্ঠুরতম এই হত্যাযজ্ঞের বিচার। সকল ষড়যন্ত্র-চক্রান্তের বেড়াজাল ছিন্ন করে ২০১০ সালের শুরুতেই ২৮ জানুয়ারি মানবতার শত্রু নরপিশাচ বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত পাঁচ খুনির মৃত্যুদ- কার্যকর হয়েছে। ভারতে পালিয়ে থাকা বঙ্গবন্ধুর আরেক খুনি আবদুল মাজেদকে দেশে গ্রেপ্তারের পর আইনি প্রক্রিয়া শেষে ২০২০ সালের ১২ এপ্রিল তার ফাঁসি কার্যকর করা হয়। ছয় খুনির ফাঁসি হলেও আজও নেপথ্যের কুশীলবরা রয়েছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। পাঁচ বঙ্গবন্ধুর খুনি এখনো রয়েছে পলাতক।
৪৮ বছরের পথ পরিক্রমায় জিয়াউর রহমানসহ অনেকের নামই এই নিষ্ঠুর হত্যাযজ্ঞের ‘মাস্টারমাইন্ড’ হিসেবে চিহ্নিত হলেও আইনগতভাবে তাদের কিছুই করা হয়নি। তাই এবারের শোক দিবসের সর্বত্র একই আওয়াজ- শুধু খুনি নয়, নেপথ্যের কুশীলবদেরও দৃষ্টান্তমূলক বিচার করতে হবে। একটি বিশেষ জাতীয় কমিশন গঠন করে জাতির সামনে তাদের মুখোশ উন্মোচন করতে হবে। সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ের মন্ত্রী ও নেতাদের মুখ থেকেও এ দাবি উঠেছে বেশ জোরের সঙ্গেই। সরকার থেকেও দ্রতই এই কমিশন গঠনের ইতিবাচক সাড়াও মিলেছে।
কী ঘটেছিল সেই সর্বনাশা দিনে ॥ অকুতোভয় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট নারকীয় হামলার সময় ঘাতকের বুলেটের সামনে দাঁড়িয়েও খুনিদের কাছে জানতে চেয়েছিলেন, ‘তোরা কী চাস? আমাকে কোথায় নিয়ে যাবি?’ বঙ্গবন্ধুকে দেখেও হাত কাঁপেনি বেইমান-মোনাফেক খুনিদের। বঙ্গবন্ধুর রক্তের কেউ যেন বেঁচে না থাকে, সেভাবেই নিষ্ঠুর হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছি খুনিদের দল।
বঙ্গবন্ধুর ঐন্দ্রজালিক নেতৃত্বে এই ভূখ-ের মানুষ হাজার বছরের পরাধীনতার শৃঙ্খল ছিঁড়ে ছিনিয়ে এনেছিল স্বাধীনতার রক্তিম সূর্য। আমরা পেয়েছিলাম নিজস্ব জাতি রাষ্ট্র, গর্বিত আত্মপরিচয়। মুক্তিযুদ্ধকালীন ৯ মাস কারাগারে বন্দি রেখেও পাকিস্তানি জল্লাদরা বঙ্গবন্ধুর কেশাগ্র পর্যন্ত স্পর্শ করার সাহস দেখাতে পারেনি। বঙ্গবন্ধুর দৃঢ়বিশ্বাস ছিল স্বাধীন দেশে কোন বাঙালি তাঁর নিরাপত্তার জন্য হুমকি হতে পারে না। সেজন্যই বঙ্গবন্ধু বঙ্গভবনের পরিবর্তে থাকতেন তাঁর প্রিয় ঐতিহাসিক ৩২ নম্বর ধানমন্ডির অপরিসর নিজ বাসভবনেই।
বাঙালির স্বাধিকার-স্বাধীনতা আন্দোলনের সূতিকাগার এই বাড়িটি অসম্ভব প্রিয় ছিল বঙ্গবন্ধুর। এখানে থেকেই বঙ্গবন্ধু সর্বশক্তি নিয়ে ব্রতী ছিলেন যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গড়ার কাজে। কিন্তু একাত্তরের পরাজিত শত্রুরা বাঙালির প্রতি বঙ্গবন্ধুর অসীম ও গভীর ভালোবাসা ও বিশ্বাসকেই সুযোগ হিসেবে গ্রহণ করে। রাতের অন্ধকারে হামলায় চালায় স্বাধীনতার স্থপতির বাসভবনে। কাপুরুষোচিত আক্রমণ চালিয়ে পৈশাচিক পন্থায় ঘাতক দল বঙ্গবন্ধুকে নিষ্ঠুর ও নির্মমভাবে হত্যা করে। বাঙালিকে পিছিয়ে দেয় প্রগতি-সমৃদ্ধির অগ্রমিছিল থেকে।
কিছু বিশ্বাসঘাতক মীরজাফর রাজনীতিকের চক্রান্ত, পরাজিত পাকিস্তানি দোসরদের পরিকল্পনা এবং সেনাবাহিনীর একদল বিপথগামী উচ্চাভিলাষী সদস্য পৈশাচিক কায়দায় গুলি করে সেদিন বঙ্গবন্ধুকেই হত্যা করেনি, একসঙ্গে তিন বাড়িতে হামলা করে মেতে উঠেছিল ইতিহাসের এক নিষ্ঠুর হত্যাযজ্ঞে।
তারা একে একে হত্যা করে বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিণী শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব, তিন ছেলে মুক্তিযোদ্ধা শেখ কামাল, শেখ জামাল ও শিশুপুত্র শেখ রাসেল, দুই পুত্রবধূ সুলতানা কামাল ও রোজি জামাল, বঙ্গবন্ধুর অনুজ পঙ্গু মুক্তিযোদ্ধা শেখ নাসের, ভগ্নিপতি পানি সম্পদমন্ত্রী আবদুর রব সেরনিয়াবাত, তাঁর ছেলে আরিফ ও শিশুপৌত্র সুকান্ত বাবু, ভাগ্নে যুবনেতা শেখ ফজলুল হক মনি, তাঁর অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী আরজু মনি, সেরনিয়াবাতের কন্যা বেবি সেরনিয়াবাত, আবদুর নঈম খান রিন্টু, বঙ্গবন্ধুর জীবন বাঁচাতে ছুটে আসা রাষ্ট্রপতির ব্যক্তিগত নিরাপত্তা কর্মকর্তা কর্নেল জামিলসহ কয়েক নিরাপত্তা কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে। শিশু রাসেলের রক্তভেজা লাশ দেখে খুনিদের প্রতি চরম ঘৃণা-ধিক্কার জানানোর ভাষা পায় না মানবতাবাদী বিশ্বের কোনো মানুষ।
রাজনৈতিক হত্যা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে সংঘটিত হয়েছে বিভিন্ন কালে। কিন্তু প্রতিটি হত্যার বিচার হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশে? এখানে ইতিহাস যেন উল্টো পথযাত্রী! এখানে বিচার বিঘিœত। বিশ্বের ইতিহাসে একসঙ্গে এত নৃশংস রাজনৈতিক হত্যাকা-ের নজির নেই বললেই চলে। তবুও কী আশ্চর্য, এই ভয়ংকর হত্যাকা-ের সঙ্গে জড়িত আত্মস্বীকৃত খুনিদের চূড়ান্ত শাস্তি পেতে কেটে যায় একে একে ৩৪ বছর। বিচারের পথে সৃষ্ট দীর্ঘ বাধার প্রাচীর বিতর্কিত করে দেশের সুপ্রিম কোর্ট এবং বিচারপতিদেরও। জাতি দেখেছে এই দীর্ঘ সময়ে নিষ্ঠুর এই ঘাতকদের প্রকাশ্য পুরস্কৃত করার ঘৃণ্য চিত্র।
সেই বাধার প্রাচীর ডিঙিয়ে অবশেষে ২০১০ সালের ২৭ জানুয়ারি মধ্যরাতের পর। ২৮ জানুয়ারি ভোরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে ফাঁসির রায় কার্যকর হয় পাঁচ আত্মস্বীকৃত খুনির। কলঙ্কমুক্তির আনন্দে উদ্বেল হয় গোটা দেশ। তবুও জাতির খুনিদের প্রতি ঘৃণা এতটুকুও কমেনি। অনেকেরই জিজ্ঞাসা- ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদ- কার্যকর হলেও এসব ঘৃণ্য নরপশুদের প্রতি বাঙালির ঘৃণা-ধিক্কার এতটুকুও কমবে না। বরং দেশ যতদিন থাকবে, ততদিন এসব ঘাতকের কবরে প্রজন্মের পর প্রজন্মের সন্তানরা তাদের হৃদয়ের ঘৃণা জানাতে এতটুকুও ভুলবে না।
নানা কর্মসূচিতে বঙ্গবন্ধুকে স্মরণ ॥ রাষ্ট্রীয়ভাবে আজ মঙ্গলবার পালিত হচ্ছে জাতীয় শোক দিবস। এ উপলক্ষে ঐতিহাসিক ৩২ নম্বর ধানমন্ডি ও টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর মাজার প্রাঙ্গণ ও এর আশপাশের এলাকায় নিশ্চিদ্র নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলা হয়েছে। দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। শোক বাণীতে তাঁরা মহান আল্লাহর দরবারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ ১৫ আগস্টের সকল শহীদের রুহের মাগফিরাত কামনা করেন।
জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে বাঙালি জাতি গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে দিবসটি পালন করবে। জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে সরকারি কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে- সকাল সাড়ে ৬টায় ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর প্রাঙ্গণে রক্ষিত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর পুষ্পস্তবক অর্পণ। সশস্ত্র বাহিনীর গার্ড অব অনার প্রদান এবং মোনাজাত। সকাল সাড়ে ৭টায় বনানী কবরস্থানে জাতির পিতার পরিবারের সদস্যবৃন্দ ও অন্যান্য শহীদের কবরে প্রধানমন্ত্রীর পুষ্পস্তবক ও ফুলের পাপড়ি অর্পণের পর ফাতেহা পাঠ ও মোনাজাত।
