সিলেটে পরিবহন শ্রমিকদের বিআরটিসি বাসে ভাংচুরের তাণ্ডব

    0
    458

    নূরুজ্জামান ফারুকী বিশেষ প্রতিনিধিঃ  সিলেট-শ্রীমঙ্গল ও সিলেট-হবিগঞ্জ সড়কে বিআরটিসি বাসের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়েছিলো ২২ ডিসেম্বর। তবে তখন পরিবহন ধর্মঘট চলায় যাত্রী পরিবহন শুরু করা হয়নি। আজ (রোববার) থেকে এই দুই সড়কে এসি বাস চালুর ঘোষণা দিয়েছিলো বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্পোরেশন (বিআরটিসি)। কিন্তু পরিবহন শ্রমিকদের তান্ডবে তা আর সম্ভব হয়নি।

    সকাল ৯টায় সিলেটের কদমতলী এলাকার কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল এলাকার বিআরটিসির কাউন্টার থেকে বাস দুটি শ্রীমঙ্গল ও হবিগঞ্জের উদ্যেশে ছেড়ে যাওয়ার কথা ছিলো। একটি বাস কাউন্টার ছেড়ে গেলেও পথে আটকে দেয় পরিবহন শ্রমিকরা। আরেকটি বাস ছাড়ার আগেই অর্ধশতাধিক পরিবহন শ্রমিকরা বিআরটিসির কাউন্টারে হামলা চালিয়ে ভাংচুর ও মারধর করে। তাদের তান্ডবে নির্ধারিত সময়ে বাসটি সিলেট ছেড়ে যেতে পারেনি।

    পরিবহন শ্রমিকদের দাবি, এই দুই রুটেই পর্যাপ্ত বাস রয়েছে। বিআরটিসি ইচ্ছে করলেই যে কোনো সড়কে বাস সার্ভিস শুরু করতে পারে না। এটা তাদের আইনের পরিপন্থী। এছাড়া বাস চালুর ব্যাপারে এই দুই রুটের মালিক-শ্রমিকদের সাথে কোনো আলোচনাও করেনি বিআরটিসি কর্তৃপক্ষ। তাই এসব রুটে বিআরটিসির বাস চলতে দেবেন না তারা।

    তবে বিআরটিসির কর্মকর্তারা বলছেন, এই দুই রুটে এতোদিন যাত্রীদের জিম্মি ব্যবসা করে আসছিলো পরিবহন মালিকরা। বিআরটিসি বাস চালু হওয়ায় তাদের ব্যবসা কমে যেতে পারে এই ভয়ে বাস চালুতে বাধা দিচ্ছে।

    বিআরটিসি’র সিলেট কাউন্টার সূত্রে জানা যায়, সাড়ে ৯টার দিকে অর্ধশতাধিক পরিবহন শ্রমিক এসে কাউন্টারে হামলা চালায়। এসময় তারা কাউন্টারে তালা ঝুলিয়ে দেয় এবং বিআরটিসির ডিপো ম্যানেজারের সরকারি গাড়ি ভাংচুর করে।

    বিআরটিসি কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, তাদের কাউন্টার থেকে নগদ প্রায় সাড়ে ১২ হাজার টাকা এবং একটি ল্যাপটপ ছিনিয়ে নেয় পরিবহন শ্রমিকরা।

    এ ব্যপারে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে আইনি পদক্ষেপ নেবেন বলে জানিয়েছেন বিআরটিসি সিলেট ডিপোর ম্যানেজার জুলফিকার আলী।

    বিআরটিসি কাউন্টারের ম্যানেজার অভিযোগ করেন, সকালে ৯ টায় শেরপুর মৌলভীবাজারগামী একটি বাস শেরপুরে অবরোধ করে পরিবহন শ্রমিকরা। এরপর সকাল সাড়ে নয়টায় হুমায়ুন রশীদ চত্বরে বিআরটিসি কাউন্টারে পরিবহন শ্রমিকরা এসে অতর্কিতে হামলা চালায়।

    এসময় তারা কাউন্টারে লুটপাট ও ডিপো ইনচার্জ জুলফিকার আলীকে লাঞ্ছিত করে। ভেঙে ফেলে তার সরকারি গাড়ির কাচ। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

    তবে হামলা ও ভাংচুরের অভিযোগ অস্বীকার করে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন, সিলেটের কোষাধ্যক্ষ শামসুল হক মানিক বলেন, কয়েকজন শ্রমিক বিআরটিসির কাউন্টারে গিয়ে বাস চলাচলে আপত্তি জানিয়েছে। কিন্তু কোনো উশৃঙ্খল আচরণ করেনি।

    দক্ষিণ সুরমা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আখতার হোসেন বলেন, হামলার খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়েছে। বিআরটিসি কর্তৃপক্ষ বাস চালাতে চাইলে পুলিশ তাদের সহায়তা করবে।

    বিআরটিসি’র সিলেট ডিপোর ব্যবস্থাপক জুলফিকার আলী বলেন, আমরা পুলিশী প্রহরায় বাস ছড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি।

    তিনি বলেন, আমাদের প্রতি সরকারের নির্দেশনা রয়েছে সব জেলায় এমনকি উপজেলা পর্যায়েও বিআরটিসির বাস সার্ভিস চালু করার। ফলে কোনো আপত্তিই গ্রহণযোগ্য হবে না। বাস চলবেই।

    তিনি জানান, সিলেট-মৌলভীবাজার-শ্রীমঙ্গল ও সিলেট-হবিগঞ্জ রুটে প্রতিদিন ৬টি করে মোট ১২টি গাড়ি চলবে। বাসগুলো ছাড়বে সিলেটের কদমতলী কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল থেকে। তবে প্রথম পর্যায়ে এই দুইরুটে দুইটি করে মোট চারটি গাড়ি চলাচল করবে। সবগুলো বাসেই শীততাপ নিয়ন্ত্রণ (এসি) ব্যবস্থা রয়েছে।

    উদ্বোধনের দিন থেকেই এই দুই রুটে বিআরটিসির বাস চলাচলে আপত্তি জানিয়ে আসছেন পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা। যদিও যাত্রীরা বিআরটিসির বাসকে স্বাগত জানিয়েছেন।