সোনালু ফুলের মনমাতানো অপরূপ শোভা আর চোখে পড়েনা

    0
    688

    আমার সিলেট টুয়েন্টি ফোর ডটকম,১১জুন,নাজমুল হক নাহিদঃ  ঋতু চক্রের আবর্তে প্রকৃতি তার নিজের নিয়মে আবারো আমাদের ফিরিয়ে দিয়েছে বর্ষাকাল। গ্রীষ্মকাল মানে শুধু প্রচন্ড তাপদাহে পোড়ানো নয় অবশেষে প্রশান্তির পরশও বুলিয়ে দিতে এসেছে বর্ষণমূখর দিন। ফুল মানে বাঙালীর জীবনে চলে আসে ঋতুরাজ বসন্তের কথা।
    শহর বা গ্রামবাংলার প্রকৃতিতে এখন কোথাও কৃষ্ণচুড়া, কোথাও সোনালু, আবার কোথাও কদম ফুলের মেলা। কদম ফুল তেমন একটা চোখে কম পড়লেও নওগাঁ জেলার আত্রাই উপজেলাতে এখন আর শোভা পাচ্ছে না কৃষ্ণচূড়া আর সোনালুর মেলা। এসব গাছ শুধু সৌন্দর্য্য নয় অনেক ঔষধী গুণেও সমৃদ্ধ। হলুদে ছাওয়া ঝুমকার মতো ঝুলে থাকা এমন একটি ফুল সোনালু। যা যে কারো মন ছুঁয়ে দেয়। সোনালু গাছ আমাদের দেশে ঔষধি গাছ হিসেবেই বেশি পরিচিত। গ্রামা লে এ গাছকে অনেকে বানর লাঠি গাছও বলে থাকে। আত্রাই উপজেলার মানুষের কাছে এটি হনালু নামেই পরিচিত।
    উপজেলার কিছু কিছু এলাকায় বেশ কয়েকটি সোনালু গাছের দেখা মেলেছে। হলুদ রঙের বাহার নিয়ে ঝুলে থাকা ফুলের সৌন্দর্য্যে মোহিত করে যে কোন মানুষকে। এসব গ্রামের ফুটন্ত সোনালুর দোল দেখে মনে হয়েছে এটি যেন প্রকৃতির উষ্ণ অভ্যর্থনা।

    আত্রাই উপজেলার ফুলবাড়ি এলাকায় একটি সোনালু গাছে সরেজমিনে গিয়ে লক্ষ করা যায় সোনালু ফুলের মনমাতানো সৌরভ আর বাহারি অভ্যর্থনা এখন পথচারিদের দৃষ্টি কাড়ছে। প্রকৃতির সাজকে যেন অনন্য বৈশিষ্ট্যমন্ডিত করে তোলে সোনালু। ফুলবাড়ি গ্রামের মো: আব্দুল মুহিত জানান গাছটির বয়স অনেক বেশি হয়েছে। প্রতিদিন এ রাস্তা দিয়ে হাজারও পথচারীরা যাতায়াত করে প্রত্যেকেরই দৃষ্টি চলে যায় এই সোনালু গাছের হলুদ ফুলের দিকে। সংবাদ সংগ্রহকালে হটাঁত চার শিক্ষিত যুবকের দিকে দৃষ্টি গেলে লক্ষ করা যায় যে তারাও এই হলুদের দিকে অবাক তাকিয়ে রয়েছেন।

    জিজ্ঞেস করলে শহিদুল ইসলাম বলেন আত্রাইয়ে এরকম গাছ খুব কম আছে বলে মনে হয়। এত সুন্দর ফুল যে কেউর মন মাতাতে পারে। আজিজুল, হৃদয়,শাকিল জানায় তাদের মনে হয় এই প্রথম এরকম অতি সুন্দর হলুদে সাজানু অপরুপ সৌন্দর্য ফুল দেখেছেন। স্থানীয় লোকেরা মনে করছেন এই সোনালু বা বানরলাঠি গাছটি এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে। তারা জানায় সোনালু গাছ অতীতে যেসব গাছ লাগানো হয়েছে তা এখন বড় হয়ে ফুল বা ফল ধরছে। বেশী করে সোনালু চারা রোপণ না করায় এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে।
    সোনালু গাছের শাখা ছাপিয়ে ঝুমকোর মতো ঝুলে আছে হলুদে ছাওয়া ফুলগুলো। দেখতে অনেকটা সোনার চেইনের মতো। এটির ফল গোলাকার লম্বাকৃতির। দেখতে একটি লাঠির মত। তাই এটিকে অনেকে লাঠি গাছ বলে চেনে। ফল কিছুটা মিষ্টি হওয়ায় বানরের বেশ প্রিয় খাওয়ার এটি। কেউ কেউ তাই এটিকে বানর লাঠি বলেও চেনে। এর অপরূপ শোভা যে কারো মনকে ছুঁয়ে যায় নিঃসন্দেহে।

    তথ্যমতে জানা যায় সোনালুর ফল পাকতে দীর্ঘ সময় নেয়। পেকে গেলে ফল মাটিতে পড়ে সেখান থেকে বীজ ছড়িয়ে বংশ বিস্তার ঘটায়। কলমের মাধ্যমে এর বংশ বিস্তার সম্ভব হয় না। তবে গাছের শেকড় থেকেও বংশ বিস্তার ঘটে থাকে। সোনালু ঔষুধি গাছের তালিকায় রয়েছে। বিশেষ করে সোনালুর ফল বাত, বমি প্রতিরোধে সাহায্য করে। এছাড়া গাছ ও জ্বালানি হিসেবে এটি ব্যবহৃত হয়।
    সোনালু এ দেশের স্থায়ী বৃক্ষ। এর আদি বাস পূর্ব এশিয়ায়। বৃক্ষটির ডালপালা ততটা ছড়ানো নয়। পাতার রং গাঢ় সবুজ, মসৃণ ডিম্বাকৃতির। সোনালুর বৈজ্ঞানিক ঈধংংরধ ভরংঃঁষধ এবং অষনরুরধ রহঁহফধঃ। সোনালী রঙের ফুলবিশিষ্ট বৃক্ষ। উদ্ভিদের শ্রেণীবিন্যাসে ঋধনধপবধব গোত্রের এ বৃক্ষের ফল লম্বাটে। সোনালী রঙের ফুলের বাহার থেকেই সোনালু নামে নামকরণ। ইংরেজি ভাষায়ও একে বলা হয় ‘মড়ষফবহ ংযড়বিৎ ঃৎবব’ বা স্বর্ণালী ঝর্ণার বৃক্ষ। সোনালি হলদে রঙের একেকটি ফুল চওড়ায় আড়াই থেকে তিন সেন্টিমিটার। পাপড়ির সংখ্যা পাঁচটি। ফুল ফোটার পর থেকে এটি সোনার চেইনের মতো শাখা ও কান্ডে ঝুলন্ত অবস্থায় থাকে। ফল গোলাকার লম্বাকৃতির।
    দেশের বিভিন্ন অ লে সোনালু গাছকে একাধিক নামে ডাকা হয়। নওগাঁ জেলার আশপাশের এলাকায় স্থানীয়দের কাছে এটি শনালু নামে পরিচিত। এর ফল দেখতে লাঠির মতো। তাই এটিকে অনেকে লাঠিগাছ বলেও চেনে। ফল কিছুটা মিষ্টি হওয়ায় বানরের বেশ প্রিয়। সে সুবাদে এটির বানর লাঠি হিসেবেও পরিচিতি রয়েছে।