নূরুজ্জামান ফারুকী,নবীগঞ্জ থেকে: হবিগঞ্জের নবীগঞ্জে সহপাঠিদের ছুরিকাঘাতে রাইসুল হক তাহসিন (১৯) হত্যাকান্ডের ঘটনা চারদিন অতিবাহিত হলেও এঘটনায় কোনো মামলা দায়ের হয়নি। মামলা দায়ের না হওয়ায় জনমনে দেখা দিয়েছে নানা প্রশ্ন? উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বেড়েছে অভিভাবক মহলে। নিজের সন্তানদের স্কুল-কলেজে দিতে এক অজানা ভয় কাজ করছে অভিভাবকদের মাঝে। তবে দ্রুত আসামীদের আইনের আওতায় আনা হবে বলে প্রত্যাশা তাহসিনের সহপাঠিদের।
নবীগঞ্জ সরকারি কলেজের দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্র সৈয়দ রাইসুল হক তাহসিন (১৯) বানিয়াচং উপজেলার কালাইনজুড়া গ্রামের বাসিন্দা এবং নবীগঞ্জ শহরের শেরপুর রোডের রাজন ওয়ার্কশপের সত্ত্বাধিকারী সৈয়দ রাজন মিয়ার ছেলে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, পূর্ব বিরোধের জেরে গত ২৭ ফেব্রুয়ারী রাত ৯ টার দিকে ওসমানী রোডের চৌদ্দহাজারি মার্কেটের সামনে প্রতিপক্ষের লোকজনের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে সৈয়দ তাহসিন গুরুতর আহত হয়। স্থানীয় লোকজন তাকে উদ্ধার করে নবীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে সিলেট প্রেরণ করেন। অ্যাম্বুলেন্স যোগে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথিমধ্যে তাহসিন মারা যায়। সকল আইনি কাজ সম্পাদন করে পরের দিন ২৮ ফেব্রুয়ারী সন্ধ্যায় নবীগঞ্জ জেকে উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে নিহত কলেজ ছাত্র তাহসিনের জানাযার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়।
পরে বানিয়াচং উপজেলার কালাইনজুড়া গ্রামে তাহসিনের দাফন করা হয়।
এদিকে তাহসিনকে মারধর সংক্রান্ত সিসি টিভি ফুটেজ ও পূর্ব আক্রোশের জের ধরে তাহসিনকে দাফনের আগেই নবীগঞ্জ শহরে দু’গ্রামবাসী সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। সংঘর্ষে নবীগঞ্জ শহর রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। শুরু হয়েছে নতুন গল্পের। অন্ধকারে চলে যাচ্ছে তাহসিন হত্যাকাণ্ডের মুটিভ। অপরদিকে কলেজ ছাত্র তাহসিন হত্যার ৪ দিন অতিবাহিত হলেও কোন মামলা দায়ের হয়নি। এনিয়েও চলছে নানা আলোচনা সমালোচনা। তবে তাহসিনের পরিবার জানিয়েছে দ্রুত এ বিষয়ে হত্যা মামলা দায়ের করা হবে। অন্যদিকে তাহসিন হত্যার পর থেকে শহরে বসবাস করা অভিভাবক মহলের মাঝে দেখা দিয়েছে আতঙ্ক। উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় নিজের সন্তানদের স্কুল-কলেজে দিতে এক অজানা ভয় কাজ করছে অভিভাবকদের মাঝে।
ওসমানী রোডের বাসিন্দা আব্দুল করিম সঙ্গে কথা হলে এ প্রতিবেদককে জানান- আমার ছেলেকে স্কুলে দিতে ভয় হয়, এমনকী নিজেই শহরে চলাচল করতে মনে ভয়-ভয় কাজ করে। দুদিন পর পর বাজারে সংঘর্ষ মারামারি, বিশেষ করে তাহসিন নামে যে কলেজ ছাত্রটি খুন হলো এ ঘটনার পর থেকে মনের ভিতরে এক অজানা ভয় কাজ করে, তিনি তাহসিন হত্যায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী জানান।
তাহসিনের পিতা সৈয়দ রাজন মিয়ার সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন- আমরা আলাপ-আলোচনা করছি, সকলের পরামর্শক্রমে মামলা দায়ের করবো।
এ প্রসঙ্গে নবীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো: মাসুক আলী বলেন, “আমরা এ ঘটনা খুব গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি। নিহত তাহসিনের পরিবারের সঙ্গে আমরা প্রতিনিয়ত যোগাযোগ করছি অভিযোগ দেয়ার জন্য। আশা করছি খুব দ্রুত তারা অভিযোগ দিবেন।”
উল্লেখ্য, নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয়দের অনেকেই ধারণা করছেন বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার নানা অপচেষ্টা চলছে। এই ঘটনার পরিপূর্ণ বিচার নিশ্চিত না করলে পরবর্তীতে আরো অপরাধ বৃদ্ধির সম্ভাবনার শঙ্কা করছেন তারা।