হবিগঞ্জের ফুসফুস নামে পরিচিত সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান

0
123

নূরুজ্জামান ফারুকী,বিশেষ প্রতিনিধি: হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট উপজেলার রঘুনন্দন পাহাড়ে অবস্থিত প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান। এই উদ্যানের আশেপাশে রয়েছে ৯টি চা-বাগান। যার মধ্যে পশ্চিম দিকে সাতছড়ি চা-বাগান এবং পূর্ব দিকে চাকলাপুঞ্জি বাগানের অবস্থান।

এছাড়াও এই উদ্যানের অভ্যন্তরে টিপরাপাড়ায় একটি পাহাড়ি উপজাতির ২৪টি পরিবার বসবাস করে। ক্রান্তীয় ও মিশ্র চিরহরিৎ এই পাহাড়ি বনভূমিটি ভারতীয় উপমহাদেশ ও ইন্দো-চীন অঞ্চলের সংযোগস্থলে অবস্থিত। অপরূপ রূপ লাবণ্যে ঘেরা সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে রয়েছে প্রায় দুই শতাধিক প্রজাতির গাছপালা। যার মধ্যে শাল, সেগুন, আগর, গর্জন, চাপালিশ, পাম, মেহগনি, কৃষ্ণচূড়া, ডুমুর, জাম, জামরুল, সিধাজারুল, আওয়াল, মালেকাস, ইউক্যালিপটাস, আকাশমণি, বাঁশ, বেত গাছ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।

প্রায় ১৯৭ প্রজাতির জীবজন্তু এই সবুজে ঘেরা উদ্যানের ভেতর জীবনধারণ করে। যার মধ্যে রয়েছে প্রায় ২৪ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ১৮ প্রজাতির সরীসৃপ, ৬ প্রজাতির উভচর।

এছাড়াও রয়েছে প্রায় ১৫০-২০০ প্রজাতির বিভিন্ন ধরনেএ পাখি। এই উদ্যানটি বাংলাদেশের একটি সংরক্ষিত বনাঞ্চল ও পাখিদের একটি অভয়াশ্রম। এই বনে লজ্জাবতী বানর, উল্লুক, চশমাপরা হনুমান, কুলু বানর, মেছো বাঘ, মায়া হরিণ, ইত্যাদি; সরিসৃপের মধ্যে সাপ; পাখির মধ্যে কাও ধনেশ, বনমোরগ, লালমাথা ট্রগন, কাঠঠোকরা, ময়না, ভিমরাজ, শ্যামা, ঝুটিপাঙ্গা, শালিক, হলদে পাখি, টিয়া প্রভৃতির আবাস রয়েছে। এছাড়াও গাছে গাছে আশ্রয় নিয়ে থাকে অগনিত পোকামাকড় ও ঝিঁঝিঁ পোকা।

এই উদ্যানের নামকরণের সুন্দর একটি ইতিহাস রয়েছে। উদ্যানের ভিতরে সাতটি ছড়ি বা ঝর্ণা রয়েছে, যা থেকে এর নামকরণ করা হয়েছে সাতছড়ি।

পর্যটকদের দৃষ্টি নন্দন ভ্রমণ স্থানের মধ্যে সিলেট বিভাগের হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট উপজেলার সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান অন্যতম। দেশের ১০ টি জাতীয় উদ্যানের মধ্যে এটি একটি। এর আয়তন ২৪২.৮২ হেক্টর বা ছয়শত একর। এটি রঘুনন্দন হিল রিজার্ভ রেষ্টের একটি অংশ। রাজধানী ঢাকা থেকে ১৩০ কি.মি. উত্তর – পূর্ব দিকে ও চায়ের রাজধানী শ্রীমঙ্গল থেকে ৬০ কি.মি. দক্ষিণ – পশ্চিমে অবস্থিত। ইকো ট্যুর গাইডের সাহায্য নিয়ে জীব বৈচিত্রে ভরপুর সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে হাইকিং করলে অপূর্ব বনশ্রী যেকারো হৃদয়ে দাগ কাটবে নিঃসন্দেহে।

এই দৃশ্য নিজের চোখে দেখলে বাস্তবে উপভোগ না করলে বোঝা সম্ভব নয়। হাজার হাজার পর্যটক তাই এটি পরিভ্রমণ করতে আসেন। অবাক করা বিষয় হলো, এর ভিতরে অবস্থিত ছড়াগুলোর মধ্যে প্রকৃতি তার নিয়মে বিছিয়ে রেখেছে পানিবিহীন দুধেরন্যায় সাদা বালু। দুধ রঙ বালুর ওপর দিয়ে হেঁটে যাওয়া যায় উদ্যানের ভেতরে। তখন মনে হবে এ যেন প্রকৃতির সাদা গালিচার অভ্যর্থনা। ছড়ার পথে হাঁটতে হাঁটতে চোখে পরবে বিভিন্ন প্রজাতির বৃক্ষরাজি ও নাম না জানা অসংখ্য লতাপাতা।

তবে আমাদের এ বনকে সঠিকভাবে ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে রক্ষা করতে হবে, রক্ষা করতে হবে প্রাণীদের। তাহলেই সুস্থ ও স্বাভাবিক থাকবে আমাদের পরিবেশ ও প্রতিবেশ।