সীমান্তে বীরবিক্রম শহীদ সিরাজের স্মৃতি চিহ্ন বিলুপ্তির পথে

    0
    228

    সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি: স্বাধীনতার ৪৮বছর পার হলেও সুনামগঞ্জে তাহিরপুর সীমান্তে ট্যাকেরঘাটে মুক্তিযুদ্ধকালীন সাব-সেক্টরে সমাহিত বীর বিক্রম শহীদ সিরাজুল ইসলামের সমাধি এখন বিলুপ্তির পথে। অযন্ত আর অবহেলায় ঝোপঝাড়ের আড়ালে মুছে যেতে বসেছে উপজেলায় উত্তর শ্রীপুর ইউনিয়নের টেকেরঘাট সীমান্তে যুদ্ধ-কালীন সাবসেক্টর টেকেরঘাটের চুনাপাথর খনিজ প্রকল্প পরিতাক্ত কোয়ারি সংলগ্ন তার সমাধীস্থলটি। ১৯৭১সালের এজেলায় স্বাধীনতা যুদ্ধে যে সকল বীর সৈনিক মাতৃভূমি রক্ষায় বুকের তাজা রক্ত দিয়ে সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করেছেন তাদের মধ্যে তিনি একজন। যুদ্ধে তার অসমান্য অবদানের জন্য তৎকালীন বঙ্গবন্ধু সরকার থাকে বীর বিক্রম উপাধীতে ভূষিত করেন। শহীদ সিরাজুল ইসলামের নামে কবরের পাশে লেকের নামকরণ করা হলেও সমাধিস্থলের খোঁজ রাখছে না কেউ যেন দেখার কেউ নেই।
    টেকেঘাট সাব সেক্টর কোম্পানী কমান্ডার মোজাহিদ উদ্দিন আহমদ ও স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা জানান,১৯৭১সালের তুখর ছাত্রনেতা সিরাজুল ইসলাম ৭ই মার্চে বঙ্গবন্ধুর ভাষন শুনার পর দেশ মাতৃকার টানে কিশোরগঞ্জ গুরুদয়াল কলেজের ছাত্র,কিশোরগঞ্জ জেলার ইটনা থানার ছিলানী গ্রাম হতে কয়েকজন যুবককে সাথে নিয়ে ভারত মেঘালয় রাজ্যের বালাট কেম্পে মুক্তিযোদ্ধে যোগদেন। সেখানে পৌছলে সিরাজুল ইসলাম কে আসাম রাজ্যের ইকুয়ানে পাঠানো হয় এবং সেখানে তিনি গ্যারিলা প্রশিক্ষন শেষে মেজর মীর শওকত আলীর অধিনে যোগ দেন যুদ্ধ কালীন ৫নং সাবসেক্টর টেকেরঘাটে। তার দক্ষতার কারনে তিনি একটি কোম্পানীর সহকারী কমান্ডার হিসেবে নিযুক্ত হন। সে কোম্পানীর অন্যতম পৃষ্ট পোষক ছিলেন,প্রয়াত সাবেক এমপি সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত।

    ঐ সময় রেল যোগাযোগ ব্যহত হওয়ার পর হানাদার বাহিনীরা তৎকালীন সুনামগঞ্জ মহুকুমার গুরুত্ব পূর্ন নদী বন্দর সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ উপজেলার সাচনা বাজার দিয়েই পাক হানাদের রসদ সিলেট পৌছানো হত। তাই এই নদী বন্দরকে মুক্ত করার জন্য মিত্রবাহিনীর মেজর বাট ও জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরার প্রত্যক্ষ তত্বাবধানে ৩৬জন চৌকুস মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে গঠন করা হয় একটি এডভান্স পাটি। ১৯৭১সালের ৮ই আগষ্ট এডভান্স পার্টি সুর্যাস্তের পরপরই শুধু মাত্র ত্রি-নট থ্রি রাইফেল,টেকেঘাট সাব সেক্টর কোম্পানী কমান্ডার মোজাহিদ উদ্দিন আহমদ ও গ্রেনেড কমান্ডার সিরাজের নেতৃতে ২৫মাইল উত্তর থেকে এ অভিযান শুরু করে দুটি নৌকায় করে সাচনা পৌছে পাক হানাদার বাহিনীর সুরক্ষিত ব্যাংকারে গ্যারিলা আক্রমন করে।

    অতর্কতি এ হানায় ব্যাংকারে অবস্থানরত পাক বাহিনীদের মৃত্যু হয়। এক পর্যায়ে কমান্ডার সিরাজুল ইসলাম আনন্দে লাফিয়ে উঠে জয়বাংলা ম্লুগান দিতে থাকেন এমন সময় পাক বাহিনীর একটি বুলেট চোখে এসে বিদ্ধ হলে সাথে সাথে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন এবং কিছক্ষন পরই তার মৃতু হয়। মৃত্যুর পর শহীদ সিরাজুল ইসলামকে পূর্ন সামরিক মর্যাদায় টেকেরঘাট সাব সেক্টর টেকেরঘাট চুনাপাথর খনিজ প্রকল্প পরিতাক্ত কোয়ারি সংলগ্ন স্থানে সমাহিত করা হয়।

    তাহিরপুর উপজেলার মুুক্তযোদ্ধা সন্তান খেলু মিয়া বলেন,স্বীকৃতি দেওয়া একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার কবর এভাবে অযতœ আর অবহেলায় পড়ে আছে তা মানা যায় না। দুঃখ জনক হলেও সত্য যে মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতি ধরে রাখতে কোটি টাকা ব্যায়ে স্মৃতি সৌধ নির্মিত হয়েছে অথচ একজন দেশপ্রেমিকের কবর সংরক্ষনে এগিয়ে আসছে না কেউ। বর্তমানে শহীদ সিরাজের কবরটি ডেকে গেছে বন্জ গাছ,লতা-পাতায়,কবরের দেওয়াল হয়েছে রংছটা শুধু মাত্র বিজয় দিবস এলেই শহিদ সিরাজের কথা অনেকের মনে পড়ে। কিন্তু যুদ্ধকালীন সময়ে শহীদ হয়ে আশপাশে সমাহিত আছেন তাদের শেষ স্মৃতিচিহ্নটুকু কেউ সংরক্ষনে এগিয়ে আসে নি।

    মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল গণির বলেন,সিরাজ ভাই দেশের জন্য তার অসমান্য ত্যাগ জাতি ও বর্তমান তরুন প্রজন্ম জানুক তার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবার দাবী জানাই।