স্মরণকালে এমন বাঁধভাঙা জন স্রোত কখনো দেখেনি রংপুরের মানুষ!

0
148

“প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রংপুর জিলা স্কুল মাঠে আওয়ামী লীগের মহাসমাবেশে আগতদের হাত নেড়ে শুভেচ্ছা জানান”

আমার সিলেট ডেস্ক নিউজ: যেদিকে চোখ যায় শুধু মানুষ আর মানুষ! স্মরণকালে এমন বাঁধভাঙা জন স্রোত কখনো দেখেনি রংপুরের মানুষ। কয়েক কিলোমিটার এলাকা যেন মানুষের মহাসমুদ্র! যে সমুদ্রের শুরু থাকলেও যেন শেষ ছিল না। লাখ লাখ মানুষের স্রোত পুরো রংপুর শহরই যেন পরিণত হয়েছিল বিশাল জনসমুদ্রে। স্মরণকালের বৃহৎ এই জনসমুদ্রের সামনে দাঁড়িয়ে দেশের উন্নয়ন-অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে আবারও নৌকায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে জনগণের সেবা করার সুযোগ দেওয়ার আহ্বান জানালেন টানা তিনবারের প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। উত্তরবঙ্গে নৌকার পক্ষে গণজোয়ার সৃষ্টি করে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের অনানুষ্ঠানিক নির্বাচনী প্রচারও শুরু করলেন তিনি।

বিগত বছরগুলোতে আওয়ামী লীগ সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নের কথা তুলে ধরে আবারও নৌকায় ভোট দিয়ে দেশ সেবার সুযোগ দেওয়ার জন্য দেশবাসীর প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নৌকা ক্ষমতায় আছে বলেই আজকে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে। কাজেই ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে আবারও আপনারা আপনাদের সেবা করার সুযোগ দেবেন, সেটাই আমি আপনাদের কাছে চাই। এ সময় প্রধানমন্ত্রী সবাইকে হাত উঁচিয়ে নৌকায় ভোট দেওয়ার প্রতিশ্রুতি চাইলে লাখ লাখ মানুষ দু’হাত তুলে এবং গগণবিদারী স্লোগানে পুরো রংপুরকে প্রকম্পিত করে নৌকার প্রতি তাদের অকুণ্ঠ সমর্থনের কথা জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, একমাত্র নৌকা ক্ষমতায় আসলেই দেশের উন্নতি হয়। নৌকা ক্ষমতায় থাকলে কৃষকের ভাগ্যে পরিবর্তন হয়। নৌকা ক্ষমতায় আছে বলেই ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ গেছে। অনেকেই তো ক্ষমতায় ছিল এই রংপুরের ভাগ্য পরিবর্তনে কেউ কাজ করেনি। ওই খালি নৌকা ক্ষমতায় এলে কাজ হয়। আওয়ামী লীগ সরকারে যখনই এসেছে এই রংপুরে কখনো মঙ্গা হয়নি। রংপুরে কখনো খাদ্যের অভাব দেখা দেয়নি, দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়নি। আওয়ামী লীগ সরকারে এলে, নৌকায় ভোট দিলে দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন হয় সেটা আমরা প্রমাণ করেছি। উত্তরবঙ্গের মানুষের কষ্ট লাঘবে তিস্তা মহাপরিকল্পনাও বাস্তবায়ন করবে সরকার।
বুধবার বিকেলে রংপুর জেলা স্কুল মাঠে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ আয়োজিত বিভাগীয় এই বিশাল সমাবেশে গত সাড়ে ১৪ বছরে বাংলাদেশ বদলে গেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই বদলে যাওয়া বাংলাদেশ আরও উন্নত হবে। এখন উন্নয়নশীল দেশ, এর পরে উন্নত দেশ। ডেল্টা প্ল্যান করে দিয়েছি। সব ক্ষেত্রে দেশের অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকবে। নৌকা ক্ষমতায় আসলে মানুষের উন্নতি হয়। নৌকা ক্ষমতায় আছে বলেই আজকে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। এগিয়ে যাবে। কাজেই নৌকায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে আবারও আপনারা আপনাদের সেবা করার সুযোগ দেবেন। সেটাই আপনাদের কাছে চাই।
