মৌলভীবাজারে হোটেল শ্রমিক ইউনিয়নের সম্মেলন সমাপ্ত

    0
    246

    সূফি সভাপতি, সিরাজ সাধারণ সম্পাদক

    আমারসিলেট টুয়েন্টিফোর ডটকম,৩১জানুয়ারী:   মৌলভীবাজার জেলা হোটেল শ্রমিক ইউনিয়ন রেজিঃ নং চট্টঃ২৩০৫ এর সদর উপজেলা শাখার সম্মেলনে মোঃ ছুফি মিয়াকে সভাপতি ও সিরাজুল ইসলামকে সাধারণ সম্পাদক ১৭ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি নির্বাচন করা হয়। এ উপলক্ষে ৩০ জানুয়ারী’১৭ সোমবার বিকেলে মৌলভীবাজার পৌর মিলনায়নতন হতে এক বর্ণাঢ্য লাল পতাকার র‌্যালী বের হয়ে শহর প্রদক্ষিণ করে পুণরায় পৌর মিলনায়নতনে গিয়ে সমাপ্ত হয়। পরে পৌর মিলনায়তনে সম্মেলনের ১ম পর্বে আলোচনা সভায়, ২য় পর্বে বার্ষিক সাধারণ সভায় সাগঠনিক ও আর্থিক রিপোর্ট এবং কমিটি নির্বাচন ও নব-নির্বাচিত কমিটির শপথ গ্রহণের মাধ্যমে কর্মসূচি সমাপ্ত হয়।

