সুরঞ্জিত সেনের মৃত্যুতে শোকে স্তব্ধ সুনামগঞ্জবাসী

    0
    254

    আমারসিলেট টুয়েন্টিফোর ডটকম,০৬ফেব্রুয়ারী,জাহাঙ্গীর আলম ভুঁইয়া,সুনামগঞ্জঃ সুনামগঞ্জে বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের অবসান ঘটিয়ে না ফেরার দেশে চলে গেলেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও সংসদ সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত। বর্ষীয়ান এই আওয়ামী লীগ নেতার মৃত্যুতে শোকে কাতর তাঁর নির্বাচনী এলাকা সুনামগঞ্জ-২ (দিরাই-শাল্লা) সহ পুরো সুনামগঞ্জবাসী। তার মৃত্যুতে দিরাই উপজেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে তিনদিনের শোক ঘোষণা করা হয়েছে।

    দলীয় সূত্রে জানা গেছে,সোমবার বেলা ১১টায় তার মরদেহ নিজ জেলা সুনামগঞ্জে নিয়ে যাওয়া হবে। এ দিন দুপুর ১টায় তার নির্বাচনী এলাকা শাল্লা এবং বিকাল ৩টায় দিরাই উপজেলায় তার মরদেহে সাধারণ মানুষের শেষ শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে।

    অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম.এ মান্নান,সুনামগঞ্জ ১ আসনের এমপি মোয়াজ্জেম হোসেন রতন,সুনামগঞ্জ ৪ আসনের এমপি এডভোকেট পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ্,সুনামগঞ্জ ৫ আসনের এমপি মুহিবুর রহমান মানিক ও সুনামগঞ্জ-মৌলভীবাজার সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট শামছুন নাহার বেগম শাহানা রব্বানী বলেন, আমরা শুধু বাংলাদেশের নয় উপমহাদেশের একজন বিখ্যাত পালামেন্টারীয়ান ও রাজনৈতিক অভিভাবক হারিয়েছি। আমরা গভীরভাবে শোকাহত।

    সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবেক সাংসদ আলহাজ মতিউর রহমান বলেন, সুরঞ্জিত সেন সুনামগঞ্জের এক অবিসংবাদিত নেতা ছিলেন। সংবিধানে তার একটা অবদান ছিল। দেশের স্বার্থে অনেক অবদান রেখে গেছেন তিনি। তার মৃত্যুতে জেলা আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা গভীরভাবে শোকাহত। তিনি কেবল জাতীয় নেতাই ছিলেন না, ব্যক্তিগতভাবে আমার বন্ধুও ছিলেন। আমি একজন বন্ধুকে হারিয়েছি। আমি শোকাহত।

    জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নুরুল হুদা মুকুট ও সুনামগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আয়্যুব বখত জগলুল বলেন, রাজনৈতিকভাবে সেনবাবু ছিলেন আমাদের অভিভাবক, সুনামগঞ্জের আওয়ামী লীগের অভিভাবক হিসেবে তিনি আমাদেরকে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন কর্মকান্ডে উপদেশ দিয়ে পরিচালনা করেছেন। রাজনৈতিক ইতিহাসের এক উজ্জ্বল নক্ষত্রের বিদায় হয়েছে, আমরা গভীরভাবে শোকাহত। তার অভাব পূরণ করতে আমরা আরেকজন সেনবাবু পাব কি না সে ব্যাপারে আমরা খুব চিন্তিত। কারণ তার অভাব পূরণ করার মতো সিলেট বিভাগে এখনো কেউ জন্মগ্রহণ করেননি। তার মৃত্যুতে সুনামগঞ্জ জেলা রাজনৈতিকভাবে অনেক ক্ষতির সম্মুখীন হবে।

    সুরঞ্জিত বিবৃতি দিয়েছেন,সুনামগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি এডভোকেট সৈয়দ শায়েখ আহমদ,সাধারন সম্পাদক এডভোকেট আব্দুল হক, সিনিয়র আইনজীবী এডভোকেট হুমায়ূন মঞ্জুর চৌধুরী,এডভোকেট আবু আলী সাজ্জাদ হোসাইন,এডভোকেট হোসেন তওফিক চৌধুরী, এডভোকেট বজলুল মজিদ চৌধুরী খসরু,এডভোকেট দিলীপ রায়,এডভোকেট চান মিয়া,এডভোকেট নজরুল ইসলাম শেফু, আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী জালাল উদ্দিন জাহান,সুনামগঞ্জ জেলা সভাপতি সাংবাদিক আল-হেলাল,সাধারন সম্পাদক ছাদিয়া বখত সুরভী,বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের উপদেষ্টা ড.মফচ্ছির মিয়া এডভোকেট,জেলা সভাপতি ফৌজিআরা বেগম শাম্মী,সাধারন সম্পাদক সাংবাদিক আল-হেলাল, জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি এডভোকেট আলী আমজাদ,সাবেক সেক্রেটারী এডভোকেট শেরেনুর আলী,অর্থ সম্পাদক এডভোকেট মোহাম্মদ আবুল আশরাফ,সুনামগঞ্জ জেলা আইনজীবী সহকারী সমিতির সভাপতি মোঃ আইয়ূব আলী, সাধারন সম্পাদক কাজল রঞ্জন দে, সাংগঠনিক সম্পাদক শশাংক পাল, সহ সভাপতি সৌমেন্দু শেখড় বড়াল ও মোঃ আবু মুছা, সহ সাধারন সম্পাদক গৌরাংগ চন্দ্র পাল , অর্থ সম্পাদক বিকাশ গোপ, প্রচার সম্পাদক মহিবুর রহমান, কার্যকরী সদস্য শফিকুল ইসলাম শফি,আব্দুল মতিন,আঃ জলিল,মোঃ আনোয়ার,আহমেদ কবির সোহেল,মাহফুজুর রহমান কবির ও কামরুল হাসান বকুলসহ বিভিন্ন সামাজিক ও পেশাজীবী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। সেনগুপ্তের মৃত্যুতে তাঁর বিদেহী আত্মার শান্তি ও শোকাহত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়ে সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক অ্যাডভোকেট রঞ্জিত সরকার বলেন, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত ছিলেন গোটা বাংলাদেশের অহংকার। আমরা একজন বর্ষীয়ান নেতাকে চিরতরে হারিয়েছি।

    প্রসঙ্গত,রোববার ভোররাত সোয়া ৪টার দিকে রাজধানীর ল্যাবএইড হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে থাকাবস্থায় শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেন প্রবীণ পার্লামেন্টারিয়ান সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত।

    ১৯৪৫ সালে সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার আনোয়ারপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত। ছাত্রজীবনেই তিনি বামপন্থী আন্দোলনের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। হাওরা লের “জল যার জলা তার” আন্দোলনে দীর্ঘদিন তিনি নেতৃত্ব দিয়েছেন। দ্বিতীয়, তৃতীয়, প ম, সপ্তম, অষ্টম, নবম এবং দশম জাতীয় সংসদসহ মোট ৮ বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। ১৯৯৬ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টার দায়িত্বে ছিলেন সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ দ্বিতীয়বারের মতো ক্ষমতায় আসার পর তিনি রেলমন্ত্রী হন। তবে তার সহকারীর অর্থ কেলেঙ্কারির অভিযোগে তিনি পদত্যাগ করলেও তা গ্রহণ না করে সেই সময়ে তাকে মন্ত্রী হিসাবে রাখেন শেখ হাসিনা। এর আগে সত্তরের নির্বাচনেও তিনি প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন।