সুনামগঞ্জের নদীতে চলছে লুটতরাজ ও চাঁদাবাজি

    0
    387

    আমারসিলেট টুয়েন্টিফোর ডটকম,১৪জুলাই.মোজাম্মেল আলম ভূঁইয়া: সুনামগঞ্জে ঈদকে সামনে রেখে এলাকার প্রভাবশালীরা স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করে ধোপাজান ও যাদুকাটা নদীর বালি-পাথর মহালে শুরু করেছে লুটতরাজ ও বেপরোয়া চাঁদাবাজি। তাদের কাছ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য ওই দুই নদী তীরবর্তী অসহায় মানুষ ও বালি-পাথর ব্যবসায়ীরা মানববন্ধন করাসহ জেলা প্রশাসকের নিকট স্বারকলিপি দিয়েছে। চাঁদাবাজরা একদিকে তাদের চাহিদামতো বোমা মেশিন ও ড্রেজার দিয়ে অবৈধভাবে নদীর তীর কেটে বালি-পাথর উত্তোলন করছে। অন্যদিকে উত্তোলিত বালি-পাথর বোঝাই নৌকা থেকে পরিবহণের সময় নামে-বেনামে আদায় করছে মোটা অংকের চাঁদা।

    চাঁদাবাজদের কথা মতো চাঁদার টাকা না দিলে ব্যবসায়ীদের করা হচ্ছে লাি ত। অথচ জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে গত ১৩মে সুনামগঞ্জ ৮বিজিবি’র অধিনায়ক,পুলিশ সুপার,র‌্যাব-৯ এর সুনামগঞ্জ ক্যাম্প কমান্ডার,বিশ্বম্ভরপুর ও তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে পত্রের মাধ্যমে অবৈধভাবে বালি-পাথর উত্তোলন ও চাঁদাবাজি বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তারপরও থেমে নেই ধোপাজান ও যাদুকাটা নদীর লুটতরাজ ও চাঁদাবাজি।

    ধোপাজান ও যাদুকাটা নদীর বালি-পাথার ব্যবসায়ী জানান, ১৪২২ বাংলার ১লা বৈশাখ হতে ধোপাজান ও যাদুকাটার নদীর বালি-পাথর মহাল দুইটি ইজারা দেওয়া হয়নি। কিন্তু সিন্ডিকেডের মাধ্যমে এলাকার জনপ্রতিনিধি ও চাঁদাবাজরা স্থানীয় প্রশাসনের দূর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের সহযোগীতায় ওপেন চাঁদাবাজি করছে। বালি ও পাথর মহালের সাবেক ইজারাদার তোফাজ্জল হোসেন নিজেকে বৈধ ইজারাদার দাবী করে রশিদ ছাপিয়ে ধোপাজান ও ফাজিলপুর বালি-পাথর মহাল থেকে নৌকা প্রতি ১ থেকে ১০হাজার টাকা পর্যন্ত চাঁদা আদায় করছেন।

    গত ৯ জুলাই বৃহস্পতিবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ধোপাজান ও সুরমা নদী দিয়ে বালি,পাথর পরিবহণকারী ৬২টি কার্গো ও বলগেট ইঞ্জিনের নৌকা থেকে ৮হাজার টাকা করে মোট ৪লাখ ৯৬ হাজার টাকা চাঁদা উত্তোলন করছে তোফাজ্জল হোসেন ও তার সহযোগিরা। আর ধোপাজান থেকে দুর্ভলবপুরগামী ১৫০টি স্টিলবডি ইঞ্জিনের হতে ১হাজার টাকা করে ১লাখ ৫০হাজার টাকা আদায় করছে।

    অন্যদিকে যাদুকাটা নদীর তীর কেটে প্রতিফুট বালির জন্য ১০টাকা চাঁদা নিচ্ছেন বাদাঘাট ইউনিয়ন চেয়ারম্যান নিজাম উদ্দিনের ভাই বোরহান উদ্দিন। আর বাদাঘাট পুলিশ ক্যাম্পের নামে এএসআই ফারহাদ নিচ্ছে প্রতি নৌকা থেকে ৩ হাজার টাকা। এরআগে চেয়ারম্যানের আরেক ভাই রিপন মিয়া চাঁদা উত্তোলন করত। সামনে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন আসছে তাই ওই চেয়ারম্যান,রিপন মিয়াকে চাঁদাবাজি থেকে সড়িয়ে নিয়েছেন। এবং প্রতিদিন ভোর থেকে সকাল ৯টা পর্যন্ত চলে যাদুকাটা নদীর তীর কেটে বালি ও পাথর উত্তোলন। আর অবৈধভাবে নদীর তীর দখল নিয়ে ইতিমধ্যে চেয়ারম্যানের ভাই সোহাগ মিয়া,তালই জামাল মিয়ার সাথে মুক্তিযোদ্ধা ও শ্রমিকদের একাধিকবার সংঘর্ষ হয়েছে।

