মাধবপুরে প্রেমের বিয়ে মেনে না নেয়ায় যুবকের আত্মহত্যা

    0
    292

    নূরুজ্জামান ফারুকীঃ  প্রেমের বিয়ে মেনে নিতে পারেনি পরিবার। ফলে বিয়ে করলেও স্ত্রীকে আনুষ্ঠানিকভাবে বাড়িতে তুলা সম্ভব হয়নি। এরই মধ্যে সন্তানের জন্ম। সেই সন্তানকে ভালভাবে নিজের বাড়িতে তুলতে না পারায় এক ধরনের মানসকি যন্ত্রণায় ভুগছিলেন মাধবপুর উপজেলার নোয়াপাড়া ইউনিয়নের ইটাখলা গ্রামের হেফজুর রহমান মাস্টারের ছোট ছেলে সাইফুর রহমান মুর্শেদ। এ নিয়ে ঝগড়া লেগেই থাকতো পরিবারে। নিজে মাস্টার্স ডিগ্রীধারী হওয়ায় পরিবারের লোকজনের প্রতিনিয়ত কটু কথা ও মানসিক নির্যাতনে এক পর্যায়ে আত্মহত্যাই করে মুর্শেদ। আত্মহত্যার আগে স্ত্রী সন্তানকে চিরকুট লিখে যায়। নিজের অপারগতা প্রকাশ, স্ত্রীকে উপযুক্ত মূল্য দিতে না পারা ও সন্তানকে নিজের মতো করে গড়ে তুলতে না পারার আক্ষেপের কথা রয়েছে চিরকুটে। নিজ বাড়িতে আত্মহত্যার সময় স্ত্রী সন্তান ছিল ইটাখলা গ্রাম থেকে প্রায় ৪ কিলোমিটার দুরের শশুর বাড়ি খরকী গ্রামে। ভেতরের দিক দিয়ে দরজা বন্ধ করে গলায় ফাস লাগিয়ে আত্মহত্যা করে মুর্শেদ।

    মাধবপুর থানা পুলিশ দরজা ভেঙে লাশ উদ্ধার করে। স্বামীর আত্মহত্যার বিষয়টি গোপন রেখে স্ত্রী হাসিনা আক্তার হাসি ও সন্তান মিরাকে খরকী গ্রাম থেকে নিয়ে আসে নিহত মুর্শেদের বোন জামাই নজরুল ইসলাম বাবুল, বাবুলের স্ত্রী মাহবুবা শিরীন ও মাহবুবা শিরীনের দেবর মোজাহিদুল ইসলাম রমজান। হাসিনা আক্তার হাসি স্বামীর বাড়িতে এসে স্বামীর লাশ দেখে কান্নাকাটি করে বিচার প্রার্থী হলে শুরু হয় ভিন্ন নাটক। এবার নিহত মুর্শেদের ভাই, ভাবী, বোন, বোন জামাই সবাই মিলে একজোটভাবে প্রচার করে হাসিনা আক্তার হাসিই মুর্শেদকে হত্যা করেছে। স্বামীর মৃত্যুর জন্য দায়ী করায় নিহত মুর্শেদ এর বড় ভাই সফিকুর রহমান শামিম ও তার লোকজন হাসিনা আক্তার হাসিকে শারিরিকভাবে নির্যাতন করে।

    হাসিনা আক্তার হাসি বলেন- ‘আমি স্বামীর মৃত্যুতে কাতর। যতই আমি কান্নাকাটি করে বলি আমার ভাসুর সফিকুর রহমান শামিম ও তার সহযোগিরা আমার স্বামীর মৃত্যুর জন্য দায়ী, ততই আমার উপর নির্যাতন বাড়তে থাকে। এক পর্যায়ে মাধবপুর থানা পুলিশকে ম্যানেজ করে আমাকে পুলিশের হাতে তুলে দেয়া হয়। আমার বিরুদ্ধেই হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। অথচ আমার স্বামী তার পিত্রালয় ইটাখলা গ্রামের নিজ বসতঘরে ভেতরের দরজা বন্ধ করে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেন। আমার স্বামীর মৃত্যুর খবরও আমি জানতাম না। আমাকে ভুল তথ্য দিয়ে পিত্রালয় থেকে ইটাখলা গ্রামে নিয়ে আসা হয়। আমার স্বামীর মৃত্যুর জন্য সফিকুর রহমান শামিম ও তার লোকজন দায়ী বলে বিচার প্রার্থী হওয়ায় আমাকে হত্যা মামলার আসামী করা হয়।

    পুলিশ পারিপার্শ্বিক কোনো বিষয় আমলে না নিয়ে সফিকুর রহমান শামিম ও তার লোকজনকে রক্ষা করতেই আমার বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা রেকর্ড করে এবং আমাকে গ্রেফতার দেখায়।

    ইতিমধ্যে হাসিনা আক্তার হাসি জামিন লাভ করেছেন। হাসিনা আক্তার হাসি স্বামী সাইফুর রহমান মুর্শেদের মৃত্যুর জন্য মুর্শেদের ভাই সফিকুর রহমান শামিম, মশিউর রহমান জুনাইদ, মোস্তাফিজুর রহমান মোশাহিদ, শামিমের স্ত্রী রুনা আক্তার, জুনাইদের স্ত্রী শামসুন্নাহার শ্রাবনী, মুর্শেদের বোন জামাই নজরুল ইসলাম বাবুল, বোন মাহবুবা শিরীন, বোন খাদিজা আক্তার জোস্না, মাহবুবা শিরীনের চাচাতো দেবর মোজাহিদুল ইসলাম রমজানকে আসামী করে একটি মামলা দায়ের করেন। হাসিনা আক্তার হাসি আরও বলেন- আমার স্বামীকে আত্মহত্যায় প্ররোচিত করার অনেক কারণ জড়িত। এর মধ্যে আমার সাথে মুর্শেদের ছিল প্রেমের বিয়ে, যা তার পরিবার মেনে নিতে পারেনি।

    তাছাড়া সফিকুর রহমান শামিমের সাথে আমার স্বামীর ছিল টিভি ফ্রিজ ইলেক্ট্রনিক্স সামগ্রী ও তাশ মাতাশ ৯৯ নামীয় অংশীদারিত্ম ব্যবসা, যে ব্যবসায় আমার চাকুরীর টাকা ও আমার পিত্রালয় থেকে আনা টাকা বিনিয়োগ করা হয়। সেই ব্যবসায় সফিকুর রহমান শামিম এর লোভ জাগে, আমার শশুরকে ম্যানেজ করে তার সহায় সম্পত্তি থেকে আমার স্বামীকে বঞ্চিত করাসহ বিভিন্ন কারণে আমার শশুর বাড়ির লোকজনের গলার কাটা হয়ে দাড়িয়েছিল মুর্শেদ। মুর্শেদকে তারা কোনভাবেই সহ্য করতে পারছিল না। সম্প্রতি আমরা স্বামী স্ত্রী সন্তান কক্সবাজার ঘুরে আসার পর উপরুক্ত ব্যক্তিরা আমার স্বামীর উপর মারাত্মকভাবে ক্ষিপ্ত হয়।

    তিনি বলেন- আমি একজন সরকারী চাকুরীজীবী। আমার চাকুরী ক্ষতিগ্রস্থ করা, আমাকে সমাজে হেয় প্রতিপন্ন করা, আমার চরিত্রে কালিমা লেপন করা, আমার সন্তানকে তার পিতার সম্পত্তি থেকে বঞ্চি করার হীন উদ্দেশ্যে আমার বিরুদ্ধে পরিকল্পিতভাবে হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। আমি জেলে থাকাকালীন আমার সন্তানের জীবন বিপন্ন হওয়ার আশংকা ছিল। এখনও সে আশংকা বিদ্যমান। আমি এখনও আতংকে আছি। যে কোনো সময় তারা আমার ও আমার সন্তানের মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে।