মৌলভীবাজারে চালকের সহযোগিতায় ২নারী গণধর্ষিত আটক-৭

    0
    254
    কমলগঞ্জ প্রতিনিধিঃ মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার রহিমপুর ইউনিয়নের দেওরাছড়া চা-বাগান এলাকায় গণধর্ষনের শিকার হয়েছেন ২ নারী যাত্রী । শুক্রবার রাতে ৯টার দিকে গণধর্ষণের এই ঘটনাটি ঘটে। এ ঘটনার খবর পেয়ে শুক্রবার রাত থেকে পুলিশের ৬ টি টিমের নেতৃত্বে ৬ ঘন্টার অভিযানে আজ শনিবার দুপুর পর্যন্ত ঘটনায় ব্যবহৃত ৩টি সিএনজি এবং ৭ জনকে আটক করা করেছে। ধর্ষণের শিকার ২ নারী বর্তমানে মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। তাদের একজনের বয়স আনুমানিক বয়স ২৮ এবং অন্যজনের ২৪। মৌলভীবাজারের পুলিশ সুপার ফারুক আহমদ পিপিএম (বার) আজ দুপুরে মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ভিকটিমদ্বয়কে দেখতে যান এবং তাদের খোঁজখবর নেন। এ বিষয়ে কমলগঞ্জ থানায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।

    স্থানীয় সুত্রে এবং গণধর্ষনের শিকার দুই নারীর জবানবন্দিতে জানা যায়, শুক্রবার রাতে ৯টার দিকে গনধর্ষণের শিকার এই দুই নারী ৩ বছরের একটি শিশুসহ মৌলভীবাজার শহরের পৌর পার্ক থেকে কমলগঞ্জ উপজেলার মুন্সীবাজার ইউনিয়নের বিক্রমকলস গ্রামের বাড়িতে যাবার উদ্দেশ্যে সিএনজি অটোরিক্সা রিজার্ভ করেন। অটোরিকশাটি প্রধান সড়ক দিয়ে না গিয়ে ফাঁড়ি পথে গেলে তারা প্রতিবাদ করেন। এসময় চালক রাস্তা খারাপের অজুহাত দেখান।সিএনজি অটোরিক্সাটির চালক কিছু দূর যাওয়ার পর ২ জন যাত্রীকে তুলেন। তখন এই দুই নারী বাঁধা দিলে চালক জানায়, তার পরিচিত এরা বিপদে পড়ছে সামনে গেলেই নেমে যাবে। দেওরাছড়া চা বাগানের এক নির্জন জায়গায় আসলে পূর্ব থেকে ওত পেতে থাকা আরো ৭/৮ জন তাদেরকে সিএনজি অটোরিক্সা থেকে নামিয়ে সন্তানের সামনে মাসহ দুই নারী যাত্রীকে জোরপূর্ব্বক গণধর্ষণ করে। এক নারীকে ৭ জন মিলে এবং অন্য নারীকে দুইজন মিলে গণধর্ষণ করে। এ সময় ধর্ষকের শিকার নারীর ৩ বছর বয়সী বাচ্চাটিকে মারধোর করা হয়। খবর পরে কমলগঞ্জ থানা পুলিশ এসে তাদেরকে চিকিঃসার জন্য রাত ১১টায় মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে প্রেরণ করে।

    এদিকে দুই নারী যাত্রী গণধর্ষণের ঘটনাটি মৌলভীবাজারের পুলিশ সুপার ফারুক আহমেদ পিপিএম(বার) এর নির্দেশে শ্রীমঙ্গল সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার আশরাফুজ্জামানের নেতৃত্বে কমলগঞ্জ থানার ওসি আরিফুর রহমান, মৌলভীবাজার মডেল থানাসহ জেলা পুলিশের তিনটি টিম রাতভর অভিযান চালিয়ে শনিবার ভোর রাত ৫টা পর্যন্ত মৌলভীবাজার সদর থানা ও কমলগঞ্জ থানা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে ঘটনার সাথে জড়িত ৩টি সিএনজি অটোরিক্সা ও ৭ জনকে আটক করা হয়। আটককৃতরা হলেন- আলমগীর হোসেন (২৫), পিতা-মৃত সিরাজুল ইসলাম, গোবিন্দশ্রী, মৌলভীবাজার, রুবেল মিয়া (২৭), পিতা- মৃত আকলু মিয়া, নিতেশ্বর, ইউসুফ আলী (৩৫), পিতা-মৃত মফিজ উদ্দিন, গোবিন্দশ্রী, মোঃ সলিম মিয়া (২৬), পিতা-কমরু মিয়া, সাং-নিতেশ্বর, সর্ব থানা ও জেলা-মৌলভীবাজার, রবিলাল উরাং (২০), পিতা- সবুজ উরাং, দেওড়াছড়া চা-বাগান (গুঙ্গিবিল লাইন), কমলগঞ্জ, বিকাশ মুন্ডা (২৩), পিতা-নিতাই মুন্ডা, সাং-দেওড়াছড়া চা-বাগান (রাশি টিলা) ও আবু সুফিয়ান বাবুল (৪৫), পিতা-মৃত কুরবান আলী, সাং-দেওড়াছড়া চা-বাগান, থানা-কমলগঞ্জ।

    কমলগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আরিফুর রহমান জানান, এই ঘটনায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৭ জন অভিযুক্ত এবং ৩টি সিএনজি আটক করা হয়েছে।অভিযুক্তদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। জিজ্ঞাসাবাদে যাদের নাম আসবে তাদেরকে আটক করা হবে। মামলা দায়ের পর তাদেরকে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হবে ।

    উল্লেখ্য, স্থানীয় অপর একটি সূত্রে জানা গেছে ঘটনার পর ঐ নারীরা তাদের বলেছেন, এক নারীকে ৭ জন এবং অপর নারীকে দুইজন মিলে গণধর্ষণ করে। এ সময় ধর্ষণের শিকার নারীর ৩ বছর বয়সী শিশু বাচ্চাটিকেও মারধর করে, এক পর্যায়ে ধর্ষণ শেষে এই দুই নারী কৌশলের আশ্রয় নেন বলে জানান। তারা চালককে বলেন ভাই যা হবার হয়ে গেছে এবার আমাদের দিয়ে আসেন। আমরা তো যেতে পারবনা। পরে চালক তাদেরকে নিয়ে কমলগঞ্জের মুন্সিবাজারের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয়। পথিমধ্যে রহিমপুর ইউনিয়নের বাবুরবাজারে একটি দোকানের সামনে পৌঁছানোর আগে একনারী তার একটু জরুরী কাজ আছে বলে ওই দোকানে একটু থামতে বলে। দোকানের সামনে থামানো মাত্র তারা চিৎকার শুরু করে এবং চালক তাদের রেখে পালিয়ে যায়। পরে খবর পেয়ে পুলিশ দ্রুত এসে তাদেরকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে পাঠায়। একই ড্রাইভারকে নিয়ে তারা এর আগেও এসেছেন বলে সূত্র জানিয়েছেন।