বিশ্বনাথে চাঞ্চল্যকর পপি গণধর্ষণ মামলার রহস্য উন্মোচন

    0
    203

    সিলেট প্রতিনিধিঃ আত্মহত্যার পর হাত ব্যাগ থেকে চিরকুট উদ্ধারের ১০দিনের মাথায় সিলেটের বিশ্বনাথে চাঞ্চল্যকর পপি গণধর্ষণ মামলার রহস্য উন্মোচন করার দাবী করেছে পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদে মামলার প্রধান আসামি জাহাঙ্গীর আলম (৩৫) ও দ্বিতীয় আসামি বারিক মিয়া (৩৭) গণধর্ষণের দায় স্বীকার করেছেন।

    ৮ দিন রিমান্ডে থাকার পর বৃহস্পতিবার বিকেলে সিলেটের জ্যুডিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মো. মাহবুবুর রহমান ভূঁঈয়ার কাছে দেওয়া জবানবন্দিতে গণধর্ষণের কথা স্বীকার করেন বলে জানা গেছে।

    এর আগে গত ১৮ অক্টোবর শুক্রবার সিলেটের জ্যুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক বেগম নওরিন করিম পৃথকভাবে দুজনের ৮ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

    ধর্ষক জাহাঙ্গীর পপির বোনজামাই ফয়জুল ইসলামের পাশের বাড়ি সিলেটের দক্ষিণ সুরমার তেতলী চেরাগী গ্রামের আজিজুল হকের ছেলে। বারিক মিয়াও একই গ্রামের আব্দুল মনাফের ছেলে। আর গণধর্ষণের শিকার হয়ে আত্মহননকারী ২১ বছর বয়সী পপি বেগম সিলেটের বিশ্বনাথের লালটেক গ্রামের দরিদ্র শুকুর আলী ও জোস্না বেগম দম্পতির তৃতীয় মেয়ে।

    আদালতে জবানবন্দির বিষয়টি সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেছেন বিশ্বনাথ থানার ওসি (প্রশাসন) শামীম মুসা ও মামলা তদন্তকারী কর্মকর্তা ওসি (তদন্ত) রমা প্রসাদ চক্রবর্তি।

    তারা বলেন, গত ৯ অক্টোবর বুধবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে বোন ও দুলাভাইয়ের সঙ্গে অভিমান করে নিজ বাড়িতে যাওয়ার উদ্দেশে বের হন পপি। রাত পৌনে ১২টার দিকে বোনের বাড়ির পথ থেকে তাকে তুলে নিয়ে পালাক্রমে ধর্ষণ করেন জাহাঙ্গীর ও বারিক। নিজের ইজ্জত বাঁচাতে না পেরে অবশেষে জাহাঙ্গীরকে পরিচয় দেন পপি বেগম। বলেন,‘ জাহাঙ্গীর ভাই তুমি আমারে ছিন-রা-না-নি (চিনতে পারনি), আমি তুমার পাশের বাড়ির ফয়জুলের হালি (শ্যালিকা) পপি।’ পরে তাকে (পপিকে) বুঝিয়ে-সুজিয়ে ১০ অক্টোবর বৃহস্পতিবার ভোরে  তার বোনের বাড়ি রেখে যান জাহাঙ্গীর।

    এসময় বোনের গালমন্দ সহ্য করতে না পেরে দুলাভাইকে সঙ্গে নিয়ে ওইদিন সকালে বাড়ি ফিরে একটি চিরকুটে ঘটনার বিবরণ লিখে দুপুরে আত্মহত্যা করেন পপি। পরদিন ১১ অক্টোবর শুক্রবার ময়নাতদন্ত শেষে পপিকে দাফন করা হয়। কিন্তু দাফনের দুই দিন পর গত ১৩ অক্টোবর রোববার হঠাৎ পপির হাতব্যাগে চিরকুট পান তার মা। আর ১৪ অক্টোবর সোমবার রাতে পপির বাবা শুকুর আলী বাদি হয়ে জামাতা ফয়জুল ইসলামসহ ৪ জনকে আসামি করে বিশ্বনাথ থানায় গণধর্ষণ ও আত্মহত্মার প্ররোচরণার অভিযোগে মামলা দায়ের করেন। চিরকুট পাওয়ার পর পপির বড় বোনের স্বামী ফয়জুল ইসলামসহ ৪ জনের নাম উল্লেখ করে এবং আরোও কয়েকজনকে অজ্ঞাতনামা অভিযুক্ত করে বিশ্বনাথ থানায় মামলা দায়ের করেন তার পিতা শুকুর আলী। মামলা নং ৫ (তাং ১৪.১০.১৯ইং)।

    পুলিশের একটি সুত্র জানান, মামলার পরিপ্রেক্ষিতে একে একে ৩ আসামিকে র‌্যাব-৯ ও থানা পুলিশ গ্রেফতার করে। আর বারিক মিয়া আদালতে হাজিরা দিতে গিয়ে আটকা পড়েন।

    উল্লেখ্য নিহত পপির মা জোসনা বেগম সাংবাদিকদের জানান, ১৩ অক্টোবর রবিবার মেয়ে পপি বেগমের ব্যবহৃত ভ্যানেটি ব্যাগ হাতে নিয়ে তিনি মেয়ের রেখে যাওয়া স্মৃতি দেখতে গিয়ে ওই ব্যাগের মধ্যে পপির নিজ হাতে লেখা একটি কাগজ দেখতে পান। এসময় তিনি প্রতিবেশী লোকজনকে ওই কাগজটি দেখান। তখন কাগজে লেখা পড়ে জানতে পারেন গণধর্ষণের শিকার হয়ে লজ্জায় তার মেয়ে আত্মহত্যা করেছে।