লাউয়াছড়া উদ্যানে বন্যপ্রাণী চিকিৎসালয় আছে চিকিৎসক নেই

    0
    328

    জহিরুল ইসলাম.স্টাফ রিপোর্টার: মৌলভীবাজারের-কমলগঞ্জের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের ওয়াইল্ডলাইফ রেসকিউ সেন্টারটি তৈরী করার পর থেকে নানান সংকটে এটি।জনবল ও চিকিৎসক সংকটসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত জানকিছড়া বন ক্যাম্প এলাকায় অবস্থিত রেসকিউ সেন্টারে বন্যপ্রাণী থাকলেও তাদের চিকিৎসা প্রদানের জন্য নেই কোনো চিকিৎসক।ফলে বণ্যপ্রাণীগুলো চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রচার হলেও কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছেনা। কে শুনে কার কথা এমনটি বলছে স্থানীয় বন্য প্রাণী প্রেমীরা।
    প্রাণীগুলোর রক্ষণাবেক্ষণের জন্য চিকিৎসকসহ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ৪-৫ জন লোকের প্রয়োজন থাকলেও বর্তমানে ২ জন কর্মরত আছেন। ফলে ব্যাহত হচ্ছে বিভিন্ন জায়গা থেকে উদ্ধার হওয়া প্রাণীগুলোর রক্ষণাবেক্ষণের কাজ।
    বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, পশ্চিম ভানুগাছ সংরক্ষিত বনের প্রায় ১ হাজার ২৫০ হেক্টর এলাকাকে ১৯৭৪ সালে বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও সংশোধন) আইন অনুযায়ী ১৯৯৬ সালের ৭ জুলাই জাতীয় উদ্যান হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এই বনে রয়েছে ৪৬০ প্রজাতির দুর্লভ বন্যপ্রাণী ও গাছপালা। এর মধ্যে ১৬৭ প্রজাতির উদ্ভিদ, ৪ প্রজাতির উভচর, ৬ প্রজাতির সরিসৃপ, ২০ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী ও ২৪৬ প্রজাতির পাখি বসবাস এই বনে। লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান বাংলাদেশে অবশিষ্ট অঞ্চলের চিরহরিৎ বর্ষাবন বা রেইন ফরেস্টের মতো।
    লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান ঘোষণা করার পর বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ সিলেটের আওতাধীন এই বনের জীববৈচিত্য রক্ষায় বনের জানকিছড়া ভিতরে তৈরি করা হয় ওয়াইল্ড লাইফ রেসকিউ সেন্টার।রেসকিউ সেন্টারটি তারের বেড়া দ্বারা আবদ্ধ থাকলেও দীর্ঘদিন ধরে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে সেন্টারটির ভবনগুলোর চারদিক ঝোঁপ-জঙ্গলে আচ্ছাদিত হয়ে রয়েছে। দেখলে মনে হবে যেন অনেকদিন ধরে কারও পদচারণা ঘটেনি এখানে। শুধুমাত্র প্রাণীগুলোর রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ৪-৫ জন লোকের প্রয়োজন থাকলেও বর্তমানে ২ জন দিয়েই কাজ চালানো হচ্ছে দায়সারাভাবে।তার মধ্যে একজন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত জুনিয়র ওয়াউল্ড লাইফ স্কাউট ও অন্যজন বনপ্রহরী।
    সম্প্রতি সরেজমিনে ঘোরে দেখা যায়,প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত জুনিয়র ওয়াউল্ড লাইফ স্কাউট ঋষু বড়ুয়া সেখানে থাকা বন্যপ্রাণীদের দেখভাল করেন। তার অবর্তমানে রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকেন তার সহকারী বনপ্রহরী মো. ইব্রাহিম। বন পাহারাদারের এ বিষয়ে দক্ষতা থাকলেও এখানে রাখা প্রাণীগুলোর খাবার বন্টন ও দেখভাল সম্পর্কে সেরকম কোনো দক্ষতা নেই ইব্রাহিমের।

    অপরিষ্কার-অপরিচ্ছন্নতার মধ্যেই রেসকিউ সেন্টারটিতে বর্তমানে বিভিন্ন স্থান থেকে উদ্ধার হওয়া ২টি মেছোবাঘ, ৫টি বানর ও ছোট-বড় ৩টি বার্মিজ অজগর সাপ রয়েছে।সেন্টারটিতে মূলত আক্রান্ত-অসুস্থ প্রাণীকে উদ্ধার করে সেবা দিয়ে সুস্থ করে তোলার পর সেগুলোকে আবার বনের নিরাপদ স্থানে অবমুক্ত করার কথা।তবে প্রাণী চিকিৎসক না থাকায় গুরুতর আক্রান্ত প্রাণীর ক্ষেত্রে সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। ফলে পার্শ্ববর্তী শ্রীমঙ্গল প্রাণীসম্পদ চিকিৎসা কেন্দ্রের সহায়তা নেওয়া হয়। গত কয়েক বছর ধরে চিকিৎসক ছাড়াই চলছে এই রেসকিউ সেন্টারটি।ফলে বণ্যপ্রাণীরা চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।সময় মত চিকিৎসা সেবা পাচ্ছে না।

    শ্রীমঙ্গলস্থ বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী সেবা ফাউন্ডেশনের পরিচালক সজল দেব বলেন, ‘সরকারি অর্থায়নে জানকিছড়া ওয়াইল্ড লাইফ রেসকিউ সেন্টার ও সেবা কেন্দ্র করলেও এখানে নেই কোনো চিকিৎসক। তাছাড়া পর্যাপ্ত লোকবলও নেই। বাধ্য হয়ে বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ তাদের আহত বন্যপ্রাণীদের বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী সেবা ফাউন্ডেশনে পাঠায়। তখন আহত বন্যপ্রাণীদের সেবা দিয়ে সুস্থ করে ফেরৎ দিলে আবার সেগুলোকে জাতীয় উদ্যানে অবমুক্ত করা হয়।’
    এ বিষয়ে বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক মো. আনিসুর রহমান বলেন, ‘জনবল সংকটের কারণে রেসকিউ সেন্টারটির কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। দীর্ঘ ৪ বছর ধরে চিকিৎসক না থাকায় আহত অবস্থায় কোনো বন্যপ্রাণী উদ্ধার করে আনলে তা পার্শ্ববর্তী পশুসম্পদ চিকিৎসা কেন্দ্রে নিয়ে যেতে হয়।নতুবা শ্রীমঙ্গল বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী সেবা ফাউন্ডেশনে দিয়ে দেওয়া হয়, তারাই সুস্থ করে তোলে।তবে জনবল সংকট নিরসনের জন্য উচ্চপর্যায়ে সুপারিশ করা হয়েছে। জনবল নিয়োগ দিলেই পুনরায় প্রাণ ফিরে পাবে সেন্টারটি।’

    কমলগঞ্জ জীববৈচিত্র্য রক্ষা কমিটির সভাপতি মঞ্জুর আহমেদ মান্না জানান, ‘বন্যপ্রাণীর অভয়ারণ্য লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের অনেক প্রাণী খাদ্যের জন্য লোকালয়ে গেলে স্থানীয়দের হাতে পড়ে এমনকি মাঝে-মধ্যে আহতাবস্থায় আটকা পড়ে। পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ না থাকার পরও বন বিভাগ এসব প্রাণী উদ্ধার করে নিয়ে আসে লাউয়াছড়া রেসকিউ সেন্টারে। কোটি টাকা ব্যয়ে সেন্টারটির নির্মাণ করা হলেও দুর্ভাগ্যজনক এটি অবহেলা আর অযযত্নে পড়ে আছে।