ভূমি পেয়েও দখলে যেতে অপারগ হয়ে ব্রিজের নিচেই সংসার !

    0
    178

    আমার সিলেট টুয়েন্টি ফোর ডটকম,২৮আগস্ট,নবীগঞ্জ থেকেঃ ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ব্রীজের নিচে বসবাস, তাও আবার প্রায় ১ যুগ ধরে। চোখ কপালে উঠবে যখন জানবেন তিনি ভোটে নির্বাচিত একজন জনপ্রতিনিধি। নাগরিক সুবিধার দেখভাল করলেও নিজেরই মাথা গোঁজার ঠাঁই নেই হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার আউশকান্দি ইউনিয়নের নির্বাচিত সংরক্ষিত মহিলা সদস্য রহিমা বেগমের। শীত কি বর্ষায় অন্য কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই এই মহিলা মেম্বারের পরিবারের লোকজনের। সম্প্রতি উপজেলা প্রশাসনের তৎপরতায় ভূমিহীন হিসেবে ১২ শতক ভূমি রেজিস্ট্রি করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তা প্রভাবশালী মহলের দখলে থাকায় এই ভূমিহীন জনপ্রতিনিধিকে দখল বুঝিয়ে দেয়া হচ্ছেনা।

    সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, দীর্ঘ এক যুগ ধরে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ব্যস্ততম রাস্তা সৈয়দপুর বাজার সংলগ্ন মনু খালের ব্রিজের নিচে বসবাস করে আসছেন। সারা দিন রাত তাদের উপর দিয়ে চলাচল করে কয়েক হাজার যানবাহন। আর এবার খালে পানি বেড়ে যাওয়ায় তাদের দুর্ভোগ পৌছে গেছে চরমে।

     এলাকাবাসী জানান,  রহিমা বেগম সংরক্ষিত আসনের ইউপি সদস্য নির্বাচিত হয়েও ভূমিহীনের তালিকা থেকে নাম কাটাতে পারেননি। অভাব কখনই থামাতে পারেনি রহিমা বেগমকে। সবার আগে ছুটে যান এলাকাবাসীর সুখে দুখে। এর প্রতিদানও পেয়েছেন নির্বাচনে। মানুষের জন্য কাজ করার প্রত্যয়ে তিন বার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে অংশগ্রহন করেন রহিমা। গেল নির্বাচনী তফসিল ঘোষনার পর তিনি কোমর বেধে নির্বাচন প্রচারনায় মাঠে নেমে পড়েন। গত বছরের গত ২৮ মে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ৩জন প্রার্থীর সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন এবং মাইক প্রতীক নিয়ে অপর দুই প্রার্থীর চেয়ে প্রায় ১৮শ’ ভোট বেশি পেয়ে জনপ্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচিত হন ব্রিজের নিছে বসবাসকারী এই রহিমা বেগম।

    ইউপি সদস্য রহিমা বেগমের বয়স প্রায় ৫০ এর কাছাকাছি। তিনি আউশকান্দি ইউনিয়নের জালালপুর গ্রামের মকদ্দুছ মিয়ার স্ত্রী। তাদের ঔরসে রয়েছে ২ ছেলে ও ১ মেয়ে। অসুস্থ স্বামী ও অপ্রাপ্ত বয়স্ক ছেলে মেয়েকে নিয়ে বেচেঁ থাকার তাগিদে দিশেহারা হয়ে পড়েন রহিমা বেগম। দীর্ঘদিন ঘটক হিসেবেও কাজ করেছেন তিনি। আর মাসে ২/১ টি বিয়ে পড়াতে পারলেও নুন আন্তে পান্তা পোড়ায় রহিমার। ঘটকালির সুবাধে এলাকার সকল মানুষের সাথে রয়েছে রহিমার সু-সম্পর্ক আর এজন্যই বিপুল ভোটের ব্যবধানে নির্বাচিত হন।

    জনপ্রতিনিধি রহিমা বেগমের পরিবারের লোকজনের মানবেতর জীবন যাপন নিয়ে কয়েক মাস পূর্বে একটি প্রতিবেদন প্রচার করে স্থানীয় গনমাধ্যম। প্রতিবেদনটি প্রচারিত হলে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া হয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে সংবাদটি ভাইরাল হয়। পরে তার পুনর্বাসনে তৎপর হয় উপজেলা প্রশাসন। কয়েক মাস আগে ভূমিহীন হিসেবে রহিমাকে আউশকান্দি এলাকায় ১২ শতক খাস জমি রেজিস্ট্রি করে দেয়া হয়। সরকারি ভূমি বরাদ্দ দেয়ায় খুশি এলাকাবাসী। রহিমা বেগমের দারিদ্রতার কথা ভেবে সরকারি উদ্যোগে বাড়ি নির্মাণের অনুরোধ তাদের।

    এছাড়া নিজেদের সীমিত সামর্থ্যের কথা জানিয়ে রহিমা বেগমের বাড়ি নির্মাণে সরকারের সহযোগিতা চাইলেন ইউনিয়ন পরিষদ সদস্যরা। কিন্তু দখলে যেতে পারছেননা রহিমা মেম্বার কারণ রেজিস্ট্রি করে দেয়া ১২ শতক খাস জমি রয়েছে স্থানীয় প্রভাবশালীদের দখলে। এ ছাড়া প্রশাসনও রহিমাকে দখল বুঝিয়ে দিচ্ছে না। একটি বিশ^স্থ সূত্র জানিয়েছে, রহিমা মেম্বারকে ঘর নির্মাণ করে দেওয়ার জন্য অনেক প্রবাসী দাতা আর্থিক সহায়তা করেছেন। কিন্তু তা জানেন না রহিমা বেগম। এনিয়েও বেশ আলোচনা হচ্ছে।

    এ প্রতিবেদকের সাথে আলাপ কালে ভূমিহীন ইউপি সদস্য রহিমা জানান, ‘আমি দীর্ঘ ১ যুগ ধরে খুব দুঃখ কষ্টে ব্রিজের নিচে আমার পরিবার নিয়ে বসবাস করছি। কয়েক মাস আগে মিডিয়ায় সংবাদ প্রকাশের পর রেজিস্টি দেওয়া হইছে কিন্তু দখলে যাইতে পারছিনা।’

    এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাজিনা সারোয়ার জানান, রহিমা বেগমকে ১২ শতক জায়গা রেজিস্ট্রি করে দেয়া হয়েছে। ঈদের পরপরই তা দখল বুঝিয়ে দেওয়া হবে। আর সরকারি সহায়তা ও বিত্তবানদের সহযোগিতা নিয়ে বাড়ি নির্মাণের পরিকল্পনার কথা জানান তিনি।