    ধোপাজান ও যাদুকাটা নদী থেকে প্রতিদিন অবৈধভাবে বালি ও পাথর উত্তোলন করাসহ চাঁদাবাজি করে প্রায় ১০লাখ টাকা হিসেবে মাসে সরকারের আড়াই ২কোটি টাকা লুটপাট করছে সংঘবদ্ধ চাঁদাবাজরা।

    সরকারের কোটিকোটি টাকার সম্পর্দ রক্ষার্থে ধোপাজান ও যাদুকাটা নদীর চাঁদাবাজি ও বোমা মেশিন,ড্রেজার বন্ধের দাবী জানিয়ে সুনামগঞ্জ-৪ আসনের এমপি,জাতীয় পার্টির সুনামগঞ্জ জেলা আহবায়ক পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ সংসদে বক্তব্য রেখেছেন।

    গত ৫ই জুলাই সুনামগঞ্জ জেলা যুবলীগের আহবায়ক ও জেলা পরিষদ প্রশাসক ব্যারিষ্টার এনামুল কবির ইমন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর বরাবরে একটি ডিও লেটার ইস্যূ করেন এবং চিহ্নিত চাঁদাবাজদের গ্রেফতার করাসহ অবৈধ বোমা মেশিন ও ড্রেজার বন্ধের দাবী জানান।

    এছাড়াও অবৈধ বোমা মেশিন ও ড্রেজার দিয়ে নদীর তীর কেটে বালি,পাথর উত্তোলনকারী ও চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য পহেলা জুলাই সুনামগঞ্জ সদরে বালি-পাথর ব্যবসায়ী ও শ্রমিকরা মানববন্ধন করে জেলা প্রশাসক বরাবরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। অপরদিকে ইব্রাহিমপুর নিবাসী আপ্তাব উদ্দিন হাইকোর্টে রীট পিটিশন নং ৯৭৫ দায়ের করেন। ১০ই জুলাই যাদুকাটা নদীর তীরে মানববাধিকার কমিশন ও ১০গ্রামবাসী মানববন্ধন করে বালি ও পাথর খেকোদের গ্রেফতারের দাবীতে। তারপরও আইনশৃংখলা বাহিনীর উদাসীনতা দেখে তাদের প্রতি সাধারন মানুষ ও ব্যবসায়ীরা আস্থা হারিয়ে ফেলেছেন।

    এব্যাপারে সুনামগঞ্জ ৮ব্যাটালিয়নের বিজিবি অধিনায়ক গোলাম মহিউদ্দিন বলেন, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে চিঠি পাওয়ার পর সিভিল প্রশাসনের সাথে সমন্বয় করে অভিযান পরিচালনা করছি এবং আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে।

    র‌্যাব-৯ এর সুনামগঞ্জ ক্যাম্প কমান্ডার মেজর আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, জেলা প্রশাসন থেকে চিটি দেওয়ার পর র‌্যাবের গোয়েন্দারা তথ্য সংগ্রহ করছে। উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি সাপেক্ষে ধোপাজান ও যাদুকাটা নদীর বালি ও পাথর খেকো চিহ্নিত চাঁদাবাজদের গ্রেফতারের জন্য অভিযান পরিচালনা করা হবে।

    অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) দেবজিৎ সিংহ বলেন, ধোপাজান ও যাদুকাটা নদীর তীরকাটা বন্ধ করাসহ চাঁদাবাজদের গ্রেফতারের জন্য র‌্যাব,বিজিবিকে নিয়ে পর্যায়ক্রমে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। এব্যাপারে কাউকে ছাড় দেওয়া হবেনা।

    ধোপাজান ও যাদুকাটা নদীর বালি ও পাথর খেকো চাঁদাবাজদের জরুরী ভিত্তিতে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি দেওয়ার জন্য বর্তমান সরকারের সহযোগীতা কামনা করেছেন জেলার ভূক্তভোগী অসহায় শ্রমিক,বালি-পাথর ব্যবসায়ীসহ সর্বস্থরের জনসাধারণ।