শ্রমিক কল্যাণে ৫ বছরে ২২০ শতাংশ মজুরি বেড়েছেঃপ্রধানমন্ত্রী

    0
    209

    আমারসিলেট24ডটকম,০৭ডিসেম্বরঃ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, প্রতিযোগিতাও বাড়ছে। বিশ্ববাজারে টিকে থাকতে হলে উৎপাদন আরও বাড়াতে হবে। বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানিকারকদের প্রতি পণ্যের দাম বাড়ানোর আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, পোশাকের দাম বাড়লেই শ্রমিকের মজুরি বাড়বে, আর তাতে শ্রমিক স্বাচ্ছন্দ্যের জীবন পাবে। এর মধ্য দিয়ে তারা হয়ে উঠবে উন্নয়নের সমান অংশীদার। আজ রবিবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে শুরু হওয়া ৩ দিনের এপারেল সামিটের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি একথা বলেন।
    তৈরি পোশাক শিল্পে তার সরকার আর্থিক প্রণোদনা ও নীতি-সহায়তা দিয়ে আসছে ভবিষ্যতেও তা অব্যাহত থাকবে ঘোষণা দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, তিনি বিশ্বাস করেন এটাই তার সরকারের দায়িত্ব। এ সময় তিনি শ্রমিক কল্যাণে তার সরকারের নেয়া পদক্ষেপ গুলোও তুলে ধরেন। পোশাক শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ৫ হাজার ৩০০ টাকায় উন্নীত করার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ৫ বছরে ২২০ শতাংশ মজুরি বেড়েছে। বিশ্বের কোথাও মজুরি বৃদ্ধির এমন উদাহরণ নেই। তিনি বলেন, পোশাক শ্রমিকসহ কর্মজীবী স্তনদানকারী মায়েদের মাসিক ভাতা দেয়া হচ্ছে। শিল্পাঞ্চলে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে শিল্প পুলিশ গঠন করা হয়েছে। বিজিএমইএকে সার্টিফিকেট অব অরিজিন ইস্যু করার ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। বিজিএমইএ ফ্যাশন এন্ড টেকনোলজি বিশ্ববিদ্যালয় চালু করা হয়েছে।
    প্রধানমন্ত্রী বলেন, মালিকদের জন্য অগ্রীম আয়কর ০.৮০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ০.৩০ শতাংশে কমিয়ে আনা, নিরাপদ কর্মপরিবেশ সৃষ্টির লক্ষ্যে রপ্তানিমুখী পোশাক শিল্পে  প্রি-ফেব্রিকেটেড বিল্ডিংয়ের কাঁচামাল ও অগ্নি-নির্বাপক যন্ত্রপাতির আমদানি শুল্ক প্রত্যাহার করা, তৈরিপোশাকসহ বেশকিছু রপ্তানি খাতে নগদ সহায়তা দেওয়ার কথাও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এছাড়াও শ্রম আইনকে যুগোপযোগী করা হয়েছে। শ্রমিকদের পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে। ট্রেড ইউনিয়ন গঠন প্রক্রিয়া সহজ করা হয়েছে। মালিক-শ্রমিক সম্পর্ক উন্নয়ন এবং শ্রমিকদের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির ব্যবস্থা করা হয়েছে। শ্রমিকদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য ৫০ কোটি টাকার তহবিল গঠন করা হয়েছে। নারী শ্রমিকদের জন্য ডরমিটরির ব্যবস্থা করা হয়েছে, বলেন প্রধানমন্ত্রী।
    শেখ হাসিনা বলেন, সরকারের পাশাপাশি বিজিএমইএ পোশাক শ্রমিকদের কল্যাণে কাজ করছে। স্কুল, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, হাসপাতাল, গ্রুপবীমা, ট্রেড ইউনিয়ন সংক্রান্ত পরামর্শক সেল, প্রশিক্ষণ ইত্যাদি ছাড়াও শ্রমিকদের বিনোদনের জন্য সঙ্গীত প্রতিযোগিতার আয়োজন করছে। তৈরি পোশাক খাত বাংলাদেশের গর্ব হিসেবে তুলে ধরে তার বক্তব্যে বলেন, দেশের রপ্তানি আয়ের প্রায় ৮০ শতাংশ আসে এ খাত থেকে। এতে প্রায় ৪০ লাখ শ্রমিকের কর্মসংস্থান, যার প্রায় ৮০ শতাংশই গ্রামীণ নারী। তিনি বলেন, পোশাক খাত প্রসারের ফলে সার্বিক সেবাখাত বিকশিত হয়েছে। অগ্র ও পশ্চাৎ সংযোগ শিল্প গড়ে উঠেছে। রপ্তানিমুখী কম্পোজিট টেক্সটাইল শিল্প গড়ে উঠায় তৈরি পোশাকে দেশীয় মূল্য সংযোজনও বেড়েছে। দেশের প্রায় ২০ শতাংশ মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে তৈরি পোশাক খাতের ওপর নির্ভরশীল।
    প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০২১ সালের মধ্যে আমরা বাংলাদেশকে একটি মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছি। এ লক্ষ্যে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে হবে। এ সময় প্রধানমন্ত্রী আগামী ২০২১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছরপূর্তিতে পোশাক রফতানি আয় ৫০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করার বিষয়ে পোশাক উৎপাদন ও রফতানিকারক ব্যবসায়ীদের সংগঠন বিজিএমইএর লক্ষ্যকে স্বাগত জানান। এছাড়া পোশাক খাতের বাজার সম্প্রসারণে সরকার বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে বলেও জানান তিনি।
    প্রসঙ্গত সাভারে রানা প্লাজা ধসের পর কারখানার কর্মপরিবেশ উন্নয়নসহ নানামুখী সংস্কার প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে এগোচ্ছে দেশের পোশাক খাত। বিশ্ববাসীর কাছে এসব উন্নয়ন সরেজমিন তুলে ধরতে ঢাকায় আজ রবিবার থেকে শুরু হয়েছে ৩ দিনের সম্মেলন ‘এপারেল সামিট’। পোশাক খাতের সাথে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে সংশ্লিষ্ট দেশি-বিদেশি ২ হাজার প্রতিনিধি এ সামিটে অংশ নিয়েছেন। বিজিএমইএর আয়োজনে এ সামিটে ইউরোপ ও আমেরিকার শীর্ষ পর্যায়ের কূটনীতিক এবং ক্রেতা প্রতিনিধিরা যোগ দিয়েছেন।