বেনাপোল সীমান্তে বসেছে দু’বাংলার হাট

    0
    241

    আমারসিলেট24ডটকম,০১জানুয়ারী,এম ওসমান: বেনাপোলের গাতিপাড়া সীমান্তে অবস্থিত ভারতের তের ঘর করিডোরে দীর্ঘ কয়েক মাস যাবত শুরু হয়েছে দু’বাংলার চোরাই হাট বাজার। সরকার ঘোষিত না হওয়ায় এ হাটটি চোরাচালানীদের অভয়ারণ্য হিসাবে এলাকায় ব্যাপক সমালোচনা-আলোচনার ঝড় উঠেছে।

    স্থানীয়দের দাবি, আইন প্রয়োগকারি সংস্থার কিছু অসাধু কর্মকর্তা- কর্মচারীদের পকেট বানিজ্যের কারণে এ হাট দিয়ে বানের রাতের ন্যায় আসছে মাদক, অস্ত্রসহ বিভিন্ন চোরাই পন্য। আর ভারতে চলে যাচ্ছে স্বর্ণসহ মূল্যবান ধাতব পদার্থ।

    স্থানীয়রা বলেন, প্রতিদিন সূর্য ওঠার আগ মূহূর্ত থেকে খুলনা, নওয়াপাড়া, যশোর, নড়াইল, সাতক্ষীরা, ঝিনাইদহ, মাগুরাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তের চোরাচালানীরা আসে এই হাটে। ইচ্ছে মতো শাড়ি, থ্রি-পিছ, জুতা, স্যান্ডেল, কম্বোল, শাল-চাদর, হাড়ি-পাতিল, চাপাতা, সোয়াবিন ও পোল্টি ডিমসহ বিভিন্ন নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য সামগ্রী ছাড়াও নেশা দ্রবের মধ্যে মদ, গাজা, ফেন্সিডিল, হেরোইনসহ বিভিন্ন ধরনের আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে চোরাচালানীরা দেদারছে ফিরছে দেশে। দিব্যি স্থানীয় বাজারের মতো এসব সামগ্রী কিনে বিজিবিসহ এলাকায় কর্মরত বিভিন্ন আইন প্রয়োগকারি সংস্থার নাকের ডগা দিয়ে সবাই নিজ নিজ গন্তব্যে চলে যাচ্ছে। বিনিময়ে চোরাচালানীরা ভারতের এই তের ঘর করিডোরে দিয়ে আসছে স্বর্ণের বারসহ মূল্যবান ধাতবদ্রব্য। এ যেন মগের মুল্লুক।

    স্থানীয়দের এ ধরণের সংবাদের ভিত্তিতে কয়েকজন সংবাদকর্মী মিলে সরেজমিনে সেখানে গিয়ে দেখা হয় গাতিপাড়া গ্রামের তেরঘর করিডোর এলাকা। সীমান্ত এলাকায় প্রবেশ করতে বেশ কয়েকটি বিজিবি পোস্ট চোখে পড়ে। তেরঘর করিডোর পর্যন্ত পৌছাতে বিজিবিসহ প্রশাসনের অনেকের নজর ফাঁকি দেওয়া সম্ভব না। কারণ হিসাবে তের ঘরে ঢুকতে সরু একটি প্রবেশ পথ রয়েছে। এ পথের মুখে লাগানো বিজিবি পোস্ট আর চারিপাশে সার্বক্ষণিক পাহারায় বিজিবি সদস্যরা। এ এলাকায় পৌছানোর সাথে সাথে এ প্রতিনিধির কাছে ছুটে আসেন বিজিবিসহ এখানকার কয়েকজন ঘাট মালিক।

    তারা বলেন, তের ঘরে যাবেন কিনা। কেনাকাটা আছে কিনা। পরে সাংবাদিক পরিচয় শুনতেই আপ্যায়ন করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। অবশেষে অনেকের রুটি রুজি এখানে জড়িত এজন্য সংবাদটি পরিবেশন না করতে বলেন। মাত্র কয়েক গজ দূরে বেনাপোল চেকপোস্ট পুটখালী সড়ক।

