মৌলভীবাজারে ফেইক আইডিকে কেন্দ্র করে মর্মান্তিক হত্যাকান্ডে মামলার আসামি-১০

0
268

কাওছার ইকবাল, মৌলভীবাজার থেকে: মৌলভীবাজারে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক আইডিকে কেন্দ্র করে নিজ ঘরে মা-বাবা ও বোনের সামনে কলেজছাত্র রেজাউল করিম নাঈমকে (২১) নির্মমভাবে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় ১০ জনকে আসামি করে হত্যাা মামলা রুজু করেছেন নিহত রেজাউল করিম নাঈমের বাবা মো. চেরাগ মিয়া।
বুধবার (৯ নভেম্বর) মৌলভীবাজার মডেল থানায় দায়েরকৃত মামলা নং-৮/৩৪০। তারিখ ৯নভেম্বর ২০২৩।

আসামীরা হলো, বর্ষিজোড়া এলাকার নুরুল ইসলাম (৫৫), তার ছেলে রনি মিয়া (২৩), কাদির মিয়ার ছেলে আনোয়ার হোসেন (২৪), ইদন মিয়ার ছেলে সোহান মিয়া (১৯), আব্দুল আজিজের ছেলে মো. সাইমন ইসলাম, ইদন মিয়ার ছেলে ইমন মিয়া (২১), আলামিন মিয়া (২০), সাকিল হোসেন (২১), প্রধান আসামী নুরুল ইসলামের স্ত্রী পারভিন বেগম (৪৫) ও মেয়ে জেসি আক্তার (২০)সহ অজ্ঞাত ৪/৫জন।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার (৭ নভেম্বর) সন্ধ্যা সাতটার দিকে মৌলভীবাজার সদর উপজেলার চাঁদনীঘাট ইউনিয়নের টিভি হাসপাতাল এলাকার বর্ষিজোড়া গ্রামে মো. চেরাগ মিয়ার সাথে প্রতিবেশী নুরুল ইসলামের বাকবিতণ্ডা হয়। নুরুল ইসলামের দাবি, তার ছবি ব্যবহার করে চেরাগ মিয়া ফেইক আইডি চালাচ্ছেন। এ ঘটনার জেরে শুরু হয় তোর কবিতর্ক ও হাতাহাতি। একপর্যায়ে মারমুখী নূরুল ইসলাম, তার ছেলে রনি মিয়ার নেতৃত্বে সঙ্গবদ্ধ সহযোগীরা মিলে চেরাগ মিয়ার বসত বাড়িতে পিতা-মাতা আত্মীয়-স্বজনের সম্মুখে গিয়ে ছেলে রেজাউল করিম নাঈমকে টেনে হেঁচড়ে বের করে লাঠিসোঁটা দিয়ে বেদম প্রহার ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে গুরুতর আহত করেন। এতে নিজ বাড়িতেই নাঈমের প্রচন্ড রক্তক্ষরণ হয়। নাঈমের বাবা-মা তাকে মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে তার অবস্থার অবনতি হলে সিলেট ওসমানী হাসপাতালে পাঠানো হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

এ ঘটনায় বর্ষিজোড়া এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। গত বুধবার রাতে মৌলভীবাজার শহরের দরগাহ জামে মসজিদ প্রাঙ্গনে নাঈমের জানাযা শেষে দাফন করা হয়।

নাঈমের বাবা মো. চেরাগ মিয়া বলেন, আমার প্রতিবেশী নুরুল ইসলামের সাথে আমাদের কোন পূর্বশত্রুতা নেই। বিকালেও আমার বাড়িতে এসে চা খেয়েছেন। সন্ধ্যার পর তিনি আমাকে এসে বলেন আমি নাকি তার ছবি দিয়ে আইডি চালাচ্ছি। সেই সময় পাশের রুম থেকে আমার ছেলে এসে বলে, ফেইক আইডি কে খুলেছে আমাকে দেখান, এখন প্রযুক্তির যুগ এগুলো বের করা যায়। একথা বলতেই তার উপর ক্ষেপে যায় নুরুল ইসলাম। এরপর শুরু করে আমাদের মারধর। একপর্যায়ে নুরুল ইসলামের ছেলেসহ আরো ১২ থেকে ১৫ জন চলে আসে। ভয়ে আমার ছেলে, তার মা, চাচি, বোন ভয়ে অন্যরুমে লুকিয়ে যায়। তারা রুমের দরজা ভেঙে আমার ছেলেকে ধরে এনে ধারালো চাকু দিয়ে কুপাতে থাকে। আমার চোখের সামনে আমার ছেলেকে হত্যা করেছে।

মৌলভীবাজার মডেল থানার ওসি হারুনুর রশিদ চৌধুরী বলেন, এঘটনায় নিহতের বাবা মৌলভীবাজার মডেল থানায় ১০ জনের নাম উল্লেখ করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। এ ঘটনায় পুলিশ ইতোমধ্যে এজহার নামীয় ৫নং আসামি আব্দুল আজিজের ছেলে মো. সাইমন ইসলামকে গ্রেফতার করেছে। বাকী আসামিদের দ্রুত গ্রেফতার করতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

নিহত নাঈম মৌলভীবাজার সরকারি কলেজের অর্নাস ২য় বর্ষের ছাত্র। সে আগামী ১০-১৫ দিনের মধ্যে ইতালিতে যাওয়ার কথা ছিলো। নাঈমের পিতা ডেকোরেটার্স ব্যবসায়ী। দুই ভাই ও ১ বোনের মধ্যে নাঈম ছিলো সবার বড়। তার ছোট ভাই রেজওয়ানুল করিম নাদিম মৌলভীবাজার সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষার্থী ও বোন নাজনীন আক্তার সাহিদা মৌলভীবাজার সরকারী মহিলা কলেজের ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী। শান্ত সৃষ্ট নাঈমের নির্মম হত্যাকান্ডে নিজ এলাকাসহ সহপাঠী মধ্যে শোকের ছায়া নেমেছে। এ ব্যাপারে গ্রেপ্তারের তথ্য জানা যায়।