আগামী অর্থবছরে সারের ওপর ১৬ হাজার কোটি টাকার ভর্তুকি

0
385
আগামী অর্থবছরে সারের ওপর ১৬ হাজার কোটি টাকার ভর্তুকি
আগামী অর্থবছরে সারের ওপর ১৬ হাজার কোটি টাকার ভর্তুকি

আমার সিলেট ডেস্কঃ পাহাড়ি ঢল ও বন্যায় কৃষির বড় ক্ষতি হয়েছে এবার। এ অবস্থার মধ্যে নতুন বাজেট এসেছে। ফসলহানি, সারসহ কৃষি উপকরণের মূল্যবৃদ্ধি ও পশুখাদ্যের অগ্নিমূল্যে বেড়েছে উৎপাদন খরচ। তাই কৃষকের উদ্বেগ প্রশমনে অর্থমন্ত্রী তাঁর বাজেট বক্তৃতায় উপযুক্ত রক্ষাকবচ নেওয়া এবং দেশের বিরাজমান কৃষি ও খাদ্য পরিস্থিতি সম্পর্কে বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিয়েছেন। কৃষিক্ষেত্রে (কৃষি, খাদ্য এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ) সার্বিক উন্নয়নে ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য ৩৩ হাজার ৬৯৮ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেছেন তিনি। চলতি অর্থবছরে বরাদ্দ ছিল ২৪ হাজার ৩৪৫ কোটি টাকা।

এবার কৃষি মন্ত্রণালয়ের জন্য ২৪ হাজার ২২৪ কোটি টাকা, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের জন্য ৩ হাজার ৩০৮ কোটি এবং খাদ্য মন্ত্রণালয়ের জন্য ৬ হাজার ২১৩ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কৃষি খাতে বছর বছর বরাদ্দ বাড়লে কৃষকের উন্নতি হচ্ছে না। বিপণন দুর্বলতা কাটাতে না পারলে উৎপাদনের সুফল মিলবে না ভোক্তা পর্যায়ে।
আগামী অর্থবছরে সারের ওপর সরকার ১৬ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দেবে। এটা গত অর্থবছরের তুলনায় চার হাজার কোটি টাকা বেশি। অর্থমন্ত্রী বলেন, ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে সার বাবদ ভর্তুকি প্রাক্কলন করা হয়েছিল মোট ৯ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। তবে গত বছরের মে মাসের তুলনায় চলতি বছরের একই মাসে আন্তর্জাতিক বাজারে সারের দাম বেড়েছে। এ কারণে সব ধরনের সার মিলিয়ে চলতি অর্থবছরে ভর্তুকি দাঁড়িয়েছে প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকায়।

পাশাপাশি কৃষিজাত সামগ্রী রপ্তানির ক্ষেত্রে ২০ শতাংশ নগদ প্রণোদনা ও কৃষিক্ষেত্রে বিদ্যুৎ চালিত সেচযন্ত্রের ব্যবহারের জন্য বিদ্যুৎ বিলের ওপর ২০ শতাংশ রিবেট দেওয়া হচ্ছে। ডাল, তেল, মসলা, ভুট্টাসহ ২৪টি ফসল উৎপাদনের জন্য সুদ ভর্তুকির আওতায় বিদ্যমান ৪ শতাংশ সুদে বিশেষ কৃষিঋণ আগামী অর্থবছরেও অব্যাহত রাখা হবে। কৃষিতে বিনিয়োগের লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে প্রতিবছরই কৃষি ও পল্লিঋণ নীতি ও কর্মসূচি গ্রহণ করা হচ্ছে।

আসছে অর্থবছরের বাজেটে পোলট্রি, মৎস্য ও গোখাদ্য প্রস্তুতে কাঁচামালের আমদানিতে শুল্ক্ক কমানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে কমতে পারে প্রাণিখাদ্যের দাম। দেশীয় পোলট্রি শিল্পের খাবার প্রস্তুতে হোয়াইট গ্লুটেন ব্যবহার হয়। বর্তমানে এ পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক্ক রয়েছে। এবার বাজেটে এই পণ্যের আমদানি শুল্ক্ক কমিয়ে ১৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া গোখাদ্য তৈরিতে সুগারকেইন মোলাসেসের চাহিদা রয়েছে। তাই গোখাদ্যের উৎপাদন ব্যয় কমাতে ওই পণ্যের ওপর আমদানি শুল্ক্ক ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

পাশাপাশি মৎস্য, পোলট্রি, ডেইরি খাতের খাদ্যসামগ্রী ও নানা উপকরণ আমদানিতে শূন্য শুল্ক্কহার এবং অন্যান্য হারে রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে বাজেটে। এ ছাড়া তিনটি নতুন উপকরণ- পোলট্রিতে ব্যবহূত টেস্ট কিট, মোলাসেস ফুড গ্রেড, ক্যান মোলাসেস ফুড গ্রেডের ক্ষেত্রে রেয়াতি সুবিধা সম্প্রসারণের প্রস্তাব করা হয়েছে।

কৃষি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক সদরুল আমিন বলেন, সাপ্লাই চেইন ঠিক করা না গেলে কৃষি বিপণন, জিনিসপত্রের দাম ঠিক করা, ব্যবস্থাপনা, ঝুঁকি এড়ানো, ব্যাংকিংসহ কোনো কাজই হবে না। কিন্তু সে কাজটাই বাংলাদেশে অসংগঠিত। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলা এবং পদ্মার উত্তরপাড়ের ৪৩ জেলার মধ্যে যে কৃষিপণ্য লেনদেনের ব্যবসা শুরু হবে, সেটা নিয়ন্ত্রণ করার দক্ষতা বর্তমানে কৃষি বিপণন বিভাগের নেই। সরকারের উচিত ছিল, এটার জন্য বাজেটে বড়সড় প্রকল্প হাতে নেওয়া। তবে বিপণনের বিষয়ে বাজেটে কিছু নেই।