আবেগজড়িত কণ্ঠে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাবা-মা-ভাই সব হারিয়েছি। বাংলাদেশের মানুষ, বাংলাদেশের জনগণ- এটাই তো আমার সংসার। এটাই আমার আপনজন। আপনাদের মাঝে খুঁজে পাই বাবা মায়ের স্নেহ। কাজেই প্রয়োজন হলে এই বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য বাবার মতো জীবন দিতেও আমি প্রস্তুত। রিক্ত আমি, নিঃস্ব আমি, দেবার কিছু নেই, আছে শুধু ভালোবাসা দিয়ে গেলাম তাই। তিনি বলেন, যে বাংলাদেশকে একসময় মানুষ করুণা করত, এখন সেই বাংলাদেশকেই উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে চেনে। এই উন্নয়ন-অগ্রযাত্রাকে ধরে রাখতে হবে।
দেশের মানুষ এখন শান্তিতে ভোট দিতে পারে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা অনেক সংগ্রামের পথ বেয়ে, অনেক আন্দোলন করে গণতন্ত্র ফিরিয়ে এনেছি। মানুষ শান্তিমতো এখন ভোট দিতে পারে। এই ভোট দেওয়ার জন্য আমরা ছবিসহ ভোটার তালিকা করেছি, স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স করে দিয়েছি। শান্তিপূর্ণভাবে মানুষ যাতে ভোট দিতে পারে সেই ব্যবস্থা আমরা হাতে নিয়েছি। একটি গোষ্ঠী মানুষের ভাগ্য নিয়ে খেলছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা চাই আমাদের দেশ এগিয়ে যাক। কিন্তু এখানে একটি গোষ্ঠী আছে যারা সব সময় বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে খেলে। জাতির পিতাকে হত্যা করে সেই খেলা শুরু হয়েছিল। বারবার ক্ষমতা দখল, হত্যা-ক্যু-ষড়যন্ত্রের রাজনীতি।

মহানগর আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক ডা. দেলোয়ার হোসেনের সভাপতিত্বে এবং মহানগরের যুগ্ম আহ্বায়ক আবুর কাশেম ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মাজেদ আলী বাবুলের সঞ্চালনায় মহাসমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সভাপতিম-লীর সদস্য অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, সাংগঠনিক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, এসএম কামাল হোসেন, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, কোষাধ্যক্ষ এইচএন আশিকুর রহমান, সাবেক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, প্রচার সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, ত্রাণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন, নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, নৌ পরিবহন উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীম, হুইপ ইকবালুর রহীম, সাবেক মন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার, হুইপ মাহবুব আরা গিনি, কেন্দ্রীয় সদস্য হোসনে আরা লুৎফা ডালিয়া, রংপুর জেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক একেএম সাহাদাত হোসেন বকুলসহ কেন্দ্রীয় ও বিভিন্ন জেলার নেতৃবৃন্দ।
এ সময় মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য রমেশ চন্দ্র সেন, সভাপতিম-লীর সদস্য শাজাহান খান, ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, আবদুর রহমান, মেয়র খায়রুজ্জামান লিটন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আফম বাহাউদ্দিন নাছিম, সংসদ সদস্য শেখ হেলাল উদ্দিন, যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ, সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল, স্বেচ্ছাসেবক লীগের আফজালুর রহমান বাবু, কৃষক লীগের কৃষিবিদ সমীর চন্দ, ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেন প্রমুখ।

রেকর্ড ভেঙেছে জনতার উপস্থিতি ॥ রংপুর জিলা স্কুল মাঠে আওয়ামী লীগের বিভাগীয় মহাসমাবেশের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হয় বুধবার দুপুর ১২টায় জাতীয় সংগীত পরিবেশনার মধ্য দিয়ে। জাতীয় সংগীত শেষে পবিত্র কুরান থেকে তেলাওয়াত ও গীতাপাঠ করা হয়। এরপর রংপুর বিভাগের আট জেলা থেকে আগত নেতারা পর্যায়ক্রমে বক্তব্য দেন। তবে সকাল থেকে মানুষের ঢল নামে বিভাগীয় মহাসমাবেশে। প্রধানমন্ত্রীর মহাসমাবেশ পরিণত হয় জনসমুদ্রে।
