কারিগরি শিক্ষা নিলে ঘরে ঘরে চাকরি মিলে

    0
    480

    হাবিবুর রহমান খান,জুড়ী থেকেঃ বাংলাদেশ একটি জনবহুল দেশ। এটি পৃথিবীর সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ জনবহুল দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম দেশ।১,৪৭,৫৭০ বর্গ কিলোমিটারে বাস করে ১৬ কোটি ১৭ লক্ষ ৫০ হাজার মানুষ(বিবিএস)। বিপুল জনগোষ্ঠীর চাপ, প্রতিষ্ঠানের স্বল্পতা,বিপন্ন আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতি, রাজনৈতিক অস্থিরতা এদেশের উন্নয়নের পাশাপাশি শিক্ষার উন্নয়নেও প্রতিবন্ধক হিসেবে বিদ্যমান রয়েছে। আমাদের প্রাথমিক শিক্ষা পদ্ধতিতে নানা সংস্কারমুক্ত হলেও এখনো এটি সুপ্রশিক্ষিত ও সুশিক্ষিত জনগোষ্ঠী তৈরির জন্য যথোপোযুক্ত হয়ে উঠতে পারেনি।

    আর এর ফলেই আমাদের বিপুল জনসংখ্যা জনশক্তিতে রূপান্তরিত হতে পারে নাই। আমাদের জনসংখ্যার মূল অংশ যুব সম্প্রদায়, যেখানে শ্রম শক্তিতে পরিণত হয়ে জাতীয় উন্নয়নে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারত, সেখানে তারা জাতির জন্য বুঝা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। এই বপিুল জনশক্তিকে দক্ষ শ্রম শক্তিতে রূপান্তরিত করতে হলে কারিগরি শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা অপরিহার্য। আর এটা শুরু করতে হবে একেবারেই প্রাথমিক স্তর থেকে। তাহলেই গড়ে উঠবে টেকসই উন্নয়নের সহায়ক দক্ষ জনশক্তি।

    অত্যান্ত আশার কথা যে, বর্তমান সরকার আমাদের জাতীয় শিক্ষানীতিতে প্রাথমিক পর্যায়ে কারিগরি শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা বিষয়টি অন্তর্ভূক্ত করেছেন। জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০ এর মুখবন্ধে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী জনাব নুরুল ইসলাম নাহিদ, লিখেছেন-“ কারিগরি ও বৃত্তিমুখী শিক্ষার প্রসার ঘটিয়ে আমাদের বিরাট সংখ্যক তরুণদের দক্ষ ও পেশাদার মানবসম্পদে রূপান্তরিত করতে হবে”।কারিগরি শিক্ষা হচ্ছে এমন এক ধরণের শিক্ষা যাতে শিক্ষার্থী তার জীবনের বাস্তব ক্ষেত্রে কোন একটি পেশা সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান লাভ করতে পারে। “কারিগরি শিক্ষা নিলে ঘরে ঘরে চাকরি মিলে” সাধারণ শিক্ষায় অনুৎসাহী শিক্ষার্থীর মনের মত কারিগরি শিক্ষায় অনুশীলন করে নানাভাবে সাফল্যের পরিচয় দিতে পারে। এ ধরণের শিক্ষার প্রধান শর্ত পরিশ্রম, একাগ্রতা ও যথার্থ অনুশীলন।

    কারিগরি শিক্ষার মাধ্যমেই কম মেধাবী শিক্ষার্থীকেও জাতির জন্য প্রয়োজনীয় ও দক্ষ জনশক্তি হিসেবে গড়ে তোলা যায়।
    খুব স্বল্প পরিসরে আমাদের দেশে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা ব্যবস্থা মাধ্যমিক শিক্ষার পরবর্তী স্তরে কার্যকর আছে। যা মূল শিক্ষার্থী বা জনসংখ্যার তুলনায় খুবই নগন্য। কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষার্থীর হার বাড়াতে হলে প্রাথমিক স্তর থেকেই কারিগরি শিক্ষাকে গুরুত্ব দিতে হবে। আমাদের জাতীয় শিক্ষানীতিতে প্রাক-প্রাথমিক ও প্রাথমিক শিক্ষার শিরোনামে শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যসূচীর উপর শিরোনামে বলা হয়েছে- প্রাথমিক স্তরের শেষ তিন শ্রেণীতে অর্থাৎ ৬ষ্ঠ থেকে ৮ম শ্রেণী পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের জীবন পরিবেশের উপযোগী প্রাক-বৃত্তিমূলক এবং তথ্য প্রযুক্তি শিক্ষা প্রদান করা হবে,যাতে তারা কোনো কারণে আর উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণ করতে না পারলে এ শিক্ষার মাধ্যমে তাদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হতে পারে।

    এক্ষেত্রে আমাদের বক্তব্য হচ্ছে- একবারে প্রাথমিক পর্যায় থেকে কারিগরি শিক্ষার বিষয়টি সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের ধারণা প্রদান করতে হবে। যাতে তারা মানসিকভাবে প্রস্তুত হতে পারে। আমি মনে করি, সরকারের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব ৬ষ্ঠ থেকে ৮ম শ্রেণী পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের জীবন পরিবেশের উপযোগী প্রাক-বৃত্তিমূলক এবং তথ্য প্রযুক্তি নির্ভর শিক্ষা বাস্তবায়ন করা অপরিহার্য। এ সংক্রান্ত বিষয়ে অবকাঠামো নির্মাণ, অনুকূল পরিবেশ তৈরি করা, দক্ষ শিক্ষক নিয়োগ করা এবং জনসচেতনতা তৈরি । প্রাক-প্রাথমিক এবং তথ্য প্রযুক্তির গবেষণার দ্বার উম্মোচিত করা যাতে এর বাস্তব চিত্র পাওয়া যায়। বর্তমান বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ৭.৮৬ শতাংশ, মাথাপিছু আয় ১৭৫১ ডলার, সাক্ষরতার হার ৭২.৭৬%।

    জিডিপির অংশ দুই অংকে প্রবেশ করাতে হলে কারিগরি, বৃত্তিমূলক ও তথ্য প্রযুক্তি নির্ভর শিক্ষার কোন বিকল্প নেই। কারণ বৃত্তিমূলক শিক্ষা শিক্ষার্থীদেরকে বোঝা নয়, দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তরিত করবে। দক্ষ মানব সম্পদ অর্থনীতির মূল চালিকা শক্তি হিসেবে কাজ করবে। ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হওয়া এবং ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জন এবং ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ উন্নত দেশে পদার্পণ। এসব লক্ষ্য অর্জন করতে প্রাক বৃত্তিমূলক ও তথ্য প্রযুক্তি নির্ভর শিক্ষা কার্যকরী ভূমিকা রাখবে। কারিগরী ও তথ্য প্রযুক্তি শিক্ষাকে গুরুত্ব দিয়ে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন- “জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০ এর উল্লেখযোগ্য দিক হল ধর্ম, বিজ্ঞান ও কারিগরি শিক্ষাকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে।

    এতে মানুষের স্বভাবজাত অনুভূতিকে যেমন গুরুত্ব দেয়া হয়েছে, তেমনি পার্থিব জগতে জীবন জীবিকার সুযোগ সৃষ্টিকারী শিক্ষা প্রদানের ব্যবস্থা রয়েছে-যা কর্মসংস্থানের দ্বার উন্মোচিত করবে। দেশ অগ্রগতির পথে এগিয়ে যাবে। আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পন্ন জ্ঞানলাভ করে বাংলাদেশকে জাতির পিতার স্বপ্নের দারিদ্রমুক্ত সোনার বাংলা গড়ে তুলতে সক্ষম হব”। কারিগরী ও তথ্য প্রযুক্তি নির্ভর শিক্ষা বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় উদ্যোগসমূহ সরকার গ্রহণ করবে এবং বাস্তবায়ন করবে। ফলে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা এর সার্থক রূপ লাভ করবে।