সুনামগঞ্জে একদিকে কয়লা পাচাঁরঅন্যদিকে চিনিসহ ৪জন গ্রেফতার

0
117
সুনামগঞ্জে একদিকে কয়লা পাচাঁরঅন্যদিকে চিনিসহ ৪জন গ্রেফতার

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি: সুনামগঞ্জের বিভিন্ন সীমান্তে জমজমাট হয়ে উঠেছে চোরাচালান বাণিজ্য। সরকারের লাখলাখ টাকা রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে প্রতিদিন ভারত থেকে অবাধে মদ, গাঁজা, ইয়াবা, কয়লা, পাথর, চিনি, সুপারী, গরু, মহিষ, ছাগল, পেয়াজ, ফুছকা, কসমেটিকস, নাসিরউদ্দিন বিড়ি, মোটর সাইকেল, অস্ত্র ও কাপড়সহ বিভিন্ন মালামাল অবৈধ ভাবে পাচাঁর শুরু করা হচ্ছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে- জেলার দোয়ারাবাজার উপজেলার বাংলাবাজার ইউনিয়নের মৌলারপাড় এলাকার সড়কে অভিযান চালিয়ে শুল্ক ফাঁকি দিয়ে ভারত থেকে চোরাই পথে আসা ২লাখ ১০হাজার টাকা মূল্যের ৪২বস্তা ভারতীয় চিনির চালানসহ সীমান্ত চোরাকারবারী হারুন অর রশিদ (৩২), আশ্রব আলী (২২), আব্দুন নূর (২৩) ও হ্নদয় মিয়া (২০)কে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
আজ সোমবার (৪ মার্চ) সকালে তাদেরকে কারাঘারে পাঠানো হয়েছে। অন্যদিকে গত রবিবার (৩রা মার্চ) ভোর থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত জেলার তাহিরপুর উপজেলার চারাগাঁও সীমান্তের বিজিবি ক্যাম্প সংলগ্ন বজলু মুন্সির ডিপুতে মজুত রাখা ৬০মেঃ টন চোরাই কয়লা, সোর্স পরিচয়ধারী চোরাকারবারী বাবুল মিয়া বাড়ি থেকে ৪০টন, সাদ্দাম মিয়ার বাড়ি থেকে ২০টন, মঙ্গল মিয়ার বাড়ি থেকে ৩৫টন, ডালিম মিয়া বাড়ি থেকে ১৫টন, নিজাম মিয়ার বাড়ি থেকে ১৮টন, লালচাঁন মিয়া বাড়ি থেকে ১২টন, আশরাফুলের বাড়ি থেকে ১০টনসহ আরো একাধিক বসতবাড়িতে মজুত করে রাখা প্রায় ৩শ মেঃটন চোরাই কয়লা ১০াট ইঞ্জিনের নৌকা বোঝাই করে পাটলাই নদীপথে ওপেন নেত্রকোনা জেলার কলমাকান্দা নিয়ে যায় গডফাদার তোতলা আজাদ ও তার সোর্স রফ মিয়া। পরে পাচাঁরকৃত প্রতিটন অবৈধ চোরাই কয়লা থেকে চারাগাঁও বিজিবি ক্যাম্পের নামে ৮শত টাকা চাঁদা উত্তোলন করে সোর্স পরিচয়ধারী একাধিক মামলার আসামী চোরাকারবারী বাবুল মিয়া, আইনাল মিয়া, সাইফুল মিয়া, রিপন মিয়া ও লেংড়া জামাল। আর থানা-পুলিশ ও সাংবাদিকদের নাম ভাংগিয়ে প্রতিটন ১২শত টাকা চাঁদা উত্তোলন করে থানার সোর্স পরিচয়ধারী একাধিক মামলার আসামী রফ মিয়া। কিন্তু এব্যাপারে কেউ কোন পদক্ষেপ নেয়নি। অথচ এক সপ্তাহ আগে নায়েক সুবেদার বিল্লাল চারাগাঁও বিজিবি ক্যাম্পের দায়িত্বে থাকাকালীন সময় পৃথক অভিযান চালিয়ে সোর্স বাবুলের বাড়িসহ একাধিক বাড়ি থেকে চোরাই কয়লা বোঝাই ৫টি ট্রলি জব্দ করেছেন। কিন্তু এই ক্যাম্পে নায়েক সুবেদার আবু রায়হান ও ভিআইপি যোগদান করার পর থেকেই চোরাকারবারী, সোর্স ও তাদের গডফাদারের তৎপরতা বেড়ে যায়। প্রতিদিন ভারত থেকে কয়লা ও মাদক পাচাঁর করে বিজিবি ক্যাম্পের সামনে দিয়ে সোর্স বাবুল মিয়ার বাড়িসহ একাধিক ডিপুতে নিয়ে ওপেন মজুত করা হচ্ছে। একই ভাবে পাশের বালিয়াঘাট সীমান্তের লালঘাট ও লাকমা এলাকা দিয়ে ভারত থেকে অবাধে কয়লা ও মদ, গাঁজা ও ইয়াবা পাচাঁর করে বিজিবি ক্যাম্পের সামনে অবস্থিত দুধেরআউটা, বানিয়াগাঁও, তেলিগাঁও, জামালপুর গ্রামের নিয়ে মজুত করে সোর্স পরিচয়ধারী চোরাকারবারী জিয়াউর রহমান জিয়া, মনির মিয়া, সাবজল মিয়া, ইয়াবা কালাম, রতন মহলদার ও কামরুল মিয়া। পরে তারা বালিয়াঘাট বিজিবি ক্যাম্পের সামনে অবস্থিত পাটলাই নদীতে চোরাই কয়লা ও মাদকদ্রব্য ইঞ্জিনের নৌকা বোঝাই করে নদী পথে নিয়ে যায়। আর এই চোরাচালান করতে গিয়ে চোরাই কয়লার গুহায় মাটি চাপা পড়ে বালিয়াঘাট সীমান্তে সম্প্রতি ৭জনের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। তারপরও চিহ্নিত চোরাকারবারী ও সোর্সদের গ্রেফতারের জন্য নেওয়া হয়নি কোন পদক্ষেপ। তাই এব্যাপারে সংশ্লিস্ট প্রশাসনের উপরস্থ কর্মকর্তাদের সহযোগীতা জরুরী প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন ৩ শুল্কস্টেশনের বৈধ ব্যবসায়ীরা।
এ ব্যাপারে দোয়ারাবাজার থানার ওসি বদরুল হাসান জানান-পাচাঁরকৃত অবৈধ চিনিসহ গ্রেফতারকৃত ৪জন চোরাকারবারীর বিরুদ্ধে পুলিশ বাদী হয়ে বিশেষ ক্ষমতা আইনে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। তাহিরপুর থানার ওসি নাজিম উদ্দিন বলেন- সীমান্ত এলাকায় থানা-পুলিশের কোন সোর্স নাই। সীমান্ত চোরাচালান ও চাঁদাবাজি বন্ধ করার দায়িত্ব বিজিবির।
এবিষয়ে চারাগাঁও বিজিবি ক্যাম্পের কমান্ডার নায়েক সুবেদার আবু রায়হানের সরকারী মোবাইল নাম্বার ও সুনামগঞ্জ ২৮ব্যাটালিয়নের বিজিবি অধিনায়ক মাহবুবুর রহমানের সরকারী মোবাইল নাম্বারে বারবার কল করার পরও কেউ ফোন রিসিভ না করার কারণে কারো বক্তব্য জানা যায়নি।