দীর্ঘদিন পরে হলেও মুক্তিযুদ্ধে একই পরিবারের ৯জন শহীদের স্বরণে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ

0
119

চুনারুঘাট (হবিগঞ্জ) প্রতিনিধি: হবিগঞ্জের চুনারুঘাটে মহান মুক্তিযুদ্ধে হত্যার শিকার হন একই পরিবারের ৯ জন। দীর্ঘদিন পরে হলেও এই ৯ জন শহীদদের স্বরণে নির্মাণ করা হয়েছে স্মৃতিস্তম্ভ।
স্থানীয় ও প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ৪ নম্বর পাইকপাড়া ইউনিয়নের ফুলপুর গ্রামে ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে একই পরিবারের নয়জনকে পাক হানাদার বাহিনী নির্মমভাবে হত্যা করে। ভাগ্যক্রমে পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা বেঁচে যান। শহীদ ৯ জন হলেন- গোলক দেবনাথ, রাম চরণ দেবনাথ, শ্যাম সুন্দর দেবনাথ, গোপেন্দ্র দেবনাথ, প্রফুল্ল দেবনাথ, রাজেন্দ্র দেবনাথ, মাখন দেবনাথ, ঠাকুরধন দেবনাথ, সুরেশ দেবনাথ।
শহীদ গোলক দেবনাথের দৌহিত্র স্বপন দেবনাথ জানান, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে এক কালো রাতে পাক হানাদার বাহিনী আমার ঠাকুরদাদা, জেঠুসহ একই পরিবারের নয়জনকে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে জেলার শায়েস্তাগঞ্জের হাফিজপুরে নিয়ে নৃশংসভাবে গুলি করে হত্যা করে। নয়জনের মধ্যে দুইজন ঠাকুরধন দেবনাথ ও সুরেশ দেবনাথ ওই সময় আমাদের বাড়িতে বেড়াতে এসেছিলেন।
তিনি বলেন, স্বাধীনতার এতো বছর পরে মহান মুক্তিযুদ্ধে আমাদের বংশের শহীদদের স্বরণে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মান করায় সংশ্লিষ্টদের ধন্যবাদ জানাই। তবে আমরা শহীদ পরিবারের সদস্য হিসাবে সরকারের নিকট সহযোগিতা ও শহীদ পরিবারের স্বীকৃতি চাই।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা প্লাবন পাল জানান, ফুলপুর গ্রামে নয়জন শহীদদের স্মরণে ২০২২ – ২৩ অর্থবছরে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী এডভোকেট মাহবুব আলীর টি. আর কর্মসূচির আওতায় সম্প্রতি এ স্মৃতিস্তম্ভ নিমার্ণ করা হয়েছে।
চুনারুঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সিদ্ধার্থ ভৌমিক জানান, শহীদ নয়জনের আত্মত্যাগের স্মৃতি ধরে রাখার জন্য উপজেলা প্রশাসন এবং উপজেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের সার্বিক তত্ত্বাবধানে এ দৃষ্টিনন্দন বধ্যভূমি (স্মৃতিস্তম্ভ) নির্মাণ করা হয়। এটি যুগ যুগ ধরে মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বহন করে কালের সাক্ষী হয়ে থাকবে।

