হবিগঞ্জ-১ আসনে লাঙ্গল ফেল করলেও পাস! আসলে কি তা-ই?

0
94

নূরুজ্জামান ফারুকী,বিশেষ প্রতিনিধি: “লাঙ্গল পাস করলেও পাস, ফেল করলেও পাস” এমন একটি গুজবে ভাসছে বাহুবল-নবীগঞ্জ (হবিগঞ্জ-১) আসন। আসলে কি তা-ই?

নির্বাচনী সভা, সমাবেশ, উঠান বৈঠক ও গণসংযোগে এমন প্রচারণাই (!) চালাচ্ছে জাতীয় পার্টির নেতাকর্মী সমর্থকরা। জবাবে এ আসনের অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক এমপি আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরী বিভিন্ন নির্বাচনী সভা-সমাবেশে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের নিশ্চয়তা প্রদান করতে গিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা ও সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের-এর বিভিন্ন বক্তব্যের রেকর্ড প্রচার করতে দেখে যাচ্ছে।

শুক্রবার (২৯ ডিসেম্বর) বিকাল থেকে ফেসবুকে একটি ভিডিও ব্যাপক প্রচার পেয়েছে। ভিডিওতে দেখা যায়, হবিগঞ্জ জেলা জাতীয় পার্টির যুগ্ম সম্পাদক ও বাহুবল উপজেলা জাতীয় পার্টির যুগ্ম আহবয়ক ডা. এমদাদুল হক সবুজ মসজিদে জুম্মার নামাজের পূর্বে মুসল্লীদের উদ্দেশ্যে বক্তৃতা করছেন। তিনি বলেন, “আমরা (লাঙ্গল) ফেল করলেও পাস, পাস করলেও পাস। এই কথাটা আমার লাকড়িপাড়া গ্রামের যারা আছেন আমি তাদের বলে দিলাম। দেশের প্রেক্ষাপট কি হবে সেটা জানি না, আপনাদেরও জানার দরকার নাই। মুনিম বাবু যেহেতু উন্নয়ন করে, আমি আশা করি আমাদের এ সেন্টারটি (লাকড়িপাড়া) জোড়ালো ভাবে সহযোগিতা করি, ভোট দেই, দিতে হবে।”

তিনি আরো বলেন, “কেয়া চৌধুরীকে (ঈগল মার্কা) আপনারা (ভোট) কেন দেবেন? কেয়া চৌধুরী তো আওয়ামী লীগই, সে তো নৌকার-ই।
শেখ হাসিনা সারা বিশ্বকে বুঝানোর জন্য এদের (স্বতন্ত্র প্রার্থীদের) সুযোগ দিছেন, তিনি দেখাচ্ছেন একটা অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হচ্ছে। বাবু (এম এ মুনিম চৌধুরী বাবু) তো এমনিতেই পাশ। মানুষকে বুঝানোর জন্য এ নির্বাচন হচ্ছে।”

হবিগঞ্জ-১ (নবীগঞ্জ-বাহুবল) আসনের জাতীয় পার্টি মনোনিত প্রার্থী সাবেক এমপি এমএ মুনিম চৌধুরী বাবু-এর অন্যতম সমর্থক ও জাতীয় পার্টি নেতা ডা. এমদাদুল হক সবুজ স্থানীয় লাকুড়িপাড়া জামে মসজিদে দেওয়া বক্তব্যে আরো বলেন, “আপনারা জানেন আওয়ামী লীগ (হবিগঞ্জ-১ আসনে) নৌকা প্রত্যাহার করেছে। সিলেট বিভাগের মধ্যে ১৯টি আসনের মাঝে শুধু এ আসনটি (হবিগঞ্জ-১) আমাদের (জাতীয় পার্টিকে) দেওয়া হয়েছে।”
তিনি আরো বলেন, “বাংলাদেশ গভর্মেন্ট, শেখ হাসিনায় আমাদের (জাতীয় পার্টি) সাথে আঁতাত করে সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, আমরা এটা (এ আসন) দিয়েছি মুনিম বাবু কে। যে কারণে আওয়ামীলীগ নৌকা প্রত্যাহার করেছে।”

এ বক্তব্য সম্পর্কে জানতে হবিগঞ্জ জেলা জাতীয় পার্টির যুগ্ম সম্পাদক ও বাহুবল উপজেলা জাতীয় পার্টির যুগ্ম আহ্বায়ক ডা. এমদাদুল হক সবুজ-এর সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, “কথাটা আমার স্লিপ হয়ে গেছে। আমি আমার গ্রামের মানুষদের বোঝাতে চেয়েছিলাম মুনিম বাবু পাশ করলেও আপনাদের পাশে থাকবেন ফেল করলেও আপনাদের পাশে থাকবেন। আমি আমার এই বক্তব্যের জন্য দেশবাসীর কাছে ক্ষমাপ্রার্থী।”

বাহুবল উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ফরিদ মিয়া তালুকদার বলেন, “নবীগঞ্জ-বাহুবলের জনসাধারণ কেয়া চৌধুরীকে ভোট দেওয়ার জন্য মুখিয়ে আছে। ঈগলের প্রচারণায় স্বতস্ফুর্ত জনস্রোত দেখে জাতীয় পার্টির প্রার্থী মুনিম বাবু ও তার সমর্থক নেতাকর্মীদের মাথা নষ্ট হয়ে গেছে। এ কারণে তারা “লাঙ্গল পাস করলেও পাস, ফেল করলেও পাস” বলে বেফাঁস বক্তব্য প্রচার করছে। গুজব রটিয়ে যারা জনগণকে ভোট উৎসবে নিরুৎসাহিত করতে চাচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাচ্ছি।”

এ ব্যাপারে স্বতন্ত্র প্রার্থী আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরী বলেন, “আমি প্রার্থী ‘স্বতন্ত্র’ হতে পারি। কিন্তু আমি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের একজন কর্মী। আমার দলের সাথে জাতীয় পার্টির কোন আসন সমঝোতা হয়নি, সমঝোতা হয়েছে দলীয় প্রার্থী প্রত্যাহারের। আর নেত্রী যদি জাতীয় পার্টিকে এ রকম নিশ্চয়তা দিতেন তাহলে সিলেটে অনুষ্ঠিত নির্বাচনী প্রথম জনসভায় মুনিম বাবু থাকতেন। বাস্তবে সেখানে আমরা আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীরা দাওয়াত পেয়ে জনসভায় উপস্থিত ছিলাম। “ভোট দিলেও লাঙ্গল পাস, না দিলেও লাঙ্গল পাস” বলে যারা সাধারণ জনগণকে নির্বাচন থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে চায়, তারা দেশ, জাতি ও গণতন্ত্রের শত্রু।”

জাতীয় পার্টির প্রার্থী এমএ মুনিম চৌধুরী বাবু বলেন, “জাতীয় পার্টির ওই নেতার (ডা. এমদাদুল হক সবুজ) বক্তব্য তার ব্যক্তিগত। এটা দলের বা আমার বক্তব্য নয়। আমি ব্যক্তিগত ভাবে জিজ্ঞাস করেছিলাম, জবাবে তিনি বলেছেন কথাগুলো তিনি ভুল করে বলে ফেলেছেন।” এমএ মুনিম চৌধুরী বাবু আরো বলেন, এবার নির্বাচন শতভাগ নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু হবে। জনগণের ভোটেই আমি বা অন্য প্রার্থীকে বিজয়ী হতে হবে।”

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে হবিগঞ্জ-১ আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী সাবেক এমপি এম.এ মুনিম চৌধুরী বাবু (লাঙ্গল), স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক সংরক্ষিত মহিলা এমপি আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরী, হবিগঞ্জ-১ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য শাহনওয়াজ গাজী মিলাদ-এর সহোদর স্বতন্ত্র প্রার্থী গাজী মোহাম্মদ সাহেদ (ট্রাক), ইসলামী ঐক্যজোটের প্রার্থী মোস্তাক আহমেদ ফারহানী (মিনার) ও কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ প্রার্থী নূরুল হক (গামছ) প্রতিদ্ব›দ্বীতা করছেন। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রার্থী ডা. মুশফিক হোসেন চৌধুরী গত ১৭ ডিসেম্বর দলীয় সিদ্ধান্তের আলোকে নিজের মনোনয়পত্র প্রত্যাহার করে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান।