৭০ দশক ও পরবর্তী শ্রীমঙ্গল:বুলবুল আনাম

0
164
৭০ দশক ও পরবর্তী শ্রীমঙ্গল:বুলবুল আনাম

আমার সিলেট ডেস্ক: মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল শহর একটি উপজেলা শহর হলেও এর পরিচিতি দেশ-বিদেশব্যাপী।
গত ৫০ বছরে এই শহরের যে পরিবর্তন ও পরিবর্ধন এসেছে তা তৎকালীন বসবাসকারী ছাড়া অন্যদের হয়তো কিছুই জানা নেই।তবে এই লেখাটি থেকে অনেকের কিছুটা হলেও উপলব্ধি হবে এবং যারা তৎকালীন বসবাসকারী ছিলেন এবং আজ পর্যন্ত বেঁচে আছেন তাদের স্মৃতিপটে ভেসে উঠবে সেকালের শ্রীমঙ্গল থেকে আজকের শ্রীমঙ্গলের ঐতিহ্য।লেখাটি একজন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব শ্রীমঙ্গল শহরের পরিচিত মুখ বুলবুল আনামের ফেসবুক স্ট্যাটাস থেকে নেওয়া হয়েছে। আজকের এই আধুনিক শ্রীমঙ্গলের কিছু অংশের পূর্বের ইতিহাস সম্পর্কে তিনি অতি সহজ সরল ভাষায় তার ফেসবুক পেজে যা লিখেছেন তা হুবহু এখানে তুলে ধরছি। বানান গত কিছু সমস্যা থাকলেও লেখাটিকে লেখকের মতোই করে রাখা হয়েছে।
লেখকের কথা: “৭০ দশক ও পরবর্তী সময়ে থানা শহর হিসাবে স্বাভাবিক ভাবে শহরের রাস্তাঘাট ছিলো অপ্রশস্হ ভাংগাচুরা অমসৃন দূর্দশা গ্রস্হ। শহর জুড়ে পেডেল রিক্সা বেবী টেক্সি স্টাফকার চলতো মৌলবীবাজার রোড দিয়ে তখন মুড়ির টিন বাস ও পেট্রল চালিত ট্রাক চলতো। * এখনকার ইয়াকুব শপিং সেন্টার তখন ছিলো বাসের বেড়া ও খুটি উপরে টিন দিয়ে তৈরী। মাঝ খানে ইসমাইল আলীর দোকান দূপাশে কয়েকটা ছোট খাটো বিভিন্ন ক্ষুদ্র দোকান সিতেশ বাবুর ঘড়ী মেরামত করার দোকান ইত্যাদী । সামনের দিকে এগিয়ে বর্তমান তরাজ ম্যানসন ও হাজী আছদ্দর হাজীর বর্তমান মার্কেট। পেছন দিকে ছিলো ময়না মিয়ার বাসা কথিত আছে এই বাড়ীর পাকঘর থেকে ৬৬ সালে শ্রীমংগলে আগুণের সুত্রপাত হয়ে ছিলো। এরপর সরকারী বালিকা বিদ্যালয় পাকা ঘর তবে উপরে ডাডেক্স র ছাউনি। আরো সামনে এহসান করিম সাবের বর্তমান মার্কেট আগে ছিলো ভাংগাচোরা কয়টা ঘর পরবর্তী মিদাদ মার্কেট জনাব কটাই চৌধুরীর ( উবেদুর রহমান চৌধুরী ) বিরাট খালি জায়গা, একটা ধান গম ভাংগানি কল্ ঘর আর ডিজেল কেরসিনের ডিপো। চা বাগানের ট্রাকটার এখান থেকে ট্যাংক বুঝাই করে তেল নিয়ে যেতো, তখন চা ফ্যাক্টরী ডিজেলে চলতো। এরপর অশ্বিনি কুমার দেব এর জমি দোকান ঘর তিনি ছিলেন বিরাট পাইকারী ব্যবসায়ী এর পর আজিজ মুহুরী সাবের বাসা। চৌমুহুনার রাস্তার ডান পাশে বর্তমান বিরতী হোটেল ছিলো কমলেশ ভট মহোদয়ের বাশ টিন এর তৈরী দীর্ঘ মার্কেট। ছোট ছোট দোকান একটি হোমিওপ্যাথি ও লাইব্রেরী ঘর ও আওয়ামী লীগের কার্যালয়ও ছিলো। এরপর রহমান ফটো স্টুডিও। সাংবাদিক জহির সাহেবের ভিটা একটা সরু গলি চলাচলের জন্য বর্তমান, যা আগেও ছিলো, এদিক দিয়ে গার্লস স্কুলে ছাত্রীরা আসা যাওয়া করতো এখনো তাই করে। পরবর্তী সেই আগের মতোই জীর্ণশীর্ন দোকান ঘর কয়টা কোন পরিবর্তন নাই, এরপর কয়েকটা পাকা ঘর ও এখন কালাপুর রেস্ট হাউস আগে যা টিন বাশের দোকান ছিলো। পরবর্তী কয়টা সেই কাচা ঘরই ছিলো এরপর কটাই চৌধুরী সাহেবের মালিকানাধীন টিন সেড কিনতু পাকা দোকান ঘর ছিলো। সব দোকান বিয়ানী বাজারীদের। রহমান মিয়া একজন নামিস্ত দোকানদার ছিলেন এখানে। শ্রীমংগল ৬০ শতক থেকেই বিয়ানী বাজারী জনতার আগমণ শুরু, এর প্রধাণ ব্যাক্তি মিশন রোডের জনাব সোনা মিয়া ( বক্স পরিবারের মুরব্বী) মিশন রোডে তাই বিয়ানি বাজারী দের আধিক্য দেখা যায় এখনও। রাস্তার ডান দিকে শ্রীমংগল থানার বিরাট জমি ডোবা পুকুর ঝোপ জংগলে পুর্ণ হয়ত সরকারী খাস জমি। থানার প্রধান গেইট তখন কলেজ রোডের দিকে ছিলো, থানা অফিসটিও ছোট টিনসেডের তৈরী এখন সুন্দর বিল্ডিং শুভা পাচ্ছে। তখন থানার কোন ওয়াল ছিলোনা পুকুরটায় লোকজন বাচ্চারা গোসল করতো সাতার দিতো। আরো সামনে উল্লেযোগ্য কোন বাসাবাড়ী ছিলনা ( সম্ভবত রাধেশ্যাম নামক একজনের ভিটা ছিলো) আরো সামনে সুনীল রায় ও এস কে রায় দূই বড় ব্যবসায়ী ভাইদের পাকা বাড়ী ছিলো। এরপর সরকারী খাস জমি বর্তমান একটা মন্দির ও ‘স্ মিল ‘শুভা পাচ্ছে। এরপর উল্লেখ যোগ্য জনাব আহমদ চৌধুরী (ওসি) সাবের খালি জমি পিছন দিকে একটা ছোট বাসা বারান্দায় ইজি চেয়ারে বসে হোক্কা টানতেন। একটা কাজের লোক ছিলো খুড়িয়ে হাটতো । চাচার ঐ বসে থাকার দৃশ্যটা চোখে ভাসছে এখনও। বাসার পাশ দিয়ে ভিক্টোরিয়া স্কুলের ছোট্ট সড়ক। চন্দ্রনাথ স্কুল তখন টিনদিয়ে প্রাচীণ অয়বয়ে তৈরী এই স্কুল থেকে কত মেধাবী ছাত্ররা জীবনে কত উচ্চ আসনে আসীন হয়েছেন কত কালের স্রোতে হারিয়ে গেছেন।
এরপর উল্লেখ যোগ্য বাড়ী সাংবাদিক জনাব বিপুল চৌধুরী ননী চৌধুরী চুনী চৌধুরীদের বাসা। পরবর্তী ইউনাইটেড হাউস বর্তমান লেবার হাউস। চা শ্রমিকদের মিলনায়তন ও অফিস। এই মিলনায়তনটি শ্রীমংগলের নাটক থিয়েটার সাংস্কৃতিক কর্ম কান্ডের গুরুত্বপুণ একটা স্হাপনা। অনেক মনোহর অনুস্ঠাণের সাক্ষী এই হলটি। এরপর ৭০ এর নির্বাচীত এমএনএ জনাব মোঃ ইলিয়াসের বাসার জমি কিনতু বাড়ী করা সম্ভব হয়নি বরং জনগণের জন্য রাজনীতি করে ভিটাবাড়ী হারা গৃহহীন হয়েই সৎ মানুষটি দূনিয়াকে বিদায় জানিয়ে চলে গেছেন। পরের অংশে গোপাল সেনের বাসা, বাসার সামনে ওয়ার্কসপ এরপরের দিকে ক্যাথলিক মিশনের সরু একটা রাস্তা বাম দিকে। মিশনে একজন সুদর্শন ফাদার ছিলেন বাই সাইকেলে শহরে যাতায়াত করতেন মুখ জুড়ে একটা মিস্টী হাসি লেগে থাকতো সারাখন, বাংলায় কথা বলতেন সবার সাথে, লোকে অনেক ভালবাসতো। ১নং পুলের কাছে এসকে রায়ের একটা মুল্যবান স্হাপনা ছিলো এরপরতো পাল সম্প্রদায়ের এলাকা তবে ঘরবাড়ী সমৃদ্ধ ছিলোনা তেমন একটা রাস্তা গেছে বাম দিকে বর্তমান সন্ধানী এলাকা যা আগে ধান ক্ষেত হাওর অংশ ছিলো। রাস্তার ডান পাশে উল্লেখ য়োগ্য কিছু ছিলোনা বর্তমান আজিজ মার্কেট এবি ব্যাংক থেকে ভিক্টোরীয়া স্কুল সড়ক পর্যন্ত। থানা শহর হিসাবে জরাজীর্ণ অবস্হা থাকাটাই স্বাভাবিক তাও বন্চিত পুর্ব পাকিস্হান, উন্নয়ন উন্নতির ছোয়া পাওয়াতো দুরের কথা!!
এছাড়া বাগান নির্ভর অর্থনিতি এখানে ব্যবসাটাই মুখ্য ছিলো ভালো জৌলসময় বাড়ীঘর বানানোর মানুষও ছিলোনা মন বা ইচ্ছাও ছিলোনা কারো।”
লেখক-বুলবুল আনাম,তারিখ- ১১-০৩-২০২৪