মাদক ও ধর্ষণের স্বীকারোক্তিতে মৌলভীবাজারে তোলপাড়

    0
    308

    আলী হোসেন রাজন,জেলা প্রতিনিধি মৌলভীবাজারঃ  একটি পার্টিতে মাদক সেবন আর তারপর এক নারীকে ধর্ষণের স্বীকারোক্তি নিয়ে পাল্টাপাল্টি স্টেটাস দেয়া হয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে। আর এ নিয়ে ব্যাপক তোলপাড় চলছে মৌলভীবাজারে। যাকে বলে,টক অব দ্য টাউন।
    খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মৌলভীবাজারে সংবাদ২৪ নামক একটি অনলাইন পোর্টালের সম্পাদক মাহমুদ এইচ খান ২৫ আগষ্ট একটি ধর্ষণের ঘটনার বিবরণ সোশ্যাল মিডিয়ায় (তার ফেইসবুক পেইজে) তুলে ধরে, অভিযোগ করেন সামাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের সজিবুল ইসলাম তুষার নেশাগ্রস্ত অবস্থায় এক মেয়েকে ধর্ষণ করেছে,অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেন গত ৩ আগষ্ট তার নিজ বাসায় একটি পার্টির আয়োজন করা হয়, সেখানে একজন নারীবাদী ও এক্টিভিস্ট মার্জিয়া প্রভা, বাম নেতা রায়হান আনছারী, ছাত্রফ্রন্টের সজিবুল ইসলাম তুষার ও তার এক নারী বন্ধু যোগ দেন,খাওয়া-দাওয়া শেষে সেখানে সবাই গাঁজা সেবন করেন, এক পর্যায়ে নেশাগ্রস্থ হয়ে তুষার তার ঐ নারী বন্ধুকে জোরপূর্বক ভাবে ধর্ষণ করেন এবং এই কাজে তিনি বাঁধা দিলেও মার্জিয়া প্রভা ও রায়হান আনছারী তুষারকে এ কাজে সহযোগীতা করেছেন বলে তিনি তাঁর স্টেটাসে উল্লেখ করেন।

    এর একদিন পর অভিযুক্ত তুষার সোশ্যাল মিডিয়ায় (ফেইসবুক আইডিতে) স্টেটাস দেন ঐদিন মাহমুদের বাসায় গাঁজা পার্টি বসেছিল, এবং নেশাগ্রস্থ অবস্থায় ঐ মেয়েটির সাথে তাঁর অন্তরঙ্গতা হয়,তবে ধর্ষণের বিষয়টি অস্বিকার করে তিনি ঐ মেযেটির আগ্রহে এ কাজ করেছেন তা অকপটে সোশ্যাল মিডিয়ায় স্বীকার করেন। এ ঘটনার পর মাহমুদ, তুষার, মার্জিয়া প্রভা ও রায়হান আনছারী ও তুষারের সেই নারী বন্ধু মারিয়ার প্রকাশ্যে মাদক সেবন ও নারী-পুরুষের সাথে অন্তরঙ্গতার বেশ কিছু ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে, এ নিয়ে ব্যাপক তোলপাড় চলছে মৌলভীবাজারে। আলোচনা-সমালোচনার ঝড় বইছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে ।
    এদিকে সোশ্যাল মিডিয়ায় এ  ঘটনার সত্যতা অকপটে স্বীকার করার পর মৌলভীবাজার সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট জেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক ও শহর শাখার সভাপতি সজিবুল ইসলাম তুষারকে সংগঠনের সকল প্রকার দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়। বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল -বাসদ মৌলভীবাজার জেলা কমিটির বর্ধিত ফোরামের সদস্য রায়হান আনছারীকেও সংগঠনের সকল প্রকার দায়িত্ব থেকে সাময়িকভাবে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।

    এই সংগঠনগুলোর প্যাডে লিখিত ভাবে উল্লেখ করা হয় তাদের বিরুদ্ধে সংগঠনের শৃঙ্খলাবিরোধী কার্যক্রম ও অনৈতিক জীবনযাপনে নিয়োজিত থাকার অভিযোগ রয়েছে। তাই তাদেরকে এ অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। আর মৌলভীবাজার প্রেসক্লাবও মাহমুদ এইচ খানের সহযোগী সদস্যপদ বাতিল করেছে, রবিবার সন্ধ্যায় প্রেসক্লাবের কার্যনির্বাহী কমিটির এক জরুরী সভায় প্রেসক্লাবের গঠনতন্ত্র বিরোধী কার্যকলাপের কারণে মাহমুদ এইচ খানের সহযোগী সদস্যপদ বাতিল করা হয়।
    খোঁজ নিয়ে জানা গেছে মাহমুদ এইচ খান সুনাপুর এলাকায় (সুনাপুর প্লেইস-২২৩) নাম্বার বাসার ২য় তলায় ভারাটিয়া ছিলেন, এই বাসার মালিক সিরাজ মিয়া প্রবাসে (লন্ডনে) থাকেন, গণী মিয়া নামের একজন কেয়ার-টেকার এই বাসাটি দেখাশুনা করেন। মাহমুদ এই বাসাটি তার স্ত্রী,মা ও বোন কে নিয়ে থাকবেন বলে ভাড়া নিয়েছিলেন, কিন্তু কিছুদিন পড় তার মা -বোন এখান থেকে অন্যত্র চলে যান,আর তাঁর স্ত্রী ঢাকায় একটি স্কুলে শিক্ষকতা করেন তাই তিনিও ঢাকায় চলে যান, মাঝেমধ্যে এখানে আসা যাওয়া করতেন বলে বাড়ির কেয়ার টেকার জানান। তিনি বলেন প্রায়ই পার্টি হত তার ফ্লাটে,উচ্চ স্বরে গান-বাজনা হত, সেখানে মেয়েরাও আসত মাহমুদ তাদেরকে তার বন্ধু বলে পরিচয় দিতেন। নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক মাহমুদের এক প্রতিবেশী বলেন, মাহমুদের বাসায় মেয়েদের আসাযাওয়া ছিল নিয়মিত। তাঁর এসব পার্টিতে যোগ দিতেন মৌলভীবাজারের বাম ছাত্র সংগঠনগুলোর বেশ কয়েকজন বর্তমান ও সাবেক নেতারা।
    মাহমুদ ও তুষারের মদ গাঁজা ও নারী ধর্ষণের এমন সত্যতার স্বীকারোক্তিতে এখনও নীরব রয়েছে প্রশাসন। তবে জেলার সচেতন মহল এসব কিছুকে অপরাধ হিসেবে দেখছেন। বাম সংগঠনের সাথে জড়িত কয়েজন সদস্য নিয়মিত মাদকের আসর বসাতেন এমন সত্যতার স্বীকারোক্তি দেওয়ার পরেও এ বিষয়ে প্রশাসন কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না কেন এমন প্রশ্ন এখন জেলার সাধারণ মানুষের।
    এ ব্যাপারে মৌলভীবাজার সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জিয়াউর রহমান বলেন, এ ঘটনার পর থানায় গিয়ে ভিকটিম কিংবা মাহমুদ কোন লিখিত অভিযোগ করেননি। বিষয়টি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হবার পড় ভিকটিম থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন, অভিযোগের ভিত্তিতে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
    শান্ত শহর মৌলভীবাজারে সামাজিক সংগঠনের আড়ালে এমন অশ্লীল কার্যক্রম করে পরিবেশ নষ্ট না করার আহবান জানাচ্ছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে এ জেলার সাধারণ মানুষ পাশাপাশি অবিলম্বে অপরাধীদের শাস্তির আওতায় নিয়ে আসার দাবী জানিয়েছেন তারা।