এ মহাসমাবেশে দশ লক্ষাধিক মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত উপস্থিতি অতীতের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। মহাসমাবেশ স্থল রংপুর জিলা স্কুল থেকে চারপাশে পাঁচ কিলোমিটার পর্যন্ত লোকে লোকারণ্য। জায়গা না পেয়ে অনেকেই আশ্রয় নিয়েছে গাছের ডালে বা ভবনের ছাদে। নানা স্লোগানে, নাচে গানে খ- খ- বর্ণিল মিছিলে মুখরিত হয়ে উঠেছে পুরো নগরী।

স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত রংপুর নগরের অলিগলিতে গণমানুষের ঢল নেমেছে। কানায় কানায় পূর্ণ হয়েছে রংপুর মহানগর। মানুষের ভিড়ে কোথাও তিল ধারণের ঠাঁই নাই। ২০৪ বর্গকিলোমিটার ক্ষেত্রফলের রংপুর মহানগর পুরোটাই যেন মহাসমাবেশ স্থলে পরিণত হয়েছে। স্থানীয় নেতারা এই মহাসমাবেশকে রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধুর সাত মার্চ ভাষণের সেই ঐতিহাসিক গণসমাবেশের সঙ্গে তুলনা করেন।
বুধবার মধ্যরাত থেকেই রংপুর মহানগরীতে গণমানুষের ঢল থেকে ভাসতে থাকে ‘শেখ হাসিনার আগমন শুভেচ্ছা-স্বাগতম’ স্লোগান। সকাল আটটা থেকে সভাস্থল নগরীর ঐতিহাসিক রংপুর জিলা স্কুল মাঠে দূর-দূরান্ত থেকে রঙিন টিশার্ট ও ক্যাপ পরিহিত নেতাকর্মীরা ঢাকঢোল পিটিয়ে আসতে শুরু করে। রংপুর বিভাগের ৫৮ উপজেলা থেকে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের আগমনে নগরজুড়ে উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে। দুপুর ১২টার আগেই জনসভাস্থলসহ নগরীর গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে উঠে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সকাল থেকে মিছিল স্লোগানে মুখর হয়ে ওঠে জিলা স্কুলের আশপাশ। বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা থেকে দলে দলে আসা নেতাকর্মীদের ঢল নেমেছে জনসভাস্থলসহ জিলা স্কুল অভিমুখে। বাহারি সাজসজ্জা আর বাদ্যযন্ত্রের তালে তালে বিভিন্ন স্লোগানে নেচে গেয়ে উচ্ছ্বাস করেন তারা। রংপুরে জিলা স্কুল মাঠে মহাসমাবেশ শুরুর আগেই নেতাকর্মীদের উপস্থিতিতে মাঠ উপচে পড়ে। মাঠের ভেতরের পাশাপাশি হাজার হাজার নেতাকর্মী রংপুর নগরের বিভিন্ন সড়কে অবস্থান নেয়। মহাসমাবেশ ঘিরে তৈরি হওয়া জনস্রোত ছিল স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত। লালমনিরহাট, গাইবান্ধা, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, দিনাজপুর ও রংপুরের বিভিন্ন উপজেলা ও ইউনিয়ন থেকে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা দলবেঁধে একের পর এক আসতে শুরু করেন। বাস, ট্রাক, ট্রেন, মাইক্রো বাস, পিকআপ ভ্যান, অটোরিক্সা ও সিএনজি করে নেতাকর্মীরা আসেন। যানবাহন না পেয়ে অনেকে হেঁটেও জনসভাস্থলে এসেছিলেন দূর-দূরান্ত থেকে।
বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টায় রাজধানীর তেজগাঁও বিমানবন্দর থেকে হেলিকপ্টারে করে রংপুরে আসেন প্রধানমন্ত্রী। দুপুর ২টায় তাকে বহনকারী হেলিকপ্টারটি রংপুর ক্যান্টনমেন্টের হেলিপ্যাডে অবতরণ করে। দুপুর ২টা ৫ মিনিটে সেখান থেকে সড়কপথে রংপুর সার্কিট হাউসের উদ্দেশে রওনা দেন তিনি। সোয়া ২টার দিকে সার্কিট হাউসে পৌঁছে বিভাগীয় পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। এরপর বিকেল তিনটায় রংপুর জিলা স্কুল মাঠে মহাসমাবেশস্থলে পৌঁছেন। তার আগেই পুরো সমাবেশ পরিণত হয় মহাসমুদ্রে।
প্রধানমন্ত্রী আরও যা বলেন: গত ১৪ বছরে সারাদেশের ব্যাপক উন্নয়ন ও অগ্রগতির কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নৌকায় ভোট দিলে মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন হয় সেটা আমরা প্রমাণ করেছি। আওয়ামী লীগ আমলে কোনো মঙ্গা হয়নি। ২০০১ সালে যখন খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এসে দুই হাতে টাকা পয়সা লুট করে। সে ও তার ছেলেরা মিলে এদেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলে। ২০০৯ সালে আমরা ক্ষমতায় আসার পরে এই এলাকার মানুষের আর কোনো কষ্ট হয়নি।
রংপুর তথা উত্তরবঙ্গের উন্নয়নের খ- চিত্র তুলে ধরে রংপুরের পুত্রবধূ ও টানা তিনবারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রংপুরবাসীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আমি এখানে খালি হাতে অসিনি। আমি কতগুলি প্রকল্প উদ্বোধন করেছি। আপনাদের উন্নয়ন যাতে ত্বরান্বিত হয় তার জন্য এগুলো করেছি। বগুড়া রংপুর সৈয়দপুর গ্যাস লাইন করছি।
আপনাদের দীর্ঘদিনের গ্যাসের দাবি ছিল। আমরা প্রত্যেক এলাকার উন্নয়নের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের প্রতিটি কাজের লক্ষ্য হচ্ছে দেশের মানুষের উন্নতি ও ভাগ্যের পরিবর্তন। দৃঢ়তার সঙ্গে এ কথা বলতে পারি যে, এই অঞ্চলে আর কখনো দুর্ভিক্ষ দেখা দেবে না। মঙ্গা দেখা দেবে না। আমরা সেইভাবে উন্নয়ন করছি।
লালমনিরহাটে বঙ্গবন্ধু এভিয়েশন বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের প্রসঙ্গ টেনে সরকার প্রধান বলেন, একদিন আমাদের মানুষ চাঁদেও যাবে। প্লেন বানাতে পারবে। সেই শিক্ষা সেখানে হবে। ২৭টি প্রকল্প উদ্বোধনের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এগুলো আমি রংপুর বিভাগের জন্য আমার উপহার হিসেবে দিয়ে গেলাম। একসঙ্গে এত প্রকল্প ইতোপূর্বে কোনো সরকার দিতে পারেনি।
বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা দৃঢ়কণ্ঠে বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের বাংলায় কোনো মানুষ ঠিকানাবিহীন থাকবে নাÑ সেটাই আমাদের সিদ্ধান্ত। আমরা চাই আমাদের দেশ এগিয়ে যাক। এখানে একটা গোষ্ঠী আছে। যারা সব সময় বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে খেলে। জাতির পিতাকে হত্যার মধ্য দিয়ে সেই খেলা শুরু হয়েছিল। বার বার ক্ষমতা দখল। হত্যা ক্যু ষড়যন্ত্রের রাজনীতি। আমরা অনেক সংগ্রামের মধ্য দিয়ে আন্দোলন করে গণতন্ত্র ফিরিয়ে এনেছি। মানুষ শান্তিমতো এখন ভোট দিতে পারে। ভোট দেওয়ার জন্য আমরা ছবিসহ ভোটার তালিকা করেছি। স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স করেছি।

শান্তিপূর্ণভাবে যাতে ভোট দিতে পারে সেই ব্যবস্থা নিয়েছি। আমাদের দরকার দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করা।
রংপুরবাসীকে উদ্দেশ্য করে শেখ হাসিনা আরও বলেন, এখানকার জমি সোনার জমি। ভালো ফসল হয়। সবার কাছে আমার অনুরোধ, আমাদের মাটি আছে। উর্বর মাটি। সোনার ফসল ফলে। আমাদের এক ইঞ্চি জমিও যেন অনাবাদি না থাকে। যে যা পারেন চাষ করবেন। আপনারা গাছ লাগাবেন। অন্তত চারটি করে গাছ লাগাবেন। যার যতটুকু জমি আছে ফসল ফলাবেন। কোনো জমি যেন ফেলে রাখা না হয়।
প্রধানমন্ত্রী বেসরকারি খাতের মাধ্যমে রংপুর সুগার মিল চালু করার প্রতিশ্রুতি দেন। ভবিষ্যতে রংপুর বিভাগের জন্য একটি মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করারও প্রতিশ্রুতি দেন। রংপুর বিভাগসহ প্রত্যেক বিভাগের জন্য আধুনিক খাদ্য সংরক্ষণাগার নির্মাণের উদ্যোগের কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি চাই দেশের প্রতিটি অঞ্চলে সবকিছু সমানভাবে উন্নতি হয়। সেই লক্ষ্য নিয়ে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
