জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তপসিল প্রত্যাখ্যান করেছে বিএনপি:রিজভী

0
126

“ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশ নেবে না দলটি”

আমার সিলেট রিপোর্ট: জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ঘোষিত তপসিলকে তামাশা ও নিশি রাতের ঘোষণা দাবি করে একে ‘ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান’ করেছে বিএনপি। দলটি বলেছে, গোটা বাংলাদেশের প্রত্যাশা, জনমত ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আহ্বান উপেক্ষা করে ‘নিশিরাতের সরকারের তল্পিবাহক নির্বাচন কমিশন একতরফা ভোট’-এর তপসিল ঘোষণা করেছে।

আরেকটি প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্র ও জনগণের ভোটাধিকার হরণের জন্য যে তপসিল ঘোষণা করা হয়েছে, তা বঙ্গোপসাগরে ভাসিয়ে দেবে জনতা। তপসিল জারির মাধ্যমে সিইসি জাতির সঙ্গে তামাশা করেছেন। তাঁর ভাষা প্রধানমন্ত্রীর ভাষারই প্রতিফলন।

তপশিল ঘোষণার পরপরই রাজধানীতে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, গণতন্ত্র মঞ্চসহ বিভিন্ন দল ও জোট বিক্ষোভ মিছিল করেছে। তপসিল প্রত্যাখ্যান করে পূর্ব ঘোষিত চলমান অবরোধের মধ্যেই আজ বৃহস্পতিবার আবারো সকাল-সন্ধ্যা সারাদেশে হরতাল ডেকেছে গণতন্ত্র মঞ্চ। অন্যদিকে, আজ সারাদেশে অর্ধদিবস হরতালও ডেকেছে বাম গণতান্ত্রিক জোট। তপসিল ঘোষণার পর সারাদেশে অর্ধশতাধিক গাড়িতে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছে দুর্বৃত্তরা। এ ছাড়া গাজীপুরে ট্রেনলাইনে ও দাঁড়িয়ে থাকার ট্রেনে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে বলে জানা গেছে। এতে টাঙ্গাইলের একটি কমেডোর ট্রেনের তিনটি বগি পুড়ে গিয়েছে।

বুধবার ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে তপশিল নিয়ে দলের প্রতিক্রিয়া জানান বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশ নেবে না দলটি।

এবার চূড়ান্ত আন্দোলনের শেষ ধাপে আরও কঠোর কর্মসূচি ঘোষণার প্রস্তুতি রয়েছে বলে দাবি করছে দলটির নেতৃবৃন্দ। সেই কর্মসূচিতে আগামী রোববার থেকে টানা হরতাল ও অবরোধ কর্মসূচি আসতে পারে বলে জানা গেছে।

রিজভীর ভাষায়, দেশে ভীতিকর যুদ্ধকালীন পরিস্থিতি সৃষ্টি করে একতরফা নির্বাচনের এই তথাকথিত তপসিল জনগণ মানে না। এই নীল-নকশার তপসিলে বাংলাদেশের মাটিতে কোনো নির্বাচন হবে না।

সরকার ও নির্বাচন কমিশনকে হুঁশিয়ার করে তিনি বলেন, জনগণের চলমান অগ্নিগর্ভ আন্দোলন আরও তীব্র, আরও কঠিন থেকে কঠিনতর হবে এবং অতি দ্রুতই আওয়ামী সরকারের পতন ঘটবে। জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠার পর এই সম্পূর্ণ অবৈধ প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত সবার বিচার করবে জনগণ।

রিজভী বলেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনার তাঁর ভাষণে বলেছেন, অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন করবেন। এ কথা তো ডাহা মিথ্যা, ভণ্ডামিপূর্ণ এবং মেকি। শেখ হাসিনার অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচনে বিশ্বাস করা চোরাবালিতে পড়ার শামিল। দেশকে নিশ্চিত সংঘাতের দিকে ধাবিত করে ফের গরু-ছাগল দিয়ে নির্বাচনের পাঁয়তারা চলছে।

তিনি বলেন, সরকার ভেবেছে, আবারও একটি পাতানো ভোটরঙ্গ মঞ্চস্থ করবে। কিন্তু এটা ২০১৪ কিংবা ২০১৮ সাল নয়। তপসিল দিলেন আর পুলিশি ভোটের মাধ্যমে ফল ঘোষণা করে ক্ষমতার সিংহাসন রক্ষা করলেন– এই দিবাস্বপ্ন আর বাস্তবায়িত হবে না। শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও নির্দলীয়, নিরপেক্ষ কেয়ারটেকার সরকারের অধীনেই হবে নির্বাচন।

রিজভী বলেন, আওয়ামী লীগের লগি-বৈঠার সন্ত্রাসী বাহিনীর পাহারা এবং রায়টকার, জলকামান, সাঁজোয়া যান নিয়ে শত শত পুলিশ-র‍্যাব-বিজিবি বেষ্টিত ইসি ভবনে বসে সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল সিলেকশন ভোটের তপশিল ঘোষণা করে গোটা দেশকে অন্ধকারে নিক্ষেপ করলেন। অতীতে রকিব-হুদা কমিশনের মতোই কাজী হাবিবুল আউয়াল কমিশন দলদাসত্ব প্রদর্শন করে গণশত্রুতে পরিণত হয়েছে।

সরকারের উদ্দেশে রিজভী বলেন, রাজপথের দিকে তাকিয়ে দেখেন। গোটা দেশ অচল হয়ে গেছে। এই ঊর্মিমুখর জনতরঙ্গ রোখার ক্ষমতা সরকারের নেই। কান পেতে পতনের বুলন্দ আওয়াজ শোনেন। ক্রমে ঘনিয়ে আসছে অন্তিম সময়।

এদিকে তপসিল প্রত্যাখ্যান করে ঢাকায় বুধবার সন্ধ্যার পর দলটির নেতাকর্মী রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে মশাল মিছিল বের করে।