মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক এম,এ,সবুরের মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলী

    0
    277

    আমারসিলেট24ডটকম,২৯ডিসেম্বর,শাব্বির এলাহীঃ সত্যের পথে অবিচল থেকে সারাটি জীবন যিনি পার করেছেন এক অন্যরকম অহংকার বুকে নিয়ে ।মিথ্যা,শঠতা আর ভন্ডামীর সাথে আপোষহীন যে অহংকারী মানুষটি কোনদিন মাথা নত করেননি লোভ আর মোহের কাছে । অর্থ-বিত্ত আর প্রভাব-প্রতিপত্তির হাতছানি উপেক্ষা করে যিনি নীতি আর আদর্শে অটল থেকে কঠোর বাস্তবতার সাথ যুদ্ধ করে সকল সংকীর্ণতার উর্দ্ধে উঠতে পেরেছিলেন তিনি একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠকএম,এ,সবুর ।

    গত ২৭ ডিসেম্বর মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলা শ্রমিকলীগের প্রয়াত সভাপতি কমলগঞ্জের কিংবদন্তীতুল্য জননেতা বরেণ্য শিক্ষাবিদ সাবেক আদমপুর ইউপি চেয়ারম্যান এম,এ,সবুরের ১১তম মৃত্যুবার্ষিকী ছিলো।মৃত্যুর পূর্বে তিনি সিলেট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি এবং আব্দুল গফুর চৌধুরী মহিলা কলেজ,উসমান আলী ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসা,তেতইগাঁও রশিদউদ্দিন উচ্চবিদ্যালয়সহ বিভিন্নশিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সামাজিক সংগঠনে দায়িত্বশীল কর্মকান্ডে জড়িত ছিলেন।

    ১৯৭১ সালে তিনি মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহন করেন ।যদিও তালিকাভুক্ত মুক্তিযোদ্ধা নন তিনি ।কিন্তু একাত্তরের পুরো নয়মাস আড়াই বছরের মেয়ে ও আট মাসের দুধের শিশুপুত্রকে নিয়ে স্ত্রীকে ভারতের কমলপুরে আশ্রিত রেখে হালাহালি ট্রেনিং সেন্টাওে অবস্থান করে ভাষা সৈনিক মোহাম্মদ ইলিয়াছের সাথে ভারতের বিভিন্ন শরানার্থী শিবিরে রেশন সরবরাহ ও মুক্তিযুদ্ধেও তথ্য সংগ্রহে নিয়োজিত ছিলেন ।

    সে সময় মর্টার বিষ্ফোরণের প্রচন্ড শব্দে তার শিশুপূত্রের কান ফেটে যায় ।যে কারণে সে শিশুপূত্রটি আজ ৪৪ বছরের যুবক শোয়েব এলাহী এখনো বধির রয়ে আছেন ।স্বাধীনতার পর বাংলাদেশে নিজ ইউনিয়ন আদমপুরের প্রথম মনোনীত চেয়ারম্যান ছিলেন তিনি ।পরবর্তীতেও বিপুল ভোটে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন তিনি।

    তিনিই গোটা মৌলভীবাজার জেলায় প্রথম কোন চেয়ারম্যান যিনি দায়িত্ব হস্তান্তরের সময় ইউনিয়ন পরিষদ তহবিলে মোটা অংকের উদ্ধৃত অর্থ জমা রেখে যান । সিলেট পল্লী বিদ্যূৎ বোর্ডেও অনারারী ডিরেক্টও থাকা অবস্থায় তার উদ্যোগে ১৯৮৫ সালে কমলগঞ্জের দক্ষিণাঞ্চলে প্রথম বিদ্যূতায়িত হয় ।১৯৩৮ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর কমলগঞ্জের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণকারী এম,এ,সবুর বর্ণ্যাঢ্য কর্মময় জীবনের অধিকারী । ১৯৬১সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন শেষে বিশ্ববিখ্যাত লিফটনে যোগ দিয়ে উর্দ্ধতন কর্মকর্তা হিসেবে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে দায়িত্বরত ছিলেন ।

    এছাড়া ইউএসআইডিসহ নানা আর্ন্তজাতিক সংস্থায় কাজ করে চষে বেড়িয়েছেন গোটা বাংলাদেশ ।তবু নিজ এলাকার মানুষের ডাকে মানুষের পাশে কর্মক্ষেত্রে সম্মানজনক অবস্থান ছেড়ে বারবার ছুটে এসেছেন মানুষের পাশে ।মোহাম্মদ ইলিয়াছের ঘণিষ্ঠ সান্নিধ্যে থেকে বিভিন্ন গণ-আন্দোলন,সংগ্রাম,সমাবেশে সক্রিয় সম্পৃক্ত থাকতেন ।

    “জন্ম হোক যথা তথা

    কর্ম হোক ভালো”

    এ মহাজন বাক্য স্মরণে সংগতই বলা যায়,এম,এ,সবুরের জন্ম ও কর্ম কোনটাই যথাতথা ছিলো না। পিতা,পিতামহসহ শিক্ষিত পূর্বসূরীদের শিক্ষিত উত্তরসূরী এম,এ,সবুর একজন অসাম্প্রদায়িক চেতনার মানুষ হিসেবে সবিশেষ পরিচিত ছিলেন।বিভিন্ন ভাষায় দক্ষতার কারণে কমলগঞ্জে বসবাসরত খাসিয়া,মণিপুরী,চা-জনগোষ্ঠীসহ সকল সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রচন্ড জনপ্রিয় এক অসাধারণ ব্যক্তিত্ব ছিলেন তিনি ।

    জাতি ধর্ম নির্বিশেষে সকলের ভালোবাসা পেয়েছেন যেমন,দিয়েছেনও বুক ভরা ভালোবাসা ।আর সে ভালোবাসায় আজও তিনি বেচে আছেন হৃদয়ে-হৃদয়ে ।