তাহিরপুরে চোরাচালান ও চাঁদাবাজি
নিয়ে দু‘পক্ষের সংঘর্ষে আহত ৫
সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি: সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুরে চোরাচালান ও চাঁদাবাজি নিয়ে দু‘পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় ৫জন আহত হয়েছে। আহতদের মধ্যে গুরুতর অবস্থায় হ্নদয় মিয়া ও হলুদ মিয়াকে ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে আজ সোমবার (৯ অক্টোবর) সকালে জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করা হয়েছে। আর অন্যান্য আহতদের স্থানীয় ভাবে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে- প্রতিদিনের মতো গতকাল রবিবার (৮ অক্টোবর) রাত ১১টার পর থেকে তাহিরপুর উপজেলার বীরেন্দ্রনগর ও চারাগাঁও সীমান্তের লামাকাটা, জঙ্গলবাড়ি, কলাগাঁও, এলসি পয়েন্ট, বাঁশতলা, বালিয়াঘাট সীমান্তের লালঘাট, লাকমা, টেকেরঘাট সীমান্তের চুনাপাথর খনি প্রকল্প, বরুঙ্গাছড়া, রজনীলাইন, চাঁনপুর সীমান্তের নয়াছড়া, গারোঘাট, রাজাই, কড়ইগড়া, বারেকটিলা ও লাউড়গড় সীমান্তের যাদুকাটা নদী, সাহিদবাদ, পুরান লাউড় এলাকা দিয়ে পৃথক ভাবে কয়লা ও মাদকসহ পাথর, নাসিরউদ্দিন বিড়ি, গাছ, কসমেটিস, চিনি, সুপারীসহ বিভিন্ন পন্য সামগ্রী রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে ভারত থেকে পাচাঁর শুরু করে সোর্স পরিচয়ধারী একাধিক মামলার আসামী ইয়াবা কালাম মিয়া, রতন মহলদার, কামরুল মিয়া, মোক্তার মহলদার, নেকবর আলী, জিয়াউর রহমান জিয়া, মনির মিয়া, লেংড়া জামাল, রফ মিয়া, আইনাল মিয়া, সাইফুল মিয়া, রিপন মিয়া, হযরত আলী, আনোয়ার হোসেন বাবলু, রুবেল মিয়া, খোকন মিয়া, রুস্তম মিয়া, মনতাজ মিয়া, আক্কাছ মিয়া, আবু বক্কর, রফিকুল, বায়েজিদ মিয়া, জসিম মিয়াগং। এমতাবস্থায় রাত অনুমান সাড়ে ১১টার সময় কলাগাঁও মাইজহাটি-লামাকাটা এলাকায় তোতলা আজাদের সোর্স রফ মিয়া ও চোরাই কয়লা ব্যবসায়ীদের মধ্যে চাঁদা উত্তোলন নিয়ে প্রথমে কথা কাটাকাটি হয়। ওই সময় রফ মিয়ার পক্ষে শামীম মিয়া ও সৌরভ মিয়াগং দেশীয় অস্ত্র-সস্ত্র দিয়ে চোরাই কয়লা ব্যবসায়ী হ্নদয় মিয়া (২৫) ও হলুদ মিয়া (২২)কে গুরুতর আহত করে। তাদের রক্ষা করতে এসে আরো ৩জন আহত হয়। এঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে এবং রাতেই গুরুতর আহত ২জনকে তাহিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেওয়া হয়। কিন্তু আহতদের শারীরিক অবস্থার অবনতি দেখে তাদেরকে সুনামগঞ্জ পাঠানো হয়।
এব্যাপারে আহত হ্নদয়ের বাবা সিদ্দিক মিয়া বলেন- সবাইকে আমি চিনতে পারিনি। সোর্স রফ মিয়া, শামীম ও সৌরভকে চিনতে পেরেছি। তাদের সাথে আরো অনেকেই ছিল। চাঁদার জন্য ওরা আমার ছেলের ওপর হামলা করেছে, বতর্মানে তার অবস্থা খুবই খারাপ। চোরাচালান মামলার আসামী সোর্স রফ মিয়া বলেন- আজাদ ভাই ও থানাসহ সবার দায়িত্ব এতদিন পালন করেছি। এখন আস্তে আস্তে সব বাদ দিয়ে দিতেছি। তবে সংঘর্ষের সময় আমি ছিলাম না। খবর পেয়ে পুলিশ নিয়ে ঘটনাস্থলে গেছি। এলাকার মানুষ আমার বিরুদ্ধে নানান কিছু বলতেই পারে।
কয়লা ও চুনাপাথর আমদানী কারক রাশিদ মেম্মার ও আবুল বাশার নয়ন বলেন- চোরাচালান ও চাঁদাবাজি নিয়ে সংঘর্ষের ঘটনা এখানে নতুন না। তোতলা আজাদের ব্যাপারে প্রশাসনকে জানানোর পরও কেউ কোন পদক্ষেপ নেয়না। চারাগাঁও বিজিবি ক্যাম্প কমান্ডার তাজুল ইসলাম বলেন- চোরারা চুরি করে এসব করে। তবে সংঘর্ষের ঘটনা আমার এলাকায় হয়নি। বিজিবির সোর্স পরিচয়ধারী চোরাকারবারী আইনাল মিয়া, সাইফুল মিয়া ও রিপন মিয়াকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। কারণ আমাদের কোন সোর্স নাই।
এব্যাপারে তাহিরপুর থানার ওসি কাজী নাজিম উদ্দিন বলেন- সংঘর্ষের খবর পেয়ে রাতেই ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। থানা-পুলিশের কোন সোর্স নাই। আমি এই থানায় আসার পর সীমান্ত চোরাচালান ও চাঁদাবাজি নিয়ে লোকজনের কাছ থেকে অনেক কিছু জানতে পেরেছি। এব্যাপারে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
উল্লেখ্য, গত শুক্রবার (২৯সেপ্টেম্ভর) ভোরে লাউড়গড় বিজিবি ক্যাম্পের সামনে অবস্থিত যাদুকাটা নদী দিয়ে ভারত থেকে পাথর ও কয়লা পাচাঁরের সময় বিএসএফের তাড়া খেয়ে নদীতে ডুবে শ্রমিক কাছম আলী (৬০) মারা যায়। তার আগে গত ৩আগস্ট (বৃহস্পতিবার) ভোরে একই ভাবে যাদুকাটা নদী দিয়ে ভারত থেকে পাথর পাচাঁরের সময় নৌকা ডুবে আব্দুল হাসিম (৩৫) নামের এক শ্রমিকের মৃত্যু হয়। এছাড়া গত ৫আগস্ট (শনিবার) দুপুরে বালিয়াঘাট সীমান্তের লাকমাছড়া এলাকা দিয়ে ভারত থেকে কয়লা পাচাঁর করতে গিয়ে গর্তে পড়ে আক্তার হোসেন (১৬) নামের এক কিশোরের মৃত্যু হয়। এছাড়াও সীমান্ত চোরাচালান করতে গিয়ে তাহিরপুর উপজেলার বীরেন্দ্রনগর,চারাগাঁও,বালিয়াঘাট,টেকেরঘাট,চাঁনপুর ও লাউড়গড় সীমান্তে নদীতে ডুবে ও চোরাই কয়লার গর্তে মাটি চাপা পড়ে গত এপর্যন্ত শতাধিক লোকের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে।