আগামীকাল নিজামীর রায়ঃনিরাপত্তা বাহিনী সতর্ক

    0
    262

    আমারসিলেট24ডটকম,অক্টোবরঃ স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, যুদ্ধাপরাধী কিংবা মানবতাবিরোধী যাই বলেন, যিনি এ দোষে দোষী সাব্যস্ত হয়েছিলেন আগামীকাল সম্ভবত তার রায় হতে যাচ্ছে। রায় কি হবে না হবে তা আদালতই জানে, আমরাও সবার মত রায় শোনার অপেক্ষায় আছি। তবে এ রায়কে নিয়ে কেউ অরাজক পরিস্থিতি তৈরি করতে চেষ্টা করবে তা আমরা হতে দিবোনা। সেখানে যে কোন মূল্যে পরিবেশ স্বাভাবিক রাখতে আমরা বদ্ধপরিকর। জামায়াত আমির মতিউর রহমান নিজামীর রায় ঘিরে সারা দেশে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি। আজ মঙ্গলবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সাথে একথা বলেন তিনি।
    স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, জামায়াতের এ শীর্ষ নেতার বিরুদ্ধে একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় হত্যা, লুট, ধর্ষণ, উস্কানি ও সহায়তা, পরিকল্পনা ও ষড়যন্ত্র এবং বুদ্ধিজীবী হত্যার মতো ১৬টি অভিযোগ রয়েছে। যুদ্ধাপরাধের মামলার প্রতিটি রায়ের দিন হরতাল ডেকে বিভিন্ন স্থানে তাণ্ডব চালিয়েছে জামায়াত ও এর ছাত্র সংগঠন শিবির। গত বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি সাঈদীর ফাঁসির রায়ের পর দেশজুড়ে তারা ব্যাপক তাণ্ডব চালায়। সে সময় সহিংসতায় প্রাণ হারায় পুলিশসহ অর্ধশতাধিক। এছাড়া দুই শতাধিক আহত, বহু গাড়ি-দোকানপাট ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, হিন্দুদের মন্দির-ঘরবাড়ি ভাংচুর করা হয়।
    আসাদুজ্জামান খান বলেন, কেউ পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করলে বা কোনো ধরনের অরাজকতা সৃষ্টির চেষ্টা করা হলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকার যে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হবে। বুধবার এ রায়কে কেন্দ্র করে যে কোনো ধরণের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সর্বাত্মক প্রস্তুত রয়েছে। তিনি বলেন, প্রয়োজনে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত বাহিনীর সাথে কাজ করতে বিজিবি ও প্রস্তুত আছে।

    আরও উল্লেখ্য যে,মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধে জামায়াতে ইসলামীর আমীর মতিউর রহমান নিজামীর মামলার রায় আগামীকাল বুধবার ঘোষণার দিন ধার্য করেছেন আদালত। আজ মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল নিজামীর রায়ের জন্য এ দিন ধার্য করেন।
    এর আগে, গত ২৩ মার্চ নিজামীর মামলায় চূড়ান্ত যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে যে কোনো দিন রায় ঘোষণা করা হবে মর্মে আদেশ দেয় ট্রাইব্যুনাল। এ ছাড়া এটা একমাত্র মামলা যা রায়ের জন্য তিনবার অপেক্ষমাণ রাখা হয়। এর আগে এ মামলার সকল কার্যক্রম শেষ করে গত ২০ নভেম্বর নিজামীর বিরুদ্ধে যেকোনো দিন রায় ঘোষণা করা হবে মর্মে (সিএভিতে) রেখে দেয় ট্রাইব্যুনাল।
    গত ১৩ নভেম্বর এ মামলায় আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ না করেই রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রেখেছিল ট্রাইব্যুনাল। পরে আসামিপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আবার যুক্তি উপস্থাপনের সুযোগ দেয়া হয়।
    নিজামীর বিরুদ্ধে গত বছরের ২৬ আগস্ট থেকে ৮ অক্টোবর পর্যন্ত প্রসকিউশনের সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দেন মুক্তিযোদ্ধা, অধ্যাপক, সাংবাদিক ও ইতিহাসবিদসহ মোট ২৬ জন।
    নিজামীর পক্ষে সাক্ষী দেয়ার জন্য দশ হাজার ১১১ জন সাক্ষীর তালিকা থেকে ৪ জনকে সাফাই সাক্ষীর অনুমতি দিয়ে গত ৬ অক্টোবর আদেশ দেয় ট্রাইব্যুনাল।
    মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর বিরুদ্ধে একাত্তর সালে পাবনার বিভিন্ন জায়গায় হত্য, গণহত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগসহ মোট ১৬টি অভিযোগ ট্রাইব্যুনালে উপস্থাপন করা হয়েছে। এসব অভিযোগের মধ্যে হিন্দু সম্প্রদায়রে উপর এবং ছাত্র-শিক্ষকসহ বিভিন্ন সাধারণ মানুষের ওপর নির্যাতনের অভিযোগ রয়েছে। এসব অপরাধ কখনও তার নির্দেশে আবার কখনও তার আদেশে সংগঠিত হয়েছে।
    ২০১১ সালের ১১ ডিসেম্বর মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করেন প্রসিকিউশন। ২০১২ সালের ৯ জানুয়ারি এ আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আমলে নেয় ট্রাইব্যুনাল। ২৮ মে ১৬টি অভিযোগ এনে নিজামীর বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে আদালত।
    ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়ার মামলায় ২০১০ সালের ২৯ জুন মতিউর রহমান নিজামীকে গ্রেফতার করা হয়। পরে একই বছরের ২ আগস্ট এক আবদনের পরিপ্রেক্ষিতে তাকে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়।