করোনা পরবর্তী রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সারাবিশ্বে নিত্যপণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সারা বিশ্বে অর্থনৈতিক মন্দা চলছে। উন্নত বিশ্বও হিমশিম খাচ্ছে। সব কিছুর দাম বেড়েছে। এই অবস্থায়ও আমরা বাংলাদেশের অর্থনীতির চাকা সচল রেখেছি। আওয়ামী লীগ আসে মানুষের উন্নতি করতে। এই এলাকার আরও উন্নয়নের জন্য যেসব প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করলাম। তাছাড়া দেশের জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি। করে যাব।
বিএনপির কঠোর সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রাস্তায় চলন্ত বাসে আগুন দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে মেরেছে। এরা কী মানুষের জাত? এরা মানুষের জাত নয়। ক্ষমতায় থাকতে লুটপাট করেছে। আর ক্ষমতার বাইরে থেকে ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। রাস্তাঘাট কেটে দিয়েছে। মানুষ হত্যা করেছে। নতুন রেল কিনেছি পুড়িয়ে দিয়েছে। বাস কিনেছি পুড়িয়ে দিয়েছে। ওই খালেদা জিয়া ও তার কুপুত্র তারেক জিয়া জ্বালাও পোড়াও ধ্বংস করতে পারে। এরা মানুষের কল্যাণ করতে জানে না। দেশের টাকা পাচার করে বিদেশে নিয়ে এখন সেই টাকা ব্যবহার করে যাচ্ছে। কোত্থেকে আসে এত বিলাসিতা! সেটাই আমার প্রশ্ন। দেশের মানুষের টাকা আত্মসাৎ করেছে।
তারেক রহমান ও জোবায়দা রহমানের মামলায় শাস্তির প্রসঙ্গ টেনে শেখ হাসিনা বলেন, তাদের দুর্নীতির মামলা। এই মামলা তো আমরা করিনি। তাদের প্রিয় ইয়েস উদ্দিন (ইয়াজউদ্দিন)- ফখরুদ্দিনরা করেছে। সেই মামলায় তারা শাস্তি পেয়েছে। তারা দেশ ধ্বংস করে। আমরা সৃষ্টি করি। তিনি বলেন, খালেদা জিয়া নিজে ফেল করা বলে ভাবে কেউ পাস করবে না। এজন্য শিক্ষার হার তারা কমিয়ে ফেলেছে। আমরা আবার উদ্যোগ নিয়ে শিক্ষার হার বাড়িয়েছি। আমরা বিনামূল্যে বই দিচ্ছি। কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান করে দিচ্ছি।
আওয়ামী লীগের আগে অনেকেই ক্ষমতায় ছিল উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ ছাড়া বাকি কেউ এই রংপুরের উন্নয়নে কাজ করেনি। এই নৌকা ক্ষমতায় এলে কাজ হয়। নৌকা ছাড়া হয় না। নৌকায় ভোট দিয়ে স্বাধীনতা পেয়েছেন। নৌকায় ভোট দিয়ে আজকে দারিদ্র্য বিমোচন হয়েছে। হতদরিদ্র মাত্র পাঁচ শতাংশ। এটাও থাকবে না। যারা একবেলা খাবার পেত না এখন দুই বেলা তিন বেলা খাবার সুযোগ হয়েছে। এদেশের কৃষক-শ্রমিক-মেহনতি মানুষ প্রত্যেকের ভাগ্য পরিবর্তনে আওয়ামী লীগ কাজ করে যাচ্ছে। যার সুফল আপনারা পাচ্ছেন। দেশের মানুষ পাচ্ছে।

ফেলে রাখা না হয়।
প্রধানমন্ত্রী বেসরকারি খাতের মাধ্যমে রংপুর সুগার মিল চালু করার প্রতিশ্রুতি দেন। ভবিষ্যতে রংপুর বিভাগের জন্য একটি মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করারও প্রতিশ্রুতি দেন। রংপুর বিভাগসহ প্রত্যেক বিভাগের জন্য আধুনিক খাদ্য সংরক্ষণাগার নির্মাণের উদ্যোগের কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি চাই দেশের প্রতিটি অঞ্চলে সবকিছু সমানভাবে উন্নতি হয়। সেই লক্ষ্য নিয়ে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
করোনা পরবর্তী রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সারাবিশ্বে নিত্যপণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সারা বিশ্বে অর্থনৈতিক মন্দা চলছে। উন্নত বিশ্বও হিমশিম খাচ্ছে। সব কিছুর দাম বেড়েছে। এই অবস্থায়ও আমরা বাংলাদেশের অর্থনীতির চাকা সচল রেখেছি। আওয়ামী লীগ আসে মানুষের উন্নতি করতে। এই এলাকার আরও উন্নয়নের জন্য যেসব প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করলাম। তাছাড়া দেশের জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি। করে যাব।
বিএনপির কঠোর সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রাস্তায় চলন্ত বাসে আগুন দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে মেরেছে। এরা কী মানুষের জাত? এরা মানুষের জাত নয়। ক্ষমতায় থাকতে লুটপাট করেছে। আর ক্ষমতার বাইরে থেকে ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। রাস্তাঘাট কেটে দিয়েছে। মানুষ হত্যা করেছে। নতুন রেল কিনেছি পুড়িয়ে দিয়েছে। বাস কিনেছি পুড়িয়ে দিয়েছে। ওই খালেদা জিয়া ও তার কুপুত্র তারেক জিয়া জ্বালাও পোড়াও ধ্বংস করতে পারে। এরা মানুষের কল্যাণ করতে জানে না। দেশের টাকা পাচার করে বিদেশে নিয়ে এখন সেই টাকা ব্যবহার করে যাচ্ছে। কোত্থেকে আসে এত বিলাসিতা! সেটাই আমার প্রশ্ন। দেশের মানুষের টাকা আত্মসাৎ করেছে।
তারেক রহমান ও জোবায়দা রহমানের মামলায় শাস্তির প্রসঙ্গ টেনে শেখ হাসিনা বলেন, তাদের দুর্নীতির মামলা। এই মামলা তো আমরা করিনি। তাদের প্রিয় ইয়েস উদ্দিন (ইয়াজউদ্দিন)- ফখরুদ্দিনরা করেছে। সেই মামলায় তারা শাস্তি পেয়েছে। তারা দেশ ধ্বংস করে। আমরা সৃষ্টি করি। তিনি বলেন, খালেদা জিয়া নিজে ফেল করা বলে ভাবে কেউ পাস করবে না। এজন্য শিক্ষার হার তারা কমিয়ে ফেলেছে। আমরা আবার উদ্যোগ নিয়ে শিক্ষার হার বাড়িয়েছি। আমরা বিনামূল্যে বই দিচ্ছি। কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান করে দিচ্ছি।
আওয়ামী লীগের আগে অনেকেই ক্ষমতায় ছিল উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ ছাড়া বাকি কেউ এই রংপুরের উন্নয়নে কাজ করেনি। এই নৌকা ক্ষমতায় এলে কাজ হয়। নৌকা ছাড়া হয় না। নৌকায় ভোট দিয়ে স্বাধীনতা পেয়েছেন। নৌকায় ভোট দিয়ে আজকে দারিদ্র্য বিমোচন হয়েছে। হতদরিদ্র মাত্র পাঁচ শতাংশ। এটাও থাকবে না। যারা একবেলা খাবার পেত না এখন দুই বেলা তিন বেলা খাবার সুযোগ হয়েছে। এদেশের কৃষক-শ্রমিক-মেহনতি মানুষ প্রত্যেকের ভাগ্য পরিবর্তনে আওয়ামী লীগ কাজ করে যাচ্ছে। যার সুফল আপনারা পাচ্ছেন। দেশের মানুষ পাচ্ছে।

মাঠের বাইরে দাঁড়িয়ে থেকে তর বক্তব্য শুনতে থাকা লাখ লাখ মানুষের উদ্দেশ্যে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, এই মাঠ ছোট বলে অনেকে দূরে বসে আমার কথা শুনছেন। আপনাদের চোখের দেখা দেখতে পাচ্ছি না। তবে আপনারা আছেন আমার হৃদয়ে। হৃদয় দিয়ে আপনাদের ভালোবাসা উপলব্ধি করি। দোয়া করবেন, আমি যেন দেশের মানুষের কল্যাণ করতে পারি, তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন করতে পারি।
২৭টি প্রকল্পের উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী ॥ প্রায় এক যুগ পর রংপুরে এসে রংপুরবাসীকে উপহারস্বরূপ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২৭টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নভোথিয়েটারসহ আরও পাঁচটি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছেন। এতে ব্যয় হবে ২ হাজার কোটি টাকা। বুধবার বিকেলে রংপুর জিলা স্কুল মাঠে এক মহাসমাবেশ থেকে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন করেন। হাজার হাজার মানুষের অংশগ্রহণে এই সমাবেশ এক মানবসমুদ্রে পরিণত হয়।
এসব প্রকল্প বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ এবং রংপুর সিটি করপোরেশনের তত্ত্বাবধানে বাস্তবায়িত হবে। এ অঞ্চলের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন আরও গতি পাবে এবং জাতীয় অর্থনীতিতে অবদান রাখতে পারবে। যেসব প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়েছে সেগুলো হলো- বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নভোথিয়েটার, বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন সচিবালয়ের রংপুর আঞ্চলিক কার্যালয়, রংপুর জেলার বিট্যাক সেন্টার, রংপুর মেডিক্যাল কলেজের মহিলা হোস্টেল এবং বিএমডিএ’র আঞ্চলিক অফিস।
যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় যেসব প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে সেসব হলো- শেখ রাসেল মিডিয়া সেন্টার, শেখ রাসেল ইনডোর স্টেডিয়াম, শেখ রাসেল সুইমিং পুল, রংপুর পালিছড়া স্টেডিয়াম এবং বিভাগীয় মহিলা ক্রীড়া কমপ্লেক্স। রংপুর সিটি করপোরেশনের অধীনের প্রকল্পগুলো হলো- রংপুর সিটি সেন্ট্রাল বাস টার্মিনাল, রংপুর সিটি অ্যাসফল্ট প্ল্যান্ট এবং স্টোর ইয়ার্ড।
এদিকে কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীন প্রকল্পগুলো হলো- নলয়া নদী পুনঃখনন (১৯.১৪ কিলোমিটার), আলাইকুমারী নদী পুনঃখনন (১৯.২৪ কিলোমিটার), নইমুলা বিল পুনঃখনন (১৪.৫৭ একর), চিথলী ফিল পুনঃখনন (১৯.৬৩ একর), ভারারদহ এবং পটুয়াকামরি বিল পুনঃখনন(২৮. ৮৯ একর) ।
স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন প্রকল্পগুলো হলো- পীরগাছা উপজেলা চৌধুরানী জিসি থেকে শঠিবাড়ী আরঅ্যান্ডএইচ পর্যন্ত রাস্তার উন্নয়ন কাজ, পীরগাছা উপজেলা ভেন্ডাবাড়ী থেকে খালাশপীর জিসি পর্যন্ত রাস্তার সংস্কার কাজ, কাউনিয়া উপজেলার টেপামধুপুর জিসি থেকে পাওতানা জিসি পর্যন্ত সড়কের সংস্কার কাজ, মিঠাপুকুর উপজেলার গোপালগঞ্জ ঘাটে ঘাঘট নদীর ওপর ৯৬ মিটার সেতু নির্মাণ, গঙ্গাচড়া উপজেলার বুড়িরহাট জিসি-কাকিনা আরএ্যান্ডএইচ সড়কের ৪০ মিটার সেতু নির্মাণ এবং পল্লীমারি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় বনাম কাউনিয়া উপজেলার আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণ কাজ।
স্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের আওতাধীন প্রকল্পগুলো হলো- রংপুর মেডিক্যাল কলেজ বহুমুখী ভবন, রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলায় হেলেঞ্চা ১০ শয্যা বিশিষ্ট মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র, রংপুর বিভাগের বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের কার্যালয়, রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলায় মাথারগঞ্জ ১০ শয্যা বিশিষ্ট মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র। রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলায় ১৪ নং চতরা ১০ শয্যা বিশিষ্ট মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র, রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার পায়রাবন্দ ইউনিয়নের ১০ শয্যা বিশিষ্ট বেগম রোকেয়া আধুনিক হাসপাতাল এবং পীরগঞ্জ উপজেলায় খালাশপীর ১০ শয্যা বিশিষ্ট মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র।

অন্যান্য প্রকল্পগুলো হলো- পীরগঞ্জ উপজেলায় ২,৫৪০ মিটার নদীর তীর সংরক্ষণ এবং রংপুর কারখানা ও সংস্থার পরিদর্শন অফিস ভবন। উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর মধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নভোথিয়েটার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প। ১০ তলা বিশিষ্ট নভোথিয়েটারটি ৪১৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ১০ একর জমির ওপর নির্মিত হবে। রংপুর শহর থেকে প্রায় ছয় কিলোমিটার দূরে রংপুর উপশহরে নির্মিত হবে এই নভোথিয়েটার, যা এলাকার আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন নিশ্চিত করার পাশাপাশি কর্মসংস্থানও সৃষ্টি করবে।
প্রধানমন্ত্রীর প্রতি ভালোবাসা ॥ রংপুরে দলে দলে মিছিলে সমাবেশস্থলে ্এসেছেন সর্বস্তরের জনতা ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। প্রধানমন্ত্রীকে এক নজর দেখতে হুইল চেয়ারে চড়ে সেই মিছিলে শরিক হয়েছে শারীরিক প্রতিবন্ধী (খর্বাকৃতি) রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার নাহিদ হাসান। তার ছোট ভাই রাসেল ইসলাম তাকে সঙ্গে নিয়ে এসেছেন।
