জৈন্তাপুরের প্রকৃতির মহিমায় লাল শাপলায় সাজিয়েছে ৪টি বিল

    0
    268

    আমারসিলেট টুয়েন্টিফোর ডটকম,২২নভেম্বর,রেজওয়ান করিম সাব্বিরঃ  পান-পানি-নারী খ্যাত সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলার ঐতিহ্যবাহী এবং জৈন্তিয়া রাজ্যের রাজা রাম সিংহের স্মৃতি বিজড়িত ৪টি বিল প্রকৃতি তার নিজ হাতে আপন মহিমায় লাল শাপলার হাসিতে সাজিয়ে দিয়েছে। দেখলে মনে হয় এ যেন এক মায়াবি মাঠ বাংলায় আর দ্বিতীয় টি নেই।

    সরেজমিনে বিল ৪টি ঘুরে এলাকাবাসীর সাথে আলাপকালে জানাযায়- পাহাড়ী টিলা, ঝরনা আর বিল ঝিল হাওয়, নদী-নালা, খাল-বিল বেষ্টিত ও প্রাকৃতিক খনিজ সম্পদে ভরপুর উপজেলা জৈন্তাপুর। স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে এ বিলে কোন ধারনে শাপলা ছিল না। ২০ হতে ২৫ বৎসর পূর্বে সীমান্তে ওপারে খাসিয়া সম্প্রদায়ের লোকজন লাল-শাপলা দিয়ে পুজা অর্চনা করতেন। কোন এক খাসিয়া পরিবারের লোক প্রথমে ডিবি বিলে লাল শাপলার একটি চারা রোপন করেন পূজা অর্চনায় ফুলের চহিদা মেটাতে। সেই হতে একে একে জৈন্তিয়া রাজ্যের অন্যতম স্মৃতি বিজাড়িত ডিবিবিল, কেন্দ্রিবিল, হয়রফকাটা বিল, ইয়ামবিল সহ পাশ্ববর্তী জানসাধারনের পুকুর নালায় পরিপূর্ণ হয়ে পড়ে লাল শাপলায়।

    প্রকৃতির অপরুপ সাঁঝে জৈন্তার বিল গুলো
    প্রকৃতির অপরুপ সাঁঝে জৈন্তার বিল গুলো

    ৪টি বিল অন্তত প্রায় ৪ শতাধিক একর জায়গা জুড়ে লাল শাপলায় দখল করে আছে। ভোর হতে সকাল ১১টা পর্যন্ত বিল গুলোর ধারে দাঁড়ালে মনে হবে আপনি প্রাকৃতির এমন এক মায়বী স্থানে দাঁড়িয়ে রয়েছেন যাহা বাংলার ভূখন্ডে আর দ্বিতীয়টি নেই। যে দিকে থাকাবেন সেদিকে দেখতে পাবেন লাল শাপলা হাঁসিতে ভরে উঠেছে। ক্রমশঃ উপজেলার গন্ডি পেরিয়ে লালা শাপলার এই বিল গুলো বাংলাদেশের সকল জেলার ভ্রমন ও সৌন্দর্য্য পিপাসু মানুষ জনের কাছে পরিচিতি লাভ করেছে। সূর্য উঠার সাথে সাথে লাল শাপলার হাঁসি দেখতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত হতে লোকজন ছুটে আসেন বিল গুলোতে। ইতোমধ্যে লাল-শাপলার বিল হিসাবে পর্যটন খ্যাত সিলেটের দর্শনীয় স্থানের তালিকায় নাম দখল করে নিয়েছে জৈন্তাপুরের ইয়ামবিল, পাশাপশি বাকী বিল গুলোও তাদের সৌন্দর্য্য বিলিয়ে দিচ্ছে ভ্রমন পিপাসুদের মাঝে।

    স্থানীয় বাসিন্দা ডিবিরহাওর গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা সামসুল হক, বাসিন্দা খন্দকার আব্দুল মালেক, সুলেমান মিয়া, ফরিদ মিয়া, মনোরঞ্জন বাবু, নিরঞ্জন বিশ্বাস সহ ডজন খানেক ব্যক্তির সাথে আলাপকালে তারা জানান- সূর্ষ উদয়ের পর হতে বিল গুলোতে শাপলার হাসি দেখতে মানুষ বিড় জমাচ্ছে। তবে বিগত ২০১৫ সনে জাতীয় একটি পত্রিকায় ইয়ামবিলের ছবি সহ সংবাদ প্রকাশের পর ভ্রমনপিপাসু লোকজন একনজর দেখতে ভোর বেলা হতে বিল গুলোতে বিড় জমান। তারা আরও বলেন- লাল শাপলার হাঁসিতে বিলের আশ পাশ এলাকার সৌন্দর্য্য বৃদ্ধি করেছে। আমাদের ভাল লাগে শাপলার জন্য বিলে বিভিন্ন প্রজাতির পাখি কল কল শব্দে এবং লাল শাপলার সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে। যেহেতু বিল গুলো সরকারের লীজের অন্তভূক্ত এবং সরকার প্রতি বৎসর রাজস্ব আয় করছে বিল সমুহ হতে। সেহেতু হাওরের সৌন্দর্য্য ভ্রমন পিপাসু লোকজনদের আরও আকৃষ্ট করতে পর্যটন টাওয়ার নির্মাণ করার দাবী জানান।

    প্রকৃতির অপরুপ সাঁঝে শিশুদের বিচরনে মুখোর জৈন্তার লাল শাপলা বিল।
    প্রকৃতির অপরুপ সাঁঝে শিশুদের বিচরনে মুখোর জৈন্তার লাল শাপলা বিল।

    এদিকে একটি গবেষক দল ইতোপূর্বে তাদের গবেষনায় প্রাপ্ত তথ্যের আলোকে দাবী করেছেন ডিবিবিলে রয়েছে অতিমূল্যবান খনিজ সম্পদ ইউরোনিয়াম মজুদ রয়েছে। এজন্য কয়েক দফায় ভারত বিল গুলো দখলনিতে চেষ্টা চালায়। তাই সর্বাধিক বিবেচনা করে প্রকৃতিক সৌন্দর্য্য রক্ষার জন্য জরুরী ভিত্তিত্বে ৪টি বিলকে পর্যটনের আওতায় অন্তরভূক্তের জন্য।

    এলাকাবাসী আরও জানান- সম্প্রতি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় প্রকৃতিক ও মূল্যবান খনিজ সম্পদ ইউরেনিয়ামে ভরপূর এই বিলের প্রায় ৯শত একর জায়গা পাথর ক্রশিং জোন তৈরীর পরিকল্পনা করে তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খালেদুর রহমান ইউরেনিয়াম খনির ধ্বংশের পরিকল্পনা গ্রহন করে অর্থনৈতিক জোন তৈরীর পরিকল্পনা করেন। তারই প্রতিবাদে আমরা কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার সিলেটে ডিবিবিলের ইউরেনিয়াম সম্পদ রক্ষা, ২২ মুক্তিযোদ্ধার গ্রাম রক্ষা এবং লাল শাপলার বিল রক্ষার দাবীতে মানব বন্দন পালন করি।

    অভিলম্বে অর্থনৈতিক জোনের পরিকল্পনা বাতিল বরে এবং প্রাকৃতিক সম্পদ ইউরেনিয়াম রক্ষা এবং বাংলাদেশের সর্ববৃহত লাল শাপলার বিলকে পর্যটন এলাকা ঘোষনার দাবী জানান।