শ্রীমঙ্গল রিসোর্টে খুনের ঘটনায় জব্দকৃত প্রাইভেট গাড়িটি থানার হেফাজতে:দ্রুত আসামি গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে

0
167

আমার সিলেট রিপোর্ট: সন্দেহভাজন খুনিদের ব্যবহৃত প্রাইভেটকার জব্দের মাধ্যমে জট খুলতে শুরু করেছে মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলার ৩ নং শ্রীমঙ্গল ইউনিয়নের অন্তর্গত ডলুছড়া এলাকায় অবস্থিত লেমন গার্ডেন নামক রিসোর্টে এক পর্যটক খুনের মর্মান্তিক ঘটনার। এ ঘটনায় একজনকে গ্রেফতার করে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। তার নাম শান্ত (৩৫) কাকিয়া ছাড়া চা বাগান, শ্রীমঙ্গল, মৌলভীবাজার।

আটককৃত আসামি শান্ত

খুনের ঘটনার সাথে জড়িত পলাতক সন্দেহ ভাজনদের ব্যবহৃত একটি প্রাইভেট কার ( ঢাকা মেট্রো গ- ২২-৯১৫৬) ক্লু হিসেবে উদ্ধার করে পুলিশ শ্রীমঙ্গল থানায় নিয়ে এসেছে । গাড়িটি বর্তমানে শ্রীমঙ্গল থানার হেফাজতে রয়েছে।

জব্দকৃত গাড়ি প্রসঙ্গ,পুলিশের কাছে প্রাপ্ত তথ্য মতে রিসোর্ট থেকে তিন/চারজন একটি প্রাইভেট কার ব্যবহার করে পালিয়ে যায়। তাদের ব্যবহৃত প্রাইভেট কারটি ঢাকার গুলশান এলাকা থেকে পুলিশ জব্দ করা হয়েছে। গাড়িটির মালিকানা নিহত শরিফুলের বন্ধু ওসমানের স্ত্রীর। ওসমান হত্যাকাণ্ড মামলায় একজন আসামী।
পুলিশ ধারণা করছে প্রাইভেট কারসহ বিভিন্ন তথ্য উপাত্তের ভিত্তিতে প্রকৃত খুনিদের দ্রুত আইনের আওতায় আনা সম্ভব।

প্রসঙ্গত,রোববার (২৭ আগস্ট) রাত ৮টায় লেমন গার্ডেন রিসোর্টের একটি রুম থেকে শরীফুল ইসলাম (৪০) নামের এক পর্যটকের রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। নিহতের বাড়ি নরসিংদী জেলার রায়পুরা উপজেলার হাঁটুভাঙ্গা গ্রামে। নিহতের পিতার নাম কামরুজ্জামান। তবে শরীফুল রাজধানী ঢাকার ভাটেরা এলাকার ৪০নং ওয়ার্ডের ফাঁসের টেক নামক এলাকায় বসবাস করে আসছিলেন।

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গত শুক্রবার (২৫ আগস্ট) সকালের দিকে চাঁদপুর জেলার শাহারাস্তি উপজেলার খাসের বাড়ি গ্রামের জনৈক আবুল খায়েরের ছেলে মো. নুরুল আমিন রাব্বিসহ আরো ৩ জন পর্যটকবেশী লেমন গার্ডেন রিসোর্টের বৃষ্টি বিলাসের রুম নং-৫ এর রিজার্ভেশন নেয়। পরের দিন রাত (২৬ আগস্ট) ১১টার দিকে রিসোর্ট ম্যানেজারকে নির্ধারিত রুম ভাড়া পরিশোধ করার সময় বলেন,তাদের দু’জন রুমে রয়ে গেছেন, তারা রোববার (২৭ আগস্ট) দুপুরে চেক আউট করবেন। এ কথা বলে ওই চারজন রিসোর্ট থেকে ড্রাইভারসহ অপর একজনকে নিয়ে সন্দেহ তৈরীর পূর্বেই পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়।

পরের দিন রোববার দুপুরে হোটেল স্টাফ ওই রুমে চেকিংয়ের জন্য গেলে এবং ডাকাডাকির কোনো সাড়া শব্দ না পেয়ে জানালা দিয়ে উকি দিয়ে দেখতে পান যে, এক ব্যক্তির রক্তাক্ত দেহ পড়ে রয়েছেন। বিষয়টি তাৎক্ষণিক রিসোর্ট কর্তৃপক্ষকে জানালে কর্তৃপক্ষ বিষয়টি দ্রুত স্থানীয় থানা পুলিশকে অবহিত করলে। পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে বিকল্প চাবি দিয়ে দরজা খুলে রক্তাক্ত ও বিভৎস শরিফুলের লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য জেলা সদর হাসপাতালে পাঠায়। এ সময় শ্রীমঙ্গল থানার অফিসার্স ইনচার্জ, তদন্ত কর্মকর্তা সহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ উপস্থিত ছিলেন।

পুলিশের প্রাথমিক ধারণা,শরীফুলের মাথায় কাঠের বর্গা জাতীয় কিছু দিয়ে একাধিকবার আঘাত করে খুন করা হয়। কারণ নিহত ব্যক্তির মাথায় ও মুখে মারাত্মক আঘাতের চিহ্ন এবং বিকৃত অবস্থায় পাওয়া যায়।
এ ঘটনার অনুসন্ধানের প্রয়োজনে রিসোর্টের কয়েকজনকে প্রাথমিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তাদের বক্তব্য যাচাই-বাছাই হচ্ছে। এছাড়া রিসোর্টে চাকুরীরত একজনের সাথে পলাতক একজনের সুসম্পর্ক রয়েছে এমন তথ্য পাওয়া গেছে বলে পুলিশ জানান। এরই প্রেক্ষাপটে শান্তকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে।

মামলাটির আইও পুলিশ পরিদর্শক (অপারেশন) তাপস চন্দ্র রায় আমার সিলেট কে জানান আসামিদের গ্রেফতার এর সর্বোচ্চ চেষ্টা চলছে, আশা করি দু এক দিনের ভিতরে গ্রেফতার করা সম্ভব হবে।
মামলার ব্যাপারে কর্মকর্তা আমিরুল ইসলাম সেলিমের সাথে কথা হলে তিনি আমার সিলেট কে জানান, মামলার তদন্ত কাজ চলছে ইতিমধ্যে হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত পর্যটক বেশিসঙ্গী-সাথীদের সনাক্ত করার কার্য চলছে, এবং তাদের ব্যবহৃত একটি প্রাইভেট কার ইতিমধ্যে জব্দ করা হয়েছে। প্রাইভেটকার জব্দ হওয়ার মধ্য দিয়ে মামলার জট খুলতে শুরু করেছে, আশা করি অপরাধীদের দ্রুত আইনের আওতায় আনা সম্ভব হবে।

এ ব্যাপারে শ্রীমঙ্গল থানার ওসি জাহাঙ্গীর হোসেন সরদার জানান, প্রথমে নিহত ব্যক্তি আমাদের কাছে অজ্ঞাত ছিল আমরা তার পরিচয় নিশ্চিত করেছি। পরিবারের হাতে লাশ হস্তান্তর করতে পেরেছি এবং তার সাথে রিসোর্টে আসা অন্যদেরকেও শনাক্ত করতে সক্ষম হয়েছি,আসামীদের ব্যবহৃত প্রাইভেট কারটি ও উদ্বার করা হয়েছে। ক্রমান্বয়ে আমরা তাদের গ্রেফতারের ব্যবস্থা নিচ্ছি, আশা করি দ্রুত অপরাধীদের আইনের আওতায় আনতে পারব।