এখন হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন কংগ্রেস হাইকম্যান্ড

    0
    212

    আমারসিলেট24ডটকম,০৮জুনঃ লোকসভা ভোটে আম-ছালা হরাবার পর আঞ্চলিক নেতৃত্বের অভাব এখন হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন ভারতীয় কংগ্রেস হাইকম্যান্ড। সেই প্রেক্ষাপটেই পশ্চিমবঙ্গে এ বার অধীর চৌধুরীর নেতৃত্বে মজবুত সংগঠন গড়ে তুলতে চাইছেন সোনিয়া গাঁন্ধী। ভোটের ফলপ্রকাশের পর, সম্প্রতি দলের সভানেত্রীর সঙ্গে দেখা করেছিলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি। মুর্শিদাবাদে যে ভাবে সংগঠন গড়েছেন অধীর, সেই ধাঁচেই গোটা রাজ্যে দলের সাংগঠনিক শক্তি বাড়ানোর জন্য তাঁকে নির্দেশ দিয়েছেন কংগ্রেসসভানেত্রী। যদিও কাজটা যে শক্ত তা কংগ্রেস হাইকম্যান্ড বোঝেন। কারণ এর আগেপশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেসের মূল লড়াই ছিল বামেদের সঙ্গে।  পরবর্তী কালে বামেদের পাশাপাশি শাসক তৃণমূলের সঙ্গেও লড়াই করতে হয়েছে কংগ্রেসকে।  আবার এখন রাজ্যের রাজনৈতিক পরিসর অনেকটাই দখল করে নিয়েছে বিজেপি। পশ্চিমবঙ্গে প্রায়প্রান্তিক শক্তিতে পরিণত হওয়া কংগ্রেসকে ঘুরে দাঁড়াতে হলে যে প্রচুর কাঠখড় পোড়াতে হবে, সে বিষয়ে সন্দেহ নেই হাইকম্যান্ডের। তা হলে কী ভাবে সংগঠনমজবুত করার কথা ভাবছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি?
    জবাবে অধীর আজ রবিবারবলেন, লোকসভা ভোটে রাজ্যে ১০ শতাংশ ভোট পেয়েছে কংগ্রেস। এই ভোটের বেশিরভাগটাই এসেছে উত্তরবঙ্গের চার জেলা থেকে। বাকি জেলাগুলিতে বুথ ভিত্তিক ফলবিচার করলে কংগ্রেসের দুর্বল জনভিত্তির ছবিটাই মেলে।  কম ভোট পাওয়ার জন্যপ্রদেশ কংগ্রেসের অনেক নেতা শাসক তৃণমূলের বিরুদ্ধে রিগিংকেই দায়ী করছেন।  কিন্তু প্রদেশ সভাপতির অভিমত ভাবের ঘরে চুরি করে লাভ নেই।  রিগিং না হলে ওইআসনগুলি কি জিততো কংগ্রেস? অধীরের কথায়, কংগ্রেসে মূল সমস্যা আস্থার ঘাটতি। নিচু স্তরের কংগ্রেস কর্মীদের ওপর মানুষ আস্থা হারিয়েছেন। আবার সেইকর্মীদের আস্থা হারিয়েছেন ওপরের স্তরের নেতারা। এই আস্থা ফেরাতে পারলেইকংগ্রেসের সঙ্গে ফের মানুষের যোগাযোগ গড়ে তোলা যাবে।
    প্রদেশ কংগ্রেসসভাপতি বলেন, রাজ্যে গঠনমূলক বিরোধীর ভূমিকাও নিতে হবে কংগ্রেসকে। তাঁরমতে, গত দশ বছর রা জ্য কংগ্রেসের আন্দোলনের ক্ষেত্রে কতগুলি সীমাবদ্ধতাছিল। কারণ, প্রথমে বামেরা ও পরে তৃণমূল কেন্দ্রে হয় শরিক, না-হয় সমর্থক দলছিল। কিন্তু এখন প্রচারে নেমে কেন্দ্র-রাজ্য উভয়ের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের সুযোগ এসেছে কংগ্রেসের সামনে। পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা ভোট আসতে আসতে রাজ্য ওকেন্দ্রের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য কংগ্রেসের সামনে অনেক সুযোগ এসে যাবে।মজার বিষয় হল, কংগ্রেস হাইকম্যান্ড যখন অধীরের নেতৃত্বে সংগঠন মজবুত করারকথা ভাবছেন। তখন প্রদেশ কংগ্রেসের কিছু নেতা লোকসভা ভোটের পর সেই অধীরেরই ডানা ছাঁটতে সচেষ্ট। সম্প্রতি প্রদেশ কংগ্রেস দফতরে ডাকা একটি বৈঠক চলাকালীন এই গোষ্ঠীর নেতারা অশান্তি বাধান।  হাইকম্যান্ডের কাছে ফ্যাক্সপাঠিয়ে তাঁরা অধীরের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগও করেছেন। অবশ্য ওই বৈঠকের আগেই সোনিয়ার সঙ্গে দেখা হয়েছিল অধীরের। বৈঠকের আগে-পরে রাহুল গাঁন্ধীর সঙ্গেবেশ কয়েক বার দেখা করেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি। সূত্রের খবর, রাহুলকে অধীরঠারেঠোরে জানিয়ে দিয়েছেন, পদের মোহ তাঁর নেই। কিন্তু সত্যিই যদি রাজ্য জুড়েমুর্শিদাবাদের ধাঁচে কংগ্রেসের সংগঠন তৈরি করতে হয়, তা হলে দল পরিচালনায়তাঁকে আরও স্বাধীনতা দিতে হবে। কারণ, গণতন্ত্র রক্ষার নামে অকেজো লোককে মাথায় তুলে রেখে সংগঠন শক্তিশালী করা যায় না। এ ব্যাপারে কেন্দ্রীয় নেতাদের অনেকেই প্রদেশ সভাপতির সঙ্গে একমত। তাঁরাও মনে করেন, শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয়, কমবেশি সব রাজ্যে কংগ্রেস এই রোগে আক্রান্ত। এ ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলেঅধীরবাবু বলেন, মুর্শিদাবাদে কখনও গোষ্ঠী রাজনীতিকে প্রশ্রয় দিইনি। প্রদেশ কংগ্রেসেও এই সংস্কৃতি থেকে বেরোতে চাই।  তবে মুখে এ কথা বললেও সংগঠনসাজাতে গিয়ে অধীরের কিছুটা সমস্যা হচ্ছে প্রাক্তন তিন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেন মিত্র, প্রদীপ ভট্টাচার্য এবং মানস ভুঁইয়াকে নিয়ে। বয়স ওরাজনীতিতে এঁরা সকলেই অধীরের বর্ষীয়ান।  সূত্রের খবর, কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে অধীর জানিয়েছেন, এই তিন নেতাকে কী দায়িত্ব দেওয়া হবে, তা যেন হাইকম্যান্ডই স্থির করেন।  হাইকম্যান্ডকে অধীর জানিয়েছেন, তাঁর বিরুদ্ধে কারও অভিযোগ থাকলে মুখোমুখি আলোচনায় বসে তা বলা হোক।  সেখানে থাকুন হাইকম্যান্ডের প্রতিনিধিও।  বস্তুত সেই দাবি মেনে নিয়েই আগামী সোমবার রাত আটটায় দিল্লিতে প্রদেশ কংগ্রেস নেতাদের বৈঠকে ডেকেছেন পশ্চিমবঙ্গের দায়িত্বে থাকা কেন্দ্রীয় নেতা সি পি জোশী।
    এর পরেও প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে, ঘরে-বাইরের বাধা সরিয়ে অধীর কি শেষমেশ সফল হতে পারবেন? জবাবে প্রদেশ সভাপতি বলেন, লড়াইনা করে ময়দান কখনও ছাড়িনি। এ বারও ছাড়ব না।সুত্রঃওয়েবসাইট