রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে বিএনপির ১০ দফা সুপারিশ

    0
    223

    রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে ১০ দফা সুপারিশ দিয়েছে বিএনপি। সুপারিশের মধ্যে রয়েছে, জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি, রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে তাদের নাগরিকত্ব, নিরাপত্তা, নিজের মাতৃভূমিতে অবাধ চলাচলের নিশ্চিতকরণ, বন্ধুপ্রতিম রাষ্ট্রসমূহকে নিয়ে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে মিয়ানমার সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করা, প্রত্যাবাসনের আগে ও পরে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধায়নের মিয়ানমারের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে সুযোগ রাখা, রোহিঙ্গা ইস্যুকে কেন্দ্র করে যাতে জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদ সৃষ্টি না হতে পারে সে ব্যাপারে সরকারকে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া প্রভৃতি।

    বুধবার রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে বিএনপির উদ্যোগে ‘রোহিঙ্গা সংকট ও বাংলাদেশের ভূমিকা’ শীর্ষক সেমিনারের এসব সুপারিশ করা হয়। সেমিনারে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘আমরা জানি, এই সরকারের কোনো নৈতিক অবস্থান নেই, তারা অনির্বাচিত সরকার। সুতরাং তাদের বিশ্বজনমত তৈরি করতে হলে সমগ্র জনগণকে সামনে নিয়েই এই অভাবটা পূরণ করতে হবে।’

    মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এই সেমিনারের মধ্য দিয়ে আমরা সরকারের কাছে পৌঁছাতে চাই, জনগণের কাছে পৌঁছাতে চাই, বিশ্বমানবতার কাছে পৌঁছাতে চাই। একই সঙ্গে আমরা আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে, জাতিসংঘকে, আন্তর্জাতিক বিশ্বকে আহ্বান জানাচ্ছি, মানবিক যে অবস্থা তৈরি হয়েছে সেটাকে সমাধানের জন্য তারা তাদের ভূমিকা পালন করবে।’

    মির্জা ফখরুল বলেন, ‘রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবার পুরোনো খেলা শুরু করেছেন, বিএনপিকে দায়ী করতে শুরু করেছেন এবং তিনি আমাকে দায়ী করেছেন যে, রোহিঙ্গা ইস্যু দিয়ে নাকি আমরা উসকে দিচ্ছি রোহিঙ্গাদের। এটা সুইসাইডেল, এটা আত্মহননের কথা। আমরা মনে করি যে, এই ধরনের কথা-বার্তা শুধু রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে বাঁধা হয়ে দাঁড়াবে, মিয়ানমারকে আরো শক্তিশালী করবে এবং সমস্যা আরো বৃদ্ধি করবে।’

    তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের স্থায়ীভাবে দেশে ফিরে জীবন-সম্পদ সম্ভ্রমে অখণ্ড নিরাপত্তা ও পূর্ণ নাগরিক অধিকার নিয়ে নিজ মাতৃভুমিতে বসবাস করতে পারে সেই নিশ্চয়তা বিধান কল্পে বাংলাদেশসহ সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রগুলোকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বলিষ্ঠ কূটনৈতিক উদ্যোগ নিতে হবে। জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে এর কোনো বিকল্প নেই। ঐক্যবদ্ধ জাতিকে নিয়েই এই সমস্যা সমাধান করার জন্য এগিয়ে যেতে হবে।’

    সরকারের সমালোচনা করে ফখরুল বলেন, ‘আমি বলতে চাই, প্রধান যে বিষয়টা- রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে হলে অবশ্যই তাদের নিরাপত্তা, নাগরিকত্ব ও তাদের প্রত্যাবাসনে পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। সেটা সরকার পারেনি। এই সরকারের ব্যর্থতা, তাদের অনভিজ্ঞতা, নতজানু পররাষ্ট্রনীতি তারা এমন জায়গায় নিয়ে গেছে যে, মিয়ানমারের ট্রাপের মধ্যে এই সরকার পড়ে গেছে। এখান থেকে তাদের বেরিয়ে আসতে হবে।’

    ফখরুল বলেন, ‘রোহিঙ্গা ইস্যুটি এখন বাংলাদেশের জন্য সত্যিকার অর্থে বিপজ্জনক অবস্থায় এসে দাঁড়িয়েছে। আমরা প্রথম থেকেই বলে এসেছিলাম যে, রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধান করতে হলে এককভাবে বাংলাদেশের পক্ষে ওটা করা সম্ভব হবে না। প্রথম থেকেই বলে এসেছিলাম যে, একটা জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি করে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানের করতে হবে।’

    রোহিঙ্গা শরণার্থীরা বাংলাদেশে আসার সময় বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া যে বিবৃতি দিয়েছিলেন, তা তুলে ধরেন বিএনপির মহাসচিব।

    সেমিনারে আমেরিকা, ব্রিটেন, চীন, কানাডা, ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া, জাপান, ভারত, পাকিস্তান, নরওয়ে, সুইডেন, সুইজারল্যান্ড, আফগানিস্তান, তুরস্ক প্রভৃতি দেশের কূটনীতিকরা অংশ নেন। অনুষ্ঠানে ছিলেন জাতিসংঘের প্রতিনিধিরাও। তবে কূটনীতিকরা আলোচনায় কোনো বক্তব্য দেননি।

    সেমিনারে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ওপর মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও পররাষ্ট্র কমিটির চেয়ারম্যান আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। এতে রোহিঙ্গাদের আগমনের প্রেক্ষাপট, জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনানের প্রতিবেদন এবং রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে তাদের নাগরিকত্ব ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করেই করণীয় বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়।পার্সটুডে