বীর প্রতীক কাকন বিবির নাম আজও গেজেট হয়নি !

    0
    302

    আমারসিলেট টুয়েন্টিফোর ডটকম,২৩মার্চ,জাহাঙ্গীর আলম ভুঁইয়া,সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি: আমার মা দেশের জন্য যে অবদান রেখে গেছেন তার জন্য আমরা গর্ববোধ করি। আমার মায়ের শেষ ইচ্ছা টা পূরন হল না অপূর্ন রইয়েই গেল। মায়ের শেষ ইচ্ছা ছিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে দেখা করবেন। সবাই আমার মায়ের জন্য দোয়া করবেন। তিনি আরো বলেন,বীর প্রর্তীক খেতাব ঘোষিত হলেও আজও গেজেট আকারে প্রকাশ হয়নি আমার মা কাকন বিবির নাম। মৃত্যুর পূর্বেও যদি তিনি গেজেট আকারে প্রকাশ হত তাহলে তিনি মরে গিয়েও খুশি হতেন এসব কথা বলেন,কাকন বিবির মেয়ে সখিনা বেগম।
    এবিষয়ে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাবিরুল ইসলাম জানান গেজেট আকারে প্রকাশের জন্য সবোর্চ্চ চেষ্টা করা হচ্ছে। এ বিষয়ে মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের সচিবের সাথে কথা বলেছি।
    স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাগন বলেন,খেতাব পেয়েও খেতাবের সুযোগ সুবিধা না পাওয়া টা খুবেই দুঃখ জনক। জীবদ্দশায় এই প্রাপ্য পাওয়া প্রয়োজন ছিল। খেতাবের সকল সুযোগ-সুবিধা যে তার পুরবার পায় তার সকল ব্যবস্থ করতে হবে।
    মুক্তিযোদ্ধে বীরপ্রতীক খেতাব উপাধিতে ভূষিত নারী মুক্তিযোদ্ধা বীর প্রতীক কাকন বিবির দাফন সম্পন্ন হয়েছে। বৃহস্পতিবার বাদ আছর নামাজে জানাযা শেষে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় এই মহিয়সী নারীকে সুনামগঞ্জের দোয়ারা বাজার উপজেলার জিরাগাঁও গ্রামের নিজ বাড়ির আঙ্গিনায় থাকে দাফন করা হয়েছে। এর পূর্বে কাকন বিবির মরদেহ বেলা একটায় সিলেট থেকে নিজ গ্রামে আনা হয়। পরে সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক সাবিরুল ইসলাম,পুলিশ সুপার বরকত উল্লাহ খান,জেলা ও উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ,উপজেলা প্রশাসন সকল দল ও বিভিন্ন সংঘটন এবং প্রতিষ্টানের পক্ষ থেকে মরদেহে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানোর পর তাতে গার্ড অব অনার সহ রাষ্ট্রীয় মর্যাদা প্রদান করা হয়। এর পর সর্বস্থরের জনসাধানের উপস্থিতিতে তার জানাজা অনুষ্টিত হয়।

    একাত্তরে পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সম্মুখ যুদ্ধে অংশ নেয়া খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা নূরজাহান বেগম ওরফে কাকন বিবি সিলেট এম.এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় গত বুধবার রাত সোয়া ১১টায় এই বীর প্রতীকের মৃত্যু হয় বলে নিশ্চিত করেন হাসপাতালের পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল একেএম মাহবুবুল হক। ইন্নালিল্লাহী…রাজিউন।