নাহিদ হাসান বলেন, ‘সকাল ছয়টায় বাড়ি থেকে বের হয়ে সাতটার দিকে রংপুর শহরে পৌঁছেছি। প্রধানমন্ত্রীকে ভালোবাসি, তাই একনজর দেখতে এসেছি। আশা করি দেখতে পাব।

এর আগে প্রধানমন্ত্রীকে সামনাসামনি দেখার সুযোগ হয়নি। আজকে প্রধানমন্ত্রীকে দেখতে পাব দেখে অনেক খুশি লাগছে। নিজে তো চলতে পারি না ছোট ভাইকে সঙ্গে নিয়ে হুইল চেয়ারে চলে এসেছি। নাহিদের ছোট ভাই রাসেল ইসলাম বলেন, আমার ভাই একজন শারীরিক প্রতিবন্ধী। কিন্তু সে প্রধানমন্ত্রীর একজন মস্ত ভক্ত। তাই তার ইচ্ছেতে আমরা দুই ভাই তাকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে দেখতে এসেছি। প্রধানমন্ত্রীকে দেখেই আমরা বাড়ি যাব।
ছাবেদ আলীর দ্বিতল সাইকেলে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগতম ॥ অপরদিকে, নিজের তৈরি দ্বিতল (দোতলা) বাইসাইকেল নিয়ে মঙ্গলবার রাত থেকে শহরময় ঘুরছেন ছাবেদ আলী। একটা সাধারণ বাইসাইকেলের সঙ্গে আর একটা বাইসাইকেলের বডি যুক্ত করে দ্বিতল বাইসাইকেল তৈরি করেছেন ছাবেদ আলী। তার ওই বাইসাইকেলে চারটা খুঁটির সাহায্যে মাথার ওপরে বাংলাদেশের পতাকার রঙে একটি নৌকা বসিয়েছেন। নৌকার বৈঠার দুইপ্রান্তে রয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত নাড়ানো ছবি। পরনে পায়জামা আর হলুদ টি-শার্ট, মাথায় হলুদ রঙের ক্যাপ। মাঝেমধ্যে ‘জয়বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে স্বাগতম জানিয়ে চলছেন। তার নজরকাড়া বাইসাইকেলের আকর্ষণ নৌকা। যেখানে লেখা রয়েছে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর রংপুরে আগমন উপলক্ষে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। আর ওই বাইসাইকেল চালককে ঘিরে ফোনে ছবি তুলছেন আগত লোকজন।
এই ব্যক্তির নাম ছাবেদ আলী (৪২)। বুধবার (২ আগস্ট) সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মহাসমাবেশ ঘিরে রংপুর জিলা স্কুলের সামনে দেখা হয় তার সঙ্গে। তিনি জানান, রংপুরের পীরগাছা উপজেলার তাম্বুলপুর ইউনিয়নের নেকমামুদ থেকে বাইসাইকেল চালিয়ে প্রধানমন্ত্রীর মহাসমাবেশে এসেছেন তিনি। নেকমামুদ থেকে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বাইসাইকেলে চালিয়ে রংপুর শহরে এসেছেন। রাতে জিলা স্কুলের পাশের ফুটপাতেই সবার সঙ্গে বসে গালগল্প করে সময় কাটিয়েছেন। ভোর হতেই নৌকার পক্ষে স্লোগান দিয়ে সমাবেশস্থলের আশপাশে বাইসাইকেল নিয়ে ঘুরে বেড়িয়েছেন।
ছাবেদ আলী বলেন, ‘আমি প্রধানমন্ত্রীকে আমার এই দোতলা বাইসাইকেল নৌকা দেখাতে চাই’। দলের লোকজন আমাকে খুব সাধুবাদ জানাচ্ছেন। তারা আমার সঙ্গে ছবিও তুলছে। এটাই আমার আনন্দ। আমার কোনো চাওয়া-পাওয়া নেই। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রংপুর আগমনের সংবাদ জানতে পেরে আমি এই ব্যতিক্রম বাইসাইকেলটি তৈরি করেছি। এই বাইসাইকেল নিয়ে গ্রামের হাটবাজারে গণসংযোগ করেছি। আমি টিপু মুনশি স্যারকে ভালোবাসি। আমি শেখ হাসিনার ভক্ত। নৌকার কর্মী, আওয়ামী লীগের সমর্থক। একারণে প্রধানমন্ত্রীর জনসভায় এসেছি, ভাষণ শুনে তারপর বাড়ি যাব।
তিনি বলেন, উন্নয়নের জন্য শেখ হাসিনার সরকারের দরকার আছে। আমরা রংপুরের মানুষ অনেক কিছু পেয়েছি। বিভাগ, বিশ্ববিদ্যালয়, সিটি করপোরেশন, মেট্রোপলিটন পুলিশ, গ্যাস, ছয়লেনের মহাসড়কসহ অনেক উন্নয়ন করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এবার আমরা চাই শেখ হাসিনা আমাদের তিস্তা নদীর ভাঙন রোধসহ বিজ্ঞানসম্মত ভাবে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের ঘোষণা দেবেন। এই তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের কাজ শুরু হলে রংপুরের মানুষের ভাগ্য বদলে যাবে। সূত্র জনকণ্ঠ