    এ সড়কে উঠতেই স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, তের ঘর করিডোরটি ভারত ভূ-খন্ড থেকে বাদ গিয়ে ইছামতি নদীর অপর প্রান্তে বাংলাদেশের গাতিপাড়া গ্রামের মধ্যে ঢুকে পড়ায় এরা ভারতের সকল সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত থাকে। এ সুযোগে তের ঘর এলাকাটি চোরাচালানীরা অভয়াশ্রম মনে করেন। আর, এ তের ঘরের সমস্ত দাদাগিরি করেন গাতিপাড়া গ্রামের বিএনপি নেতা তবি। তার বাড়িটিও তের ঘর করিডোরের সীমান্ত থেকে মাত্র ২০গজ দূরে হওয়ায় প্রশাসনের কর্মকর্তারা তাকে পছন্দ করেই বরাবরই ঘাট মালিক করে রাখেন।

    স্থানীয়রা আরো বলেন, তের ঘরের বাসিন্দারা খুবই গরীব হওয়ায় ঘাট মালিক তবি ৪দলীয় জোট সরকারের শাসনামল থেকে এ পর্যন্ত তাদেরকে ব্যবহার করে ভারতের বড় বড় বাজার থেকে মাদকদ্রব্যসহ বিভিন্ন ধরনের পণ্য সামগ্রী কিনে এনে এখানে মজুদ করেন। পরে সুযোগ বুঝে এখান থেকে বিক্রি করেন। কিন্তু কয়েক মাস যাবত আলাউদ্দিনের চেরাগের মতো গাতিপাড়া গ্রামের মৃত ছবেদ আলীর ছেলে বিএনপি নেতা তবি, মৃত নূর মোহাম্মদের ছেলে আলী আম্মদ, আব্দুল জলিলের ছেলে আলীমূর, সোবহান আলীর ছেলে ছালাম মাস্টার, মৃত হানিফ আলীর ছেলে আব্দুল আজিত, মৃত নুরু মিয়ার ছেলে মোহর আলী, নিয়ামদ্দিনের ছেলে মিজানূর রহমান, এরশাদ আলীর ছেলে শাহাজান আলী, মৃত মজিবর রহমানের ছেলে আবুল হোসেন, জোহর আলী মোড়লের ছেলে রমজান আলীসহ এখানকার কয়েক ঘাট মালিকের ভাগ্য খুলতে শুরু করেছে।

    এ তের ঘরে প্রতিদিন বসছে মাদক ও অস্ত্র সহ বিভিন্ন পণ্যের হাট বাজার। প্রতিদিন কাক ডাকা ভোর থেকে চোরাচালানীরা এ ঘরে চলে যাচ্ছেন। ইচ্ছে মতো কেনাকাটা করে ঘাট মালিকদের সাথে চুক্তি মোতাবেক মাদক, অস্ত্রসহ বিভিন্ন পণ্য প্রতি টাকা দিয়ে যারযার গন্তব্যে চলে যাচ্ছেন। তবে, সকাল ৮টা পর্যন্ত এ হাটটি বেশ জমজমাট থাকে। এসময়ে শতশত চোরাচালানীরা পাখির কিচিরমিচির ডাকের মতো চেঁচামেচি করে গাতিপাড়া গ্রামবাসীর ঘুম ভাঙ্গিয়ে দেয়। সকাল ৮টার পরে সাধারণত বাজার ভেঙ্গে যায়।

    এ সময় দলে দলে ৮/১০ জন করে তের ঘরে ঢোকেন আবার সদয় করে চলে আসেন। তবে, এ ভাঙ্গা বাজারে স্থানীয়রা বেশী আসেন। সারাদিন ধরে হাড়ি পাতিল, শাড়ি, থ্রিপিছ, শাল চাদর, কোম্বলসহ বিভিন্ন ধরণের প্রয়োজনীয় পণ্যের কেনাকাটা করেন। এরা চলে যাওয়ার সময় সমস্ত বিপদ তাদের বেলায়। স্থানীয়রা আক্ষেপ করে বলেন, চোরাচালানীদের পরে এলাকাবাসী কেনাকাটা করে যাওয়ার সময় ঘুম ভাঙ্গে বিজিবিসহ অন্যান্য প্রশাসনের। রাস্তার উপরে বেরিকেট দিয়ে হয়রানি করেন এলাকার ভদ্র পরিবারের। নানান বাজে কথা শূনিয়ে কেড়ে রেখে নেন শখের কেনাকাটা পণ্য।

    এ বিষয়ে ২৩ বিজিবি ব্যাটলিয়নের কমান্ডিং অফিসার(সিও) লে. কর্ণেল আব্দুর রহিম বলেন, উল্লেখিত বিষয়টি আমার জানা নেই। আমার জানামতে তের ঘরে বাংলাদেশীদের প্রবেশ নিষেধ। তবে খোজ খবর নিয়ে দেখি। সত্যতা পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।