    শ্বাসকষ্ঠ নিয়ে গত সোমবার এই হাসপাতালে শেষবারের মতো ভর্তি হয়েছিলেন শতবর্ষী কাকন বিবি। এর আগে হত বছরের জুলাইয়ে পরবর্তীতে ডিসেম্বরে দু-দফায় ভর্তি হয়ে একই হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা নেন তিনি। কাকন বিবির জন্ম ১৯৪১সালে বলে জানিয়েছেন তার ভাগ্নে ইনছান আলী। মেঘালয়ের নেত্রাই খাসিয়া পল্লীতে তিনি জন্মেছিলেন বলে সুনামগঞ্জের মুক্তিযোদ্ধা সংসদের নেতৃবৃন্দ স্বীকার করেন। কাকন বিবির স্বামী সাঈদ আলীও প্রয়াত হয়েছেন। ১৯৭০সালে দিরই উপজেলান শহীদ আলীর সাথে বিয়ে হয় কাকন বিবির। বিয়ের পর তার নাম পরিবর্তন হয়ে নুর জাহান বেগম করা হয়। তার গ্রামের বাড়ী সুনামগঞ্জ জেলার দোয়ারাবাজার থানার লক্ষীপুর ইউনিয়নের জিরারগাঁও গ্রামে। এলাকায় তার পরিচিতি ছিল খাসিয়া মুক্তি বেঠি হিসাবে। স্বামী আব্দুল মজিদ খান ছিলেন ইপিআর সদস্য। এর পর স্বামীর খোঁজ করতে গিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে পরিচিতি হয়। শুরু করেন গুপ্তচরের কাজ।

    এরপর মুক্তিযোদ্ধে অংশ গ্রহন করেন কাকন বিবি। ১৯৭১সালে ৩দিনের নবজাতক কন্যাকে রেখে যুদ্ধে চলে যান কাকন বিবি। জুন মাসে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর কাছে ধরা পড়েন তিনি। বাংকারে আটকে দিনের পর দিন তাকে নির্যাতন করে পাক বাহিনী। ছাড়া পেয়ে মুক্তিযোদ্ধা রহমত আলীর কাছে অস্ত্র চালনার প্রশিক্ষণ নেন কাকন বিবি। রহমত আলীর দলে সদস্য হয়ে সশস্ত্র যুদ্ধ করেন তিনি। একইসঙ্গে চালিয়ে চান গুপ্তচর বৃত্তির কাজ। নভেম্বর মাসে ৫নং সেক্টরের সেলা সাব-সেক্টরের অধীনস্থ টেংরাঠিলার সম্মুখ যুদ্ধে কয়েকটি গুলি তার শরীরে বিদ্ধ হয়। পরে আমবাড়ী,বাংলাবাজার,টেবলাই,বালিউড়া,মহব্বতপুর,বেতুরা দুর্বণটিলা ও ছাতক পেপার মিলের যুদ্ধে অংশ নেন তিনি। স্বাধীনতা যুদ্ধে কাকন বিবি প্রায় ২৫টির বেশী যুদ্ধে অস্ত্র হাতে জীবন বাজিঁ রেখে সম্মুখ যুদ্ধে অংশ গ্রহন করেন। মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদানের জন্য ১৯৯৬সালে তাকে বীরপ্রতীক উপাধিতে ভূষিত করে বাংলাদেশ সরকার।
    পৃথক পৃথক বিবৃতিতে মুক্তিযোদ্ধা কাকন বিবির মৃত্যুতে সুগভীর শোক প্রকাশ ও তার শোকাহত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন সুনামগঞ্জ ৫আসনের এমপি মুহিবুর রহমান মানিক,সুনামগঞ্জ-মৌলভীবাজার সংরক্ষিত আসনের এমপি এডভোকেট শামছুন নাহার বেগম শাহানা রব্বানী, সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোঃ সাবিরুল ইসলাম,দোয়ারাবাজার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ইদ্রিছ আলী বীরপ্রতীক,মুক্তিযুদ্ধ চর্চা ও গবেষণা কেন্দ্রের আহবায়ক এডভোকেট বজলুল মজিদ চৌধুরী খসরু,আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি হুমায়ুন কবীর,সাধারন সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম নয়ন,সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী জাহান,সুনামগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতি সাংবাদিক আল-হেলাল ও সাধারন সম্পাদক ছাদিয়া বখত সুরভী।