৬লেনের মধুমতি সেতু দক্ষিন-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের প্রবেশ দ্বারঃশেখ হাসিনা

0
257
৬লেনের মধুমতি সেতু দক্ষিন-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের প্রবেশ দ্বারঃশেখ হাসিনা
৬লেনের মধুমতি সেতু দক্ষিন-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের প্রবেশ দ্বারঃশেখ হাসিনা

সুজয় বকসী, নড়াইল, নড়াইল প্রতিনিধি: নড়াইল-গোপালগঞ্জর মধুমতি নদীর উপর নির্মিত ‘মধুমতি সেতু বাংলাদেশের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এটি হবে দক্ষিন-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের প্রবেশ দ্বার। দু’প্রান্তের মানুষের সাথে যোগাযোগ বৃদ্ধি পাবে, ব্যবসা-বানিজ্য বাড়বে। ফলে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পাবে। এটি চালুর ফলে কোলকাতার সাথে ঢাকাসহ অন্যান্য অঞ্চলের পণ্য পরিবহনসহ অর্থনৈতিক লেনদেন সহজ হবে এবং সময়ও বাঁচবে।

আজ সোমবার (১০ অক্টোবর ২০২২) দুপুরে নড়াইলের কালনা পয়েন্টে ‘মধুমতী সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে গনভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি উপস্থিত থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এমপির সভাপতিত্বে (ভার্চুয়াল) প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস-এর সঞ্চালনায় সেতু প্রকল্প বিষয়ের ওপর উপস্থাপন করেন সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নূরী, শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন বাংলাদেশে নিযুক্ত সৌদি আরবের রাষ্ট্রদূত মিঃ ইসা বিন ইউসুফ আল-দাহিলান, বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত মিঃ ইটো নাওকি প্রমুখ।

বক্তারা সবাই ভার্চুয়াল মাধ্যমে বক্তব্য দেন। এ সময় নড়াইলের অনুষ্ঠান স্থলে উপস্থিত ছিলেন খুলনা বিভাগীয় কমিশনার জিল্লুর রহমান চৌধুরী, খুলনা রেঞ্জ ডিআইজি ড. খন্দকার মুহিত উদ্দিন,নড়াইল-১ আসনের সংসদ সদস্য কবিরুল হক মুক্তি, নড়াইল-২ আসনের সাংসদ মাশরাফি বিন মুর্তজা, নড়াইলের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান,পুলিশ সুপার মোসাঃ সাদিরা খাতুন, সেতুর প্রকল্প পরিচালক শ্যামল ভট্টাচার্য, সওজ নড়াইলের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আশরাফুজ্জামান,নড়াইল জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এ্যাড. সুবাস চন্দ্র বোস, সাধার সম্পাদক নিজামউদ্দিন খান নিলু, নড়াইল পৌর মেয়র আনজুমান আরা, লোহাগড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ আজগর আলী, লোহাগড়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শিকদার আব্দুল হান্নান রুনু, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুন্সি আলাউদ্দিন, সাধারন সম্পাদক সৈয়দ মসিয়ূর রহমান প্রমুখ।
সোমবার দুপুরে উদ্বোধনী অনুষ্ঠন ও দৃষ্টিনন্দন ৬ লেনের মধুমতি সেতু দেখতে নড়াইল ও গোপালগঞ্জ জেলার প্রায় ১০ হাজার সেতুর দুই প্রান্তে আসেন। এ সময় মানুষের মাঝে ছিল উচ্ছাস উদ্দীপনা ও আনন্দের বন্যা।
মধুমতি সেতু চালু হওয়ায় এ অঞ্চলের আর্থ-সামাজিক ও সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থায় নবদিগন্তের সূচনা হবে। পাল্টে যাবে এক সময়কার পকেট জেলা ও ৬৪ নম্বর জেলা হিসাবে খ্যাত ছোট্ট নড়াইলের অর্থনীতি। সম্ভাবনার দ্বার খুলবে পর্যটন, মৎস, কৃষি, ব্যবসাসহ বিভিন্ন খাতের। এসব খাত থেকে বছরে শত কোটি আয়ের সম্ভাবনা সৃষ্টি হলো। শিল্প, সাহিত্য ও সংস্কৃতির চর্চা আরও বৃদ্ধি পাবে। এছাড়া অল্প সময়ে ঢাকায় গিয়ে অফিস-আদালত, ব্যবসা-বানিজ্য, চাকরিসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাজ সেরে আবার বাড়িতে ফিরে আসতে পারবেন। নড়াইলে প্রস্তাবিত অর্থনৈতিক অঞ্চল, বিসিক এবং নতুন নতুন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও শিল্পকারখানা গড়ে ওঠার সম্ভাবনা বাড়বে;সৃষ্টি হবে ব্যাপক কর্মসংস্থান। ফলে নড়াইলের মানুষের জীবনযাত্রার উন্নয়ন ঘটবে।
বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ২০০৮ সালের ১৯ ডিসেম্বর নড়াইলের সুলতান মঞ্চে নির্বাচনী জনসভায় মধুমতি নদীর কালনা পয়েন্টে এ সেতু নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। এ ধারাবাহিকতায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৫ সালের ২৪ জানুয়ারি ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সেতুর কাাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। এ সেতুর পূর্ব পারে গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলা এবং পশ্চিম পারে নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলা।


সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তরের ক্রস বর্ডার রোড নেটওয়ার্ক ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্টের আওতায় জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) অর্থায়নে এ সেতু নির্মাণ হয়েছে। জাপানের টেককেন করপোরেশন ও ওয়াইবিসি এবং বাংলাদেশের আবদুল মোনেম লিমিটেড যৌথভাবে এ সেতুর ঠিকাদার। সেতুর মাঝখানে ১৫০ মিটার দীর্ঘ স্টিলের স্প্যানটি ধনুকের মতো বাঁকা। ফলে এটি দেখতে যথেষ্ট দৃষ্টিনন্দন। ওই স্প্যানের উভয়পাশের অন্য স্প্যানগুলো পিসি গার্ডারের (কংক্রিট)। চারটি মূল লেনে দ্রুতগতির ও দুটি লেনে কম গতির যানবাহন চলাচল করবে। সেতুর দৈর্ঘ্য ৬৯০ মিটার ও প্রস্থ ২৭ দশমিক ১০ মিটার। উভয় পাশে সংযোগ সড়ক ৪ দশমিক ২৭৩ কিলোমিটার, যার প্রস্থ ৩০ দশমিক ৫০ মিটার। সেতু নির্মাণে মোট ব্যয় হয়েছে ৯৫৯ দশমিক ৮৫ কোটি টাকা।
জানা যায়,নড়াইল, যশোর, শিল্প শহর নওয়াপাড়া, বেনাপোল স্থল বন্দরসহ দক্ষিন-পশ্চিমাঞ্চলের জেলার ১০জেলার সঙ্গে গোপালগঞ্জ-ফরিদপুর-মাদারিপুর-বরিশাল-পিরোজপুর-পটুয়াখালী এবং পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকা-সিলেট-চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলার সড়ক যোগাযোগ স্থাপিত হবে। নড়াইল শহর থেকে ঢাকার দুরত্ব হবে মাত্র ১২৭ কি.মি। নড়াইল, বেনাপোল, যশোরসহ দক্ষিনাঞ্চলের অন্যন্য জেলার সড়ক যোগাযোগ ১শ থেকে প্রায় দেড়’শ কি.মি পথ কমবে।

মধুমতি সেতুর প্রকল্প ব্যবস্থাপক ও সওজ নড়াইলের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আশরাফুজ্জামান বলেন, সেতুটি চালু হওয়ায় এখন যানবাহনের চাপ কয়েকগুণ বেড়ে যাবে। তাই আপাতত যশোরের মনিহার সিনেমা হল চত্বর থেকে নড়াইলের কালনাঘাট পর্যন্ত ৫২ কিলোমিটার সড়ক প্রশস্ত করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বর্তমানে সড়কটি ১৮ফুট প্রশস্ত থাকলেও তা বাড়িয়ে ২৪ ফুট করা হবে। নড়াইল অংশে ৪০ কোটি এবং যশোর অংশে ৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে সড়ক প্রশস্তকরণ করা হবে। নড়াইল অংশে বরিশালের রিলায়বেল বিল্ডারস এবং যশোর অংশে ঢাকার মাসুদ হাইটেক কনস্ট্রাকশন কাজটি পেয়েছে। কাজের ওয়ার্ক অর্ডারও দেওয়া হয়েছে। আগামি ১ বছরের মধ্যে কাজটি সম্পন্ন করতে হবে। এ লক্ষ্যে সড়কের দুই পাশে গাছকাটার কাজ শুরু হয়েছে।
নড়াইল জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান বলেন,এ সেতুর ফলে সারা দেশের সাথে নড়াইলসহ দক্ষিনাঞ্চলের যোগাযোগ যেমন বাড়বে তেমনি কৃষি, মৎস,পর্যটন, ব্যবসা-বানিজ্য, নড়াইলের লোহাগড়ায় প্রস্তাবিত অর্থনৈতিক জোন, শহরতলিতে বিসিকসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বড়ো বড়ো উদ্যোক্তারা এগিয়ে আসবেন। ফলে নড়াইলের আর্থ-সামজিক উন্নয়নে সেতুটি ব্যাপক ভূমিকা রাখতে পারবে।