এছাড়া আজ মঙ্গলবার সকালে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে প্রধানমন্ত্রী পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। সশস্ত্র বাহিনীর গার্ড অব অনার ছাড়াও সমাধি কমপ্লেক্সে ফাতেহা পাঠ ও মোনাজাত করা হবে। শোক দিবসে সারাদেশের মসজিদসমূহে বাদ যোহর বিশেষ মোনাজাত অনুষ্ঠিত হবে। মন্দির, গির্জা, প্যাগোডা ও অন্যান্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করা হবে। জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে আজ সকল সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বেসরকারি ভবন ও বিদেশস্থ বাংলাদেশ মিশনসমূহে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত থাকবে।
আজ জাতীয় দৈনিক ও সাময়িকীতে বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করা হবে। সকল সরকারি-বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, উচ্চ বিদ্যালয়, মাদ্রাসা, কলেজ, মেডিক্যাল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আলোচনা সভা, কবিতা পাঠ, রচনা ও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, চিত্র প্রদর্শনী, হামদ-নাত প্রতিযোগিতা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করবে। ধানমন্ডি, বনানী ও টুঙ্গিপাড়ার অনুষ্ঠান বাংলাদেশ বেতার ও বাংলাদেশ টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচারিত হবে। এছাড়া অন্যান্য বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল, এফএম বেতার ও কমিউনিটি রেডিও অনুষ্ঠানসমূহ সরাসরি সম্প্রচার করবে।
দিবসটি উপলক্ষে আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। আওয়ামী লীগের কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে- সূর্য উদয়ক্ষণে বঙ্গবন্ধু ভবন এবং কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ সারাদেশে সংগঠনের সকল স্তরের কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা ও কালো পতাকা উত্তোলন। সকালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক স্মৃতি-বিজড়িত ধানমন্ডিস্থ বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ।
এরপর বনানী কবরস্থানে ১৫ আগস্টের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন, মাজার জিয়ারত, ফাতেহা পাঠ, মোনাজাত, মিলাদ মাহফিল ও আলোচনা সভা। দুপুরে সারাদেশে অসচ্ছল, এতিম ও দুস্থদের মাঝে খাদ্য বিতরণ ও গণভোজের আয়োজন করা হয়েছে। বাদ আছর ধানমন্ডিস্থ বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে মহিলা আওয়ামী লীগের দোয়া ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। পরদিন বুধবার বিকেল সাড়ে তিনটায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগের আলোচনা সভা। এতে সভাপতিত্ব করবেন এবং বক্তব্য রাখবেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
এছাড়া দেশব্যাপী বহু রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠন বিস্তারিত কর্মসূচির মাধ্যমে রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন। আওয়ামী লীগ ছাড়াও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সকল রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনও বিস্তারিত কর্মসুচির মাধ্যমে পালন করছে জাতির পিতার মৃত্যুবার্ষিকী।