    জেলা হোটেল শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মোঃ মোস্তফা কামালের সভাপতিত্বে উক্ত সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ হোটেল রেস্টুরেন্ট সুইটমিট শ্রমিক ফেডারেশন রেজিঃ নং চট্টঃ২০৩৭ কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট মৌলভীবাজার জেলা কমিটির সভাপতি কবি শহীদ সাগ্নিক ও বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘ মৌলভীবাজার জেলা কমিটির সভাপতি মোঃ নুরুল মোহাইমীন। জেলা হোটেল শ্রমিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মোঃ শাহিন মিয়ার পরিচলায়ন আলোচনা পর্বে বক্তব্য রাখেন ধ্রুবতারা সাংস্কৃতিক সংসদ জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক অমলেশ শর্ম্মা, জেলা রিকশা শ্রমিক ইউনিয়ন রেজিঃ নং২৪৫৩ এর সভাপতি সোহেল আহমেদ ও কুলাউড়া উপজেলা কমিটির যুগ্ম-আহবায়ক আব্দুর রহমান।
    প্রধান অতিথির রফিকুল ইসলাম বক্তব্য রাখতে গিয়ে বলেন নিত্যপ্রয়োজনীয় সকল জিনিষপত্রের উর্ধ্বগতির এসময়ে দেশের অন্যান্য শ্রমজীবী মানুষের মতো আমরা হোটেল শ্রমিকরাও নিদারুন দুঃখ-কষ্ঠের সাথে জীবন ও জীবিকা নির্বাহ করতে বাধ্য হচ্ছি। হোটেল শ্রমিকদের দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রামের পরিণতিতে ২০০৯ সালের ২৪ নভেম্বর সরকার হোটেল সেক্টরের শ্রমিকদের জন্য নিম্নতম মজুরি ঘোষণার প্রায় ৭ বছর পর ৩১ জুলাই ২০১৬ মজুরি বোর্ড একজন শ্রমিকের সর্বনিম্ন সর্বমোট মাসিক মজুরি ৩২০০ টাকার সুপারিশ করেছে। বর্তমান দ্রব্যমূল্যের উর্দ্ধগতির বাজারে পরিবার পরিজন নিয়ে একজন শ্রমিক এই মজুরিতে কিভাবে চলবে? বর্তমানে একজন শ্রমিকের সাধারণভাবে বেঁচে থাকতে হলে দৈনিক ন্যূনতম তিন বেলায়  ১০০ টাকা শুধু খোরাকির প্রয়োজন। তাই একটি শ্রমিক পরিবারে বর্তমানে বাজারদরের সাথে সঙ্গতি রেখে বাঁচতে হলে দৈনিক ন্যূনতম ৫/৬শ টাকা দরকার। মজুরি নির্ধারণের এই অতি প্রচলিত নিয়মানুযায়ী একজন শ্রমিকের সর্বনি¤œ মজুরি মাসিক ১৫ হাজার টাকা হওয়া উচিৎ। এর সাথে ৬০ ভাগ বাড়িভাড়া এবং  ১,০০০ টাকা করে চিকিৎসা ও যাতায়াত ভাতাসহ মাসিক ২৬ হাজার টাকা সর্বনি¤œ মজুরি হলে একজন শ্রমিক স্ত্রী-পুত্র-কন্যা, বাবা-মাকে নিয়ে মোটামুটিভাবে চলতে পারে। সরকার ইতিমধ্যে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরে পাশাপাশি রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, এমপি, মেয়র, চেয়ারম্যান, মেম্বার পর্যন্ত সকলের বেতন-ভাতা বৃদ্ধি করেছে। শুধু শ্রমিকদের মজুরি একটি টাকাও বৃদ্ধি করা হয়নি, আজ পর্যন্ত জাতীয় ন্যূনতম মজুরি ঘোষণা করা হয়নি। তাই বর্তমান বাজারদরের সাথে সঙ্গতি রেখে একজন শ্রমিকের ন্যুনতম মূল মজুরি ১০ হাজার টাকাসহ ৬০ ভাগ বাড়িভাড়া এবং ১,০০০ টাকা চিকিৎসা ও যাতায়াত ভাতা বাবদ  সর্বমোট মাসিক মজুরি ১৮ হাজার টাকা ঘোষণা করা সময়ের দাবি। হোটেল মালিকরা দেশের প্রচলিত শ্রমআইনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে বছরের পর বছর প্রতিষ্ঠান চালাচ্ছেন। সরকার ও তার আইন প্রয়োগকারী সংস্থা মালিকদের এই বে-আইনী তৎপরতার প্রেক্ষিতে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না, যার ফলে শ্রমিকরা তাদের অধিকার থেকে বি ত হচ্ছে। তাই বাচাঁর মতো মজুরি ও শ্রমআইন বাস্তবায়নের দাবিতে শ্রমিকদের আন্দোলন সংগ্রাম ছাড়া বিকল্প কোন পথ নেই। এই লক্ষ্যে সংগঠন-সংগ্রাম গড়ে তুলতে হবে।
    ২য় পর্বে ২০১৬ সালের সাংগঠনিক ও আর্থিক রিপোর্ট পেশ করা হলে উত্থাপিত রিপোর্টের প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করে বক্তব্য রাখেন হোটেল শ্রমিক ইউনিয়ন কুলাউড়া উপজেলা কমিটির সভাপতি মোঃ আলাউদ্দিন, শেরপুর আ লিক কমিটির সহ-সভাপতি রোমেল আহমেদ ও হোটেল শ্রমিকনেতা আব্দুস ছালাম প্রমূখ। উপস্থিত শ্রমিকরা উপত্থাপিত রিপোর্ট ও নব-নির্বাচিত কমিটির প্রতি করতালির মাধ্যমে সমর্থন ব্যক্ত করেন।
    সম্মেলন থেকে অবিলম্বে মজুরি বোর্ডের মাধ্যমে বর্তমান বাজারদরের সাথে সংগতিপূর্ণভাবে নিম্নতম মূল মজুরি ১০ হাজার টাকা ঘোষণা, ৮ ঘন্টা কর্ম দিবস, নিয়োগ পত্র, পরিচয়পত্র প্রদানসহ শ্রম আইন বাস্তবায়ন, ঢাকার ঘরোয়া হোটেল এন্ড রেস্টুরেন্টে কিশোর শ্রমিক রিয়াদের খুনি হোটেল মালিক আরিফুল ইসলাম সোেেহলে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি, শ্রমিকদের জন্য রেশনিং চালু, শ্রীমঙ্গলে স্থায়ী শ্রম আদালত ও যুগ্ম-শ্রম পরিচালকের কার্যালয় স্থাপন করার দাবি জানানো হয়।